Amar Sangbad
ঢাকা বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪,

‘কালো টাকায় বেগবান হচ্ছে অর্থনীতি’

জানুয়ারি ৬, ২০২১, ০৯:২০ পিএম


‘কালো টাকায় বেগবান হচ্ছে অর্থনীতি’

কালো টাকা সাদা হওয়ায় অর্থনীতি অনেক বেগবান হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা  কামাল। তিনি বলেন, অফিসিয়ালি এ টাকাগুলো আসাতে আমাদের অর্থনীতিতে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। অর্থনীতি অনেক বেগবান হচ্ছে। আমি মনে করি, আমাদের উদ্দেশ্য সফল হয়েছে। পুরাপুরি না হলেও বেশির ভাগই আমরা সফল হয়েছি। আমরা চাই কালো টাকা সাদা হোক। যখন কালো হয়ে গেছে তখন সাদা হবে। আর কালো হওয়ার কারণ নিয়ে অনেকবার ব্যাখ্যা দিয়েছি।

গতকাল বুধবার অনলাইনে সিঙ্গাপুরে অবস্থানরত অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। ছয় মাসে কালো টাকা সাদা হয়েছে ১০ হাজার কোটি টাকার উপরে।

করোনার মধ্যে এটা কিভাবে হলো জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমরা সাদা করতে চাই বলে সাদা হলো। আমাদের বাজেটে আছে। বাজেট বক্তৃতায় আছে আমরা কিছু কিছু ক্ষেত্রে এগুলো অ্যাডড্রেস করতে চাই। প্রথমেই আমাদের রেমিট্যান্সে প্রণোদনা চালু করেছি। আরও একটা ক্ষেত্র রয়েছে যেটা প্রতিটা দেশের জন্য বড় এলাকা। সেটা হলো আবাসন খাত। এই আবাসন খাতে স্ট্যাম ফি ও ডিউটি বাড়তি থাকার কারণে কোনো রেজিস্ট্রেশন হয় না। ফলে সরকার কোনো রাজস্ব পাচ্ছে না। বাড়ি বিক্রি হচ্ছে অথচ বিক্রি দেখাচ্ছে না। আর বিক্রি যেখানে ১০টা সেটা দেখাচ্ছে এক টাকা। ১০ টাকার উপরে গেলে স্ট্যাম ডিউটি দিতে লাগে সেজন্য স্ট্যাম ডিউটি কমিয়ে দিয়েছি। এরকম যেখানে যেখানে হাত দেয়া দরকার সেখানে সেখানে করেছি। সেগুলো করার কারণেই এখন কালো টাকা সাদা হচ্ছে। যেমন আমাদের পুঁজিবাজারসহ এটা সব দেশেই করে।

তিনি বলেন, আমাদের রেমিট্যান্স গত এক বছরে বা ছয় মাসে আমাদের অর্জন হয়েছে ৪০ হাজার কোটি টাকা। পুরা বছরে আমাদের ৭০ থেকে ৮০ হাজার কোটি টাকা বেশি আসবে। এই টাকাগুলো কোথায় যাবে পুঁজিবাজারে যাবে। অফিসিয়ালি এ টাকাগুলো আসাতে আমাদের অর্থনীতিতে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। এই টাকাগুলোর মাল্টিটেরিফাই অনেক বেশি। এতে একজনের একটা ট্রানজেকশন ১০ হাত ঘুরে। এতে অর্থনীতি অনেক বেগবান হচ্ছে। আমি মনে করি আমাদের উদ্দেশ্য সফল হয়েছে। পুরাপুরি না হলেও বেশির ভাগই আমরা সফল হয়েছি। আমরা চাই কালো টাকা সাদা হোক। যখন কালো হয়ে গেছে তখন সাদা হবে। আর কালো হওয়ার কারণ নিয়ে অনেক বার ব্যাখ্যা দিয়েছি।

অর্থমন্ত্রী বলেন, টাকা আমাদের পলিসিগত কারণে কালো হয়। অনেকেই ট্যাক্স দেয় আবার অনেকেই ট্যাক্স দেয় না। আবার ট্যাক্স রেট অনেক বেশি ছিলো। আস্তে আস্তে যদি এগুলো কমিয়ে আনতে না পারি তাহলে হবে না। আমাদের সুদের হার অনেক বেশি ছিলো। এতো বেশি সুদহারে কোনো দেশে শিল্পায়ন হয় না। পাশাপাশি কোনো দিন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয় না। আমরা সেখানেও সফল মোটামুটি আমরা যেটি করে দিয়েছি সেটা সবাই গ্রহণ করেছে। এখন যে ৬ শতাংশে ঋণ পাচ্ছে যা অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি। বিদেশে টাকা রাখলে উল্টো টাকা দিতে হবে। সেখানে লাভ পায় না যদিও পায় সেটা এক থেকে দেড় শতাংশ। সেখানে আমাদের দেশে ৬ শতাংশ পাচ্ছে। এটা হলো আমাদের ইতিবাচক দিক। এটা আমাদের দেখতে হবে।

