Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪,

উপকূলের উন্নয়নে ব্লু-গোল্ড প্রোগ্রাম

মো. আমিরুল হোসেন

নভেম্বর ২৫, ২০২০, ০৬:১৫ পিএম


উপকূলের উন্নয়নে ব্লু-গোল্ড প্রোগ্রাম

পটভূমি ও ভৌগোলিক এবং অবস্থানগত কারণে এ দেশের জীবনযাত্রা, প্রকৃতি ও পরিবেশ, কৃষি, অবকাঠামো উন্নয়ন, যোগাযোগ, খাদ্য নিরাপত্তা, দারিদ্রবিমোচন— সবকিছুই পানির ওপর নির্ভরশীল। পানি দেশের একক সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক সম্পদ।

জনসংখ্যা বৃদ্ধি, নগরায়ণ, শিল্পায়ন এবং উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে পানিসম্পদের ওপর নির্ভরশীলতা তথা চাহিদা ক্রমাগতভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। আবার পানিজনিত দুর্যোগ— বন্যা, খরা, নদীভাঙন, জলাবদ্ধতা, পানির ব্যাপক দূষণ, উপকূল অঞ্চলে জোয়ার ও লবণাক্ততা ইত্যাদি কারণে জনজীবনে নেমে আসে দুর্ভোগ, উন্নয়ন হয় ব্যাহত, খাদ্য নিরাপত্তা ও দারিদ্র্য পরিস্থিতির অবনতি হয়।

পানিসম্পদের অপরিমিত ও যথেচ্ছ ব্যবহার ক্ষেত্রবিশেষে দূষণের কারণ যা জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনায় অন্যতম উন্নয়ন সহযোগী রাজকীয় নেদারল্যান্ডস সরকার এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অনুদান সহায়তায় দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের চারটি উপকূলীয় জেলার (খুলনা, সাতক্ষীরা, পটুয়াখালী ও বরগুনা) ১৪টি উপজেলায় বিদ্যমান ২২টি পোল্ডারে অবকাঠামো উন্নয়ন ও অংশগ্রহণমূলক পানিব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি তথা জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের পরিকল্পনা-৩ পরিদপ্তর (লিড এজেন্সি) এবং কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তরের যৌথ ব্যবস্থাপনায় ‘ব্লু-গোল্ড প্রোগ্রাম’ বাস্তবায়িত হচ্ছে। বাস্তবায়ন সময়কাল জানুয়ারি ২০১৩ থেকে ডিসেম্বর ২০২০ সাল পর্যন্ত।

উদ্দেশ্য ও কার্যক্রমের সার্বিক উদ্দেশ্য হচ্ছে উপকূলীয় চারটি জেলার এক লাখ ১৯ হাজার ১২৪ হেক্টর এলাকায় বসবাসকারী (উপকূলীয় মোট পোল্ডার এলাকার ১০ শতাংশ) এক লাখ ৯০ হাজার পরিবারের দারিদ্র্য হ্রাসের লক্ষ্যে স্থানীয় জনগণকে সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে আরও দক্ষ সমন্বিত পানিব্যবস্থাপনা, প্রাকৃতিক পরিবেশ উন্নয়ন ও পোল্ডারসমূহে ফসল, মাছ ও গৃহপালিত প্রাণিসম্পদ উৎপাদন বৃদ্ধি করে সার্বিক উন্নয়ন সাধন।

সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য হলো ক. এলাকাবাসীর সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে পোল্ডারসমূহের টেকসই উন্নয়ন; খ. উন্নয়নে স্থানীয় সংগঠনগুলো  গড়ে তোলা; গ. পোল্ডার এলাকায় বন্যা ও লবণাক্ততা প্রতিরোধ, জলাবদ্ধতা দূর, বৃষ্টির পানি ধরে রেখে গৃহস্থালি ও সেচের জন্য লবণমুক্ত পানির প্রাপ্যতা নিশ্চিত করে প্রাকৃতিক পরিবেশ উন্নত করার মাধ্যমে পোল্ডারে পানিসম্পদের সুষ্ঠুব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা এবং ঘ. উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে এলাকাবাসীর আয়, সক্ষমতা এবং জীবনমানের উন্নয়ন সাধন।

