Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪,

তিন দ্বীপেও শতভাগ বিদ্যুতায়ন

জাহাঙ্গীর আলম

জানুয়ারি ১২, ২০২১, ০৮:১৫ পিএম


তিন দ্বীপেও শতভাগ বিদ্যুতায়ন

সরকার ২০২১ সালেই সারা দেশে শতভাগ বিদ্যুতায়নের কথা বললেও হাতিয়া, নিঝুম ও কুতুবদিয়া দ্বীপে এখনো বিদ্যুতের খুঁটি যায়নি। জেনারেটর দিয়ে তিন-চার ঘণ্টা সামর্থ্যবান কিছু মানুষের ঘরে আলো জ্বলে। তাই দেরিতে হলেও সমতল থেকে বহুদূরের এই তিন দ্বীপে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দেয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এ জন্য বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে একটি প্রকল্প তৈরি করে অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে।

তাতে বলা হয়েছে, সাবমেরিন ক্যাবল দিয়ে নিঝুম ও কুতুবদিয়া দ্বীপে আগামী সাড়ে তিন বছরে শতভাগ বিদ্যুতায়নের ব্যবস্থা করা হবে। নতুন লাইন নির্মাণ করা হবে ৬৭৬ কিলোমিটার। এর ফলে ৪২ হাজার গ্রাহকের চার লাখ মানুষ পাবে বিদ্যুতের আলো। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। 

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় এবং পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, দেশের মূল ভূখণ্ড থেকে একেবারে বিচ্ছিন্ন কক্সবাজারের কুতুবদিয়া দ্বীপ। অথচ এসডিজির অভীষ্ট (গোল-৭) সবার জন্য সাশ্রয়ী, নিরাপদ, টেকসই ও আধুনিক বিদ্যুৎ সুবিধা প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে। এ লক্ষ্য অর্জনের জন্যই সরকার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে ২০২১ সালের মধ্যে সারা দেশে শতভাগ বিদ্যুতায়নের কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এর অংশ হিসেবে বিদ্যুৎ বিভাগ সমতলের বাইরে পার্বত্য এলাকা, দ্বীপাঞ্চল ও চরাঞ্চলসহ সারা দেশে শতভাগ বিদ্যুতায়নের লক্ষ্যে একটি রোডম্যাপ প্রণয়ন করেছে।

এই রোডম্যাপের সুপারিশ এবং মুজিব জন্মশতবার্ষিকীতে বিদ্যুৎ বিভাগের অঙ্গীকার পূরণে দেরিতে হলেও মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার হাতিয়া, নিঝুম দ্বীপ ও কক্সবাজারের কুতুবদিয়া দ্বীপের শতভাগ গ্রাহককে বিদ্যুৎ সুবিধা পৌঁছে দেয়ার জন্য প্রকল্পটি বাস্তবায়নের প্রস্তাব করা হয়েছে। হাতিয়া, নিঝুম ও কুতুবদিয়া দ্বীপে শতভাগ নির্ভরযোগ্য ও টেকসই বিদ্যুতায়ন নামে প্রকল্পের প্রধান প্রধান কাজ ধরা হয়েছে হাতিয়া দ্বীপে তিনটি ও কুতুবদিয়া দ্বীপে একটি মোট চারটি ৩৩/১১ কেভি উপ-কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। কুতুবদিয়া চ্যানেলে ছয় কিলোমিটার ৩৩ কেভি সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপন করা হবে। মুকতারিয়া-নিঝুমদ্বীপ খালে দেড় কিলোমিটার ১১ কেভি সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপন।

নতুন লাইন নির্মাণ করা হবে ৬৭৬ কিলোমিটার। এর মধ্যে হাতিয়ায় ৪৬৫ কিলোমিটার, নিঝুমে ৪৭ এবং কুতুবদিয়া দ্বীপে ১৬৪ কিলোমিটার। মোট দুই হাজার ৭০০টি পোল মাউটেন্ড বিতরণ উপকেন্দ্র স্থাপন করা হবে। এছাড়া বিদ্যমান ৩৫ কিলোমিটার লাইন রেনোভেশন করা হবে। এছাড়া প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য অফিস ভবন কাম রেস্ট হাউজ, ডরমেটরি ও সীমানা দেয়াল নির্মাণ করা হবে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতাও রয়েছে। এসব কাজ করতে ২০২০ সালের জুলাই থেকে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত সময় নির্ধারণ করা হয়েছে।

