Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪,

পাহাড়ি সংকটকে সম্ভাবনায় রূপ দিচ্ছেন বীর বাহাদুর ঊশৈ শিং

নিজস্ব প্রতিবেদক

নভেম্বর ২৫, ২০২০, ০৬:০০ পিএম


 পাহাড়ি সংকটকে সম্ভাবনায় রূপ দিচ্ছেন বীর বাহাদুর ঊশৈ শিং

অশান্ত পাহাড় তথা পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তির বার্তাবরণ সৃষ্টির নেপথ্যের নায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ অঞ্চলের মানুষের মধ্যে বিরাজমান দুই দশকের কষ্ট দূর করতেই তৎকালীন সময়ে (১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্ভর) শান্তিচুক্তি করেন প্রধানমন্ত্রী।

আবার চুক্তির পর ওই অঞ্চলে শান্তির সুবাতাস যেনো প্রতিষ্ঠিত হয় সে লক্ষ্যেও অদ্যাবধি কাজ করছে বর্তমান সরকার। যে কাজের বাস্তবায়ন হচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে।

আর এই মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে রয়েছেন দুর্গম পাহাড়ের সোনালী অর্জন পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর ঊশৈ শিং। শান্তিচুক্তির পরিপূর্ণ বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জসহ বহুবিধ চ্যালেঞ্জের বিপরীতেই পাবর্ত্য চট্টগ্রামের সম্ভাবনাসমূহকে কাজে লাগাতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন তিনি।

বিভিন্ন উপজাতির স্বায়ত্ত্বশাসনের অধিকার আদায়ে দীর্ঘ ২০ বছর ধরে চলা পার্বত্য চট্টগ্রামে সংঘাত নিরসনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐতিহাসিক শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরের পরই কার্যত উন্নয়নের পরিবেশ সৃষ্টি হয় অশান্ত পার্বত্য চট্টগ্রামে।

১৩ হাজার ২৯৫ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এ অঞ্চলের জনসংখ্যা ১৫ লাখ ৮৭ হাজার (২০১১ সালের আদমশুমারি হিসেবে)। যার মধ্যে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও জাতিসত্তা সমূহের অধিবাসীদের মধ্যে চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, তঞ্চংগ্যা, ম্রো, লুসাই, বোম, পাংখো, খুমি, চাক, খেয়াং প্রভৃতি উপজাতিও রয়েছে। যার ৪৮ ভাগই মুসলমান এবং বাকিরা হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী। ১৮৬০ সালে স্বতন্ত্র জেলার মর্যাদা লাভ করা পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলকে পরবর্তীতে তিনটি জেলায় রূপান্তরিত করা হয়।

যেখানে বর্তমানে সাতটি পৌরসভা এবং ২৬টি উপজেলা রয়েছে। আর পাহাড়, বন, নদী, ঝর্ণা— এ অঞ্চলকে স্বতন্ত্র ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্যতা দান করেছে। এ অঞ্চলের নৃতাত্ত্বিক ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব অপরিসীম।

স্বাধীনতার পর থেকেই এ অঞ্চলের সার্বিক উন্নয়নে বর্তমান সরকার বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে আসছে। যেখানে আর অন্য কোনো সরকারের আমলে দৃশ্যমান তেমন কোনো উন্নয়নযজ্ঞতা দেখা যায়নি।

সংবিধানের আওতায় রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতার প্রতি পূর্ণ ও অবিচল আনুগত্য রেখে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের সকল নাগরিকের রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষাগত ও অর্থনৈতিক অধিকার এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করাসহ দেশের সকল নাগরিকের স্ব স্ব অধিকার সংরক্ষণ ও উন্নয়নের লক্ষ্যেই মূলত পার্বত্য চট্টগ্রাম সংক্রান্ত জাতীয় কমিটি এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির মধ্যে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর সম্পাদিত হয় ঐতিহাসিক শান্তিচুক্তি।

সে চুক্তির শর্তানুযায়ীই ১৯৯৮ সালের ১৫ জুলাই গঠিত হয় পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়। যে মন্ত্রণালয় পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল এবং এ অঞ্চলের জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক অগ্রগতির লক্ষ্যে অবকাঠামোসহ অন্যান্য সব খাতেই সুষম উন্নয়নের লক্ষ্যে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। যার ধারাবাহিকতায় বর্তমান সরকারের রূপকল্প-২০২১ বাস্তবায়নেও পার্বত্য চট্টগ্রামে বিশাল উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ চলছে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় অনগ্রসর ও প্রত্যন্ত এ অঞ্চলের মানুষের উন্নয়নে ইতোমধ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপও গ্রহণ করেছে পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়।

মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর ঊশৈ শিংয়ের নির্দেশ ও নেতৃত্বে সে সবের বাস্তবায়নও চলছে দুর্বারগতিতে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ আর সরকারের রূপকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে পার্বত্য অঞ্চলের মানুষের স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়ন, শিক্ষার প্রসার, কৃষি ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, আত্ম-কর্মসংস্থান, সামাজিক নিরাপত্তা, উদ্বাস্তু পুনর্বাসন, অবকাঠামো উন্নয়নসহ নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করে এর বাস্তবায়নও করছেন। পার্বত্য অঞ্চলের সার্বিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে তিনি নিজেকে জড়িয়েছেন ওৎপ্রোতভাবে। করোনাকালেও পাহাড়ের জনগোষ্ঠীর পাশে দাঁড়াতে গিয়ে রাতদিন নিরলস কাজ করে করোনায় আক্রান্ত হওয়া তারই প্রমাণ— বলছেন স্থানীয়রা।  

১৯৯৮ সালে প্রথম উপমন্ত্রীর পদমর্যাদা এবং ২০০৮ সালে প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদায় দ্বিতীয়বারের মতো পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড রাঙ্গামাটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়েই সমগ্র পার্বত্য অঞ্চলের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, কৃষি তথা ভৌত অবকাঠামোগত ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে বিশেষ ভূমিকা রেখে আসছেন তিনি। উল্লেখ্য, ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর ঐতিহাসিক শান্তিচুক্তির পূর্বে এ সংক্রান্ত সংলাপ কমিটিরও অন্যতম সদস্য ছিলেন বীর বাহাদুর ঊশৈ শিং।

এরপর ১৯৯১ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে বীর বাহাদুর পরবর্তীতে ১৯৯৬ সালে সপ্তম, ২০০১ সালে অষ্টম, ২০০৮ সালে নবম, ২০১৪ সালে দশম এবং সর্বশেষ ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বান্দরবান সংসদীয় আসন (৩০০ নং আসন) থেকে টানা ষষ্ঠবারের মতো জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের অধিকারী বীর বাহাদুর ঊশৈ শিং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গঠিত মন্ত্রিসভার সদস্য হিসেবে ২০১৪ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী এবং ২০১৯ সালে একই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পান।  

দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই পাহাড়ে বর্তমান সরকারের যাবতীয় উন্নয়নকাজ পরিচালনা করছেন এবং একের পর এক উন্নয়নে ইতোমধ্যে অনেকটাই পাল্টে দিয়েছেন পাহাড়ি এ অঞ্চলের চিত্র— বলছেন স্থানীয়রা।  

বিশেষ করে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাহাড়ে শান্তির যে সুবাতাস ছড়িয়েছেন তার পথ ধরেই বীর বাহাদুর ঊশৈ শিং এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন সম্ভাবনাময় পার্বত্য এলাকাকে- এমনটাই বলছেন এ অঞ্চলের বাসিন্দারা।

পার্বত্য চট্টগ্রামকে এগিয়ে নেয়ার চলমান প্রচেষ্টায় ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঐতিহাসিক শান্তিচুক্তিরও অধিকাংশ শর্ত বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হয়েছেন তিনি, এমনটাই মনে করছেন অনেকে। এছাড়া ভূমি-সংক্রান্ত দীর্ঘদিনের সমস্যা ও নিষ্পত্তির প্রচেষ্টাও অব্যাহত রয়েছে বলে জানা গেছে।  

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চুক্তির অবশিষ্ট শর্তসমূহ বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বর্তমান সরকার। দুর্গম পাহাড়ে শান্তির বার্তা ছড়িয়ে দেয়ার পাশাপাশি সেই শর্তসমূহ বাস্তবায়নের মাধ্যমে উন্নয়নের স্বর্ণ দুয়ার খুলে সংকটকে সম্ভাবনায় রূপ দিতেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে কাজ করে যাচ্ছেন বীর বাহাদুর ঊশে শিং।  

এদিকে পার্বত্য জেলাগুলোর সড়ক অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে রাজস্ব আয় বাড়ানোর অসীম সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে বর্তমান সরকার সড়ক ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয়সহ পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে এ অঞ্চলের মানুষের জীবন ও জীবিকার স্বকীয়তা বজায় রেখে উন্নয়ন প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিচ্ছেন এবং বাস্তবায়ন করে চলেছেন বিভিন্ন প্রকল্প। যেখানে এর আগে কোনো সরকারই পাহাড়ের উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দেয়নি।

তবে শান্তিচুক্তির মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেখানে শান্তির পায়রা উড়িয়েছেন এবং দুর্গমকে করেছেন সুগম। প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় সুগম হওয়া দুর্গম সেই এলাকারই সোনালী অর্জন বীর বাহাদুর ঊশৈ শিং নিজেকে বিলিয়ে দিয়ে পাহাড়ের উন্নয়নে কাজ করে চলেছেন নিরন্তর।

আমারসংবাদ/এআই