Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪,

বাড়ছে দুর্ঘটনা-প্রাণহানি: সড়ক ও রেলপথে শৃঙ্খলা জরুরি

ডিসেম্বর ২৩, ২০২০, ০৭:১৫ পিএম


বাড়ছে দুর্ঘটনা-প্রাণহানি: সড়ক ও রেলপথে শৃঙ্খলা জরুরি

জয়পুরহাটে বাস-ট্রাক সংঘর্ষে ১২ জন নিহতের রেশ কাটতে না কাটতেই দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে ট্রেন-ট্রাক সংঘর্ষের ঘটনায় এক গেটকিপার মারা গেছেন। দেশে প্রতিবছর লেভেল ক্রসিংকেন্দ্রিক দুর্ঘটনায় এবং ট্রেনের নিচে কাটাপড়ে প্রচুর মানুষ হতাহত হচ্ছে। রেলওয়ের হিসাব মতে, সারা দেশে লেভেল ক্রসিংয়ের সংখ্যা ২ হাজার ৫৪১।

এসব লেভেল ক্রসিংয়ে কয়েক বছরে অন্তত হাজারখানেক দুর্ঘটনা ঘটেছে এবং এতে হতাহতের সংখ্যাও প্রচুর। দুর্ঘটনা রোধে এবং ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে লেভেল ক্রসিংগুলো অবশ্যই সুরক্ষিত করতে হবে। লেভেল ক্রসিংগুলোয় ৯৫ শতাংশ দুর্ঘটনার জন্য দায়ী সেখানে কোনো প্রহরী না থাকা-এ কথা যেমন সত্য; তেমনই এ ক্ষেত্রে পথচারী বা বাস-ট্রাকসহ অন্য যানবাহনের চালকরাও তাদের দায় এড়াতে পারেন না।

পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, সারা দেশে ৮৬ দশমিক ৩৩ শতাংশ সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণ চালকের বেপরোয়া গতি। এ ছাড়া ভুল ওভারটেকিংয়ের কারণেও ঘটে ৪ দশমিক ৩৬ শতাংশ দুর্ঘটনা। সব মিলিয়ে সড়ক দুর্ঘটনার শতকরা ৯০ দশমিক ৬৯ ভাগের জন্যই দায়ী মূলত চালক। উদ্বেগের বিষয় হলো, সড়ক-মহাসড়কে বিপুলসংখ্যক যানবাহন চলছে লাইসেন্সবিহীন চালক দিয়ে।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) হিসাব অনুযায়ী, এ বছরের অক্টোবর পর্যন্ত সারা দেশে নিবন্ধিত গাড়ির সংখ্যা ৪৪ লাখ ৯৪ হাজার ৪২০ এবং গাড়ির বিপরীতে লাইসেন্সধারী চালকের সংখ্যা ৩৭ লাখ ৬৩ হাজার ১৭৪।

তার মানে সড়কে প্রতিদিন ৭ লাখ ৩১ হাজার ২৪৬টি গাড়ি চলছে লাইসেন্সবিহীন অবৈধ চালক দিয়ে। তবে এর বাইরেও সড়কে অনেক অনিবন্ধিত ছোট-বড় গাড়ি চলছে, যেগুলোর লাইসেন্সধারী চালক নেই। বস্তুত এসব কারণেই দুর্ঘটনার হার ক্রমাগত বেড়ে চলেছে।

আশঙ্কার বিষয় হলো— সড়কে দুর্ঘটনা হ্রাসে ১১১টি সুপারিশ করা হলেও আজ পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন হয়নি। এছাড়া সব জায়গায় সবার ক্ষেত্রে আইনের সঠিক প্রয়োগও হচ্ছে না। ফলে চালকরা বেপরোয়া হয়ে উঠছে। এ অবস্থায় সড়ক ও গাড়ি চলাচল ২৪ ঘণ্টা নজরদারির আওতায় আনা হলে সুফল পাওয়া যেতে পারে।

সড়ক দুর্ঘটনার কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে বিভিন্ন মহল থেকে নানা ধরনের পরামর্শ ও সুপারিশ করা হলেও তা যে অরণ্যে রোদনে পর্যবসিত হচ্ছে, দেশে প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনায় প্রচুর মানুষ আহত-নিহত হওয়ার ঘটনা তার বড় প্রমাণ। সড়ক-মহসড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হলে এ সংক্রান্ত আইনের যথাযথ প্রয়োগ এবং সমন্বিত পদক্ষেপ জরুরি।

এ কথা সর্বজনবিদিত, দেশে সড়ক দুর্ঘটনার হার বৃদ্ধির অন্যতম কারণ পরিবহন খাতে বিরাজমান বিশৃঙ্খলা। পরিবহন মালিক ও শ্রমিক নেতাদের দাপটে দোষী চালকদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া কঠিন হয়ে পড়ে। অবশ্য আইন মানার ক্ষেত্রে পথচারীরাও আন্তরিক নন।

ঝুঁকি নিয়ে বাসে ওঠানামা ছাড়াও জেব্রা ক্রসিং ও ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার না করে চলন্ত বাসের সামনে হাত উঁচিয়ে দৌড়ে রাস্তা পার হওয়াকে এদেশে একটি সাধারণ বিষয় বলে ভাবা হয়। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে এসব প্রতিরোধ করার পাশাপাশি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দক্ষ চালক এবং সড়কে চলাচল উপযোগী ভালো মানের যানবাহন নিশ্চিত করা প্রয়োজন। সেই সঙ্গে সচেতন হতে হবে পথচারীদেরও।

আমারসংবাদ/এআই