সম্পূর্ণ সরকারি অর্থে এর ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে ৩৮৪ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। এসব যাচাই করতে পরিকল্পনা কমিশনে গত বছরের ১২ অক্টোবর পিইসি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় কিছু ব্যাপারে আপত্তি করে সংশোধন করতে বলা হলে ডিপিপি পুনর্গঠন করে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। বাকি কাজ শেষ করে খুব শিগগিরই একনেক সভায় অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে বলে সূত্র জানায়।

সূত্র আরও জানায়, মুজিববর্ষে অফগ্রিড এলাকায় শতভাগ বিদ্যুতায়ন নিশ্চিত করতে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের জন্য গত বছরের ১ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় আলোচ্য প্রকল্পটি দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য ডিপিপি অনুমোদন পর্যায়ে টেন্ডার আহ্বানের নির্দেশনা প্রদান করা হয়। সে অনুযায়ী ইতোমধ্যে বিভিন্ন প্যাকেজের টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। তা ডিপিপির ক্রয় পরিকল্পনায় উল্লেখ করা হয়েছে। ফলে প্রকল্পটি বাকি আড়াই বছরে সমাপ্ত করা যাবে বলে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড থেকে প্রত্যয়ন করা হয়েছে।

সার্বিক ব্যাপারে জানতে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. বেলায়েত হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।

এ ব্যাপারে পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প ও শক্তি বিভাগের সদস্য (সচিব) মোসাম্মৎ নাসিমা বেগম বলেন, আলোচ্য প্রকল্পটি সরকারের রূপকল্প-২০২১ অনুসারে সারা দেশে শতভাগ বিদ্যুতায়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে হাতিয়া, কুতুবদিয়া ও নিঝুম দ্বীপের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিদ্যুতায়ন ব্যবস্থার অবকাঠামোগত উন্নয়ন হবে।

এই তিন দ্বীপের প্রায় ৪২ হাজার গ্রাহক নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আসবে। (তাতে প্রায় চার লাখ মানুষ আলো পাবে।) এর ফলে নতুন শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান তৈরি হবে। কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে এবং স্থানীয় মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন হবে। 

উল্লেখ্য, কক্সবাজারের মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে সাগরের তলদেশ দিয়ে বিদ্যুৎ যাবে কুতুবদিয়ায়। উত্তর, পশ্চিম ও দক্ষিণ এই তিন দিকে বঙ্গোপসাগর আর পূর্বে কুতুবদিয়া চ্যানেল। মধ্যখানে প্রায় ২১৫ বর্গকিলোমিটার এলাকা নিয়ে সাগরের বুকে ভেসে থাকা দ্বীপ কুতুবদিয়া। বেসরকারিভাবে ইনডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্ল্যান্ট (আইপিপি) নির্মাণ করা হবে হাতিয়া দ্বীপে। এরপর হাতিয়া থেকে নিঝুম দ্বীপে ক্যাবলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ নিয়ে যাওয়া হবে। ঝুঁকিমুক্ত রাখতে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে।

হাতিয়া দ্বীপে আট থেকে ১০ মেগাওয়াট তরল জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করে হাতিয়ায় শতভাগ বিদ্যুতায়ন করা হবে। সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে হাতিয়া থেকে চ্যানেলের তলদেশ দিয়ে পারাপার করে নিঝুম দ্বীপ এবং মগনামা থেকে চ্যানেলের তলদেশ দিয়ে পারাপার করে কুতুবদিয়া দ্বীপে শতভাগ বিদ্যুতায়ন করা হবে।

আমারসংবাদ/জেআই