Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪,

অস্তিত্ব সংকটে কোহেলিয়া নদী

ফুয়াদ মোহাম্মদ সবুজ, মহেশখালী

নভেম্বর ২৬, ২০২০, ০৬:০০ পিএম


অস্তিত্ব সংকটে কোহেলিয়া নদী

মহেশখালী-মাতারবাড়ীর মধ্য দিয়ে প্রবাহমান কোহেলিয়া নদী। সম্প্রতি মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ীতে কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য মাতারবাড়ীর দক্ষিণে এক হাজার ৪১৪ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়।

বর্তমানে সেখানে মাটি ভরাট করে প্রকল্পের অবকাঠামোগত উন্নয়নকাজ চলছে। সেই উন্নয়ন কাজের বিভিন্ন বর্জ্য ও পলি মাটি পাইপের মাধ্যমে সরাসরি কোহেলিয়া নদীতে ফেলায় দিন দিন ভরাট হয়ে যাচ্ছে নদীটি।

ফলে ওই নদীতে ইঞ্জিনচালিত লবণের বোট ও বিভিন্ন ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এদিকে কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের পলি ও মাটি কোহেলিয়া নদীর পানির সঙ্গে মিশে গিয়ে বর্তমানে নদীর পানি ঘোলাটে এবং দূষিত হয়ে প্রায় অর্ধশত চিংড়ি প্রজেক্টের মাছ মারা গেছে।

এ কারণে বাকি থাকা চিংড়ি প্রজেক্টের ইজারাদারদের কয়েকশ কোটি টাকা লোকসান হতে পারে বলে জানান ইজারাদাররা। দিন দিন নদীটি নাব্য হারিয়ে এখন আগের মতো তেমন আর জেলেদের জালে মাছও ধরা পড়ছে না। এ নদীর ওপর নির্ভরশীল ছিলো উপজেলার কয়েক হাজার জেলে পরিবার।

কিন্তু এ নদী দিন দিন ভরাট ও দখল হয়ে যাওয়ায় জেলেদের জালে আগের মতো আর ধরা পড়ছে না সামুদ্রিক মাছ। মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণকাজের সুবাদে সেখানে নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে কোহেলিয়া নদীতে জেলেদের মাছ ধরাও নিষেধ করে দিয়েছে প্রকল্প নির্মাণ কর্তৃপক্ষ।

তাই জেলেরা তাদের একমাত্র পেশা হারিয়ে এ নদীর ওপর নির্ভরশীল অনেক জেলে এখন বেকার হয়ে পড়েছে। নদী ভরাটের কারণে ভাটার সময় ছাড়াও পূর্ণ জোয়ারেও এখন বড় ও মাঝারি লবণ বোট চলাচল করতে পারছে না। আগে এ নদীতে পাঁচ হাজার মণ লবণ ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন বোট চলাচল করলেও এখন মাঝারি কোনো ইঞ্জিনচালিত নৌযান চলাচল করতে পারছে না।

এদিকে নদীতে জেগে ওঠা চরগুলো একের পর এক দখল করে নিচ্ছে প্রভাবশালী ভূমিদস্যুরা। তারা প্রথমে ছোট ছোট বাঁধ দিয়ে মাছের ঘের তৈরি করে নদীর চর দখল করছে, ফলে দিন দিন ছোট হয়ে আসছে কোহেলিয়া নদী?

হোয়ানকের লবণ ব্যবসায়ী দোলেয়ার বলেন, কোহেলিয়া নদীটি যেভাবে দিন দিন ভরাট হয়ে যাচ্ছে তাতে মনে হয় ভবিষ্যতে এ নদীর অস্তিত্ব থাকবে না। আগে এ নদী দিয়ে বড় বড় লবণ বোট চলাচল করলেও এখন ছোট ছোট লবণের বোটও চলাচল করতে পারছে না।

এ কারণে লবণ আনলোড করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে লবণ ব্যবসায়ীদের। সরকার এ গুরুত্বপূর্ণ নদীটি ড্রেজিংয়ের ব্যবস্থা না করলে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হবেন লবণচাষি ও ব্যবসায়ীরা।

পরিবেশ আন্দোলন বাপার মহেশখালীর নেতা আবু বক্কর ছিদ্দিক বলেন, কোহেলিয়া ভরাট হয়ে যাওয়ায় বিরূপ প্রভাব পড়ছে নদীর দুপাড়ের চিংড়ি প্রজেক্ট ও লবণ চাষে। শিগগিরই এ নদীতে ড্রেজিংয়ের ব্যবস্থা না করলে শত শত চিংড়ি প্রজেক্ট ও চাষিদের লবণ মাঠে পানি নিষ্কাশন বাধাগ্রস্ত হবে। এতে একদিকে যেমন দেশে লবণ ঘাটতি দেখা দেবে, অন্যদিকে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন চিংড়ি ও কাঁকড়া ব্যবসায়ীরা।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম সম্পাদক পরিবেশবিদ শরীফ জামিল বলেন, এখানকার জেলে, লবণচাষি ও ব্যবসায়ীদের জীবন-জীবিকা হুমকির মুখে পড়েছে। কাজেই প্রকৃতি এবং পরিবেশ রক্ষায় কোহেলিয়া নদী বাঁচাতে হবে।

আমারসংবাদ/এআই