Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪,

রেলওয়ের জমি বেহাত

মো. শহিদুল ইসলাম, গোমস্তাপুর (চাঁপাইনবাবগঞ্জ)

জানুয়ারি ৬, ২০২১, ১০:০৫ পিএম


রেলওয়ের জমি বেহাত

চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুরে দখলদারদের অপতৎপরতায় দখলমুক্ত হচ্ছে না রেলওয়ের কয়েকশ একর জমি। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ  তা দখলমুক্ত করতে উচ্ছেদের উদ্যোগ নিলেও অদৃশ্য কারণে দখলমুক্ত করতে পারছে না। পশ্চিম রেলওয়ের ভূসম্পত্তির রহনপুর-আমনুরা রেলপথের গোলাবাড়ি থেকে রহনপুর হয়ে ভারত সীমান্তবর্তী শিবরামপুর পর্যন্ত রেলওয়ের মোট ৩৭৮.৮৮ একর সম্পত্তি রয়েছে। এর মধ্যে রহনপুর রেলস্টেশন ও তার আশেপাশে ১৪৭.৮৪ একর জায়গা রেলের দখলে রয়েছে। বাকি সম্পত্তি বেদখলে রয়েছে। এর মধ্যে ০.৪৫ একর জায়গা বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ব্যবহারের জন্য লিজ দেয়া হয়েছে।

এছাড়া কৃষিজমি হিসেবে ৮১.২৪ একর জমি জলাশয় হিসেবে ১২.০১ একর, বিএডিসির সারগুদামের জন্য ৫.০৩ একর জায়গা লিজ দেয়া হয়েছে। পতিত রয়েছে ৫৪.১৪ একর জমি এবং অবৈধ দখলে রয়েছে ৭৮.১৬ একর জমি। এ ছাড়া রহনপুর রেলস্টশনের পশ্চিম পার্শ্বে আম বাজার ও পূর্ব পার্শ্বে রেলের জায়গা দখল করে  দৈনিক বাজার বসিয়ে রহনপুর পৌরসভা কর্তৃপক্ষ লাখ লাখ টাকা খাজনা আদায় করছে। বিষয়টি অবৈধ হওয়ায় রেল কর্তৃপক্ষ পৌরসভাকে আইনি নোটিস দিয়েছে বলে জানা গেছে।

এ ছাড়াও আম বাজারকে কেন্দ্র করে বড় বড় আমের আড়ৎ বিশাল পরিমাণ জমি দখল করে রেখেছে। সম্প্রতি রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলীয় জোনের জেনারেল ম্যানেজার মিহির কান্তি গুহ, চিপ অপারেটিং সুপারিনটেনডেন্ট শহিদুল ইসলাম, চিফ ইঞ্জিনিয়ারসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা রহনপুর রেলস্টেশন পরিদর্শনে এলে তাকে বিষয়টি অবহিত করেছেন জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় ব্যবসায়ী নেতারা।

এদিকে লিজ নেয়া ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান তাদের লিজকৃত জায়গার কয়েকগুণ জায়গা অবৈধ দখলে নিয়ে মার্কেট নির্মাণ, মেস নির্মাণ করে লাখ লাখ টাকায় পজিশন বিক্রিসহ বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করছে। এতে করে রেলওয়ে বিপুল রাজস্ব হারাচ্ছে।  দখলদারদের মধ্যে রহনপুর স্টেশন বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সভাপতি আশরাফুল ইসলাম আশরাফ, মোহাম্মদ হোসেন, সানোয়ার হোসেন ও বিএনপি নেতা আব্দুস সালাম তুহিন রহনপুর স্টেশন বাজার এলাকায় রেলওয়ের জায়গা অবৈধভাবে দখল করে মার্কেট নির্মাণ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।  এ ছাড়া রহনপুর কলেজ মোড় এলাকায় রেলওয়ের জলাশয় দখল করে ওই এলাকার হাবিবুর রহমান হবি ও আশরাফুল ইসলাম বড় বড় মার্কেট নির্মাণ করেছেন। এছাড়া হিরুপাড়া রোড সংলগ্ন রেলওয়ের জায়গায় জাকির হোসেন (এমএমফুড) নামে একটি বিশাল বেকারি কারখানা নির্মাণ করেছেন।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত দখলদারদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা রেলওয়ের জায়গা অবৈধ দখলের অভিযোগ অস্বীকার করেন। তারা জানান, রেলওয়ের জায়গা লিজ নিয়ে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করছেন। তারা আরও জানান, রেলওয়ের প্রয়োজনে তাদের লিজ নেয়া জায়গা যেকোনো সময় ছেড়ে দিতে চান।