কাঠামোগত কার্যাবলি ও উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য চার জেলায় নির্বাচিত মোট ২২টি পোল্ডারে বিদ্যমান পানিব্যবস্থাপনা অবকাঠামো নির্মাণ, পুনর্বাসন বা মেরামত করা হয়, বিস্তারিত ছকে দেখানো হলো। এসব কাঠামোর মাধ্যমে চার জেলার ১৪ উপজেলার পোল্ডারভুক্ত ১,১৯,২২৪ হেক্টর এলাকায় পানিব্যবস্থাপনার উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে।

২২টি পোল্ডার এলাকায় জলাবদ্ধতা হ্রাস পেয়েছে, সেচের পানির প্রাপ্যতা নিশ্চিত হয়েছে। কৃষিজমি, বসতবাড়ি, জনপদ লবণাক্ত পানির প্লাবন থেকে রক্ষা পেয়েছে। কৃষি উৎপাদনসহায়ক পরিবেশ তৈরি হয়েছে, জমি এবং পানির উৎপাদনশীলতা বেড়েছে, এর সুফল পাচ্ছে এ ২২টি পোল্ডারের এক লাখ ৯০ হাজার পরিবার।

অ-কাঠামোগত কার্যাবলি : পাশাপাশি সমন্বিত কাজের অংশ হিসেবে পানিব্যবস্থাপনা সংগঠনসংশ্লিষ্ট এলাকাবাসীকে কৃষি, বসতবাড়ির আঙ্গিনায় সবজিচাষ, উন্নত পদ্ধতিতে হাঁস-মুরগি ও গৃহপালিত প্রাণিসম্পদ লালন-পালন, পুকুরে মৎস্যচাষ, উন্নত পানিব্যবস্থাপনা, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্য সচেতনতা ইত্যাদি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।

প্রকল্পের প্রধান সামাজিক সূচক বা অ-কাঠামোগত কার্যাবলির আওতায় (চার জেলা ১৪ উপজেলা) ৫১২টি পানিব্যবস্থাপনা দল গঠিত হয়েছে, দলের সদস্যদের সমন্বয়ে ৩৯টি পানিব্যবস্থাপনা সমিতি, কৃষক মাঠ স্কুল  FFS-Farmer Field School)  এক হাজার ১৩৩টি, অবকাঠামো পরিচালন, মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য গঠিত উপ-কমিটি ১৯০টি। পানিব্যবস্থাপনা দলের (ডগএ) ব্যাংক হিসাবে সঞ্চয় ৯১৯.৪৫ লাখ টাকা, পানিব্যবস্থাপনা দল কর্তৃক অবকাঠামো পরিচালনা, ক্ষুদ্র মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণে অবদান ৭১.৫০ লাখ টাকা, যা স্থানীয় সংগঠনের সক্ষমতার দৃশ্যামন অগ্রগতি নির্দেশ করে। বৃক্ষরোপণ ৬৬ হাজার ৪০০টি (বিভিন্ন রকম ফলদ এবং বনজ গাছ)। ব্লু-গোল্ড প্রোগ্রামের আওতায় কৃষি, মৎস্য, গৃহপালিত প্রাণী, হাঁস-মুরগি পালন সংগঠন, পানিব্যবস্থাপনা ইত্যাদি বিষয়ে মোট ২৮ হাজার ৩২৫ জনকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে, যার মধ্যে পুরুষ তিন হাজার ৫৯১ জন এবং ২৪ হাজার ৭৩৪ জন নারী। বসতবাড়ি সংলগ্ন পুকুর এবং পরিত্যক্ত ছোট ছোট জলাশয় মাছচাষের আওতায় আনা হয়। পোল্ডারে পানিব্যবস্থাপনা অবকাঠামো নিয়মিত পরিচালনায়, মেরামত, উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নে স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়।

