Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪,

চ্যালেঞ্জ নিয়েই কাজ করছেন প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

ডিসেম্বর ২, ২০২০, ০৬:০০ পিএম


চ্যালেঞ্জ নিয়েই কাজ করছেন প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী

করোনার ধাক্কায় বিপর্যস্ত বিশ্ব অর্থনীতি, যার প্রভাবে ক্রমেই সঙ্কুচিত হচ্ছে কর্মক্ষেত্র। পাশাপাশি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের শ্রমবাজার। যে অনিশ্চয়তায় আতঙ্কগ্রস্ত দেশে কিংবা বিদেশে অবস্থানরত প্রবাসীরা।

তবে শ্রমবাজারের অনিশ্চয়তা কাটিয়ে শ্রমবাজার তথা প্রবাসীদের কর্মক্ষেত্র পুনরায় প্রসারিত করার লক্ষ্যে ঝুঁকি নিয়েই নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ। করোনাকালীন সময়ে শ্রমবাজারে সৃষ্ট বহুমুখী সমস্যা সমাধানে এক ধরনের চ্যালেঞ্জ নিয়েই কাজ করছেন তিনি।

 স্থবির হয়ে পড়া শ্রমবাজার পুনরায় উন্মুক্তকরণের লক্ষ্যে বিভিন্ন দেশের সাথে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর, কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে অনলাইন সিস্টেম চালু, কর্মী প্রেরণে রিক্রুটিং এজেন্টের সম্পৃক্ততার বিষয়েও জোর দিয়েছেন মন্ত্রী।

এদিকে করোনা মহামারির শুরুর দিকে দেশে ফেরত আসা প্রবাসী কর্মীদের বিষয়ে বিশেষ ভূমিকা রাখেন ইমরান আহমদ। বিশেষ করে ক্ষতিগ্রস্ত প্রবাসী কর্মীদের পুনর্বাসন, পুনঃএকত্রীকরণ ও সনদায়নের জন্যও তিনি গ্রহণ করেছে নানামুখী উদ্যোগ। এ ছাড়া দেশে আটকে পড়া প্রবাসী কর্মীদেরও সহযোগিতা দেয়ার লক্ষ্যে অনলাইন নিবন্ধনের ব্যবস্থা করেন।

পাশাপাশি সব সময় মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বিদেশে গমনেচ্ছু কর্মীদের দুষ্ট দালালচক্র থেকে নিরাপদ রাখতেও বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেন তিনি। করোনাকালে সঙ্কুচিত শ্রমবাজার ধরে রাখার প্রত্যয়ে কাজ করতে গিয়ে গত ৪ নভেম্বর করোনায় আক্রান্তও হন মন্ত্রী। তবুও থেমে নেই কাজের গতি। বর্তমানে বাসায় অবস্থান করলেও তার দিকনির্দেশনায় চলছে মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন কার্যক্রম।

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বিদেশ থেকে ছুটি কাটাতে দেশে আসা কর্মীদের অনেকেই কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে সময়মতো গন্তব্য দেশের কর্মস্থলে ফেরত যেতে পারেননি।

এছাড়াও অনেক কর্মীর ভিসা-ইকামা-ওয়ার্ক পারমিটের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয় করে বিদেশ গমনেচ্ছুক এমন কর্মীদের ভিসা-ইকামার মেয়াদ বৃদ্ধি এবং ফ্লাইটের সংখ্যা বাড়ানো বিষয়ে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করে।

সম্প্রতি মন্ত্রী বলেছেন, ৭০০ কোটি টাকার ঋণ তহবিল গঠন করা হয়েছে। অধিক সংখ্যক প্রবাসী কর্মী যেনো ঋণসুবিধা পায় সে জন্য ঋণের শর্তাবলি সহজ ও শিথিল করা হয়েছে। বিদেশ ফেরত কর্মীদের মধ্যে যারা আবার বিদেশে যেতে চান তাদের জন্য যথাযথ প্রশিক্ষণ ও সনদায়নের উদ্যোগও গ্রহণ করা হয়েছে। যেখানে বিদেশ ফেরত কর্মীদের সনদায়নের ব্যয় নির্বাহ করবে সরকার।