অর্থমন্ত্রী বলেন, আমাদের অনেকের টিআইএন নাম্বার আছে কিন্তু আমরা ট্যাক্স পাচ্ছি না। টিআইএন নাম্বার দিয়ে কি হবে যদি ট্যাক্স না পাই। সে কাজটি করার জন্য আমরা ফুল অটোমেশনে যাচ্ছি। যতদিন পর্যন্ত অটোমেশন শেষ করতে না পারি ততদিন পর্যন্ত আমাদের এ সমস্যা থাকবে। সেজন্য সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে রাজস্ব খাতে অটোমেশনের।

বর্তমান সরকারের ক্ষমতায় আসার দুই বছরপূর্তি হলো এটাকে কিভাবে মূল্যায়ন করবেন জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, কতটা করলাম আর কতটা করতে পারলাম না সেটা মূল্যায়ন তো আপনারা করবেন। আমার কাজ হচ্ছে কাজ করা দেশ ও দেশের প্রতিটা নাগরিকের জন্য।  নতুন বছর আমরা আরও ভালো করবো অন্যদেশের তুলনায়। তারপরও আমাদের দুইটা জায়গায় চ্যালেঞ্জ রয়েছে।

পুঁজিবাজার ও রাজস্ব আয় নিয়ে আপনি কি চ্যালেঞ্জ দেখছেন এমন প্রশ্নের জবাবে মুস্তফা কামাল বলেন, অর্থনীতি অনেকগুলো প্যারা মিটারের ওপর নির্ভরশীল। আমরা যে সময় বাজেট ঠিক করি সে সময় আমাদের ভাবনা ছিলো এক রকম আমাদের ভাবনার পরিবর্তন আসছে। সেজন্য আমাদের বাজেটে সংশোধন আনার প্রয়োজন আছে। হয়তো এখানে ওখানে আমাদের হাত দিতে হতো। এটা খুবই স্বাভাবিক ও সঙ্গত। আমরা পৃথিবীর অনেক দেশের তুলনায় ভালো আছি। আমি বিশ্বাস করি এই ভালোটা থাকবে। থাকার কারণ, আমাদের অর্থনীতি নতুন, আমরা নতুন অর্থনীতি শুরু করেছি। তাই অন্যদের সাথে তুলনা করলে চলবে না। আমাদের প্রধানমন্ত্রী যেভাবে দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন আমরা যেভাবে কাজ করছি, সেখানে চোখে পড়ার মতো কোনো ঘাটতি আমাদের দেখাতে পারবেন না। তিনি বলেন, আমাদের আমদানি কমে গেছে, যদি আমদানি বেশি থাকতো, তাহলে আমাদের ডিউটি বাড়তো। আমাদের আয়করের রেশিও ভালো আছে। তুলনামূলক আমরা অনেক দেশের থেকে ভালো আছি। 

পুঁজিবাজার নিয়ে তিনি বলেন, পুঁজিবাজারে যদি বিদেশি বিনিয়োগ থাকতো তাহলে তারা যেকোনো মুহূর্তে পুঁজি তুলে নিতে পারতো। যেটা আমরা ১৯৯৭ সালে দেখেছি। সাউথ এশিয়ার সাথে যেটা হলো। সে সময় বিদেশিদের টাকা তারা তুলে নিয়ে যাওয়ায় অর্থনীতি বসে গেছে। আমাদের এ ধরনের চিন্তার কোনো কারণ নেই। কারণ আমাদের ফিসক্যাল পলিসি ও মিনটরি পলিসি, বাজেট, ফাইভইয়ার প্লান সঠিক আছে। সেজন্য আমরা ভালো আছি।

অর্থমন্ত্রী বলেন, আমাদের পরমুখিতা কম, আমাদের উন্নয়ন না বাড়ালে বন্ধ হয়ে যাবে এ ধরনের কোনো কিছু নেই। আমরা আমাদের দেশের চাহিদা ও জনগণের চাহিদা সম্পর্কে সম্পূর্ণ অবগত আছি। আমরা সেভাবেই কাজ করে যাচ্ছি।

আমারসংবাদ/জেআই