Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪,

স্বপ্ন যখন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়

মো. ফাহাদ হোসেন

জানুয়ারি ১৪, ২০২১, ১১:২০ পিএম


স্বপ্ন যখন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়

উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরবর্তী কয়েক মাসকে একজন শিক্ষার্থীর জীবনের অন্যতম টার্নিং পয়েন্ট বলা যায়। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর ‘বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিযুদ্ধ’ পর্বের সাথে সব শিক্ষার্থীর পরিচয় ঘটে। উচ্চ মাধ্যমিকের গণ্ডি পার হয়ে নিজের স্বপ্ন বাস্তবে রূপদান করতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিপরীক্ষা নামক কঠিনতর প্রতিযোগিতামূলক বাধা অতিক্রম করতে হয়।

উচ্চ মাধ্যমিক স্তর অতিক্রম করা প্রত্যেক শিক্ষার্থীর দুচোখজুড়ে স্বপ্ন থাকে দেশের যেকোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে চায় না এমন শিক্ষার্থীর সংখ্যা নিতান্ত হাতেগোনা। বিশাল সবুজ ও খোলামেলা ক্যাম্পাস, গবেষণার সুযোগ, পড়াশোনার উচ্চমান এবং সহ-শিক্ষামূলক কর্মকাণ্ডের জন্য বিশাল সুযোগসহ বিভিন্ন কারণে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষার্থীদের কাছে এক স্বপ্নের নাম।

কিন্তু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সীমিত আসন সংখ্যার কারণে প্রতি বছরই স্বপ্ন ভঙ্গ হয় লাখো ভর্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীর। লাখ লাখ শিক্ষার্থীর সঙ্গে ভর্তিযুদ্ধে লড়াই করে নিজের পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রিয় বিষয়ে পড়তে পারার সুযোগ অর্জন করা সহজ কাজ নয়। ভর্তিযুদ্ধে সামান্য ভুলের জন্য যেমন খালি হাতে ফেরাটা স্বাভাবিক, তেমনি সঠিক পরিকল্পনা, ভালো প্রস্তুতি এবং অধ্যবসায়ের মধ্য দিয়ে স্বপ্নজয় করা মোটেই অসম্ভব নয়। কথায় আছে— ‘সহজ প্রস্তুতি কঠিন পরীক্ষা, কঠিন প্রস্তুতি সহজ পরীক্ষা’। স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেতে চাইলে একজন শিক্ষার্থীর কেমন পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি থাকা প্রয়োজন তা নিয়ে আমার এ পরামর্শমূলক লেখা।

লক্ষ্য স্থির করতে হবে

ভর্তিযুদ্ধের লক্ষ্য ঠিক করার ক্ষেত্রে নিজের পছন্দ, প্যাশন এবং ভালোলাগাকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া উচিত। পছন্দের বিষয় ঠিক করার পর দেখতে হবে, কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে সে বিষয়টা পড়ার সুযোগ রয়েছে। পছন্দের বিষয় কিন্তু একটা না হয়ে বেশকটাও হতে পারে। একটির বদলে বেশকটি গ্রহণ করলে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিযুদ্ধে সফলতার হার বৃদ্ধি পায়। বাংলাদেশের অধিকাংশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীর স্বপ্ন থাকে ইঞ্জিনিয়ারিং ও মেডিকেল কলেজে পড়ার। কিন্তু প্রয়োজনীয় আসন সংখ্যা না থাকায় প্রতি বছর স্বপ্নভঙ্গ হয় লাখো শিক্ষার্থী। সেজন্য পরির্বতন আনা উচিত দৃষ্টিভঙ্গির।

নিতে হবে সুন্দর ও কার্যকর পরিকল্পনা

পরিকল্পনা ছাড়া যেকোনো কাজের সফলতা ছিনিয়ে আনা অসম্ভব। ভর্তিযুদ্ধের পরিকল্পনায় সামান্য ভুলও ব্যর্থতার কারণ হতে পারে। সেজন্য শুধু লক্ষ্য ঠিক করলেই হবে না, তা বাস্তবায়নের জন্য সঠিক পরিকল্পনাও নিতে হবে। কোন কোন বিষয়ে দুর্বলতা রয়েছে সেগুলোর তালিকা করা, কোন বিষয় কতক্ষণ এবং কখন পড়তে হবে তার একটি সুন্দর রুটিন তৈরি করে নিতে হবে ভর্তিযুদ্ধে সময়ের জন্য। সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে রুটিন অনুযায়ী পড়াশোনা করার। পাশাপাশি গুরুত্ব দিতে হবে যেসব টপিক উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে কম পড়া হয়েছে বা দুর্বল সেগুলো সম্পূর্ণ করার।

পড়তে হবে মনোযোগী হয়ে

ঘণ্টার পর ঘণ্টা বইয়ে মুখ গুঁজে পড়লেই বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়া যায় না। সেজন্য পড়ার সময় মনোযোগী হওয়ার বিকল্প নেই। পড়াশোনা করার জন্য উপযোগী স্থান ও সময় নির্বাচন করে হবে। ভোরবেলার শান্ত পরিবেশ পড়াশোনা করার জন্য আদর্শ সময়। সুতরাং এ সময়কে কাজে লাগাতে হবে পড়াশোনার জন্য। প্রতিটি বিষয়ের জন্য আলাদা নোট খাতা ব্যবহার করা উচিত।

