Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪,

বিশ্ব এইডস দিবস আজ: বড় ঝুঁকি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে

মাহমুদুল হাসান

নভেম্বর ৩০, ২০২০, ০৬:০০ পিএম


বিশ্ব এইডস দিবস আজ: বড় ঝুঁকি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে

রোহিঙ্গাদের মধ্যে রয়েছে এইডসের বড় ঝুঁকি। অর্ধ সহস্রাধিক রোগী ইতোমধ্যে শনাক্ত হয়েছে। গতবছরও নতুন ১০৫ জন রোগীর সন্ধান মিলেছে। এসব রোগী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাইরে অবাধে চলাফেরা করে। ফলে এইডস রোহিঙ্গাদের মধ্যে দ্রুত ছড়িয়ে যাচ্ছে।

ধারণা করা হচ্ছে, কক্সবাজারে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের মধ্যে ১৮ হাজারের বেশি নারী ২০১৭ সালে ধর্ষিত হয়ে এসেছে। এদের মধ্যে অনেকে এইডসের জীবাণু বহন করলেও শনাক্তের বাইরে রয়েছেন। তাই শনাক্তের বাইরে আরও কয়েকগুণ বেশি রোগী থাকতে পারে।

এর ফলে শুধু কক্সবাজার নয়, সারা দেশের মানুষের জন্য মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরির আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, রোহিঙ্গাদের মধ্যে এর চেয়েও বেশি এইডস রোগী আছে। সে সব সংক্রমিত ব্যক্তি শনাক্ত করাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, রোহিঙ্গাদের ৫১৪ জন এইচআইভি এইডস আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে প্রায় সাড়ে চারশ রোগীকে চিকিৎসার আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। এইডস মোকাবিলায় বেশ গুরুত্বসহ কাজ করা হচ্ছে।

আশা করা হচ্ছে, আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে এইডসমুক্ত দেশ গড়া সম্ভব হবে।

জাতিসংঘের এইডসবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইডসের মতে, বিশ্বে প্রতিদিন সাড়ে পাঁচ হাজার মানুষ নতুন করে এইডসে আক্রান্ত হন। এর মধ্যে ৫০০ জনেরই বয়স ১৫ বছরের নিচে। আক্রান্ত ৩২ শতাংশের বয়স ১৫ থেকে ২৪ বছরের নিচে, যার ২০ ভাগই নারী।

আক্রান্তদের ৬১ ভাগ সাব-সাহারা আফ্রিকান অঞ্চলে বসবাসকারী। প্রতিষ্ঠানটির তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে বিশ্বে মোট এইডস আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ৩৭ দশমিক ৯ মিলিয়ন। এর মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক লোক ৩৬ দশমিক ২ মিলিয়ন।

মোট আক্রান্তের ১৮ দশমিক ৮ মিলিয়ন নারী এবং ১ দশমিক ৭ মিলিয়ন শিশু। শুধু ২০১৮ সালে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ১ দশমিক ৭ মিলিয়ন, যার মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক ১ দশমিক ৬ মিলিয়ন। এ সময় এইডস আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে সাত লাখ ৯০ হাজার মানুষের। যার মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক ছয় লাখ ৭০ হাজার এবং শিশু এক লাখ।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এইডস ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম মিয়ানমার। মিয়ানমারের মোট জনসংখ্যার প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে হাজারে আটজনই এইডস রোগে আক্রান্ত। এদের পরিবারের সবার মধ্যেই রোগ সংক্রমিত হয়েছে।

এর আগেও মিয়ানমার থেকে বিভিন্ন সময়ে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে এইডস রোগী পাওয়া গেছে। অন্যদিকে, বাংলাদেশে এইডস রোগীর সংখ্যা শূন্য দশমিক শূন্য ১ শতাংশের মধ্যে।

এমন প্রেক্ষিতে জনসাধারণকে এইডস সম্পর্কে সচেতন করতে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো আজ (মঙ্গলবার) বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে বিশ্ব এইডস দিবস-২০২০। ১৯৮৮ সাল থেকে এইডসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ও জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে বিশ্বে এ দিবসটি পালন করে থাকে। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘সারা বিশ্বের ঐক্য, এইডস প্রতিরোধে সবাই নিবো দায়িত্ব’।

জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেশে বর্তমানে এইচআইভি/এইডস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রায় ১৪ হাজার। এসব রোগীর মধ্যে এ পর্যন্ত শনাক্ত হয়ে চিকিৎসার আওতায় এসেছে মাত্র সাত হাজার ৩৭৪ জন। যার মধ্যে এক হাজার ২৪২ জন ইতোমধ্যে মারা গেছেন।

শুধু ২০১৯ সালে এক বছরে শনাক্ত হয়েছিল ৯১৯ জন। এদের মধ্যে ১৭০ জন মারা গেছে। আক্রান্তদের তথ্য-উপাত্ত যাচাই করে দেখা গেছে, সাধারণ মানুষ রয়েছে ৩৭ শতাংশ। বিদেশ ফেরত রয়েছে ১৯ শতাংশ, শিরায় মাদক সেবনকারী রয়েছে ২৪ শতাংশ রয়েছে।

এছাড়া যৌনকর্মী এবং আক্রান্তদের পরিবারের অন্য সদস্যরাও রয়েছে। দেশের অন্য অঞ্চলের তুলনায় ঢাকা শহরে আক্রান্ত বেশি রয়েছে। এই সংখ্যা প্রায় দুই হাজার ৫৭২ জন।

২০১৮ এর একটি সমীক্ষায় অনুমান করা হয়েছে যে, বাংলাদেশের কক্সবাজার এলাকায় প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী রয়েছে।

সেখানে ২০১৭ সালে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা নিধন কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর থেকে মিয়ানমার সেনাবাহিনী এবং স্থানীয় বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের কাছে কমপক্ষে ১৮ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা মুসলিম মহিলা ও মেয়ে ধর্ষণের শিকার হয়েছে। তাদের অধিকাংশ বাংলাদেশের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থান করছে।

এদের মধ্যে গত বছর ১০৫ জনের দেহে এইডস শনাক্ত হয়েছে। এ পর্যন্ত সেখানে ৫১৪ জন এইডস রোগী শনাক্ত হয়েছে। তার মধ্যে সাড়ে চারশ রোগীকে চিকিৎসার আওতায় আনা হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এইডস এসটিডি প্রোগ্রামের সিনিয়র ম্যানেজার মো. আক্তারুজ্জামান বলেন, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের থেকে যাতে করে আর এইচআইভি এইডস না ছড়ায় এ জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সেখানে শনাক্ত হওয়া ৫১৪ জন এইডস রোগীর মধ্যে সাড়ে চারশ রোগীকে চিকিৎসার আওতায় আনা হচ্ছে। বাকিদেরও চিকিৎসার আওতায় আনার চেষ্টা করা হচ্ছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের টিবি ল্যাপ্রোসি ও এসটিডি এইডস কর্মসূচির লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. সামিউল ইসলাম বলেন, আগের চেয়ে এইডস আইভি শনাক্তে সক্ষমতা বেড়েছে। সম্ভাব্য জনগোষ্ঠীকে সেবার আওতায় এনেছি। সাধারণ মানুষের মধ্যে এমন রোগী থাকলে তা বের করা অনেক কঠিন।

এইচআইভি আক্রান্ত হওয়ার পর এইডস হতে অনেক সময় লাগে। আমরা ২০১২ সাল থেকে সারা দেশে এইডস রোগীদের বিনামূল্যে ওষুধ প্রধান ও এইডস প্রতিরোধে সামাজিক স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছি।

জাতিসংঘের ঘোষণা অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে এইডস নির্মূল করতে হলে সমাজের সর্বস্তরের জনগণের সম্পৃক্ততা খুবই জরুরি।

কর্মসূচি : এদিকে বিশ্ব এইডস দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।

এবারো স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাংলাদেশে দিবসটি পালন করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ উপলক্ষে আজ দুপুর সাড়ে ১২টায় রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমিতে সেমিনার ও প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে।

আমারসংবাদ/এসটিএম