Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪,

রাজধানীতে বসবাসের উপযোগিতা কমছে: মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়নে গুরুত্ব দিন

নভেম্বর ২৫, ২০২০, ০৬:১০ পিএম


রাজধানীতে বসবাসের উপযোগিতা কমছে: মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়নে গুরুত্ব দিন

বিশ্বের বসবাস অনুপযোগী শহরগুলোর মধ্যে রাজধানী ঢাকা একটি। বিপুল জনসংখ্যার ভারে মেগাসিটি ঢাকা কতটা ন্যুব্জ, তা সবারই জানা। জনদুর্ভোগের বিষয়েও কারও দ্বিমত নেই। পরিবেশ দূষণের দিক থেকেও ঢাকার অবস্থা উদ্বেগজনক। লন্ডনভিত্তিক সাময়িকী দি ইকোনমিস্টের ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের তালিকায় বাসযোগ্য বড় শহর হিসেবে ঢাকা নগরীর অবস্থান নিচের দিক থেকে তিন নম্বরে। তা সত্ত্বেও রাজধানীমুখী মানুষের স্রোত সহসা কমবে বলে মনে হয় না।

ফলে আগামীতে রাজধানীবাসীর দুর্ভোগ আরও কতটা বৃদ্ধি পাবে, তা নিয়ে মানুষের উদ্বেগ বাড়ছে। বস্তুত কয়েক দশক পর রাজধানীর জনঘনত্ব, যানজট, জলাবদ্ধতাসহ বহুবিধ নাগরিক সমস্যা কতটা প্রকট আকার ধারণ করবে, তা বিবেচনায় নিয়ে মাস্টারপ্ল্যানের যথাযথ বাস্তবায়ন জরুরি হয়ে পড়েছে।

তা না হলে মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, ফ্লাইওভারের মতো মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করেও কাঙ্ক্ষিত সুফল মিলবে কি না সন্দেহ। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর এ মহানগরীর লোকসংখ্যা ব্যাপকভাবে বাড়তে থাকে।

নগরবাসীর বাসস্থান ও বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ভূমি ব্যবহার পরিকল্পনা তৈরি হলেও গণপরিবহন পরিকল্পনায় ততটা গুরুত্ব প্রদান করা হয়নি। পরে গণপরিবহন নিয়ে নানা রকম পরিকল্পনা করা হলেও সেসব বাস্তবায়নে যথাযথ গুরুত্ব না দেয়ায় এ সমস্যা এখন প্রকট আকার ধারণ করেছে। বর্তমানে রাজধানীবাসীর অন্য অনেক সমস্যাও বহুল আলোচিত।

ঢাকা নগরীকে পরিকল্পিতভাবে গড়ে তুলতে ১৯১৭ সালে প্রথম মাস্টারপ্ল্যান ধারণাপত্র তৈরি করেন স্যার প্যাট্রিক গেডিস। সে সময় ঢাকার লোকসংখ্যা ছিল প্রায় ১০ লাখ। ব্রিটিশদের উদ্যোগে প্রণীত প্রথম পরিকল্পনা বাস্তবে রূপ পায়নি।

এরপর ১০০ বছরেরও বেশি সময়ে বড় পরিসরে ৯টি মাস্টারপ্ল্যান তৈরি হয়েছে। কিন্তু এর একটিও যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হয়নি। কয়েকটি তো আলোর মুখই দেখেনি। বাকি কয়েকটি কাটছাঁট করে বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এসব কারণে ঢাকা ঝুঁকিপূর্ণ শহরে পরিণত হয়েছে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করেও সমস্যাগুলোর যথাযথ সমাধান মিলবে কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

তারা বলেছেন, অতীতে গৃহীত পরিকল্পনাগুলো খুবই সুন্দর ছিল। কিন্তু সঠিক বাস্তবায়নের অভাবে কাঙ্ক্ষিত ফল অধরাই থেকে যাচ্ছে। পরিকল্পনাবিদ স্যার প্যাট্রিক গেডিসের ‘ঢাকা টাউন প্ল্যানে’ বৃষ্টির পানি যেন জমে না যায় সেজন্য নদী, খাল ও জলাধারগুলো সংস্কার ও সংরক্ষণের কথা বলা হয়েছিল। এটা ১০০ বছর আগের কথা। এখন রাজধানীর লোকসংখ্যা বহুগুণ বৃদ্ধি পেলেও নদী, খাল ও জলাধারগুলো হয়ে পড়েছে অনেক সংকীর্ণ। অনেক খাল তো হারিয়েই গেছে।

তবে আমরা মনে করি, ওই পরিকল্পনা এখনও বাস্তবায়ন করা গেলে নগরীর জলাবদ্ধতা সমস্যার অনেকটাই নিরসন হবে। পরবর্তী মাস্টারপ্ল্যানেও পানি নিষ্কাশন ও বন্যার প্রসঙ্গটি গুরুত্ব পেয়েছে। কাজেই রাজধানীর জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধানে নদী-খাল উদ্ধারের পাশাপাশি ঢাকা শহর ও এর আশপাশের সব জলাধার সংরক্ষণে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।

একটি শহরের মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করা হয় নগরীর ভবিষ্যৎ দৃশ্যপট সামনে রেখে। কাজেই সময়মতো এর বাস্তবায়ন না হলে পরবর্তী প্রজন্মের নগরবাসীকেও যে দুর্ভোগ পোহাতে হবে, তা বলাই বাহুল্য। তাই মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের পরপরই তা বাস্তবায়নের ব্যাপারে গুরুত্ব দেয়া উচিত।

আমারসংবাদ/এআই