Amar Sangbad
ঢাকা বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪,

অর্থনীতিতে করোনার প্রভাব: ক্ষতি পোষাতে দীর্ঘময়াদি পরিকল্পনা নিতে হবে

ডিসেম্বর ১২, ২০২০, ০৮:০৫ পিএম


অর্থনীতিতে করোনার প্রভাব: ক্ষতি পোষাতে দীর্ঘময়াদি পরিকল্পনা নিতে হবে

বিশ্বের প্রায় সব দেশের মতো বাংলাদেশেও পড়েছে করোনা মহামারির প্রভাব। বিশেষ করে অর্থনীতিতে এর প্রভাব অনেক বেশি। তবে আশার কথা, করোনার ধাক্কা কিছুটা সামলে উঠছে দেশ। রপ্তানি ক্ষেত্রে, বিশেষত গার্মেন্ট শিল্পে, গতি ফিরতে শুরু করেছে।

সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য, করোনাকালে রেমিট্যান্স এসেছে বেশি। এর কারণ যাই হোক, আপাতত এর সুফল পাচ্ছে দেশের অর্থনীতি। এসব বিষয় পর্যবেক্ষণ করে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) তার ‘এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুকের সাপ্লিমেন্ট, ডিসেম্বর’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলেছে, কোভিড-১৯-এর মধ্যে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার প্রত্যাশার চেয়ে বেশি শক্তিশালী হচ্ছে।

দেশের অর্থনীতিতে মন্দার যে প্রাথমিক ধাক্কা এসেছে, তা ইতোমধ্যে কেটে গেছে। এডিবির পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, স্বাস্থ্য ও মহামারি পরিচালন ব্যবস্থার ওপর উল্লেখযোগ্য চাপ সত্ত্বেও সরকার উপযুক্ত আর্থিক প্রণোদনা ও সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে অর্থনীতিকে সুসংহত করেছে।

 দরিদ্র ও দুর্বলদের জন্য মৌলিক সেবা ও পণ্যাদি নিশ্চিত করেছে। রপ্তানি ও রেমিট্যান্সে সামপ্রতিক আর্থিক সক্ষমতা, আর্থিক প্রণোদনা ও সামাজিক সুরক্ষার জন্য বিদেশি তহবিল সুরক্ষাসহ সরকারের সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার ফলে এ পুনরুদ্ধার সম্ভব হয়েছে।

আকস্মিক মহামারির কারণে ‘লকডাউনে’ গোটা বিশ্বের মতো আমাদের দেশেও সব ধরনের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে পড়েছিল। এ ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার লক্ষ্যে বিভিন্ন খাতে সরকারের দ্রুত প্রণোদনা ঘোষণা ছিল সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত। বিশেষ করে গার্মেন্ট খাতের শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন দেয়ার জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার বিশেষ প্রণোদনার অর্থ এ খাতকে উঠে দাঁড়াতে সহায়ক হয়েছে।

সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা বাড়ানোর লক্ষ্যে শতভাগ বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধীদের সহায়তার জন্য ৮১৫ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে, যা প্রশংসার দাবিদার অবশ্যই। তবে এর সিংহভাগ এখনো বিতরণ করা হয়নি।

এদিকে সরকারের বিশেষ দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন। নজর দেয়া জরুরি সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের পূর্ণ বাস্তবায়নের ওপরও। বিতরণ প্রক্রিয়ায় জটিলতা, কোনো কোনো ব্যাংকের আস্থাহীনতাসহ নানা কারণে প্রণোদনা প্যাকেজের প্রায় অর্ধেকই এখনো ভুক্তভোগীদের হাতে পৌঁছেনি বলে জানা গেছে। রপ্তানি খাতে সহায়তার জন্য এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট ফান্ডে ১২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হলেও অক্টোবর পর্যন্ত মাত্র ৩০ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে।

প্রি-শিপমেন্ট ক্রেডিট রি-ফাইন্যান্সিংয়ের ৫ হাজার কোটি টাকার স্কিম থেকে অক্টোবর পর্যন্ত মাত্র ৪৯ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প ও সেবা প্রতিষ্ঠানের ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল হিসেবে ৪০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজের গত অক্টোবর পর্যন্ত বিতরণ বাকি ছিল ১১ হাজার ৬৬২ কোটি টাকা।

সন্দেহ নেই, প্রণোদনা প্যাকেজের বাস্তবায়ন সম্পন্ন হলে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে বাংলাদেশের অবস্থান আরও ভালো হতো। বস্তুত এডিবির ইতিবাচক প্রতিবেদন সত্ত্বেও আমাদের আত্মতৃপ্তির সময় এখনো আসেনি। সংস্থাটির বক্তব্যে এ সংক্রান্ত সতর্কবার্তাও লক্ষ্য করা যায়।

তারা বলছে, বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি গন্তব্যগুলোতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ব্যাপকভাবে শুরু হওয়ার ফলে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার এখনো ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। প্রধান ঝুঁকি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে দীর্ঘমেয়াদি মহামারি এবং একই সঙ্গে রপ্তানি গন্তব্য নিশ্চিতকরণকে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, করোনার ধাক্কায় যে ক্ষতি হয়েছে, তা কাটিয়ে উঠতে কয়েক বছর লেগে যাবে। কাজেই মহামারি পরিস্থিতি বিবেচনায় আমাদের স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিতে হবে।

আমারসংবাদ/এআই