Amar Sangbad
ঢাকা বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪,

ঢাকার রসনায় কেরানীগঞ্জের সবজি

সামসুল ইসলাম সনেট, কেরানীগঞ্জ

নভেম্বর ২৯, ২০২০, ০৬:০০ পিএম


ঢাকার রসনায় কেরানীগঞ্জের সবজি

একটা সময় ঢাকা শহরের শাক-সবজির অক্সিজেন ভাবা হতো কেরানীগঞ্জকে। শহরের শাক-সবজির বিশাল অংশের জোগান দিতো কেরানীগঞ্জ ও তার আশপাশ এলাকার কৃষকরা।

কিন্তু শিল্পায়ন ও নগরায়ণের চ্যালেঞ্জে হেরে বসেছিল এই এলাকার কৃষকরা। কোণ্ডা থেকে হযরতপুর হয়ে পাশের ভাকুর্তা ও হেমায়েতপুরজুড়ে ছিলো শাক-সবজির বিশাল ভাণ্ডার! এই এলাকার কৃষকরা ধান ও পাটের চেয়ে সবজির দিকেই বেশি মনোযোগী।

কিন্তু ঢাকা শহরের জনবসতি বৃদ্ধি ও ভূমিদস্যুদের চাপ সইতে পারেনি কেরানীগঞ্জ। উপজেলার শুভাঢ্যা, কোণ্ডা, শাক্তা অনেক আগেই চাষাবাদের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। কোনোমতে টিকে আছে রোহিতপুর, কলাতিয়া, তারানগর, হযরতপুরসহ কিছু এলাকা। তাই কম জায়গায় উচ্চ ফলনশীল ও দামি সবজি চাষ করে ঘুরে দাঁড়াতে চাচ্ছে এই এলাকার কৃষকরা।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বন্যায় কয়েক দফা লোকসানের পর কেরানীগঞ্জের কৃষকরা একটু খুশি। মাঠে মাঠে যেনো সবুজের হাসি। কেউ ক্ষেতের সবজি তোলা নিয়ে ব্যস্ত, কেউ কীটনাশক স্প্রে করছেন। কেউ কেউ আবার জমি প্রস্তুতি করছেন আবাদের জন্য।

সবমিলে শিম, বেগুন, ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, কাঁচামরিচ, মুলা, করলা, লাউ, ঢেঁড়স, গাঁজর, লালশাক, পালংশাক, নাপা শাকসহ বিভিন্ন জাতের সবজিতে ভরে আছে দিগন্তজোড়া ফসলের মাঠ। যা সকাল হলেই শোভা বাড়ায় বাজারগুলোর। ক্রেতা-বিক্রেতাদের হাঁকডাকে ভারী হয়ে উঠে বাজারের চারপাশ। ফুলকপি, বাঁধাকপি, লাউ, কুমড়া আর বাহারি শাক-সবজিগুলোকে দেখেই মনে হয় যেনো গুছানো বাগান।

হযরতপুরের সবজি চাষি কবির হোসেন দৈনিক আমার সংবাদকে বলেন, দুই দফা বন্যার পানিতে প্রায় লক্ষ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এখন লালশাক, পালংশাক, শসা ও ধুন্দুল বিক্রি করে ক্ষতি পোষাতে চেষ্টা করছি। প্রথমদিকে সবজির দাম ভালো থাকলেও এখন দাম পাচ্ছি না। আমাদের তুলনায় খুচরা বিক্রেতারা বেশি     

লাভবান হচ্ছে। রুহিতপুরের চাষি আব্দুল জলিল বললেন প্রায় একই কথা। দামের সময় ফসল পাইনি। এখন ভালো ফসল হলেও দাম নেই তেমন। তবে বাজার এমন থাকলেও ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবো। আর সরকারের পক্ষ থেকে যে বীজ, সার ও ওষুধ দেয়া হয় তাও অপ্রতুল।

এখন প্রতি পিস লাউ বিক্রি হচ্ছে ২০-৩০ টাকা যা কিছুদিন আগেও ছিলো ৮০ থেকে ১০০ টাকা, ফুলকপি ২০ থেকে ৪০, বাঁধাকপি ৩০ থেকে ৪০, শিমের কেজি ৬০-৭০ টাকা এবং শাক বিক্রি হচ্ছে প্রকারভেদে পাঁচ থেকে ২০-৩০ টাকা আঁটি। কেরানীগঞ্জের রোহিতপুর, কলাতিয়া, আটিবাজার, ভাওয়ার ভিটির হাটগুলো বেশি জমজমাট। বাজারগুলোতে ফজর নামাজের আগেই শুরু হয়ে যায় বেচা-কেনা।

সকাল ৮টার আগেই বেচা-কেনা শেষ হয়ে যাওয়ায় ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়েই লাভবান হচ্ছে। সকাল সকাল বাজারের কাজ শেষ করে নতুন দামে বুনতে শুরু করে সোনালী স্বপ্ন।  কলাতিয়া সবজি বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, খুব ভোরে কলাতিয়া, তারানগর, হয়রতপুরের বিভিন্ন জায়গা থেকে টাটকা শাক-সবজি নিয়ে আসছেন কৃষকরা। আর কেরানীগঞ্জের সবচেয়ে বেশি সবজি আসে এখানেই। তাই বেচা-কেনা প্রচুর। এখানে স্থানীয় ব্যবসায়ী ছাড়াও শহরের বড় বড় পাইকাররা ট্রাক, পিকআপ, সিএনজি নিয়ে চলে আসেন টাটকা শাক-সবজি নিতে।

তাই স্থানীয় বাজারসহ ঢাকা শহরবাসীর চাহিদাও মিটাচ্ছে কেরানীগঞ্জের শাক-সবজি।শহরের মিরপুর কৃষি মার্কেট থেকে আসা ব্যবসায়ী জিয়া জানান, এই এলাকার শাক-সবজির চাহিদা বেশি শহরের মানুষের কাছে, তাই কাওরানবাজার রেখে এখানে চলে আসি। লাভও বেশি এখানকার শাক-সবজি বেচে।

মোহাম্মদপুর টাউন হল থেকে আসা আশিক জানান, মোহাম্মদপুরবাসীর প্রথম পছন্দ কেরানীগঞ্জের শাক-সবজি। তাই আমরা একটু বেশি দামে হলেও এখান থেকেই সবজি কিনি। চাহিদা ভালো হওয়ায় লাভও ভালো হয়।  

কেরানীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শহিদুল আমীন বলেন, আমরা কেরানীগঞ্জের কৃষি নিয়ে ব্যাপক কাজ করছি। গতবারের তুলনায় এবার জমির পরিমাণ কম হলেও উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা বেশি।

গতবছর অর্থাৎ ২০১৯ সালে উপজেলায় ৩৩০২ হেক্টর জমিতে ৭০ হাজার ১৫৮ মেট্রিক টন লক্ষ্যমাত্রা ছিলো, এবার আরও বেশি আশা করছি। আর আমরা বিষমুক্ত নিরাপদ শাক-সবজির দিকে নজর রাখছি।

আমারসংবাদ/এআই