তুমি কতগুলো টপিক শেষ করেছো সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। বরং ভর্তিপরীক্ষায় সফল হতে তোমার পড়ার মান কেমন ছিলো সেটা শেষ পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অগোছালোভাবে সব পড়ার চেয়ে ঠিকঠাকভাবে সামান্য পড়াটাও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। অতএব, বেশি পড়ার চেয়ে ভালোভাবে পড়ছো কি না— সে ব্যাপারে লক্ষ্য রাখতে হবে সবসময়।

বিগত বছরের প্রশ্নব্যাংক সমাধান করতে হবে

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিগত বছরের ভর্তিপরীক্ষার প্রশ্নব্যাংক সমাধান করার মাধ্যমে ভর্তিপরীক্ষায় কি কি প্রশ্ন আসে সে সম্পর্কে একটা স্পষ্ট ধারণা তৈরি হয়। এ ধারণার মাধ্যমে প্রস্তুতির ফাঁকফোকর খুঁজে বের করার পাশাপাশি নিজেকে ভালো করে ঝালিয়ে নেয়া সম্ভব হয়। নিয়মিত বিগত বছরের প্রশ্নব্যাংক সমাধান করার অভ্যাস তোমাকে এগিয়ে রাখবে অন্যদের থেকে বহুগুণ।

মেইন বইয়ের কোনো বিকল্প নাই

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিপরীক্ষায় মেইন বইয়ের যেকোনো জায়গা থেকে প্রশ্ন আসতে পারে। এখানে সাজেশন ফলো করাটা নেহাত বোকামি। যেকেনো ভার্সিটিতেই চান্স পেতে হলে মেইন বই পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পড়ার কোনো বিকল্প নেই। অতএব, সবার আগে মেইন বই। তারপর অন্যকিছু। পাশাপাশি বিভিন্ন টপিকের মূল বিষয়গুলো সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা তৈরি করে নিতে হবে। প্রশ্ন যেভাবেই আসুক না কেনো, তোমার পক্ষে যাতে উত্তর দেয়া সম্ভব হয়।

বেশি বেশি মডেল টেস্টে অংশ নেয়া

ছোটবেলা থেকে আমরা সবাই জানি— ‘চৎধপঃরপব সধশবং ধ সধহ ঢ়বৎভবপঃ’। ভর্তিযুদ্ধে এ প্রবাদবাক্যের সততা পাওয়া যায় হাড়েহাড়ে। যে শিক্ষার্থী যতবেশি অনুশীলন ও মডেল টেস্টে অংশ নেবে তার ভর্তিযুদ্ধে সফলতার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়। মনে রাখতে হবে, এক বা দেড় ঘণ্টার পরীক্ষার মাধ্যমে নির্ধারিত হয়ে যাবে একজন শিক্ষার্থীর স্বপ্নের ঠিকানা। অনেক শিক্ষার্থীর ভালো প্রস্তুতি থাকা সত্ত্বেও পরীক্ষাকেন্দ্রের নিজের সেরাটা দিতে পারে না। যার অন্যতম প্রধান কারণ, পরীক্ষাকেন্দ্রে পরীক্ষার ধরন ও আবহাওয়ায় নিজেকে মানিয়ে নিতে না পারা। সুতরাং, নিজেকে ভর্তিযুদ্ধে এগিয়ে রাখতে বেশি করে মডেল টেস্ট দেয়ার কোনো বিকল্প নেই।

নিজেকে আত্মবিশ্বাসী হিসেবে গড়ে তোলা

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিপরীক্ষা কোনো অংশেই যুদ্ধ থেকে কম নয়। যুদ্ধজয়ের অন্যতম মূলমন্ত্র ‘সব সময় আত্মবিশ্বাসী থাকা’। ভর্তিযুদ্ধে লাখো শিক্ষার্থী অংশ নেবে বলে হতাশ হয়ে বসে থাকা যাবে না। নিজের মেধা ও পরিশ্রমের মাধ্যমে নিজের স্বপ্নকে জয় করার পূর্ণ আত্মবিশ্বাস থাকতে হবে।

দু-একটা ভর্তিপরীক্ষায় চান্স না পাওয়ার অর্থ এ নয় যে, তুমি ব্যর্থ ; তুমি আর কোথাও চান্স পাবে না। মোটেই হতাশ হওয়া যাবে না সে মুহূর্তে। নিজের আত্মবিশ্বাসকে পুঁজি করে এগিয়ে চলতে হবে সামনের দিকে। ছোটবেলায় স্কটল্যান্ডের রাজা রবার্ট ব্রুস ও মাকড়সার গল্প আমরা সবাই জানি। যতবারই ব্যর্থতা আসবে, ঠিক ততবারই সফলতা অর্জনের জন্য ঘুরে দাঁড়াতে হবে। কথায় আছে— ব্যর্থতাই সফলতার মূল ভিত্তি।

সময়ের সদ্ব্যবহার করতে হবে

ভর্তিযুদ্ধের কয়েকটি মাস প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জীবনে গুরুত্বপূর্ণ সময়। তাই সীমিত এ সময়কে কোনোভাবেই অপচয় করা যাবে না। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যয় করা সময়ের পরিমাণকে কমিয়ে আনতে হবে। অপ্রয়োজনে বন্ধুদের সাথে আড্ডা ও ঘোরাঘুরি করার প্রবণতাকে কমিয়ে আনা উচিত।

লেখক : শিক্ষার্থী, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়