Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

ট্র্যাকে ঝড় তুলতে চান বেলাল

ক্রীড়া প্রতিবেদক

ডিসেম্বর ৩১, ২০২০, ০৭:০৫ পিএম


ট্র্যাকে ঝড় তুলতে চান বেলাল

দেশের যেকোনো ট্র্যাক মানেই আরিফুর রহমান বেলালের চমক। সেরাদের কাতারে থাকতেই পছন্দ এই ব্যাংকারের। হাফ ম্যারাথন বা ফুল ম্যারাথন; সবগুলোতেই সমান পারদর্শী এই অ্যাথলেট। নতুন বছরের শুরুতে (১০ জানুয়ারি) শুরু হতে যাচ্ছে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ঢাকা ম্যারাথন-২০২১’।

যেখানে অংশগ্রহণের সুযোগ পাবে মাত্র ১০০ জন প্রতিযোগী। ইতিহাসের প্রথম অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে দেশের সবচেয়ে বড় ম্যারাথন প্রতিযোগিতা। ৪২.২ কিলোমিটার ট্র্যাক হবে ঢাকার মধ্যে। যেখানে অংশগ্রহণের কনফারমেশন পেয়েছেন বেলাল। এই অ্যাথলেটকে নিয়ে লিখেছেন ক্রীড়া প্রতিবেদক রাজিবুল ইসলাম

করোনার মধ্যে দেশের সব ক্রীড়া প্রতিযোগিতা বন্ধ থাকায় ছোট বড় কোনো ট্র্যাকেই অংশগ্রহণ করতে পারেননি তিনি। তাই তো অনেকটা আক্ষেপ নিয়ে সময়গুলো পার করেছেন এই অ্যাথলেট। সমপ্রতি কুমিল্লার পাহাড়ি এলাকায় আয়োজিত হাফ ম্যারাথনে ৪০০ প্রতিযোগীর মধ্যে পঞ্চম স্থান অর্জন করেছেন এই অভিজ্ঞ অ্যাথলেট।

২১ দশমিক ১ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়েছেন মাত্র এক ঘণ্টা ৩৩ মিনিটে। এর আগেও বাংলা চ্যানেল পাড়ি দিয়ে রেকর্ড করেন তিনি। গত ২৫ ডিসেম্বর কুমিল্লায় হওয়া সেই হাফ ম্যারাথনের গল্প শোনালেন দৈনিক আমার সংবাদকে।

বেলাল বললেন, ‘আমাদের রানার্স ০২০৪ গ্রুপের মাধ্যমে জানতে পারি কুমিল্লায় এই মাসের শেষের দিকে একটা হাফ ম্যারাথন হবে। করোনার কারণে অনেক দিন ধরে কোনো লাইভ ইভেন্টে অংশ নিতে পারছি না। তাই আর কিছু না ভেবে রেজিস্ট্রেশন করলাম। সময়মতো অংশও নিলাম। কিন্তু জানতাম না এত সুন্দর একটা ট্র্যাকে রানিং হবে। হালকা টিলাতে রানিং হবে জানতাম। কিন্তু সেটা করতে গিয়ে দেখলাম রাস্তা আঁকাবাঁকায় ভরপুর।

মোড়গুলো পার হতে গিয়ে যদিও এক কিলোমিটার বেশি দৌড়াতে হয়েছে। তবে আমি প্রতিটি বাঁক উপভোগ করেছি।’ রানিংয়ের শুরু থেকে শেষের গল্পটা বেলাল শোনালেন বেশ রোমাঞ্চ নিয়ে, ‘এভাবে পাহাড়ি পাকা রাস্তাতে শুরু করলাম রানিং। একটু পরে সমতল। দুদিকে চিরাচরিত সবুজ মাঠের ভেতর কাঁচা মাটির রাস্তা দিয়ে চলছি। একটু পর গ্রামের বাড়ির উঠোন দিয়ে যেতে যেতে বাচ্চাদের সঙ্গে দুষ্টুমি করতে করতে এগোলাম।

