Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪,

বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নির্ভুল তালিকা: স্বাধীনতা দিবসের আগেই চূড়ান্ত হোক

ডিসেম্বর ১৭, ২০২০, ০৭:৩৫ পিএম


 বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নির্ভুল তালিকা: স্বাধীনতা দিবসের আগেই চূড়ান্ত হোক

বিজয় ও স্বাধীনতার প্রায় অর্ধশত বছরের সামনে দাঁড়িয়েও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের একটি নির্ভুল তালিকা তৈরি করতে না পারা দুঃখজনক। তার চেয়েও অসম্মানের বিষয় হলো সরকারিভাবেই মুক্তিযোদ্ধাদের পাঁচটি তালিকা তৈরি হওয়া। ষষ্ঠ তালিকা প্রণয়নের কাজ চলছে চার বছর ধরে।

তবে এটি কবে নাগাদ চূড়ান্ত হবে তা অজানা। বর্তমানে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেয়া দলটি ক্ষমতায়। তারা টানা ১২ বছর ধরে ক্ষমতাসীন। ফলে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের নির্ভুল একটি তালিকা তৈরি এবং সে মোতাবেক পরবর্তী বিষয়াবলি চূড়ান্ত হবে বলে সবাই আশা করেছিলেন। কিন্তু এখনো শেষ হয়নি তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের কাজ।

সর্বশেষ ঘোষণা অনুযায়ী, জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) অনুমোদন ছাড়া যে ৩৯ হাজার ৯৬১ জন মুক্তিযোদ্ধা তালিকাভুক্ত হয়েছেন, তাদের তথ্য যাচাই-বাছাই শুরু হবে আগামী বছরের ৯ জানুয়ারি। এরপর পর্যায়ক্রমে চূড়ান্ত হবে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের চূড়ান্ত তালিকা। এটা ঠিক, মুক্তিযোদ্ধাদের নির্ভুল তালিকা তৈরির কাজটি জটিল ও স্পর্শকাতর।

তাছাড়া যতবারই নতুন তালিকা হয়েছে, ততবারই এ নিয়ে উচ্চ আদালতে রিট হয়েছে। এতে তালিকা চূড়ান্ত করার কাজ বিলম্বিত হওয়া স্বাভাবিক। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধে অংশ না নিয়েও অনেকে কারচুপির মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নাম লিখিয়েছেন। এমনকি প্রশাসনের সর্বোচ্চ স্তরে অবস্থানকারী কিছু কর্মকর্তা পর্যন্ত ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ নিয়েছিলেন চাকরিতে দুই বছর বেশি থাকার জন্য।

এ ধরনের অমুক্তিযোদ্ধাদের মুক্তিযোদ্ধা তালিকা থেকে বাদ দেয়ার জন্য আবারো প্রয়োজন হয়েছে যাচাই-বাছাইয়ের। মুক্তিযোদ্ধাদের নির্ভুল তালিকা তৈরির কাজ বিলম্বিত হওয়ার পেছনে এসব কারণ রয়েছে সন্দেহ নেই। তবে এর পেছনে অন্য কারণও রয়েছে। অভিযোগ আছে, মুক্তিযোদ্ধা তালিকা চূড়ান্ত না হওয়ার জন্য মূলত রাজনৈতিক কারণ দায়ী।

দেখা গেছে, সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধা তালিকারও পরিবর্তন হয়, বেড়ে যায় মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা, আগের তালিকা থেকে বাদ পড়ে যায় অনেকে। এ প্রবণতা দুঃখজনক। মুক্তিযোদ্ধা তালিকা নিয়ে কোনো ধরনের বিতর্ক সৃষ্টি কাম্য নয়।

মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। সর্বোচ্চ সম্মান ও মর্যাদা তাদের প্রাপ্য। কোনো ব্যক্তিগত চাওয়া-পাওয়ার কারণে নয়, একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র এবং শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তারা জীবনবাজি রেখে যুদ্ধ করেছিলেন। এমনকি অনেক প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা সনদ পর্যন্ত নেননি।

অথচ সরকার জাতির পক্ষ থেকে সম্মানস্বরূপ মুক্তিযোদ্ধাদের কিছু সুবিধা দেয়ার ব্যবস্থা করায় অনেক ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার আবির্ভাব ঘটেছে, যাদের অনেকে বিভিন্ন সময় দলীয় প্রভাব কাজে লাগিয়ে তালিকায় তাদের নাম অন্তর্ভুক্ত করেছে, যা অত্যন্ত ঘৃণিত বিষয়।

আমরা আশা করব, বর্তমান সরকার প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রকাশের যে কাজ শুরু করেছে, সেটা নির্ভুল ও ত্রুটিমুক্ত হবে। সেক্ষেত্রে অমুক্তিযোদ্ধাদের চিহ্নিত করার বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা যেন এ প্রক্রিয়ায় বাদ না পড়েন।

তেমনটি ঘটলে সেটা হবে অত্যন্ত দুঃখজনক। মুক্তিযুদ্ধে অংশ না নিয়ে যারা মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন, তাদের অবশ্যই ছেঁটে ফেলতে হবে তালিকা থেকে। আগামী ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্ণ হবে। আমরা আশা করব, এ সময়ের মধ্যেই মুক্তিযোদ্ধাদের নির্ভুল তালিকা চূড়ান্ত করা হবে।

আমারসংবাদ/এআই