Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪,

অ্যাটর্নি সার্ভিস গঠন সিদ্ধান্তহীনতায় ঝুলছে ১৩ বছর!

জানুয়ারি ৬, ২০২১, ০৯:০৫ পিএম


অ্যাটর্নি সার্ভিস গঠন সিদ্ধান্তহীনতায় ঝুলছে ১৩ বছর!

অ্যাটর্নি সার্ভিস। উচ্চ ও নিম্ন আদালতে রাষ্ট্রের হয়ে মামলা লড়াইয়ে অ্যাটর্নি সার্ভিস গঠন জরুরি হলেও নানা জটিলতায় আটকে আছে। কবে গঠন হবে সেটা নিয়েও রয়েছে অনিশ্চয়তা। অ্যাটর্নি সার্ভিস গঠনের লক্ষ্যে অধ্যাদেশ জারি হয়েছিল এক যুগ আগে। কিন্তু সংসদে অনুমোদন না হওয়ায় আলোর মুখ দেখেনি বিচার কার্যক্রমের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ‘স্থায়ী অ্যাটর্নি সার্ভিস আইন’। অনুমোদন হবে কি হবে না এমন সিদ্ধান্তহীনতায়ই পার হয়েছে ১৩ বছর।

এদিকে স্থায়ী অ্যাটর্নি সার্ভিসের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে উচ্চ আদালতে একাধিক রিট হলেও সুফল মেলেনি। ফলে বিচারে রাষ্ট্রপক্ষীয় আইনি লড়াইয়ে পেশাদারিত্বও আসেনি। রাষ্ট্রের স্বার্থ রক্ষায় রয়ে গেছে অপূরণীয়তা। ফলশ্রুতিতে সংক্ষুব্ধদের করা অধিকাংশ মামলায় হারছে সরকার। নিষ্পত্তিতেও জটিলতা থেকেই যাচ্ছে। সংকটও নিরসন হচ্ছে না। এদিকে রাষ্ট্রপক্ষের মামলায় পরাজয়ের অন্যতম কারণ হিসেবে আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনাকারী আইনজীবীদের অদক্ষতাকেই দায়ী করা হচ্ছে। এভাবে একদিকে যেমন মামলাজট বাড়ছে, অপরদিকে সৃষ্টি হচ্ছে নতুন নতুন সংকট। এজন্যই মামলাজট দ্রুত নিষ্পত্তি করার লক্ষ্যে ‘অ্যাটর্নি সার্ভিস গঠনের উদ্যোগ’ নিয়েছিল সরকার।

অস্থায়ীভিত্তিতে উচ্চ আদালতে অ্যাটর্নি জেনারেল, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল এবং বিচারিক আদালতে পাবলিক প্রসিকিউটর, সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর, স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর নিয়োগ দিয়েও সুরক্ষা মেলেনি। আবার রাষ্ট্রের হয়ে লড়া আইন কর্মকর্তাদের বড় একটি অংশের বিরুদ্ধেই রয়েছে অসততা, প্রকাশ্যে রাষ্ট্রের পক্ষে কিন্তু গোপনে আসামিপক্ষকে সহযোগিতা করার গুরুতর অভিযোগ। রয়েছে সরকার পরিবর্তন হলে ইচ্ছামত দলীয় আইনজীবীদের আইন কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেয়ার অভিযোগও।

বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকারি দপ্তর, অধিদপ্তর ও পরিদপ্তরের মামলা হারের প্রধান কারণ স্থায়ী অ্যাটর্নি সার্ভিস না থাকা। তারা বলেন, স্বাধীন প্রসিকিউশন সার্ভিস বা অ্যাটর্নি সার্ভিস করা হলে আইনজীবীরা লাইব্রেরিমুখী হবেন। তারা কোনো রাজনৈতিক দলের লেজুড়বৃত্তি বা গোষ্ঠীর হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহূত হবেন না। এটা করা হলে রাষ্ট্র দক্ষ ও যোগ্যতাসম্পন্ন প্রসিকিউশন পাবে। তারা ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারবে।

তাদের দাবি, এক শ্রেণির অপেশাদার আইনজীবীর আপত্তির কারণে স্থায়ী অ্যাটর্নি সার্ভিস আইনটি করা যাচ্ছে না। ওই সব সুবিধাভোগী আইনজীবীরা সরকারের রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থেকে ব্যক্তিগত সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে পদ-পদবি ব্যবহার করেন। ফলে, অযোগ্য ও অদক্ষ আইনজীবীরা সরকারের আইন কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পাচ্ছেন রাজনৈতিক বিবেচনায়। এতে সরকার তথা রাষ্ট্র বঞ্চিত হচ্ছে।