এছাড়া বিদেশে যেসব কর্মীরা দুর্ঘটনাসহ বিভিন্ন কারণে মৃত্যুবরণ করছেন তাদের অসহায় পরিবারকে পুনর্বাসন ঋণের আওতায় আনা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ নিয়ে এই ঋণের সদ্ব্যবহার করলে এর সুফল মিলবে।’

দেশের অভ্যন্তরেও প্রবাসীদের স্বার্থ চিন্তা করা মন্ত্রী ইমরান আহমদকে দেখা গেছে প্রবাসীদের পক্ষে ন্যায্যতার বিষয়েও সোচ্ছার থাকতে। চলতি বছরের ১২ জুলাই আন্তঃমন্ত্রণালয় সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিদেশগামীদের জন্য করোনা ভাইরাস পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়।

সে সময় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে তিন হাজার ৫০০ টাকা ফি নির্ধারণ করা হলে মন্ত্রী ইমরান আহমদ বিষয়টি গুরুত্বের সাথে নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠান। চিঠিতে তিনি প্রস্তাব করেন সাধারণ নাগরিকরা যেই টাকা ফি দিয়ে করোনা পরীক্ষা করাতে পারছেন বিদেশগামীদের জন্যও যেনো একই ফি নির্ধারণ করা হয়।

বর্তমানে দেশে সাধারণ নাগরিকরা সরকারি প্রতিষ্ঠানে ১০০ টাকায় করোনা ভাইরাস পরীক্ষা করাতে পারছে। মন্ত্রীর এমন প্রস্তাবের পর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বিদেশগামীদের জন্য ফি পুনঃনির্ধারণ করে। যা তিন হাজার ৫০০ টাকা থেকে কমিয়ে এক হাজার ৫০০ টাকা করা হয়।

এর প্রতিক্রিয়ায় মন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেছিলেন, আমার প্রস্তাব ছিলো সাধারণ মানুষের কাছ থেকে যেই ফি নেয়া হচ্ছে বিদেশগামীদের কাছ থেকেও যেনো একই ফি নেয়া হয়। সেই হিসেবে এখন যেহেতু সাধারণ নাগরিকরা ১০০ টাকা ফি দিয়ে করোনা ভাইরাস পরীক্ষা করাতে পারছেন বিদেশগামীদের জন্যেও ১০০ টাকা করা উচিত।

প্রবাসীদের করোনা পরীক্ষার ফি কমানোর বিষয়ে জোরালোভাবে বক্তব্য দেয়ায় প্রবাসীরাও বিভিন্ন সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে মন্ত্রীকে সাধুবাদ জানান।  এদিকে প্রবাসে অবস্থানরত বাংলাদেশি প্রবাসীদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ কর্মী হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন তিনি।

প্রাথমিকভাবে গ্রিসে এই প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু হলেও শিগগিরই বাহরাইন এবং সৌদি আরবে এটি চালুর পরিকল্পনা রয়েছে। ভবিষ্যতে বিদেশে বসবাসরতদের জন্য এই প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে নতুন নতুন কোর্স অন্তর্ভুক্ত করা হবে। মন্ত্রণালয় সবসময় প্রবাসীদের পাশে রয়েছে বলে জানান তিনি। যথাযথ প্রশিক্ষণ নিয়ে দক্ষ কর্মী হিসেবে বিদেশের মাটিতে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে প্রবাসীদের প্রতি আহ্বানও জানান তিনি।

এদিকে বিদেশ গমনেচ্ছুদের জন্য নিবন্ধদের যে উদ্যোগ নিয়েছেন মন্ত্রী আগামী ফেব্রুয়ারি-মার্চের মধ্যে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের মাধ্যমে তার বাস্তবায়ন শুরু হবে বলে জানা গেছে।

মন্ত্রী জানান, দক্ষ কর্মী তৈরির লক্ষ্যে অচিরেই খুলনা বিভাগে ৯টিসহ দেশে মোট ৭১টি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রও নির্মাণ করা হচ্ছে।

আমারসংবাদ/এসটিএম