পশ্চিম রেলওয়ের পাকশী ডিভিশনের ভূসম্পত্তি কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নুরুজ্জামান জানান, রেলওয়ের জায়গা অবৈধ দখলদারদের দখলমুক্ত করতে গেলে স্থানীয় নেতারা এবং দখলদারদের প্ররোচনায় কিছু এলাকার লোকজন বাধাবিঘ্ন সৃষ্টি করে এবং হুমকি দিয়ে তাদের চলে যেতে বাধ্য করে। এ ছাড়া যারা লিজ নিচ্ছেন তাদের এক বছরের জন্য লিজ দেয়া হয়। যা প্রতি বছর নবায়ন করার কথা থাকলেও তা না করে বছরের পর বছর অবৈধ দখল করে ব্যবহার করছেন।

রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, রেলওয়ের জায়গায় এক বছরের জন্য লিজ দেয়া হয়। কোনোক্রমেই ৯৯ বছরের জন্য লিজ দেয়া হয় না। তবে রেলওয়ের জায়গা দখলমুক্ত করতে সংশ্লিষ্টদের গত বছরের ০৮ ডিসেম্বর নোটিস দেয়া হয়েছে। তারপরও রেলওয়ের জায়গা দখলমুক্ত না হলে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে।

এ কাজে এলাকাবাসী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহায়তা কামনা করেন তিনি। এ দিকে ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারা রহনপুর শিল্প ও বণিক সমিতির সভাপতি সৈয়দ ফারুক হোসেন বলেন, বেদখলকৃত শত শত বিঘা রেলওয়ের সম্পত্তি থেকে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করে রহনপুরকে পূর্ণাঙ্গ রেলবন্দরে রূপান্ত করা হলে ব্যবসা বাণিজ্য প্রসার ঘটবে এবং এলাকার মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন হবে বলে তিনি মনে করেন।

রহনপুর স্টেশন বাজার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি ও রহনপুর উন্নয়ন ফোরামের আহ্বায়ক নাজমুল হুদা খান রুবেল বলেন, রহনপুর রেলস্টেশনে কয়েকশ বিঘা জমি এলাকার কতিপয় মানুষ দখল করে নিজের ব্যবসাসহ দখলকৃত জমি অন্যের কাছে উচ্চমূল্যে বিক্রি করে মুনাফা করছে। তাদের দখলে এই অবৈধ সম্পত্তি দ্রুত অভিযান চালিয়ে দখলমুক্ত করে রহনপুর রেলস্টেশনকে পূর্ণাঙ্গ রেলবন্দরে হিসেবে কাজ করতে ঊর্ধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন এবং সাথে সাথে স্থানীয় জন প্রতিনিধি ও সাধারণ জনগণকে  রেলস্টেশন এলাকায় পরিকল্পিত মার্কেট নির্মাণ করে ব্যবসায়ীদের ব্যবহারের সুবিধ দেয়ার জন্য রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানিয়েছে। এ দিকে রেলওয়ের জায়গা দখলমুক্ত করে রহনপুরকে পূর্ণাঙ্গ রেলবন্দরে পরিণত করার দীর্ঘদিনের দাবি জানিয়ে আসছেন এলাকাবাসী।

আমারসংবাদ/জেআই