Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪,

সব শ্রেণিতেই লটারিতে ভর্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক

নভেম্বর ২৫, ২০২০, ০৬:০০ পিএম


সব শ্রেণিতেই লটারিতে ভর্তি

করোনা ভাইরাস মহামারির মধ্যে এবার প্রথম থেকে নবম শ্রেণিতে লটারির মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে বলে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি জানিয়েছেন। ঢাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী ভর্তিতে ‘ক্যাচমেন্ট (এলাকাভিত্তিক) কোটা’ ৪০ থেকে বাড়িয়ে ৫০ শতাংশ করা হয়েছে।

ক্লাস্টারভিত্তিক লটারিতে ঢাকার শিক্ষার্থীরা একটির জায়গায় এবার পাঁচটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বাছাই করার সুযোগ পাবে বলে জানিয়েছেন তিনি। মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থী ভর্তি নিয়ে গতকাল বুধবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে দীপু মনি এ তথ্য জানান।

মন্ত্রী বলেন, স্বাস্থ্য ঝুঁকি এড়াতে প্রতি শ্রেণিতে লটারির মাধ্যমে ভর্তির সিদ্ধান্ত নিয়েছি। যোগ্যতার চেয়ে ভাগ্যকে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। বাধ্য হয়েই এই পদ্ধতি বেছে নিয়েছি। অন্যবার প্রথম শ্রেণিতে লটারির মাধ্যমে এবং দ্বিতীয় থেকে অষ্টম শ্রেণিতে ভর্তিপরীক্ষা নিয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হতো। জেএসসি-জেডিসির ফলের ভিত্তিতে নবম শ্রেণিতে শিক্ষার্থীরা ভর্তি হলেও এবার অষ্টমের সমাপনী পরীক্ষা না হওয়ায় সে সুযোগ নেই।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, তিনটি বিকল্প খতিয়ে দেখেছি। একটি হচ্ছে স্কুলে ভর্তিপরীক্ষা নেয়া। কিন্তু শিক্ষার্থীদের স্কুলে এনে ভর্তিপরীক্ষা নেয়ার ঝুঁকি নিতে চাচ্ছি না। এমসিকিউ পদ্ধতির কথা চিন্তা করেছি, কিন্তু তাতেও শিক্ষার্থীদের স্কুলে আসতে হতো। অনলাইনে ভর্তিপরীক্ষা নেয়া সবার জন্য নিরাপদ হলেও সব শিক্ষার্থীর অনলাইনে ভর্তিপরীক্ষা নিশ্চিত করা কঠিন হবে, তাই এটি যুক্তিযুক্ত মনে হয়নি। সবার ইন্টারনেট অ্যাকসেস নেই, আবার সংযোগেও সমস্যা আছে।

আগামী ৭ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রথম থেকে নবম শ্রেণিতে ভর্তির পুরো প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানিয়ে দেয়া হবে বলে জানান শিক্ষামন্ত্রী।

তিনি বলেন, ভাগ্যের ওপর নির্ভর করতে হবে বলে এবার শিক্ষার্থীদের যোগ্যতার বিষয়টি হয়তো অনেকে ভাববেন যে, অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু একটু ভালো করে যদি লক্ষ্য করি, তাহলে বোঝা যাবে যে প্রক্রিয়াটি যোগ্যতাভিত্তিক না হয়ে ভাগ্যভিত্তিক হলেও আমাদের বিদ্যালয়গুলো সর্বোপরি আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় একটি ইতিবাচক পরিবর্তনের সুযোগ সৃষ্টি হবে।

বিষয়টি ব্যাখ্যা করে মন্ত্রী বলেন, প্রচলিত ব্যবস্থায় কেবল অ্যাকাডেমিক অর্থে সব মেধাবী শিক্ষার্থী গুটি কয়েক বিদ্যালয়ের কেন্দ্রীভূত হয়। ফলে বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে এক ধরনের অসাম্য তৈরি হয়। প্রচলিত ভর্তি প্রক্রিয়া অব্যাহত হলে তা দূর করা অসম্ভব। একটি দেশের গুণগত শিক্ষা অর্জনে এ ধরনের অসাম্য একটি বড় বাধা। এই পদ্ধতিতে বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে কিছুটা হলেও সাম্য প্রতিষ্ঠায় সক্ষম হব।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, অনেক সময় স্কুলে শিক্ষার্থী ভর্তি নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। লটারির মাধ্যমে ভর্তি করা হলে স্বচ্ছতাও নিশ্চিত করা যাবে। আশা করি পূর্ণ স্বচ্ছতার মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে পারবো। অনেক প্রতিষ্ঠান বেশি ভর্তি ফি নেয়। অনেক সময় আমরা ব্যবস্থা নিই, অনেক সময় প্রমাণ না থাকায় ব্যবস্থা নিতে পারি না। আশা করি কেউ অতিরিক্ত ফি নেবেন না, অতিরিক্ত ফি নিলে ব্যবস্থা নেবো, আমরা কঠোর হবো।

