Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪,

রাজনীতিতে ব্যবসার জোট

ডিসেম্বর ১, ২০২০, ০৮:৫০ পিএম


 রাজনীতিতে ব্যবসার জোট

ভোট ও রাজনীতির ইস্যু এলে দেশে বারবার রাজনৈতিক জোটের দৃশ্যপট তৈরি হয়। দেশে বিএনপিসহ সরকারবিরোধী দল ও জোটের দুর্বলতা কাজে লাগাতে আবারো নতুন জোট নিয়ে রাজনীতি পাড়ায় আলোচনা চলছে। চলতি প্রেক্ষাপটে বিএনপির ব্যাকআপ রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে নতুন জোট গঠনের অনেকেই ইঙ্গিত দিচ্ছেন।

গত ২৮ নভেম্বর শহীদ মিনারে গণসংহতি আন্দোলন, ছাত্র-যুব ও শ্রমিক অধিকার পরিষদ, মওলানা ভাসানী অনুসারী পরিষদ ও রাষ্ট্র চিন্তা নামের একটি সংগঠন মিলে যৌথ সমাবেশ করেছে। আগামী ১২ ডিসেম্বর অন্যান্য আগ্রহী সংগঠনের সঙ্গে আলোচনারও কথা উঠেছে। সেটিকে সামনে রেখে নতুন জোট নিয়ে রাজনীতি পাড়ায় তুমুল আলোচনা চলছে।

তবে সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোর নেতা জোনায়েদ সাকি, নুরুল হক নুর, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী জোট গঠনের বিষয়ে অস্বীকার করেছেন। তারা বলছেন, নতুন জোটের বিষয়ে কিছুই জানেন না।

দেশের রাজনীতিতে চোখ রাখা ব্যক্তিরা বলছেন, খালেদা জিয়ার অন্তরালে বিএনপি প্রায় মরে গেছে। ভোটের ঘুঁটি জাতীয় পার্টিও সরকারের প্রেশক্রিপশনে চলায় মানুষের আস্থা নেই। বাম রাজনীতিও আগের আদর্শের অবস্থানে নেই, সাময়িক ইস্যুতে সক্রিয়তা নেই। শীর্ষ নেতাদের হারানোর পর আলোচিত-সমালোচিত জামায়াতের কর্মকাণ্ডও আলোচনাহীন। একক ব্যক্তিতে যে সমস্ত দল রয়েছে বয়সের ভারে কেউ আর রাজনীতিতে সক্রিয় থাকতে পারছেন না।

বিশেষ করে করোনা ইস্যুতে দেশের অনেক বড় বড় নেতাই হারিয়ে গেছেন, নানান অসুস্থতা নিয়ে অনেকে অদৃশ্য হয়ে গেছেন। চলমান সময়ে সরকারের সমালোচনা করে দেশ ও আন্তর্জাতিকপর্যায়ে গণতন্ত্রের সমতা রক্ষার জন্যই ক্ষমতাসীন সরকারের ইশারায় কোনো জোট হতে পারে বলে অনেকেই মনে করছেন।

সংশ্লিষ্টদের মতে, এদেশের জোট সব ফুটপাটের ব্যবসার মতো। বিশেষ সময়ে আসে আবার ব্যবসা করে চলে যায়। যারাই অতীতে জোট করেছে পয়সা কামিয়ে চলে গেছেন। চলমান প্রেক্ষাপটে যদি জোট হয় তা বিএনপির ব্যাকআপ রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবেই গড়ে তোলার চেষ্টামাত্র। তারাও অতীত স্টাইলে আবার চলে যাবেন।

 নতুন জোট হলে মৌলিক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে যারা জনগণের কাজ করছে সেটিও বাধাগ্রস্ত হবে। নতুন জোট আলোচনায় রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টরা দুটি দিক লক্ষ্য করছেন। ক্ষমতাসীন সরকার ভিপি নুর বা অন্যদের আলোচনার মাধ্যমে আন্তর্জাতিকভাবে উপস্থাপন করবে দেশে গণতন্ত্র আছে, বাকস্বাধীনতা আছে।

অন্যদিকে দীর্ঘ সময় যারা বিএনপি থেকে কোনো সুবিধা পাচ্ছেন না এমন ব্যক্তিরাই নতুন জোটকে আলোচনায় রেখে বিএনপির জনপ্রিয়তা আরও নষ্ট করার চেষ্টা করবে। আর এটি বিএনপির যেসব বুদ্ধিজীবী রয়েছে তারাই করতে পারে বলে অনেকের মত। সঙ্গে জামায়াতও পেছনে রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বিএনপি বর্তমানে দুর্বল অবস্থায় আছে এটিকে কাজে লাগানোই প্রধান টার্গেট থাকবে।

নতুন জোটের বিষয়ে বিএনপির নীতিনির্ধারণী সূত্রের ভাষ্য, সরকারের বিরোধী হয়ে কৌশলে একটা গোষ্ঠী বিএনপির কাছে প্রিয় হবে। অন্যদিকে নেতৃত্বহীন বিএনপিকে আরও সংকটে ফেলতে এজেন্ডা বাস্তবায়ন করবে। অনেকে মনে করছেন ড. কামাল হোসেনকে দিয়ে সরকার ভোটের আগে রাজমাঠ হালাল করলেও এখন শূন্য মাঠে কাউকে প্রয়োজন। তাই নুরদের মতো কাউকে নিয়ে আসছেন।