পানিব্যবস্থাপনা ও কৃষি উন্নয়ন ও ব্লু-গোল্ড প্রোগ্রাম এলাকায় পোল্ডারসমূহে রেগুলেটর ইনলেট-আউটলেট, বাঁধ ইত্যাদি নির্মাণ বা মেরামত ও খাল পুনর্খনন সম্পন্ন হওয়ায় একদিকে যেমন বর্ষাকালে বন্যা, জোয়ার বা জলাবদ্ধতা থেকে মুক্ত হয়েছে আবার শুকনো মৌসুমে গৃহস্থালি ও সেচের জন্য প্রয়োজনীয় পানি পাওয়া যাচ্ছে। এতে সবজি, ফল, গৃহপালিত প্রাণী ও মাছচাষ কার্যক্রম অনেক বেড়েছে। পানিব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কৃষি সহায়ক পরিবেশ নিশ্চিত হওয়ায় প্রকল্প এলাকায় জমির উৎপাদনশীলতা বহুগুণে বেড়েছে এবং স্থানীয় জনগণের কর্ম উদ্যোমের সাথে সাথে সরকারের সহায়ক নীতি ও পদক্ষেপের ফলে দেশের খাদ্য নিরাপত্তায় প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। ২০১৩-২০১৭ মেয়াদে দূর অনুধাবন  (Remote sensing) বা উপগ্রহ তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে যে, ব্লু-গোল্ডভুক্ত পোল্ডারে জলাবদ্ধ এলাকা হ্রাস পেয়ে চাষের এলাকা বৃদ্ধি পেয়েছে, এক ফসলি জমি দুই বা তিন ফসলি জমিতে পরিবর্তিত হয়েছে।

আর পার্শ্ববর্তী যেসব পোল্ডারে মেরামত বা পুনর্বাসন করার কোনো কার্যক্রম নেই, সেসব পোল্ডারে জলাবদ্ধ এলাকা ক্রমাগত বাড়ছে, দুই বা তিন ফসলি উপযুক্ত জমি এক ফসলি জমিতে পরিবর্তিত হয়েছে। দূর অনুধাবন তথ্যে দেখা গেছে ব্লু-গোল্ড প্রোগ্রাম এলাকায় জলাবদ্ধতা কমেছে ৬৬ শতাংশের বেশি।

কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যে দেখা গেছে কার্যক্রমভুক্ত ২২টি পোল্ডারে সমন্বিত কার্যক্রমের ফলে ২০১৪-২০১৯. মেয়াদে শস্যনিবিড়তা বেড়েছে ২০১৬. ১৮৬.৩ শতাংশ থেকে ২০১৯. ২০৩.৯ শতাংশ, গড়ে ১৭.৬ শতাংশ (ডিএই-২০১৯)। এক হিসেবে দেখা গেছে ওইসব পোল্ডার এলাকায় হেক্টর প্রতি গড়ে উৎপাদন বেড়েছে আউশ ধান ৭.৫ শতাংশ, আমন ধান ৮ শতাংশ, বোরো ধান ৫.৫ শতাংশ এবং মুগডাল ২৬ শতাংশ। নির্বাচিত পরিত্যক্ত পুকুরে মৎস্য অধিদপ্তরের কারিগরি সহায়তায় আধা নিবিড় পদ্ধতিতে মাছচাষের আওতায় আনা হয়েছে। স্থানীয় অধিবাসী কর্তৃক চাষকৃত পুকুরে মাছের উৎপাদন ৮৭ শতাংশ (প্রায় দ্বিগুণ) বৃদ্ধি পেয়েছে (মৎস্য অধিদপ্তর-২০১৯)।

আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও পানিব্যবস্থাপনার জন্য রেগুলেটর, আউটলেট, ইনলেট ইত্যাদি অবকাঠামো নির্মাণ/মেরামত করে স্থানীয় পানিব্যবস্থাপনা সংগঠনের মাধ্যমে পরিচলনা করা হচ্ছে। সরকারি সংস্থা বাপাউবো এবং জনগণের যৌথ ব্যবস্থাপনা সম্ভব হয়েছে এবং সমন্বিত পানিব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পোল্ডারে পানি ও জমির উৎপাদনশীলতা উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে, যা ওই এলাকার খাদ্য নিরাপত্তা, কর্মসংস্থান তথা এলাকার দারিদ্র্যবিমোচন ও জীবনমান উন্নয়নে অবদান রাখছে। খাদ্য নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে এলাকায় মৎস্য সেক্টরের অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এলাকার জনগণের আয় বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ২৫ শতাংশ।

