Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪,

জলাবদ্ধতা নিরসনের দায়িত্ব দুই সিটির সামর্থ্য বাড়াতে হবে

নভেম্বর ২৮, ২০২০, ০৬:২৫ পিএম


জলাবদ্ধতা নিরসনের দায়িত্ব দুই সিটির সামর্থ্য বাড়াতে হবে

রাজধানীতে বর্ষা মৌসুমে সামান্য ও মাঝরি ধরনের বৃষ্টিতে হাঁটু থেকে কোমর পর্যন্ত সড়ক ডুবে যাওয়ার ঘটনা বছরের পর বছর ধরে চলছে। এতে সীমাহীন দুর্ভোগ নগরবাসীদের বসবাস করতে হয়। জলাবদ্ধতা নিরসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত ওয়াসা কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে রীতিমতো উদাসীন।

অন্যদিকে, ঢাকা দুই সিটি কর্পোরেশন এবং ওয়াসা জলাবদ্ধতার জন্য পারস্পরকে দোষারোপ করেই কালক্ষেপণ করে।

আশার কথা হচ্ছে— সম্প্রতি ঢাকা শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে খালসমূহ সিটি কর্পোরেশনের কাছে ন্যাস্তকরণ সংক্রান্ত এক পরামর্শ সভা শেষে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম জানিয়েছেন, রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসনে বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের দায়িত্ব ওয়াসার কাছ থেকে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনকে দেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। যে কাজটি প্রায় ৩০ বছর আগে করা যেত, তা এখন করা হচ্ছে।

১৯৮৮ সালে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগকে পানি নিষ্কাশনের দায়িত্ব সিটি কর্পোরেশনকে দেয়ার কথা থাকলেও তা ওয়াসাকে দেয়া হয়। ওয়াসা যে তার উপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে পারেনি, ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে, তা সকলেরই জানা।

সেই থেকে জলাবদ্ধতা নিরসনের ব্যর্থতার দায়ে ওয়াসা ও সিটি কর্পোরেশন পরস্পরকে দোষারোপ করতে থাকে। এ দোষারোপের মধ্যে পড়ে রাজধানীর জলাবদ্ধতার যেমন নিরসন হয়নি, তেমনি নগরিকদের দুর্ভোগ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েছে।

এখন এমন পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে, বর্ষা মৌসুমে মাঝারি মানের বৃষ্টি হলেই পুরো রাজধানী জলাবদ্ধতার শিকার হয়। অবশেষে তিন দশক পর যেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হুশ হয়েছে। রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসন নিয়ে সিটি কর্পোরেশন ও ওয়াসার মধ্যে যে দোষারোপের অপসংস্কৃতি চলে আসছিল, তার একটি সমাধান হতে যাচ্ছে।

জলাবদ্ধতা নিরসন ও পানি নিষ্কাশনের দায়িত্ব সিটি কর্পোরেশনকে দেয়া হচ্ছে। এটি নগরবাসীর জন্য সুসংবাদ হলেও দেখার বিষয় হচ্ছে, দুই সিটি কর্পোরেশন দায়িত্বটি কিভাবে পালন করে এবং তা করতে কতটুকু সামর্থ্যের পরিচয় দেয়। দায়িত্বটি সিটি কর্পোরেশনকে দেয়ার পক্ষেই মত জোরালো ছিল।

দায়িত্ব ন্যাস্তকরণ সিদ্ধান্তে দুই মেয়রও সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তারা একে যুগান্তকারী বলে অভিহিত করেছেন। আমরাও আশা করি, যুগের পর যুগ ধরে চলে আসা রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসনে দুই মেয়র সফল হবেন। রাজধানীর অভ্যন্তর দিয়ে প্রবাহিত যে অর্ধশত খাল ছিল, যেগুলোর সিংহভাগ অবৈধ দখলে চলে গেছে কিংবা পরিত্যক্ত হয়ে বর্জ্যের ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে, আশা করি, তারা সেগুলো সংস্কারের উদ্যোগ নেবেন।

যেসব লেক, ঝিল, পুকুর রয়েছে সেগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে যথাযথভাবে সংরক্ষণ করবেন। এমনকি রাজধানীর চারপাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া চার নদীর অবৈধ দখলমুক্তকরণ, সেগুলোর নাব্য ফিরিয়ে স্বাভাবিক স্রোতধারায় পরিণত করতে জোরালো উদ্যোগ নেবেন। এসব কাজ করা সহজ নয়।

তবে সদিচ্ছা এবং দৃঢ় সিদ্ধান্ত নিলে তা করা কঠিনও নয়। ঢাকার মতো চট্টগ্রাম ও অন্য সিটি কর্পোরেশনকেও একই দায়িত্ব দেয়া উচিত বলে আমরা মনে করি। বলার অপেক্ষা রাখে না, এসব কাজ করতে যথেষ্ট অর্থেরও প্রয়োজন।

 সরকারকে আবশ্যিকভাবে অর্থের যোগান দিতে হবে। দায়িত্ব দিলেই হবে না, দায়িত্ব পালনের সামর্থ্যও বাড়াতে হবে। আমরা আশা করি, দুই সিটি কর্পোরেশনের ওপর জলাবদ্ধতা নিরসনের যে দায়িত্ব ন্যাস্ত হতে যাচ্ছে, তা তারা যথাযথভাবে পালন করবে।

আমারসংবাদ/এআই