সরকারের আলোচনা-সমালোচনা নিয়ে বিরোধী রাজনৈতিক ব্যক্তিদের বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক আমার সংবাদকে বলেছেন, আজ অনেকেই বলেন, দেশে বাকস্বাধীনতা নেই। কিন্তু আওয়ামী লীগ তথা বর্তমান সরকার রাজনৈতিকভাবে দেশের কারো বাকস্বাধীনতা হরণ করেনি। মূলত যারা বলেন, দেশে বাকস্বাধীনতা নেই, তারা সবাই জনবিচ্ছিন্ন। দেশের জনগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করেছেন।

তিনি আরও বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই ভিপি নুর সরকারবিরোধী কথা বলেন। দেশে যে বাকস্বাধীনতা আছে ভিপি নুর তার জ্বলন্ত উদাহরণ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি ও বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক নুর আমার সংবাদকে বলেন, দেশের অবৈধ শাসনের হাত থেকে রক্ষা পেতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আমরা ছোট দল তাই আমরা জনগণকে ম্যাসেজ দিতে চাই ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আমরা দেশের স্বার্থে যেকোনো প্লাটফর্মেই দাঁড়াতে প্রস্তুত আছি। দেশে যে একটা স্বৈরশাসন চলছে। তবে আমরা জোট গঠন করছি এ তথ্য সঠিক নয়।

সমপ্রতি সাকি ভাইসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আমরা যোগ দিচ্ছি। আমাদের রাজনৈতিক দর্শনটা এক। যেমন আমরা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর মৃত্যুবার্ষিকী একসাথে পালন করেছি। এছাড়াও আমাদের সঙ্গে সমমনা চিন্তার লোকেরা যোগ দিয়েই থাকেন। যেমন মাহমুদুর রহমান মান্না ভাইয়ের অনুষ্ঠানে আমরা যাই। তবে এখন পর্যন্ত কোনো জোট করার চিন্তা করিনি।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেছেন, আমরা ২৮ নভেম্বর জাতীয় শহীদ মিনারে মওলানা ভাসানীর মৃত্যুবার্ষিকীকে কেন্দ্র করে সমাবেশ করি। তবে জোট গঠনের বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেইনি। আমরা আন্দোলনকে বেগবান করতে সকলেই একমত। আমরা মূলত দেশের স্বার্থে বৃহৎ আন্দোলন-সংগ্রাম কিভাবে চালিয়ে নেয়া যায় সে বিষয়ে আলোচনা করছি। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ও বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক নুরসহ আরও কয়েকজন ব্যক্তি ও সংগঠনের নাম একটি বৃহৎ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে আলোচনা হচ্ছে।

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি জাফরুল্লাহ চৌধুরী এ বিষয়ে জানতে চাইলে আমার সংবাদকে বলেন, মাত্র শুনলাম দেশে কোনো জোট হচ্ছে ! কে বলে এগুলো...  আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না। তবে আমি সরকারের বিষয়ে বলবো দেশের মানুষের স্বস্তির জন্য একটি মধ্যবর্তী নির্বাচন হওয়া দরকার। মানুষকে সরকার ভয় পাওয়া উচিত নয়। মানুষেরও উচিত ঐক্যবদ্ধ হওয়া। কারণ এই সরকারের অবস্থা এখন  ভীষণ নড়বড়ে। একটু জোরে ধাক্কা দিতে পারলে তারা ক্ষমতা থেকে পড়ে যাবে।

প্রবীণ রাজনীতিবিদ লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট ড. কর্নেল (অব.) অলি আহমদ এ বিষয়ে আমার সংবাদকে বলেন, মধ্যবর্তী বা নতুন কোনো নির্বাচন আমি বিশ্বাস করি না। বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি, হবেও না। যারা এর চেষ্টা করবেন তারাও ব্যর্থ হবে।

কারণ এদেশে এখন দিনের বেলায় নির্বাচনের কোনো পদ্ধতি নেই। নতুন জোট সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দেশ ও মানুষের চাহিদা পূরণের জন্য নতুন জোট হতে পারে; কিন্তু বর্তমানের জোট বা নতুন রাজনৈতিক দল হলে সবকিছু সরকারের তৈরি বলে আমি মনে করবো। নতুন যদি কোনো জোট আসে সেটি সরকারের লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য হবে।

তাই আমার আহ্বান থাকবে যারা নতুন রাজনৈতিক জোট বা দল নিয়ে আসবে তাদের কিছু নিয়ম-নীতি রাষ্ট্রীয়ভাবে হওয়া উচিত। এর মধ্যে টানা দুবার সংসদ নির্বাচনে যদি হেরে যায় তাহলে তার দল দ্বিতীয়বার নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ আজীবনের জন্য বন্ধ হয়ে যাওয়া উচিত।

কারণ এদেশের অতীতের রেকর্ড রয়েছে যারা বিভিন্ন ইস্যুতে জোট তৈরি করেছেন গত নির্বাচনে তারা মোটা অংকের টাকা পেয়েছেন। আমি সবসময় জোটকে ফুটপাতে ওষুধ বিক্রেতাদের সঙ্গে তুলনা করি। ব্যবসা যখন ভালো হয় না তখন অনেকে ফুটপাতে নেমে আসেন। রাজনীতিতেও যখন ব্যবসা কমে যায় তখন জোটের নামে অনেকে ব্যবসা করতে আসেন।

আমারসংবাদ/এআই