কার্যক্রমভুক্ত ২২টি পোল্ডারের পানিব্যবস্থাপনা অবকাঠামোর ছোট ধরনের মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণে স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হয়েছে। এতে ভবিষ্যতে ঐসব অবকাঠামো দীর্ঘস্থায়ী হবে এবং পানিব্যবস্থাপনা টেকসই হবে। কার্যক্রমভুক্ত ২২টি পোল্ডারে ৫১২টি সংগঠিত ও প্রশিক্ষিত পানিব্যবস্থাপনা দলের মাধ্যমে কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তর, মৎস্য এবং প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কার্যক্রম পরিচালনা সহজ ও অধিকতর কার্যকর হয়েছে।

এলাকায় পানিব্যবস্থাপনা দল সংগঠিতভাবে কৃষি উপকরণ (সার-বীজ ইত্যাদি) ক্রয় এবং উৎপাদিত কৃষি পণ্য বিক্রির মাধ্যমে কৃষকগণ অধিকতর লাভবান হচ্ছেন। প্রশিক্ষণে ৫০ শতাংশ এবং ৩৩ শতাংশ নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার মাধ্যমে এলাকায় পানিব্যবস্থাপনা এবং কৃষি উৎপাদনে নারীর ক্ষমতায়নে সহায়ক পরিবেশ তৈরি হয়েছে। সার্বিকভাবে এলাকায় নারী গোজের আয় বৃদ্ধি পেয়েছে।

ফসল, সবজি, মাছ, হাঁস-মুরগি ইত্যাদি উৎপাদন বৃদ্ধির ফলে পারিবারিক পুষ্টির জোগান এবং আয় বেড়েছে। পটুয়াখালী এলাকায় উৎপাদিত মুগডাল সরাসরি বিদেশে রপ্তানির মাধ্যমে কৃষি পণ্যের ন্যয্যমূল্য নিশ্চিত হয়েছে এবং বৈদিশক মুদ্রা আয় করা সম্ভব হচ্ছে।

দুর্যোগ ঝুঁকি মোকাবিলায় সক্ষমতা বৃদ্ধি ও কার্যক্রমভুক্ত উকূলীয় চার জেলার ১৪টি উপজেলায় ২২টি পোল্ডারে মোট ৫১২টি গঠন করে কমিউনিটি পর্যায়ে সক্ষমতা বড়ানো হয়েছে। এই দলসমূহ ঘূর্ণিঝড়জনিত জলোচ্ছ্বাস পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে দলবদ্ধভাবে সার্বক্ষণিক পোল্ডারের বাঁধ পাহারা দেয়া, জরুরি পরিস্থিতি তৈরি হলে বাঁধ মেরামত বা ভাঙন প্রতিরোধ করায় সক্রিয় হয়। বিগত বছরসমূহে রোয়ানু ( ২০১৬), মোরা (মে ২০১৭), ফনি (মে ২০১৯), বুলবুল (নভেম্বর ২০১৯) এবং আম্ফানের (মে ২০২০) সময় কার্যক্রমভুক্ত ২২টি পোল্ডারের মধ্যে খুলনায় দুটি এবং পটুয়াখালীর একটি পোল্ডার বাদে অর্থাৎ বু-গোল্ড কার্যক্রমভুক্ত ২২টি পোল্ডারের মধ্যে ১৯টি পোল্ডার সুরক্ষিত ছিলো, সেখানে বাঁধ ভেঙে কোথাও জনপদে পানি প্রবেশ করতে পারেনি। ফলে এলাকার ফসল, প্রাণিসম্পদ, মৎস ইত্যাদি ঘূর্ণিঝড়জনিত জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষা পেয়েছে।

