Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪,

ব্যক্তিগত কাজে সরকারি জিপ ব্যবহার

নিজস্ব প্রতিবেদক

নভেম্বর ৩০, ২০২০, ০৬:৫০ পিএম


ব্যক্তিগত কাজে সরকারি জিপ ব্যবহার

রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (টিএইচও) ডা. আরশাদ হোসেনের অদক্ষতার কারণে স্বাস্থ্যসেবায় হ-য-ব-র-ল সৃষ্টি হয়েছে। বিধি অনুযায়ী টিএইচও হাসপাতাল কোয়াটারে রাত যাপন করার কথা থাকলেও দেড় বছরে তিনি এক রাতও কাটাননি।

সাত মাস আগে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে একটি জিপ গাড়ি বরাদ্দ পেলে তা সরকারি তেল খরচে ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।

হাসপাতালের একজন চিকিৎসক বলেন, বিধি অনুযায়ী সরকারি গাড়ি কখনো ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করা যাবে না এবং রাতে গাড়ি নিজ বাড়িতে রাখা যাবে না।

কিন্তু ডা. আরশাদ তা মানছেন না। তিনি রংপুর বিভাগীয় শহরে পরিবার নিয়ে বসবাস করেন। বদরগঞ্জ হাসপাতাল থেকে রংপুর শহরের দূরত্ব ২৪ কিলোমিটার। তিনি প্রতিদিন সরকারি গাড়ি নিয়ে নিজ বাসা থেকে (রংপুর শহর) যাতায়াত করছেন।

এতে বাড়তি তেল খরচের টাকা সরকারকে বহন করতে হচ্ছে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ওই জিপটি অকটেন দিয়ে চলে। পাম্পে এক লিটার অকটেনের দাম ৮৬ টাকা। এক লিটার তেলে পাঁচ কিলোমিটার চলে। প্রতিদিন ২৪ কিলোমিটার যাতায়াতে ৪১২ টাকার অকটেন খরচ হয়।

এতে মাসে বাড়তি তেল খরচ হয় ১২ হাজার ৩৮৪ টাকার। এই তেলের ভাউচার দিয়ে সরকারি বরাদ্দ থেকে টাকা তোলা হয়। বিষয়টি স্বীকার করে ওই জিপগাড়িচালক ফারুক হোসেন বলেন, আমারও বদরগঞ্জ হাসপাতাল কোয়াটারে থাকার কথা।

কিন্তু টিএইচও স্যারের নির্দেশের বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আমার গ্রামের বাড়ি পীরগঞ্জ উপজেলায় হলেও তার কারণে আমাকে রংপুর শহরে বাসাভাড়া নিয়ে থাকতে হচ্ছে।

বদরগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের হেড ক্লার্ক (বড়বাবু) ফজলুল হক বলেন, ডা. আরশাদ স্যারের গাড়ি যত কিলো ব্যবহার হয়, ভাউচারের বিনিময় তত কিলোর তেল খরচের টাকা বরাদ্দ পাওয়া যায়।

একজন উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল কর্মকর্তা বলেন, ডা. আরশাদ স্যারের অদক্ষতার কারণে উপজেলার ৩০টি কমিউনিটি ক্লিনিক ও চারটি উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বেহাল অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।

তিনি এসব কমিউনিটি ক্লিনিক ও উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র সঠিকভাবে তদারক না করায় খেয়াল-খুশিমত খোলা হচ্ছে। এমনকি কোনো কোনোদিন কোনো কোনো কমিউনিটি ক্লিনিক ও উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র খোলাই হয় না। এ কারণে মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছানোর সরকারের যে উদ্দেশ্য তা ভেস্তে যাওয়ার উপক্রম হচ্ছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন নার্স বলেন, ডা. আরশাদ স্যার এই হাসপাতালের মাথা। সরকার তার রাত যাপনের জন্য কোটি টাকা খরচ করে কোয়াটার নির্মাণ করে দিয়েছেন। আমাদের এবং যেকোনো রোগীর সমস্যা দেখার জন্য বাধ্যতামূলক তাকে ২৪ ঘণ্টা হাসপাতাল ক্যাম্পাসে অবস্থান করার নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু আমরা তাকে রাতে তো দূরের কথা দিনের বেশিরভাগ সময়ই পাই না।

ওই নার্স অভিযোগ করে বলেন, সরকারি জিপ গাড়িতে চড়ে আরশাদ স্যার রংপুর শহর থেকে সকাল ১০টার দিকে হাসপাতাল ক্যাম্পাসে আসেন। আবার ঘড়িরকাঁটায় দুপুর একটা বাজার সঙ্গে সঙ্গেই তিনি ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন। হাসপাতালে যে সময়টুকু থাকেন কোনো রোগী দেখেন না।

অভিযোগ সম্পর্কে টিএইচও ডা. আরশাদ হোসেন বলেন, সরকারি কোয়াটারে অন্যান্য চিকিৎসকরা থাকার কারণে সেখানে আমার থাকার জায়গা নেই। তাছাড়া আমি কেন, রংপুরের অন্যান্য উপজেলার টিএইচওরাও হাসপাতাল ক্যাম্পাসে রাত যাপন করেন না।

সরকারি জিপ ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করার অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অভিযোগটি মিথ্যা। মূলত হাসপাতালে গ্যারেজ না থাকায় এবং নিরাপত্তার অভাবে জিপটি নিজ বাড়িতে নিয়ে আসি।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি কর্মকর্তা হিসেবে অদক্ষ নই। পদোন্নতির সিরিয়ালে আছি। আমি একজন সহজ-সরল মানুষ হওয়ায় কিছু দুর্বলতাও আছে আমার, তা স্বীকার করি। এ কারণে কোনো স্টাফ যদি অপরাধ করে তাহলে অ্যাকশনে যেতে পারি না। সতর্ক করে দেই। হয়তো এ কারণে অনেকেই অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ছেন। কিন্তু আমি কোনো অনিয়ম-দুর্নীতি করি না।

গতকাল সোমবার মুঠোফোনে রংপুরের সিভিল সার্জন ডা. হিরম্ব কুমার রায় বলেন, ডা. আরশাদ হোসেনের ২৪ ঘণ্টাই হাসপাতাল ক্যাম্পাসে থাকার কথা। কিন্তু তিনি কেন থাকেন না বিষয়টি দেখা হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরকারি গাড়ি ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করার কোনো সুযোগ নেই।   

আমারসংবাদ/এসটিএম