Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪,

‘পল্লীবিদ্যুৎ’ এখন রাঙ্গাবালীতে

নিজস্ব প্রতিবেদক

ডিসেম্বর ১, ২০২০, ০৯:৩০ পিএম


‘পল্লীবিদ্যুৎ’ এখন রাঙ্গাবালীতে

দেশের সর্ববৃহৎ বিদ্যুৎ বিতরণকারী সংস্থা আরইবির আওতাধীন গ্রিডভুক্ত ৪৬১টি উপজেলা এবং অফগ্রিডে একটি উপজেলাসহ (পটুয়াখালী জেলার রাঙ্গাবালী উপজেলা) মোট ১০৫৯টি গ্রাম রয়েছে। আরইবি তার ৮০টি পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির মাধ্যমে গ্রিডভুক্ত ৪৬১টি উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুতায়ন সম্পন্ন করেছে।

প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যে ২৮৮টি উপজেলা শতভাগ বিদ্যুতায়ন উদ্বোধন করেন এবং অবশিষ্ট ১৭৩টি উপজেলা শতভাগ বিদ্যুতায়ন উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে।

এছাড়া, অফগ্রিড এলাকার মোট ১০৫৯টি গ্রামে (অফগ্রিড রাঙ্গাবালী উপজেলাসহ) শতভাগ বিদ্যুতায়ন মুজিববর্ষেই সম্পন্ন হবে। অফগ্রিড অঞ্চল বলতে মূলত বোঝায় দুর্গম চর, দ্বীপ ও উপকূলীয় ভূ-সীমানাকে, যেগুলো বছরের বেশির ভাগ সময়ই মূল ভূ-ভাগ থেকে বিচ্ছিন্ন থাকে।

পল্লীবিদ্যুতের শতভাগ বিদ্যুতায়ন কার্যক্রমে এই অঞ্চলগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করায় বিদ্যুৎ সুবিধা পেতে যাচ্ছে প্রত্যন্ত এলাকার প্রায় ২.৪০ লাখ গ্রাহক। ফলশ্রুতিতে, বিদ্যুৎ পৌঁছে যাচ্ছে বাংলাদেশের একমাত্র অফগ্রিড উপজেলা পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালীতেও। ওই ১০৫৯টি গ্রামে তিন ধাপে এ বিদ্যুতায়নের কার্যক্রম গ্রহণ করা হচ্ছে।

প্রথম ধাপের ৬৪৬টি গ্রাম তুলনামূলকভাবে কম প্রত্যন্ত এলাকায় অবস্থিত। ৩৫টি স্থানে কম-বেশি দুই কিলোমিটার পর্যন্ত সাবমেরিন ক্যাবল দ্বারা নদী অতিক্রম করে গ্রামসমূহ গ্রিড লাইনে বিদ্যুতায়ন করা সম্ভব। চলমান প্রকল্পে লাইন ও উপকেন্দ্র নির্মাণের সংস্থান বৃদ্ধি এবং আরইবি অর্থায়নে সাবমেরিন ক্যাবল ক্রয়পূর্বক গ্রামসমূহের ১.৫৫ লাখ গ্রাহককে গ্রিড লাইনে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। দ্বিতীয় ধাপের ৩৮৪টি গ্রাম দুর্গম ও প্রত্যন্ত এলাকায় অবস্থিত।

৫০টি স্থানে সাবমেরিন ক্যাবল দ্বারা নদী অতিক্রম করে গ্রামসমূহ গ্রিড লাইনে বিদ্যুতায়ন করা সম্ভব। এ সকল নদী-চরের প্রশস্ততা তুলনামূলকভাবে বেশি হওয়ায় সাবমেরিন ক্যাবলের Specification হালনাগাদকরণপূর্বক গ্রামসমূহের ৯০ হাজার গ্রাহককে গ্রিড লাইনে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনার কার্যক্রম চলছে।

তৃতীয় ধাপের অন্তর্ভুক্ত অবশিষ্ট ২৯টি গ্রাম অতি প্রত্যন্ত ও দুর্গম এলাকায় অবস্থিত। অধিকাংশ গ্রামেই স্থায়ী জনবসতি নেই। কেবল শুষ্ক মৌসুমে বিক্ষিপ্তভাবে মানুষ বসবাস করায় গ্রাহক ঘনত্ব অত্যন্ত কম। ওই ২৯টি গ্রামের প্রায় ছয় হাজার গ্রাহকের জন্য সোলার হোম সিস্টেম স্থাপনের কার্যব্যবস্থা গ্রহণপূর্বক মুজিববর্ষেই বিদ্যুতায়ন কাজ সম্পন্ন করা হবে। তবে বাংলাদেশের জলবায়ুর ওপর নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের বিষয়টি অনেকাংশে নির্ভরশীল।

