Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪,

পর্যটকে মুখর মধুটিলা ইকোপার্ক

জানুয়ারি ১১, ২০২১, ০৮:৩৫ পিএম


পর্যটকে মুখর মধুটিলা ইকোপার্ক

শেরপুর জেলার অন্যতম বিনোদনকেন্দ্র নালিতাবাড়ী উপজেলায় স্থাপিত ‘মধুটিলা ইকোপার্ক’ এবারের শীত মৌসুমেও ভ্রমণপিয়াসীদের পদভারে মুখর। সীমান্তবর্তী এ পার্কের চারপাশে উঁচু-নিচু পাহাড়িটিলা, কৃত্রিম লেক আর সবুজের সমারোহ দেখতে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দর্শনার্থী ও ভ্রমণপিয়াসীরা ভিড় জমাচ্ছেন।

প্রকৃতির সান্নিধ্য পেতে শীত মৌসুমেও প্রতিদিন প্রায় হাজারো দর্শনার্থী সমবেত হয়ে বনভোজন, শিক্ষা সফর করে কর্মক্লান্তি ভুলে আনন্দচিত্তে ফিরে যান নিজগৃহে। তাই ইট, কাঠ, কংক্রিট আর পাথরে গড়া নগরজীবনের কোলাহল ছেড়ে বেরিয়ে আসতে পারেন— এ পার্ক থেকে।

জেলা শহর থেকে ২৪ কিলোমিটার, নালিতাবাড়ী উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার উত্তরে পোড়াগাঁও ইউনিয়নে ময়মনসিংহ বন বিভাগের ব্যবস্থাপনায় মধুটিলা ফরেস্ট রেঞ্জের সমশ্চুড়া বনবিটের আওতায় ৩৮০ একর বনভূমিতে গারো পাহাড়ের মনোরম পরিবেশে সরকারিভাবে বিগত ২০০০ সালে নির্মিত হয় ‘মধুটিলা ইকোর্পাক’ তথা পিকনিক স্পট। স্থাপনকাল থেকেই শীত মৌসুমে এপার্কে পর্যটকরা ভিড় জমান।

এই পার্কটির প্রধান ফটক পেরিয়ে ভেতরে ঢুকতেই প্রথমে চোখে পড়বে সারি সারি গাছ। রাস্তার ডান পাশে খোলা প্রান্তর আর দুপাশে রকমারি পণ্যের দোকান। সামনের ক্যান্টিন পার হলেই পাহাড়ি ঢালু রাস্তা। এর পরই হাতি, হরিণ, রয়েল বেঙ্গল টাইগার, সিংহ, বানর, কুমির, ক্যাঙ্গারু, মৎস্যকন্যা, মাছ ও পাখির ভাস্কর্য।

পাশের আঁকাবাঁকা পথে ঘন গাছের সারি লেকের দিকে চলে গেছে। তারপর কৃত্রিম লেকের উপর স্টারব্রিজ। যা দেখে প্রাণ পায় নব চেতনা, মন হারিয়ে যায় যেন প্রকৃতির মাঝে। লেকে পেডেল বোডে চরে ঘোরাফিরার পর পাহাড়ের চূড়ায় পর্যবেক্ষণ টাওয়ারে আরোহণ করলেই নজর কেড়ে নেয় ভারতের উঁচু-নিচু পাহাড় আর সবুজের সমারোহ। প্রকৃতির এই নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হন ভ্রমণপিয়াসীরা।

 ইকোপার্কে ঢুকতে জনপ্রতি ১০ টাকা, বড় বাস ৬০০ টাকা, মিনিবাস ৪০০ টাকা, মাইক্রোবাস ২০০ টাকা, মোটরসাইকেল ৩০ টাকায় টিকেট কাটার ব্যবস্থা রয়েছে। এখানে আলাদাভাবে ফি দিয়ে প্যাডেল বোট চালানো, পর্যবেক্ষণ টাওয়ারে ওঠা, শিশুপার্কে প্রবেশের সুযোগও রয়েছে। শুধু দিনের বেলায় ব্যবহারের জন্য ভ্যাটসহ চার হাজার ৭০২ টাকার বিনিময়ে পাহাড়ের চূড়ায় চার কক্ষবিশিষ্ট শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত (এসি) সুসজ্জিত মহুয়া নামের রেস্ট হাউস রয়েছে। এ রেস্ট হাউজ ব্যবহার করতে চাইলে মধুটিলা রেঞ্জঅফিস, ময়মনসিংহ অথবা শেরপুর বন বিভাগ অফিসে বুকিং দিতে হয়। এছাড়াও এখানে রয়েছে ডিসপ্লে, মডেল, তথ্যকেন্দ্র, গাড়ি পার্কিং জোন, ক্যান্টিন, মিনি চিড়িয়াখানা, বন্যপ্রাণীর বিরল প্রজাতি পশু-পাখির ভাস্কর্য। আরও আছে জীবন্ত হরিণ, ঔষধি ও সৌন্দর্যবর্ধক প্রজাতির বৃক্ষ এবং ফুলসহ বিভিন্ন রঙ্গের গোলাপের বাগান।

মধুটিলা ইকোপার্কের ভারপ্রাপ্ত রেঞ্জকর্মকর্তা  বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে দীর্ঘদিন মধুটিলা ইকোপার্কটিও বন্ধ ছিলো। এখন সরকারি সিদ্ধান্তে খুলে দেয়ায় এখানে প্রতিদিনই দর্শনার্থীরা ভিড় জমাচ্ছেন। তবে আমরা দর্শনার্থীদের করোনা ভাইরাস থেকে নিরাপদে থাকতে মাস্ক পরিধান করতে উৎসাহিত করছি।

এ ইকোপার্কটি সীমান্তবর্তী হওয়ায় এখান থেকে ভারতের দূরত্ব এক কিলোমিটার। যুগ যুগ ধরে সীমান্তবর্তী এ পাহাড়ে গারো আদিবাসীরা বসবাস করে আসছেন। এখান থেকে খুব সহজে আদিবাসী গারোদের জীবনধারা ও সংস্কৃতি দেখারও সুযোগ রয়েছে।

রাজধানী ঢাকা থেকে মধুটিলা ইকোপার্কের দূরত্ব প্রায় ২০০ কিলোমিটার। ঢাকা বাসস্ট্যান্ড থেকে ময়মনসিংহ হয়ে শেরপুর আসতে হবে। শেরপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে নালিতাবাড়ী উপজেলার নন্নী বাজার পর্যন্ত লোকাল বাস সার্ভিস রয়েছে। এছাড়াও শেরপুর থেকে ভাড়ায় সিএনজি অথবা মটরসাইকেলযোগে মধুটিলা ইকোপার্কে আসা যায়। অথবা নিজস্ব গাড়িতে সরাসরি ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ হয়ে শেরপুর পৌঁছানোর আগে নকলা উপজেলা থেকে নালিতাবাড়ী উপজেলা সদর হয়ে ইকোপার্কে আসা সহজ হয়। সব মিলিয়ে শীত মৌসুম ছাড়াও সম্ভাবনাময় এ ইকোপার্কে প্রায় সারা বছরই দেশি-বিদেশি পর্যটক ও ভ্রমণপিয়াসীদের ভিড় লেগেই থাকে।

আমারসংবাদ/জেআই