Amar Sangbad
ঢাকা মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪,

করোনায়ও গতিশীল ই-পাসপোর্ট প্রকল্প

নুর মোহাম্মদ মিঠু

জানুয়ারি ৬, ২০২১, ০৮:২৫ পিএম


করোনায়ও গতিশীল ই-পাসপোর্ট প্রকল্প

আন্তর্জাতিক পরিসরে মানুষের যাতায়াতকে নির্বিঘ্ন ও নিরাপদ করতে হাতে লেখা পাসপোর্টের বদলে প্রবর্তিত হয়েছিল মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট। কিন্তু মেশিন রিডেবল পাসপোর্টেও জালিয়াতি করা হচ্ছে বিধায় ইমিগ্রেশন ব্যবস্থাপনাকে আরও নির্ভুল, সহজতর, সময়-সাশ্রয়ী ও স্বাচ্ছন্দ্যময় করতে বর্তমান বিশ্বের ১১৮টি দেশই ইতোমধ্যে প্রবর্তন করেছে ই-পাসপোর্ট। ই-পাসপোর্টের ঈঐওচ-এ সকল তথ্য, স্বাক্ষর, ছবি, চোখের কর্ণিয়া এবং ফিঙ্গার প্রিন্ট শিল্ড অবস্থায় সুরক্ষিত থাকে বিধায় তাতে কোনোভাবেই পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। ই-পাসপোর্ট পরীক্ষিত, নিরাপদ, ঝুঁকিমুক্ত ভ্রমণ দলিল এবং পৃথিবীর কোথাও এটি জাল করা আদৌ সম্ভব হয়নি। এই পাসপোর্ট প্রবর্তনের মধ্য দিয়েই বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশি জনগণের মর্যাদা উজ্জ্ব্বল হবে এবং বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করতে পারবে কোনো রকমের হয়রানি ছাড়াই। ই-পাসপোর্টের সবচেয়ে বড় সুবিধা ই-গেট ব্যবহার করেই ভ্রমণকারীরা খুব দ্রুত ও সহজে যাতায়াত করতে পারবেন। ফলে বিভিন্ন বিমানবন্দরে আর ভিসা চেকিংয়ের জন্য দাঁড়াতে হবে না লাইনে। এর মাধ্যমেই দ্রুত সম্পন্ন হবে ইমিগ্রেশন।

গত বছরের ২২ জানুয়ারি ই-পাসপোর্টের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনের পর থেকেই ই-পাসপোর্ট তৈরির লক্ষ্যে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে পাসপোর্ট অধিদপ্তর। এরই মধ্যে গত ২৬ মার্চ দেশের সকল সেক্টরেই বিরূপ প্রভাব বিস্তার করে বৈশ্বিক মহামারি রূপে আবির্ভূত হয় করোনা ভাইরাস। আবেদন গ্রহণ ও পাসপোর্ট দেয়ার কার্যক্রমেও করোনার যে ধাক্কা লাগে তা কাটিয়েই পাসপোর্ট অধিদপ্তর

ই-পাসপোর্ট তৈরির লক্ষ্যে পুরোদমে কাজ শুরু করে সংশ্লিষ্টরা। এরই মধ্যে অনলাইনে আবেদনের মাধ্যমেই কোনো ধরনের ঝামেলা ছাড়াই মিলছে ই-পাসপোর্ট। প্রযুক্তির সহায়তায় করোনা মহামারির মধ্যেও বেড়েছে পাসপোর্ট অধিদপ্তরের সেবা কার্যক্রম। বর্তমানে দিনে প্রায় ছয় হাজার ই-পাসপোর্ট তৈরিও হচ্ছে। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই দিনে ২৫ হাজার ই-পাসপোর্ট তৈরি করতে পারবে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর।

এদিকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইতোমধ্যে ১৫-১৮টি ই-গেটও স্থাপন করা হয়েছে বলে আমার সংবাদকে জানিয়েছেন পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আইয়ুব চৌধুরী। করোনাকালেও ই-পাসপোর্ট কার্যক্রম চলমান রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশের সব জায়গায় ই-পাসপোর্ট কার্যক্রম চলমান রয়েছে। বিদেশি মিশনগুলো ছাড়া দেশের সবগুলো কার্যালয়েই ই-পাসপোর্ট কার্যক্রম চলছে।

ই-গেটের বিষয়ে জানতে চাইলে আমার সংবাদকে তিনি বলেন, ই-গেটগুলোর সাথে অনেক কিছুরই সম্পর্ক রয়েছে। ই-গেটগুলোর কিছু আমরা বসিয়েছি। আর কিছুটা বর্তমানে শিপমেন্টে আছে, এলে বসাবো। করোনার জন্য এটা বিঘ্নিত হয়েছে। এরই মধ্যে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ১৫-১৮টি ই-গেট বসানো হয়েছে। আরও ১২টি শিপমেন্টে আছে (এ সংখ্যা কমবেশি হতে পারে)। বিদেশের মিশনগুলোর বিষয়ে তিনি বলেন, যেদিন যে দেশ পারমিশন দেবে, সেদিন সেদেশে বসে যাবে। এরকম ৮০টি মিশন আছে। লোক যেতে পারছে না, যেতে পারলেই বিদেশের মিশনগুলোতেও বসানো হবে।  

এদিকে সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, ই-পাসপোর্ট কার্যক্রমকে এগিয়ে নিতে করোনা মহামারির মধ্যে অফিস বন্ধ থাকলেও থেমে থাকেননি ই-পাসপোর্ট প্রকল্পের কর্মীরা। অফিস বন্ধ থাকলেও প্রযুক্তিগত সরঞ্জাম স্থাপনের কাজ চালিয়ে আসছেন তারা। বর্তমানে দেশের সব পাসপোর্ট অফিসেই প্রযুক্তি সংস্থাপনের মাধ্যমে ই-পাসপোর্ট কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

জানা গেছে, বর্তমানে দিনে প্রায় ছয় হাজার পাসপোর্ট তৈরি হলেও ২৫ হাজার পাসপোর্ট দেয়ার সক্ষমতা পাসপোর্ট অধিদপ্তরের রয়েছে। ই-পাসপোর্টে ছাপানোর জন্য বিশেষ ধরনের বুকলেট বিদেশ থেকে আনাও হচ্ছিল। ২০ লাখ বুকলেট দিয়েই এখন কাজ চলছে। তবে চলতি মাস থেকে নিজস্ব কারখানায় স্থাপন করা প্রযুক্তিতেই বুকলেট তৈরি করার কথা রয়েছে পাসপোর্ট অধিদপ্তরের। আর অত্যাধুনিক জার্মান প্রযুক্তিতে এই পাসপোর্ট তৈরি ও রিডিং হচ্ছে। উন্নত প্রযুক্তির কারণে সমান মর্যাদা পাওয়া যাবে, ভুয়া পাসপোর্ট বলে সন্দেহ দূর হবে, ভিসা পাওয়াও সহজ হবে। একই সঙ্গে অন-অ্যারাইভাল ভিসা পাওয়ার সুযোগ বাড়বে বলেও জানা গেছে।

আমারসংবাদ/জেআই