Amar Sangbad
ঢাকা মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪,

খাদ্যশস্য সংগ্রহ ও বিতরণে সফল

নিজস্ব প্রতিবেদক

জানুয়ারি ৫, ২০২১, ০৯:৪৫ পিএম


খাদ্যশস্য সংগ্রহ ও বিতরণে সফল

১৯৪৩ সালে দুর্ভিক্ষের প্রেক্ষাপটে সৃষ্ট খাদ্য বিভাগ প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই দরিদ্র জনগণকে স্বল্পমূল্যে খাদ্য সরবরাহ করে যাচ্ছে। সে লক্ষ্যে বহুবিধ কর্মসূচির পাশাপাশি বর্তমান খাদ্য অধিদপ্তর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভালোবাসায় সিক্ত ‘খাদ্য বান্ধব কর্মসূচিরও’ বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে।

দেশের হতদরিদ্র মানুষের জন্য ‘শেখ হাসিনার বাংলাদেশ, ক্ষুধা হবে নিরুদ্দেশ’ স্লোগানযুক্ত ১০ টাকা কেজি দরে গ্রামীণ দরিদ্র মানুষকে চাল দেয়ার কর্মসূচিও ইতোমধ্যেই জনগণের মাঝে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। গেলো বছরে মুজিববর্ষ উপলক্ষে একশটি উপজেলায় চাল বিতরণ কার্যক্রমও সফলভাবেই বাস্তবায়ন করে খাদ্য অধিদপ্তর।

খাদ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বিগত তিন বছরে কৃষকদের প্রণোদনা প্রদান ও ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করার লক্ষ্যে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ১১.২০ লাখ মেট্রিক টন ধান, ১.০৯ লাখ মেট্রিক টন গম ও ৪৬.০০ লাখ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহ করে অধিদপ্তর। বৈদেশিক উৎস থেকেও ১৪.০৬ লাখ মেট্রিক টন গম ও ৯.৫১ লাখ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহসহ মোট ৮১.৮৬ লাখ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য সংগ্রহ করা হয়। মাঠপর্যায়ের প্রান্তিক কৃষকদের কাছ থেকে ধান, গম ও চাল সংগ্রহে বিশেষ করে আমন ২০১৯-২০ মৌসুমে সর্বোচ্চ সংখ্যক কৃষক পেয়েছে ধানের ন্যায্যমূল্যও।

এ সময় কৃষকের কাছ থেকে ধান সংগ্রহের জন্য চালু করা হয় ‘কৃষকের অ্যাপ’। সংগৃহীত খাদ্যশস্যের মধ্যে দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মাঝে প্রায় ৬০.২৩ লাখ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য বিতরণও করে অধিদপ্তর। বিতরণ ব্যবস্থা সফলভাবে সম্পন্নের ফলে বর্তমানে বাজারে খাদ্যশস্যের সরবরাহ ও বাজার মূল্য রয়েছে স্থিতিশীল। প্রধানমন্ত্রীর ব্র্যান্ডিং কর্মসূচি হিসেবেও ২০১৬ সাল থেকে সারা দেশে ইউনিয়নপর্যায়ে অতিদরিদ্র জনসাধারণকে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির মাধ্যমে ৫০ লাখ পরিবারকে বছরে কর্মাভাবকালীন ৫ মাস প্রতি কেজি ১০ টাকা দরে মাসে ৩০ কেজি করে চাল সরবরাহ করে যাচ্ছে খাদ্য অধিদপ্তর। 

গত বছর করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবে মে মাসে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিতে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে অতিরিক্ত এক মাস চাল বিতরণ করে খাদ্য অধিদপ্তর। এসডিজির ২ নম্বর লক্ষ্যের (জিরো হাঙ্গার) পুষ্টি সংশ্লিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি টার্গেট ২.১, ২.২) অর্জনেও নিরলস কাজ করে যাচ্ছে খাদ্য বিভাগ।

এ প্রেক্ষাপটে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পুষ্টি চাহিদা পূরণে খাদ্যবান্ধব ও ভিজিডি কর্মসূচিতে ভিটামিন এ, বি১, বি১৬, ফলিক এসিড, আয়রন ও জিংক সমৃদ্ধ পুষ্টিচাল বিতরণ করা হচ্ছে। বৈশ্বিক মহামারি কোভিড-১৯ বাংলাদেশেও ছড়িয়ে পড়ায় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় স্বল্প আয়ের তালিকাভুক্ত মানুষদের জন্য খাদ্য সহায়তা বাবদ পরিবার প্রতি বিশেষ ওএমএস চালু করা হয় এবং ১০ টাকা কেজি দরে মাসে ২০ কেজি করে চাল বিতরণ করা হয়।

