ডিসেম্বর ৪, ২০২০, ০৯:০০ এএম
করোনার এই সংকটকালে বন্ধ হয়ে আছে সকল শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান। সবকিছু ঠিকঠাক চললেও খুলছে না শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। হতাশায় নিমজ্জিত হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।
একবার তাচ্ছিল্যের ভঙ্গিতে আমার এক বন্ধু বলে উঠলো, করোনারা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ডিম ফুটিয়ে তাতে তা দিচ্ছে আর ক্যাম্পাস খুললেই করোনার বাচ্চারা হামলা করবে আমাদের উপর।
তাই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বন্ধ করে রাখা হয়েছে। সত্যি বলতে বাংলাদেশের সরকারি অফিসগুলো থেকে শুরু করে গার্মেন্টস পর্যন্ত সবকিছু খুলে দেয়া হলেও খুলছেনা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।
বাস, রেল, কল-কারখানা, পাড়ার স্টেডিয়ামের লোকসমাগম দেখলে বুঝার জো নেই যে আমরা মহামারির সংকটে আটকে আছি। যেসব শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস বন্ধ বলে বাসায় অবস্থান করছে তারা মোটেও গৃহবন্দী সময় কাটাচ্ছে না।
ঘুরতে যাওয়া, টিউশনি করাসহ পারিবারিক কাজে সময়, দিচ্ছে তারা। শুধু হচ্ছেনা পড়াশোনা। কওমী মাদরাসাগুলো যখন খোলা হচ্ছিলো তখন অনেকেই গলা ফাটিয়ে বলেছিলেন যে, করোনায় দেশ ভরে যাবে এবং মাদরাসাগুলো বারান্দায় লাশের স্তুপ জমে থাকবে!
কই, এমন তো কিছুই হয়নি। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নিয়োগের প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখলেও অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দুই-একটি সেমিস্টারের জন্য আটকে আছেন। সকল স্তরের শিক্ষার্থীদের জীবন থেকে প্রায় এক বছর হারিয়ে গেলো। হতাশা তাড়া করে বেড়াচ্ছে মধ্যবিত্ত এবং নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের শিক্ষার্থীদেরকে। অনলাইন ক্লাস কখনো বাস্তব ক্লাসের বিকল্প হতে পারেনা বলেই মনে করছেন অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা।
ইন্টারনেট স্পিডের কথা যদি বলি, সেক্ষেত্রে গ্রাম্য পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা পর্যাপ্ত ডেটা স্পিড পাচ্ছেন না একদমই। সিম অপারেটর কোম্পানিগুলোর বিজ্ঞাপন শুধুই বিজ্ঞাপন মাত্র যা গ্রামে বসে অনলাইন ক্লাস করতে গিয়ে প্রত্যক্ষ করছেন শিক্ষার্থীরা। আবার অন্যদিকে ইন্টারনেটের উচ্চমূল্যের জন্য দরিদ্র এবং ধনী শিক্ষার্থীর আর্থসামাজিক বৈষম্যে দৃশ্যমান হচ্ছে!
করোনা দেশ থেকে বিদেয় নেয়নি যতোটা সত্যি ততটাই সত্যি যে, স্বাস্থ্য সচেতন হলে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি কমে যাবে এটাও অস্বীকার করার কথা নয়। স্বাস্থ্য সচেতনতার প্রশ্নে একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী নিঃসন্দেহে কম সচেতন নন।
যে বাবা পরিবারের হাল ধরতে করোনার এই সময়ে বাহিরে যান তার সন্তান হয়ে আমি কিভাবে ঘরে বসে অলস সময় কাটাবো বলুন? আমাকেও যে পরিবারের হাল ধরতে হবে। প্রত্যেকটি মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানদের অর্তনাদ শোনার বুঝি কেউ নেই!
লেখক: যোবায়ের ইবনে আলী, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
আমারসংবাদ/এআই