Amar Sangbad
ঢাকা বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪,

তৃণমূলে আ.লীগের রেড নোটিস

রফিকুল ইসলাম

নভেম্বর ২৬, ২০২০, ০৬:০০ পিএম


তৃণমূলে আ.লীগের রেড নোটিস

অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, গ্রুপিং, ক্ষমতার লোভ, অনুপ্রবেশ ঘটানো এবং দায়িত্বশীল নেতাদের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে দিন দিন অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের তৃণমূলের রাজনীতি। স্থানীয় সাংসদ এবং জেলা-উপজেলাপর্যায়ের শীর্ষ নেতাদের বলয়ভিত্তিক রাজনীতির কারণে প্রায়ই ঘটছে সংঘর্ষ, হামলা-মামলা, ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা।

তবে এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে তৎপর আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড। অভ্যন্তরে কোন্দল সৃষ্টি করা জেলা আওয়ামী লীগের প্রায় অর্ধশত সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছে কেন্দ্র। বর্তমান পরিস্থিতিতে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের অভিযোগ উঠলেই সাংগঠনিক পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হবে। আওয়ামী লীগের শীর্ষপর্যায়ের একাধিক সূত্র বিষয়টি আমার সংবাদকে নিশ্চিত করেছে।

আ.লীগ সূত্রে জানা যায়, যেসব জেলা-উপজেলার নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভিন্ন সময় দ্বন্দ্ব-সংঘাত তৈরি হয়েছে সেসব এলাকা বিশেষ নজরে রেখেছে আওয়ামী লীগ। তাছাড়া বিভিন্ন এলাকা থেকে নেতাদের বিরুদ্ধে প্রাপ্ত অভিযোগ যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। তৃণমূলে সংগঠনকে সুসংগঠিত ও অন্তর্কোন্দলমুক্ত করতে কাজ করছে বিভাগীয় আটটি টিম। সে আলোকে যেসব কমিটিতে সমস্যা রয়েছে সেগুলোর নেতাদের সঙ্গে আলাদাভাবে যোগাযোগ করছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। অন্তর্কোন্দল থাকলে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা উপস্থিত থেকে তা মীমাংসা করার চেষ্টা করছেন।

তবে সর্বশেষ যদি কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কঠোর নির্দেশনা উপেক্ষা করে স্থানীয় নেতারা নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব-সংঘাত তৈরি করেন তাহলে তাদের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে নতুন নেতৃত্ব ঘোষণা করবে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ। এজন্য জেলা-উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রায় অর্ধশতাধিক সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে রেড নোটিসে রাখা হয়েছে।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান আমার সংবাদকে বলেন, দীর্ঘদিন সম্মেলন না হওয়ায় অনেক স্থানে দলের অভ্যন্তরে অন্তর্দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়েছে। কিছু কিছু স্থানে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে গ্রুপ তৈরি হয়েছে। সব গ্রুপ ভেঙে দেয়া হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, জেলা-উপজেলাপর্যায়ের সভাপতি-সম্পাদক যদি এক সাথে কাজ করতে ব্যর্থ হয় তাহলে তাদের দল থেকে অব্যাহতি দেয়া হবে। যার ফল ইতোমধ্যে আপনারা দেখেছেন।

তথ্যমতে, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্যদিয়ে আওয়ামী লীগ দ্বিতীয় মেয়াদে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এলে সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের কোন্দল শুরু হয়। দুই ভাগে বিভক্ত হয় পুরো জেলার রাজনীতি। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সিরাজগঞ্জ-১ আসনের এমপি মোহাম্মদ নাসিমের মৃত্যুর পর হঠাৎ প্রকাশ্যে আসে দীর্ঘদিনের অভ্যন্তরীণ কোন্দল। এতে ছাত্রলীগের এক কর্মী মৃত্যুবরণ করে।

গত শনিবার জেলার বেলকুচি উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভাকে কেন্দ্র করে দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত ১০ জন আহত হয়। এই ঘটনার পর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদককে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। বর্তমান জেলার রাজনীতি কিছুটা স্থিতিশীল রয়েছে।

অভ্যন্তরীণ কোন্দল, দ্বন্দ্ব, বলয়ভিত্তিক ও গ্রুপিংয়ের রাজনীতি করায় গত ১৯ নভেম্বর নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। একই সাথে দলের কোন্দল নিরসনের জন্য ভারপ্রাপ্ত সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ। অব্যাহতি পাওয়া নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম নরসিংদী সদর আসনের সংসদ সদস্য এবং সাধারণ সম্পাদক আবদুল মতিন ভূঁইয়া জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান।