এমতাবস্থায় আশা করা যাচ্ছে যে, বড় ধরনের কোনো প্রাকৃতিক দূর্যোগ না ঘটলে নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যেই অফগ্রিড এলাকার গ্রামগুলোতে শতভাগ বিদ্যুতায়ন সম্পন্ন হবে। অর্থাৎ, মুজিববর্ষেই আলোকিত হবে সমগ্র বাংলাদেশ। আরইবি বর্তমানে প্রায় তিন কোটি পাঁচ লাখ গ্রাহককে বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান করেছে।

আবাসিক সংযোগের পাশাপাশি আরইবি জুন-২০২০ পর্যন্ত প্রায় ১.৮০ লাখ ক্ষুদ্র শিল্প কারখানা, ১৩ হাজার ৫০০টি মাঝারি শিল্পকারখানা, ৩৭৫টি বৃহৎ শিল্পকারখানায়, আটটি ইপিজেড ও ৩.৬০ লাখ টি সেচ পাম্পে বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান করেছে। ফলশ্রুতিতে, দেশের প্রায় ১৪ কোটি জনগণ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে উপকৃত হচ্ছে।

বিদ্যুৎ সরবরাহকল্পে সংস্থাটি ৫.৩০ লাখ কি.মি বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন এবং ১০৭০টি সাবস্টেশন নির্মাণ করেছে। ‘শেখ হাসিনার উদ্যোগ-ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ’, এ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে দেশের অগ্রসর এবং অনগ্রসর সকল পর্যায়ের জনগোষ্ঠীকে বিদ্যুৎ সেবার আওতায় আনার মাধ্যমে দেশের সার্বিক আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে আরইবি ভূমিকা রাখছে।

নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং গ্রাহকসেবার মানোন্নয়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আরইবি মাঠপর্যায়ে আলোর ফেরিওয়ালা, উঠান বৈঠক, দুর্যোগে আলোর গেরিলার মতো নানা উদ্ভাবনী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। ‘স্পট মিটারিং’-এর মাধ্যমে দ্রুত বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদানে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে আরইবির আলোর ফেরিওয়ালা টিম।

এছাড়া মানসম্মত গ্রাহকসেবা প্রদানের লক্ষ্যে আরইবি গ্রাহকদের সাথে নিয়মিতভাবে উঠান বৈঠকের আয়োজন করছে যেখানে গ্রাহকদের নানা সমস্যার কথা শোনা ও তার তাৎক্ষণিক প্রতিকারের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।

অধিকন্তু, যেকোনো দুর্যোগপূর্ণ প্রতিকূল পরিস্থিতিতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিতকল্পে ‘সকল ত্যাগে পল্লী বিদ্যুৎ রাখিব সচল’-এই স্লোগান নিয়ে আরইবির ‘দুর্যোগে আলোর গেরিলা’ দল সমগ্র পল্লী অঞ্চলে গ্রাহকসেবা দিয়ে যাচ্ছে।

বাংলাদেশের ভৌগোলিক বাস্তবতায় স্বল্পতম সময়ে শতভাগ বিদ্যুতায়ন অত্যন্ত কঠিন কর্মযজ্ঞ হলেও প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনা ও সুদৃঢ় নেতৃত্বের কারণে এ দুরূহ কর্মটি দ্রুততার সাথে সম্পন্ন করা সম্ভবপর হয়েছে। তাই প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আরইবি গভীর কৃতজ্ঞতা ও শ্রদ্ধা জানাচ্ছে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’ বিনির্মাণের লক্ষ্যে গ্রামীণ জীবনমান উন্নয়ন তথা ভিশন-২০২১ অর্জনপূর্বক ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি সুখী, সমৃদ্ধ ও উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করার দৃপ্ত শপথ নিয়ে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড তার ৮০টি পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির মাধ্যমে সারা দেশে শতভাগ বিদ্যুতায়ন কার্যক্রমকে সাফল্যমণ্ডিত সমাপ্তির পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।

আমারসংবাদ/এসটিএম