হঠাৎ বাঁশবনের ভেতর নিজেকে আবিষ্কার করলাম। মনে হলো গুপি-বাঘা এখনই ভূতের রাজাকে সঙ্গে নিয়ে হাজির হবে। কিন্তু ভূতের দলের বদলে সামনেই দেখলাম বাড়ির দেয়ালে বসে এক দল কচিকাঁচা হাততালি দিয়ে আমাদের স্বাগত জানাচ্ছে।

সত্যি কথা বলতে, দ্রুত রানিংয়ের পাশাপাশি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ভীষণ উপভোগ করেছি। আমি দ্রুত রানারদের একজন ছিলাম। প্রতিযোগিতায় আমার অবস্থান ছিলো পঞ্চম। সময় লেগেছিল এক ঘণ্টা ৩৩ মিনিট। পাহাড়ি পথে দীর্ঘক্ষণ দৌড়াতে সবার কষ্ট হয়েছে।

কিন্তু কষ্ট করে রানিং শেষ করতে পারলেই মেডেলটা পাওয়া যায়। ম্যারাথন শেষে কুমিল্লার পিঠা, রসমালাই ও ঐতিহ্যবাহী খাবার খেয়েছি। বেশ মজার ছিলো।’ নিয়মিত দৌড়ানো এবং ব্যায়াম করা কোনো কোনো ক্ষেত্রে ওষুধের চেয়েও বেশি কার্যকর।

ম্যারাথন মূলত সময়াবদ্ধ ‘ফুট রেস’ ধরনের ক্রীড়া, যেখানে অংশগ্রহণকারীদের একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্দিষ্ট দূরত্ব অতিক্রম করতে হয়। ৪২.২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের রেসকে ফুল ম্যারাথন এবং এর অর্ধেক অর্থাৎ ২১.১ দৈর্ঘ্যের রেসকে হাফ ম্যারাথন বলা হয়। করোনার এ সময়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় ভুগছেন সবাই।

এই উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা থেকে মনের ওপর তৈরি হয় বাড়তি চাপ। মানসিক স্বাস্থ্য সংকটের উপসর্গগুলোর মধ্যে রয়েছে অকারণ দুশ্চিন্তা, খিটখিটে মেজাজ, সামান্য কারণে রেগে যাওয়া, ঘুমের ব্যাঘাত, যেকোনো ব্যাপারে উত্তেজিত হয়ে যাওয়া, অবসাদ, বিষণ্নতা, হতাশা, ধূমপান বা নেশার প্রতি অতিরিক্ত আসক্তি, আত্মহত্যার প্রবণতা ইত্যাদি।

এমন পরিস্থিতিতে মানসিক সুস্বাস্থ্য ঠিক রাখতে নিজেকে উজ্জীবিত রাখা, শারীরিক কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া ও প্রাণ খুলে হাসার বিকল্প নেই। নিয়মিত ব্যায়াম অথবা অন্য যেকোনো ধরনের শারীরিক পরিশ্রম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। মাংসপেশি এবং হূদযন্ত্র আরো কার্যকর করে তোলে।

একই সঙ্গে রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়। শারীরিক পরিশ্রমের মধ্যে বিশ্বে ম্যারাথন সবচেয়ে জনপ্রিয় ক্রীড়া ইভেন্ট। মজার ব্যাপার হচ্ছে, ইদানীং বাংলাদেশেও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। কুমিল্লায় আয়োজিত ম্যারাথন অন্তত সে কথাই বলছে।

এই অঞ্চলে প্রথম কোনো দৌড় প্রতিযোগিতা আলোর মুখ দেখল ‘দ্য গ্রেট বাংলা রান’-এর সৌজন্যে। এতে সহযোগী আয়োজক ছিলো ‘কুমিল্লা সাইক্লিস্ট’ নামের একটি সংগঠন। এটি কুমিল্লার নবীন-প্রবীণ সবাইকে নতুন অনুপ্রেরণা জোগায়।

এছাড়া বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত সব জনপ্রিয় ইভেন্ট আয়োজন ও প্রতিনিয়ত অনুপ্রেরণা-উৎসাহের জোগান দেয় তারা। দেশের সকল বিভাগের উচিত এমন প্রতিযোগিতার আয়োজনে এগিয়ে আসা।

আমারসংবাদ/এআই