নরসিংদীতে জেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এতদিন সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক দ্বন্দ্বে মূলত দুই ভাগে বিভক্ত ছিলো। দুপক্ষই নিজেদের নেতা-কর্মীদের নিয়ে আলাদা আয়োজনে জাতীয় অনুষ্ঠান ও দলীয় কর্মসূচি পালন করতো। জেলার শীর্ষ এই দুই নেতার গ্রুপিংয়ে ওই এলাকায় আওয়ামী লীগ সাংগঠনিকভাবে ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়ছিল। যদিও এর আগে নিজেদের বিভেদ ভুলে দুজনকে একসঙ্গে কাজ করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন ঢাকা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম।

এর আগে বিভিন্ন অভিযোগে ফরিদপুর শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে অব্যাহতি দেয়া হয়। বিলুপ্ত করা হয় ফরিদপুর জেলা যুবলীগের কমিটি। একই জেলার ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককেও অব্যাহতি দেয়া হয়। মূলত এই জেলায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা কয়েক ভাগে বিভক্ত। শুধু এই সকল জেলা নয়, দেশের অধিকাংশ জেলা, মহানগর এবং থানাপর্যায়ের স্থানীয় আ.লীগ নেতারা বিভক্ত হয়ে রাজনীতি করছেন।

পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের পর থেকেই অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিয়ে চলছে নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতি। দীর্ঘদিনের এই কোন্দল নিরসন এবং শক্তিশালী তৃণমূল গঠনে এই জেলার বিশেষ বর্ধিত সভায় যোগ দেন রাজশাহী বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন। এ সময় জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের সকল ভেদাভেদ ভুলে একত্র হয়ে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি। তবুও কোন্দল শেষ হয়নি।

আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে ফের কোন্দলের সৃষ্টি হতে পারে মুন্সিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগে। জেলার প্রভাবশালী নেতাদের মাঝে দীর্ঘদিনের কোন্দল থাকলেও বর্তমানে প্রকাশ্যে তেমন কোনো দ্বন্দ্ব নেই। তবে পৌরসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে সরগরম হয়ে উঠেছে স্থানীয় রাজনীতি। দলীয় প্রতীক পেতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন দলের প্রভাবশালীরা।

ফলে নির্বাচনকে সামনে রেখে জেলার পুরনো কোন্দল ফের প্রকাশ্যে আসতে পারে। স্থানীয় এমপি, মেয়র এবং জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের ত্রিমুখী কোন্দলে চলছে নারায়ণগঞ্জের রাজনীতি। তবে মাঠের রাজনীতিতে বর্তমানে ততটা উত্তাপ না থাকলেও আগামীতে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে সামনে রেখে বিভক্ত হতে পারে স্থানীয় নেতারা।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন আমার সংবাদকে বলেন, দলের অভ্যন্তরে দ্বন্দ্ব, কোন্দল এবং ব্যক্তিবলয় তৈরি করে যারা প্রতিহিংসার রাজনীতি করে, তাদের কোনোভাবেই ছাড় দেয়া হবে না। এদের কর্মকাণ্ডের ওপর বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে। কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলেই দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হবে। এ বিষয়ে নেত্রীর কঠোর নির্দেশনা রয়েছে।

সমপ্রতি দুটি জেলায় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে অব্যাহতি দেয়া প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, এটি কেন্দ্র হতে তৃণমূলের জন্য দলীয় প্রধানের একটি বার্তা।

মজবুত এবং গণমুখী সংগঠন আওয়ামী লীগের প্রধান লক্ষ্য, বিভিন্ন ইউনিটে পারস্পরিক সমঝোতা, সমন্বয় এবং সমপ্রীতির অভাব দেখা দিলে সংগঠনে অচলাবস্থা তৈরি হয়। দলের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলাকে এখন গুরুত্বের সাথে দেখা হচ্ছে। সততা, নিষ্ঠা এবং দলের প্রতি ত্যাগের স্বীকৃতিস্বরূপ জেলা থেকে কেন্দ্রে পুরস্কৃত করা হয়েছে।

আমারসংবাদ/এআই