বাংলাদেশে করোনা ভাইসের প্রকোপ বাড়তে শুরু করলে গত ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়। কওমি মাদ্রাসা বাদে অন্যসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আগামী ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করা আছে। কোভিড-১৯ মহামারির মধ্যে এবার পঞ্চম ও অষ্টমের সমাপনী পরীক্ষা এবং প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের বার্ষিক পরীক্ষা নেবে না সরকার। অষ্টমের সমাপনী এবং এসএসসি ও সমমানের ফলফলের ভিত্তিতে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল ঘোষণা করা হবে।

২০২১ সালের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা পিছিয়ে যাচ্ছে : করোনা ভাইরাস মহামারির মধ্যে আগামী বছরের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা নির্ধারিত সময়ে নেয়া সম্ভব হবে না বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। তিনি বলছেন, ২০২১ সালে যাদের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা দেয়ার কথা, তাদের জন্য ‘তিন মাসে শেষ করা যায়’— এমন একটি সংক্ষিপ্ত সিলেবাস প্রণয়ন করা হয়েছে, তার আলোকে তাদের তিন মাস ক্লাস করিয়ে পরীক্ষা নেয়া হবে। মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থী ভর্তি নিয়ে গতকাল এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নে শিক্ষামন্ত্রী এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের আলোকে আমরা তাদের তিন মাস ক্লাস করাতে চাই। সে কারণে হয়তো এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা ২/১ মাস পিছিয়ে যাবে। বেশ কয়েক বছর ধরে ১ ফেব্রুয়ারি থেকে এসএসসি এবং ১ এপ্রিল থেকে এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হয়ে আসছে।

ওই দিনগুলো সরকারি ছুটি থাকলে পরের দিন থেকে এসব পরীক্ষা শুরু হয়। এবার এসএসসি পরীক্ষা নির্ধারিত সময়ে নেয়া গেলেও দেশে করোনা ভাইসের প্রকোপ বাড়তে শুরু করলে গত ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়।

ফলে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা আটকে যায়। কওমি মাদ্রাসা বাদে অন্যসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আগামী ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করা আছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান মন্ত্রী।

তিনি বলেন, পরিস্থিতি অনুকূল হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর এসএসসি ও এইচএসসির শিক্ষার্থীদের ছয়দিন ক্লাসে আনা হবে। অন্য শ্রেণির শিক্ষার্থীরা দুয়েকদিন স্কুলে এসে ক্লাস করবে, পাশাপাশি তাদের অনলাইন ক্লাসও চলবে।

এসএসসির ৭৫ ও জেএসসির ২৫ শতাংশ নিয়ে এইচএসসির ফল : এইচএসসির ফল নিয়ে বিশেষজ্ঞরা তাদের সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন। এসএসসি ও জেএসসির রেজাল্ট নিয়েই এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হবে। তবে এসএসসির ফল ৭৫ শতাংশ এবং জেএসসির ২৫ শতাংশ গুরুত্ব দিয়ে উচ্চ মাধ্যমিকের ফল প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। বিশেষজ্ঞরা এ বিষয়ে মতামত দিয়েছেন।

এর আলোকেই আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে এইচএসসির ফলাফল প্রকাশ করা হবে বলে জানান মন্ত্রী। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, চলতি বছর এইচএসসি পরীক্ষা বাতিল করে সব পরীক্ষার্থীকে পাস ঘোষণা করা হয়েছে। এসএসসি-সমমান এবং জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষার ফলের মাধ্যমে গ্রেড নির্ধারণ করা হবে। এ জন্য আমরা একটি টেকনিক্যাল কমিটি গঠন করি। তারা বিভিন্ন বিষয় পর্যবেক্ষণ করে আমাদের কাছে একটি গ্রেড নির্ণয়ের জন্য একটি দিকনির্দেশনা দিয়েছেন।

এর আলোকে এ বছরের এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হবে। তিনি বলেন, গ্রেড নির্ণয়ের জন্য এসএসসি পরীক্ষার ফলকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হবে। এ পরীক্ষার ফলের মোট নম্বরের ওপর ৭৫ শতাংশ এবং জেএসসি ২৫ শতাংশ নম্বর যুক্ত করে এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হবে।

যারা ইম্প্রুভমেন্ট পরীক্ষা দেয়ার প্রস্তুতি নিয়েছিল তাদের ফলাফল কীভাবে দেয়া হবে- সে বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, তাদেরও প্রত্যাশিত নম্বর কম দেয়া হবে না। আগের পরীক্ষার ফলের ওপর মূল্যায়ন করে নম্বর দেয়া হবে। তিনি আরও বলেন, ‘বাউবিসহ যারা জেএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেনি তাদের তো আমরা গ্রহণ করেছি।

তাদের এসএসসি পরীক্ষার ফলের ওপর ভিত্তি করে এইচএসসি পরীক্ষার ফল ঘোষণা করা হবে। পূর্বের পরীক্ষার সম বিষয়ের নম্বরকে গুরুত্ব দেয়া হবে। যেসব বিষয় মিল থাকবে না তা কীভাবে মূল্যায়ন করা হবে সে বিষয়ে প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়েছে।

আমারসংবাদ/এআই