সরিষাবাড়ীতে স্বেচ্ছাশ্রমে সেতু নির্মাণ

জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে চর রৌহা গ্রামবাসীর উদ্যোগে ঝারকাটা নদীর ওপর স্বেচ্ছাশ্রমে ও নিজেদের অর্থায়নে কাঠের সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। কাঠের সেতুটির নির্মিত হলে ১৫টি গ্রামের দুই লক্ষাধিক মানুষ যাতায়াতের দুর্ভোগ থেকে রক্ষা পাবে। কাঠের সেতুটির দৈর্ঘ্য ৩১০ ফুট ও প্রস্থ আট ফুট। কাঠের সেতুটি নির্মাণ করতে ব্যয় হবে প্রায় ১১ লাখ টাকা। চলতি জানুয়ারির মধ্যে সেতুটির নির্মাণকাজ শেষ করা হবে।

গ্রামবাসী সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার সাতপোয়া ইউনিয়নের চর রৌহা গ্রামের ভেতর দিয়ে ঝারকাটা নদী প্রবাহিত হয়েছে। চররৌহা, ছাতারিয়া, চর সরিষাবাড়ী, নান্দিনা, বাঘমারা, আদ্রা, চুনিয়াপটল, জামিরা, নান্দিনা, দীঘলকান্দি, কোনারপাড়া, মাজারিয়া, সেংগুরিয়া, আতামারি ও সিধুলী এই ১৫ গ্রামের মানুষকে বাঁশের সাঁকো দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঝারকাটা নদী পার হতে হয়।

এ ছাড়া ওই এলাকার বেশির ভাগ মানুষ কৃষিকাজে নিয়োজিত। যানবাহনের অভাবে মাঠ থেকে ফসল আনা-নেয়া করা বা কেউ অসুস্থ হলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিতে পারেন না কেউ। অসুস্থ রোগীদের পল্লী চিকিৎসকরাই একমাত্র ভরসা।  জনপ্রতিনিধিদের কাছে দীর্ঘদিন এলাকাবাসী একটি সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে এলেও শুধু আশ্বাস ছাড়া কিছুই মেলেনি। ফলে ভোগান্তি তাদের নিত্যদিনের সঙ্গী। সাতপোয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ও চর রৌহা গ্রামের বাসিন্দা রেজাইল করিম বলেন, ‘২০১৩ সালে স্কুলে যাওয়ার সময় নৌকা ডুবে দুই শিক্ষার্থী দ্বিতীয় শ্রেণির অন্তর (৭) ও তৃতীয় শ্রেণির আনিস (৮) মারা যায়। এরপর গ্রামবাসীকে নিয়ে বছরের পর বছর বসে ঝারকাটা শাখা নদীর ওপর কাঠের সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়।’ গত ১ নভেম্বর গ্রামবাসীর সঙ্গে বৈঠকে বসে তিনি স্বেচ্ছাশ্রমে ও নিজেদের অর্থে একটি কাঠের সেতু নির্মাণের প্রস্তাব করেন। তার প্রস্তাবে গ্রামবাসী সেতু নির্মাণে সাড়া দেন। গত ৭ নভেম্বর সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়। প্রতিদিন গ্রামের নারী-পুরুষ পালা করে কাজ করে যাচ্ছেন। গ্রামের আবদুস সামাদ (৫৬) বললেন, ভোটের আগে যিনি ভোট চাইতে আসেন, তিনিই বলেন, নির্বাচিত হলে সেতু নির্মাণ করে দেবেন। কত মন্ত্রী, এমপি, চেয়ারম্যান-মেম্বার থেকে শুরু করে অনেকের কাছেই ধরনা দিয়েছি। কত ভোট গেলো, সেতু হলো না।

অবশেষে গ্রামের মানুষ নিজেরাই উদ্যোগী হয়ে কাঠের সেতু বানাচ্ছেন।’ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) সরিষাবাড়ী উপজেলার প্রকৌশলী রকিব হাসান বলেন, ‘ওই গ্রামে পাকা সেতু নির্মাণের প্রাক্কলন তৈরি করে এলজিইডি প্রধান কার্যালয়ে পাঠানে হবে।’ সরিষাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শিহাব উদ্দিন আহমদ মনে করেন, এমন মহৎ কাজ দেশবাসীকে উদ্বুদ্ধ করবে।

আমারসংবাদ/জেআই