আইন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বিভিন্ন পর্যায়ে যাচাই-বাছাই করে অ্যাটর্নি সার্ভিস আইনের খসড়া তৈরি করা হয়েছে। দ্রুত মামলা নিষ্পত্তি করতে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত চেয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। অ্যাটর্নি পদে স্থায়ী নিয়োগ হলে সরকারি অফিসগুলোর মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি হবে। আইন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বিগত ২০০২ সালে অ্যাটর্নি সার্ভিস আইনপ্রণয়নের উদ্যোগ নেয়া হয়। ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের চূড়ান্ত অনুমোদনের পর অ্যাটর্নি সার্ভিস অধ্যাদেশ প্রেসিডেন্ট সংবিধানের ৯৩ (১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী একই বছরের ১৫ মে অনুমোদন দেন। এর তিন দিন পর ১৮ মে গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়। ওই অধ্যাদেশের ক্ষমতাবলে একই বছর ২ জুন সরকারি অ্যাটর্নি অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠা করা হয়।

জাতীয় প্রেস ক্লাবের দক্ষিণ পাশে সচিবালয় লিংক রোডের পরিবহন পুলের ১১ তলায় অফিসও নেয়া হয়। ওই অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হিসেবে লেজিসলেটিভ বিভাগের তৎকালীন যুগ্ম সচিব মো. ইসরাইল হোসেনকে নিয়োগ দেয়া হয়। অধিদপ্তরে কয়েকটি সভাও অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু পরবর্তীকালে ওই অধ্যাদেশ জাতীয় সংসদে পাস না হওয়ায় তা হিমাগারে চলে যায়। জাতিসংঘ দুর্নীতিবিরোধী কনভেনশনে স্থায়ী অ্যাটর্নি সার্ভিস গঠনের বিধান রয়েছে।

অ্যাটর্নি সার্ভিস গঠন নিয়ে করা রিটে বলা হয়, বিদ্যমান আইনে আদালতের আইন কর্মকর্তা নিয়োগের বিধান সংবিধানের ১৯ (১), ২২, ২৯ (১) (২) এবং ৩১ অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এই বিধানটিতে ব্যাপক বৈষম্য রয়েছে। সততা, দক্ষতা, যোগ্যতা ও নৈতিকতাসম্পন্ন আইনজীবীকে আইন কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ করতেই স্বাধীন প্রসিকিউশন সার্ভিস গঠন করা দরকার। 

এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট বারের অ্যাডভোকেট ড. বাবরূল আমীন বলেন, অ্যাটর্নি সার্ভিস আইন প্রণয়ন করা হলে চুক্তিভিত্তিক আইন কর্মকর্তা নিয়োগের প্রথা থাকবে না। এর আওতায় ন্যূনতম আইন বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারীরা পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) মাধ্যমে পরীক্ষা দিয়ে আইন কর্মকর্তা তথা উচ্চ আদালতে সহকারী, ডেপুটি ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এবং নিম্ন আদালতে এপিপি, জিপি ও পিপি পদে নিয়োগ পাবেন। গুরুত্বপূর্ণ এসব পদ আর রাজনৈতিক পুনর্বাসন কেন্দ্রে পরিণত হবে না।

জানতে চাওয়া হলে আইনজীবী ফরহাদ উদ্দিন আহমেদ ভুইয়া বলেন, বিদ্যমান আইনে সরকারি আইন কর্মকর্তা নিয়োগে কোনো স্বচ্ছতা নেই। গত ৭ জুলাই উচ্চ আদালতে সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল (এএজি) নিয়োগের ক্ষেত্রে ছয়জন আইনজীবীর নামের পাশে পেশার তালিকাভুক্তির তারিখ দেয়া হয়নি। যার জন্য আদালতে এ রিট করা হয়েছে। তিনি বলেন, বিচারবিভাগের স্বাধীনতার প্রকৃত স্বাদ পেতে হলে অবশ্যই স্বাধীন প্রসিকিউশন বা অ্যাটর্নি সার্ভিস আইন প্রণয়ন করা সময়ের দাবি ও সাংবিধানিক অধিকার।

আমারসংবাদ/জেআই