Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪,

চালের দামে ঊর্ধ্বগতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে, ভোজ্যতেলের দাম বাড়ছেই

নিজস্ব প্রতিবেদক

জানুয়ারি ১৫, ২০২১, ০৭:৪০ পিএম


চালের দামে ঊর্ধ্বগতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে, ভোজ্যতেলের দাম বাড়ছেই

চালের দামে ঊর্ধ্বগতি থামলেও ভোজ্যতেলের দাম ছুটছে ‘লাগামহীন’ পাগলা ঘোড়ার মতো। বিশ্ববাজারে সয়াবিন ও পাম তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে দেশের বাজারে দাম বাড়াতে হচ্ছে বলে আমদানিকারক ও মিলমালিকদের দাবি। মিরপুর বড়বাগ বাজারের মুদি দোকান রাসেল ট্রেডার্সের বিক্রেতা রহমতউল্লাহ গতকাল শুক্রবার বলেন, ‘গত ১০ দিনে সয়াবিন তেলের দাম কেজিতে ১৫ টাকা বেড়ে ১৩০ টাকায় অবস্থান করছে, যা আগে কখনো দেখা যায়নি। পাম তেলও বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১১৫ টাকায়।’

বিশ্ববাজারে দাম বৃদ্ধির কথা বলে আমদানিকারকরা অতিরিক্ত দাম বাড়াচ্ছে বলে মনে করেন তিনি। গতকাল শুক্রবার কারওয়ান বাজারে খোলা সয়াবিন তেল প্রতিকেজি ১৩০ টাকায় ও পাম তেল ১১২ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। পাল্লা দিয়ে বেড়েছে বসুন্ধরা, তীর, পুষ্টি, ফ্রেশ, রূপচাঁদা ব্রান্ডের বোতলজাত সয়াবিন তেলের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্যও।

তীর ও বসুন্ধরা ব্র্যান্ডের পাঁচ লিটার সয়াবিন তেলের বোতলের গায়ে খুচরা দাম লেখা হয়েছে ৬৩০ টাকা। কারওয়ান বাজারে এই তেল ৫৮০ টাকায় বিক্রি হলেও পাড়া-মহল্লায় ৬৩০ টাকায়ই বিক্রি হচ্ছে। এসব ব্রান্ডের দুই লিটারের বোতলের খুচরা মূল্য ২৫২ টাকা। এদিকে সরকার দেশের বাজার নিয়ন্ত্রণে ভারত থেকে বেসরকারি পর্যায়ে চাল আমদানির সুযোগ করে দিলেও এখনো বাজারে ভারতীয় চালের উপস্থিতি দেখা যায়নি। তবে আমদানির খবরে চালের দাম বস্তায় ৩০-৪০ টাকা করে কমেছে বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন।

মিরপুর শাহ আলী মার্কেটে চালের আড়ৎদার হাজী মহিউদ্দিন হারুন বলেন, মিরপুর বাজারে ভারতীয় চাল দেখা যায়নি। কোনো আমদানিকারকও তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। ‘রশিদ মিনিকেটের বস্তা ২৯৫০ টাকায় নেমেছে, একইভাবে পাজাম চালের বস্তা ২৪০০ টাকা হয়েছে। ডলফিন, মোজাম্মেল, জোড়া কবুতরসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের চালের দাম একই হারে কমেছে।

গত দুই-তিন সপ্তাহ ধরে চালের বাজার অস্থির ছিলো।’ কারওয়ানবাজারে চাল বিক্রেতা আবু রায়হান জগলু বলেন, ভারতীয় চাল বাজারে এলে দাম কমবে, এই আশায় নতুন করে দেশি চাল তুলছি না। ১০ জানুয়ারির মধ্যে আমদানি করা চাল আসার কথা শুনলেও এখনো কোনো খবর নেই।

বেশি দাম পাওয়ার আশায় ভারতীয় চালের বস্তা বদলে দেশি চাল হিসেবে চালিয়ে দেয়া হচ্ছে কি না— প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, এমন শঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যায় না। তবে সে ধরনের কোনো কিছু এখনো হয়েছে বলে মনে হয় না। এমনটি হলে আমরা চাল দেখেই চিনতে পারবো। যেহেতু চাল আসতে দেরি হচ্ছে তাই প্রশাসনকে এখনই এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। দেশে চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমদানি শুল্ক ৬২ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ করে বেশ কিছু শর্তসাপেক্ষে আমদানির সুযোগ করে দিয়েছে সরকার। বেসরকারি পর্যায়ে গত ৬ জানুয়ারি থেকে তিন ধাপে ১৮৫টি প্রতিষ্ঠানকে চার লাখ ৮৭ হাজার টন চাল আমদানির অনুমতি দেয়া হয়। সরকারিভাবেও ৩৪ টাকা কেজি দরে প্রায় সাড়ে তিন লাখ টন চাল আমদানির প্রক্রিয়া চলছে।

চাল আমদানি ও বিপণন পর্যবেক্ষণ করতে একটি মনিটরিং সেলও গঠন করেছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। ভারত রপ্তানির নিষেধাজ্ঞা তুলে দেয়ার পর দেশের বাজারে ঢুকতে শুরু করেছে আমদানি করা পেঁয়াজ। এর প্রভাবে এক সপ্তাহের ব্যবধানে দেশি মুড়িকাটা পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১০ টাকা কমে ৩৪ টাকায় অবস্থান করছে। অবশ্য গতকাল শুক্রবার মিরপুর ও কারওয়ানবাজারে ঘুরে ভারতীয় পেঁয়াজ দেখা যায়নি। কারওয়ানবাজারে মাত্র একটি দোকানে ভারতীয় বড় আকারের ক্রস জাতের পেঁয়াজ দেখা গেলেও এর দাম চাওয়া হচ্ছিল প্রতি কেজি ৪২ টাকা।

ঢাকায় পেঁয়াজের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার শ্যামবাজারের আমদানিকারক আব্দুল মজিদ জানান, গত দুই সপ্তাহ ধরে স্বল্পপরিসরে বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজ রয়েছে, তবে দাম প্রতিকেজি ৩৮ টাকা থেকে ৪০ টাকা। দেশি পেঁয়াজের দাম কমে যাওয়ায় ভারতীয় পেঁয়াজের চাহিদাও কিছুটা কম। কারওয়ান বাজারে দেশি পেঁয়াজের পাল্লা (পাঁচ কেজি) ১৭০ টাকা আর ভারতীয় পেঁয়াজ ২১০ টাকায়  বিক্রি হয়েছে।

আমারসংবাদ/জেআই