বর্তমানে সরকারি খাদ্য গুদামের ধারণক্ষমতা ১.২৭ লাখ মেট্রিক টন থেকে বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় ২১.৫০ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া আশুগঞ্জ, ময়মনসিংহ ও মধুপুরে মোট ২.০১ লাখ মেট্রিক টন ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন আধুনিক স্টিল সাইলো নির্মাণের কাজও চলমান রয়েছে। পাশাপাশি দেশের দুর্যোগপ্রবণ ১৯টি জেলার ৬৩ উপজেলায় প্রায় পাঁচ লাখ পারিবারিক সাইলো বিতরণ করা হয়েছে।

খাদ্য অধিদপ্তরের উল্লেখযোগ্য উন্নতি সাধনের মধ্যে এখনো অপুষ্টির নানা চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। এর মধ্যে ক্রমবর্ধমান জনগণের বিদ্যমান দারিদ্র্য ও অপুষ্টি দূরীকরণে কার্যকর খাদ্য ব্যবস্থাপনা পরিচালনা এবং সরকারি পরিকল্পনা ও বাজেট অনুযায়ী আপদকালীন জলবায়ু সহিষ্ণু খাদ্য নিরাপত্তা মজুত ব্যবস্থাপনার উদ্ভাবনী কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন অন্যতম।

এসব চ্যালেঞ্জ সামনে রেখেই খাদ্য অধিদপ্তর ২০৪১ সাল নাগাদ একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ গড়ার পথে যেতে টেকসই উন্নয়ন অভীস্টের চূড়ান্ত বছরের সঙ্গে মিল রেখে জাতীয় খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নীতি-২০২০ এর চূড়ান্ত খসড়া প্রণয়ন করেছে। এছাড়াও অব্যাহত প্রশিক্ষণ ও অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে খাদ্য ব্যবস্থাপনার সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে অনুপুষ্টি ও জলবায়ু পরিবর্তনের অভিযোজন অন্তর্ভুক্ত করে নিম্ন আয়ের জনগণ বিশেষ করে তৈরি পোশাক শিল্প, ১৬তম থেকে ২০তম গ্রেডের কর্মচারী, গ্রামীণ দুস্থ নারী, স্বল্প আয়ের বৃহৎশিল্প শ্রমিক ও গ্রামীণ জনগণের জন্য নিয়মিত কর্মসূচিতে স্বল্পমূল্যে খাদ্যশস্য বিতরণ ব্যবস্থা সময়োপযোগী করা এবং খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি বছরব্যাপী সম্প্রসারণ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে খাদ্য অধিদপ্তর।

সরকারি পর্যায়েও খাদ্য সংগ্রহ ও বিতরণ ব্যবস্থাপনায় ডিজিটাল সিস্টেমের প্রবর্তন, খাদ্যের গুণগতমান বজায় রাখার জন্য আধুনিক প্রযুক্তির খাদ্য সংরক্ষণাগার নির্মাণ এবং ২০৪১ সালে উন্নত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেই নিরলস কাজ করে যাচ্ছে খাদ্য বিভাগ।

এরই মধ্যে চলতি অর্থবছরে কৃষকদের প্রণোদনা মূল্য নিশ্চিতকরণ এবং খাদ্য নিরাপত্তা মজুত গড়ে তোলার লক্ষ্যে ২৬.০০ লাখ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য সংগ্রহ, বাজার মূল্য স্থিতিশীল রাখা, বাজারে খাদ্য প্রাপ্যতা সহজলভ্য করা এবং নিম্নআয়ের জনগোষ্ঠীর খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সমন্বিত বিতরণ কর্মসূচিতে ২৮.০০ লাখ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য সরবরাহ, আশুগঞ্জ, ময়মনসিংহ ও মধুপুরে আধুনিক স্টিল সাইলো নির্মাণ, কিশোরগঞ্জ জেলার মিঠামইন, পঞ্চগড় জেলার ভজনপুর, যশোর জেলার চৌগাছা, সুনামগঞ্জ জেলার মধ্যনগর এলএসডি ইত্যাদি প্রত্যন্ত অঞ্চলে খাদ্য গুদাম নির্মাণসহ মোট গুদামের ধারণক্ষমতা ৩৮ হাজার মেট্রিক টন বৃদ্ধির লক্ষ্যেও কাজ করছে খাদ্য অধিদপ্তর।

আমারসংবাদ/জেআই