Amar Sangbad
ঢাকা মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪,

রেল দুর্ঘটনা: সচেতনতা বৃদ্ধির বিকল্প নেই

ডিসেম্বর ২১, ২০২০, ০৭:৪৫ পিএম


রেল দুর্ঘটনা: সচেতনতা বৃদ্ধির বিকল্প নেই

একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটছে। যেমন রোধ হচ্ছে না সড়ক দুর্ঘটনা, তেমনি রেলপথেও থেমে নেই দুর্ঘটনা এবং দুর্ঘটনায় মৃত্যু। অসাবধানতা থেকে শুরু করে নানা কারণেই যখন দুর্ঘটনা নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়, তখন তা কতটা উদ্বেগজনক পরিস্থিতিকে স্পষ্ট করে বলার অপেক্ষা রাখে না।

সমপ্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা যায়, জয়পুরহাট সদর উপজেলার পুরানাপৈল রেলগেট পার হওয়ার সময় ট্রেনের সঙ্গে বাসের ধাক্কায় ১২ জন নিহত হওয়া ছাড়াও কয়েকজন আহত হয়েছেন। গত শনিবার সকাল ৭টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

এ ক্ষেত্রে বলা দরকার, প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, জয়পুরহাট থেকে ছেড়ে আসা একটি যাত্রীবাহী বাস পাঁচবিবি হয়ে হিলির দিকে যাচ্ছিল। কিন্তু জয়পুরহাট সদর উপজেলার পুরানাপৈল রেলগেট অতিক্রম করার সময় বাসটি রেললাইনের উপর উঠে যায়। সেই সময় পার্বতীপুর থেকে ছেড়ে আসা রাজশাহীগামী উত্তরা এক্সপ্রেস ট্রেনটি সজোরে ধাক্কা দেয় বাসটিকে।

 ট্রেনটি রেললাইন ধরে ছেঁচড়ে প্রায় আধা কিলোমিটার দক্ষিণ দিকে নিয়ে যায় বাসটিকে। এ সময় বাসে থাকা ১০ যাত্রী ঘটনাস্থলেই নিহত হন বলে জানা যায়। আর হাসাপতালে পাঠানোর সময়  দুইজন মারা যান।

প্রসঙ্গত এটাও উল্লেখ্য, এ ঘটনায় জয়পুরহাট জেলা প্রশাসন ও রেল বিভাগের পক্ষ থেকে দুটি পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়া জানা গেছে, এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে গেটম্যানকে বরখাস্ত করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগ। আমরা বলতে চাই, সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিত করে এর পরিপ্রেক্ষিতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হোক।

যেনো এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ হয়। এটা আমলে নেয়া সমীচীন, শীতের সকালে লেভেল ক্রসিংটিকে গেটম্যান না থাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটেছে— এমন বিষয়ও খবরের মাধ্যমে জানা গেছে।

বিবেচনায় নেয়া দরকার, যখন একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটতে থাকে, তখন তা নিশ্চিতভাবেই ভীতিপ্রদ বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে। আর শুধু এ ঘটনাটি নয়— এর আগেও বিভিন্ন সময়েই গেটম্যান না থাকায় দুর্ঘটনা ঘটেছে।

এছাড়া ট্রেনে কাটা পড়ে মৃত্যুসহ নানাভাবেই দুর্ঘটনা ঘটেছে। রেল দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মতো বিভীষিকা নেমে আসছে একের পর এক এ পরিস্থিতি এড়ানোর সুযোগ নেই। আমরা মনে করি, এ ক্ষেত্রে নিয়ম-নীতি মেনে চলা, সচেতনতা বৃদ্ধিসহ প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের বিকল্প নেই। মনে রাখতে হবে, শুধু যোগাযোগের উন্নয়ন ও সেবা নিশ্চিত করলেই হবে না, যাতায়াতের সার্বিক নিরাপত্তাও নিশ্চিত করা জরুরি।

এটাও ভুলে যাওয়া যাবে না, এর আগে বিভিন্ন সময়েই রেল দুর্ঘটনা ঘটেছে— আর তাতে যেমন দায়িত্বহীনতার বিষয়টি সামনে এসেছে, তেমনি অসতর্কতার বিষয়ও আলোচনায় এসেছে। এ ছাড়া অরক্ষিত রেলক্রসিংসহ নানা বিষয় দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে সামনে এসেছে। ট্রেন আসছে দেখার পরও দ্রুত রেললাইন পার হতে গিয়েও ঘটেছে মৃত্যুর ঘটনা।

এছাড়া কানে ইয়ারফোন লাগিয়ে রেললাইনে হাঁটার সময়ও দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে। সঙ্গত কারণেই বলা দরকার, এসব বিষয় আমলে নিয়ে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। দুর্ঘটনার কারণগুলো খতিয়ে দেখে সেই মোতাবেক ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই।

একই সঙ্গে এটাও মনে রাখতে হবে, দায়িত্বজ্ঞানহীন গেটম্যান লেভেল ক্রসিংয়ের গেট বন্ধ না করার কারণে রাস্তায় চলাচলকারী যানবাহনের সঙ্গে ট্রেনের সংঘর্ষ হওয়ার ঘটনা এর আগেও ঘটেছে। ফলে সার্বিক বিষয়ে কর্তৃপক্ষ সচেতন ও কাযর্কর উদ্যোগ না নিলে রেলপথের দুর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব নয়।

সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, এবারের ঘটনাটির ভয়াবহতা আমলে নিয়ে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে উদ্যোগ নিতে হবে। এ ছাড়া বিভিন্ন সময়েই ট্রেনের বগি লাইনচ্যুত হওয়া, ঝুঁকিপূর্ণ রেল সেতুসহ নানা ধরনের অসঙ্গতির বিষয় আলোচনায় এসেছে।

রেলসেতুর ওপর দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে চলাচল করছে ট্রেন আর এ কারণে ঘটে চলেছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা— এমন খবরো প্রকাশিত হয়েছে। বিশেষজ্ঞরাও বলেছেন, ঝুঁকিপূর্ণ রেলসেতুর কারণে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

আমরা মনে করি, রেল দুর্ঘটনার ভয়াবহতা বিবেচনায় নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। একের পর এক যেভাবে রেলপথে দুর্ঘটনা ঘটছে— এর সামগ্রিক চিত্র পর্যবেক্ষণ করতে হবে এবং সেই মোতাবেক প্রয়োজনীয় সব ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ ও তার সুষ্ঠু বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে।

আামারসংবাদ/এআই