Amar Sangbad
ঢাকা বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪,

চার আসামির সাজা স্থগিত: সংশোধনের সুযোগ দিলেন বিচারক

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি

নভেম্বর ২৫, ২০২০, ০৬:০০ পিএম


চার আসামির সাজা স্থগিত: সংশোধনের সুযোগ দিলেন বিচারক

প্রবেশনকালকে বলা হয়— ‘পরীক্ষাকাল আর অপরাধীর চরিত্র সংশোধনের কালকেও বলা হয় পরীক্ষাকাল’। অপরাধ একটি সামাজিক ব্যাধি। প্রতিটি সভ্য দেশে অপরাধীদের বিচার করে শাস্তি দেয়ার বিধান আছে। কিন্তু সবক্ষত্রে ‘শাস্তি প্রদান’ অপরাধ প্রতিরোধে সহায়ক হয় না।

একজন ‘প্রথম অপরাধীকে’ যখন অপরাধের দায়ে কারাগারে প্রেরণ করা হয় তখন একদিকে সমাজের প্রতি তার শত্রুতামূলক মনোভাব সৃষ্টি হয়, অন্যদিকে কারাগারে অবস্থানকালে অন্যান্য দাগী অপরাধীদের সংস্পর্শে গিয়ে সে মারাত্মক ধরনের অপরাধের অভিজ্ঞতা ও কুশিক্ষা লাভ করে।

ফলে কারামুক্ত হয়ে সমাজের চোখে সে ‘দাগী’ বিবেচিত হয় এবং সমাজের সকলের ঘৃণার পাত্র হয়। সমাজ তার ওপর বিশ্বাস হারিয়ে ফেলে এবং সুযোগ-সুবিধা থেকে সে বঞ্চিত হয়।

এ অবস্থা বিবেচনা করে সাতক্ষীরার জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ইয়াসমিন নাহার আবারো একটি মামলার রায়ে একই পরিবারের চার আসামিকে সাজা দিয়ে জেলে না পাঠিয়ে নিজ বাড়িতে থেকে সমাজের কিছু ভালো কাজ করে সংশোধন হওয়ার সুযোগ দিয়েছেন। গত মঙ্গলবার তিনি প্রকাশ্য আদালতে ওই আদেশ দেন।

 আসামিরা হলেন— আশাশুনি উপজেলার মহিষাডাঙ্গা গ্রামের লক্ষীকান্ত গাইনের ছেলে গৌতম গাইন (২৪), তার মাতা মমতা গাইন (৪২), উর্মিলা গাইন (২৬) ও লতিকা মন্ডল (৩৯)। ওই মামলার বাদি ছিলেন, একই গ্রামের সন্দিপ কুমারের স্ত্রী নমিতা মন্ডল। বাদি নমিতা মন্ডলের অভিযোগ ছিলো— যাতায়াতের পথ নিয়ে বিরোধে প্রতিবেশী আসামিরা তাদের মারপিট করে জখম করে। আসামি পক্ষেরও এটি ছিলো জীবনে প্রথমবারের অপরাধ। বিচারে আসামি পক্ষের এক মাসের সাজা হয়।

কিন্তু বিচারক জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ইয়াসমিন নাহার আসামিদের জীবনে প্রথমবারের অপরাধ বিবেচনায় তাদের জেলে না পাঠিয়ে নিজ নিজ বাড়িতে থেকে সামাজিক কিছু দায়িত্ব মেনে সংশোধন হওয়ার নির্দেশ দেন।

শর্তগুলো হচ্ছে— আসামি গৌতম গাইনকে নিজ এলাকায় ১৫ দিন অন্তর একদিন মাদকবিরোধী প্রচার চালাতে হবে, তিনজন নারী আসামিকে শর্ত দেয়া হয়েছে ১৫ দিন অন্তর একদিন এলাকায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালাতে হবে।

এছাড়া সব আসামিকে বলা হয়েছে নিজ খরচে বাদিকে ১০টি ফলদ ও ১০টি বনজ গাছ কিনে দিতে হবে, সবার সঙ্গে সু-সম্পর্ক বজায় রেখে চলতে হবে, কারো সঙ্গে কোনোরূপ ঝগড়া-বিবাদ করা যাবে না।

এসব শর্ত মানার ব্যাপারে দেখভালের জন্য স্থানীয় চেয়ারম্যানসহ জেলা সমাজসেবা অফিসের প্রবেশন অফিসারকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে এবং আদালতে প্রতিবেদন দেয়ার জন্যও প্রবেশন অফিসারকে বলা হয়েছে।

এ ব্যাপারে আসামিরা একটি লিখিত মুচলেকাও আদালতে প্রদান করেছেন। জেলা সমাজসেবা অফিসের প্রবেশন অফিসার সুমনা সুলতানা জানান, কোনো অপরাধীকে তার অপরাধের জন্য ‘প্রযোজ্য দণ্ড’ সাময়িকভাবে স্থগিত রেখে পরীক্ষামূলকভাবে একজন প্রবেশন অফিসারের তত্ত্বাবধানে সংশোধন হওয়ার সুযোগ প্রদান করাই হলো প্রবেশন।

প্রবেশন চলাকালীন সময়ে অপরাধীর আচরণ সন্তোষজনক বিবেচিত হলে আদালত অপরাধীকে তার অপরাধের দায় থেকে স্থায়ীভাবে মুক্তি দিয়ে থাকেন।

তিনি আরও জানান, ইতোপূর্বে সাতক্ষীরা সদরের জনৈক হাসান আলীকেও প্রবেশনে মুক্তি দেয়া হয়েছে এবং আমরা তাকে দেখভাল করছি। যথাসময়ে বিজ্ঞ আদালতে প্রতিবেদনও দেয়া হবে।

আমারসংবাদ/এসটিএম