পরিবেশ উন্নয়ন ও পরিবেশবান্ধব টেকসই আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে বু-গোল্ড প্রকল্পের কার্যাবলি বাস্তবায়নে পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়ন করা হয়েছে। পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়নের ক্ষেত্রে আইনগত এবং বিভিন্ন নীতিমালা গুরুত্বের সাথে অনুসরণ করা হয়েছে। ব্লু-গোল্ড কার্যক্রমভুক্ত পোল্ডারে প্রকৃতিক পরিবেশ উন্নত এবং জীববৈচিত্র্য ভারসাম্যমূলক হয়েছে। পোল্ডারে কৃষি, মৎস্য ও জলজ-জীবের ভারসাম্যমূলক পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।

নিয়মিত জোয়ার ছাড়াও জলোচ্ছ্বাস থেকে পোল্ডার অভ্যন্তরীণ এলাকার জন-জীবন ও সম্পদ রক্ষা পাচ্ছে। নির্বাচিত পোল্ডারসমূহ জোয়ার ও লবণাক্ত পানি প্রতিরোধের মাধ্যমে জনদুর্ভোগ লাঘবসহ কৃষি, মৎস্য, ফল, সবজি উৎপাদনে নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করছে। শুষ্ক মৌসুমে পোল্ডার এলাকার খাল, পুকুর এবং অন্যান্য জলাশয়ে লবণমুক্ত পানি সংরক্ষিত থাকায় গৃহস্থালি-কৃষি কাজে ও গবাদিপশু-পাখির ব্যবহারযোগ্য পানির প্রাপ্যতা নিশ্চিত হয়েছে এবং প্রকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা পাচ্ছে।

উপসংহার : খাল পুনর্খনন, পানি ব্যস্থাপনা অবকাঠামো মেরামত/পুননির্মাণ এবং জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে পানি নিষ্কাশন সম্ভব হওয়ায় পোল্ডার এলাকা বর্ষায় জলাবদ্ধতা এবং বন্যামুক্ত হয়েছে। পুনর্খননের মাধ্যমে খালের পানি ধারণ ক্ষমতা বহুগুণে বাড়ায় শুকনা মৌসুমে কৃষি, মৎস্য, প্রাণিসম্পদ, গৃহস্থালি ইত্যাদি কাজে ব্যবহারযোগ্য পানির প্রাপ্যতা নিশ্চিত হয়েছে। পোল্ডার অভ্যন্তরে লবণাক্ত পানির প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ এবং খননকৃত খাল এবং অন্যান্য জলাশয়ে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করে পানির সুষ্ঠু ব্যবহারের মাধ্যমে কৃষিজ উৎপাদন বৃদ্ধির সাথে সাথে প্রাকৃতিক পরিবেশের উন্নয়ন সম্ভব হচ্ছে।

প্রাকৃতিক সম্পদভিত্তিক উৎপাদন, এলাকার কর্মসংস্থান ও উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়েছে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধির ফলে মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে। পোল্ডারে পানিব্যবস্থাপনায় স্থানীয় অধিবাসীদের সক্ষমতা এবং অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ব্যবহারযোগ্য পানির প্রাপ্যতা বৃদ্ধি পাওয়ায় কার্যক্রমভুক্ত এলাকায় ফসল এবং অভ্যন্তরীণ জলাশয়ে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। কারিগরি এবং সামাজিক কৌশলের সমন্বিত ব্যবহারের ফলে পরিবেশের উন্নয়নের সাথে সাথে এলাকায় জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে। গৃহীত বিভিন্ন কার্যক্রমের ফলে টেকসই উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে।

এলাকার খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের পাশাপাশি জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তায় ‘বু-গোল্ড প্রোগ্রাম’ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। ‘কৃষি পানি পরিবার, উন্নয়নের অংগীকার’— এই ব্রত সামনে নিয়ে বাপাউবো, ডিএই, মৎস্য এবং প্রাণিসম্পদের সমন্বিত কার্যক্রম সফলতা পেয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিঘাত বিবেচনায় খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির চেলেঞ্জ মোকাবিলায় এ ধরনের কার্যক্রম সমপ্রারণ প্রয়োজন।

লেখক : প্রকল্প সমন্বয়কারী পরিচালক, ব্লু-গোল্ড প্রোগ্রাম, পরিকল্পনা পরিদপ্তর-৩, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড।

আমারসংবাদ/এআই