Amar Sangbad
ঢাকা মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪,

দ্বিতীয় ধাপে পৌরসভার ভোট: গুলি সংঘর্ষ বর্জন

জানুয়ারি ১৬, ২০২১, ০৬:৪০ পিএম


দ্বিতীয় ধাপে পৌরসভার ভোট: গুলি সংঘর্ষ বর্জন

খুন, গুলি, সংঘর্ষ, পুলিশের গাড়িতে আগুন ও ভোট বর্জনের মধ্যে দিয়ে শেষ হয়েছে দ্বিতীয় ধাপে দেশের ৬০টি পৌরসভার ভোট। ভোট চলাকালে সাভারের তিনটি কেন্দ্র পরিদর্শন করে একে ‘অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন’ বলা যায় না বলে অভিমত দিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার।

এই কমিশনের দাবি— ‘পৌরসভার নির্বাচনে ক্রমাগত সহিংসতা বেড়ে চলেছে। সহিংসতা ও নির্বাচন একসঙ্গে চলতে পারে না। নির্বাচন প্রক্রিয়ার পরিবর্তন না হলে এই সহিংসতা বন্ধ করা সম্ভব নয়।

জানা গেছে, ভোটে জিতেই প্রতিপক্ষের হামলায় সিরাজগঞ্জে বিএনপির কাউন্সিলর খুন হয়েছে। গাইবান্ধায় পুলিশ-র?্যাব বিজিবির সঙ্গে এলাকাবাসীর সংঘর্ষ হয়েছে, পুলিশের একটি গাড়িতে আগুন ও তিনটি গাড়ি ভাঙচুর হয়েছে।

এছাড়া বহু কেন্দ্রে বিএনপির প্রার্থী নিজেই ভোট দিতে পারেননি। আওয়ামী লীগ কেন্দ্র দখল করেছে। এজেন্ট থাকতে দেয়নি, ভোটারদের ভয় দেখিয়ে ভোট দিতে বাধ্য করা হয়েছে এমন অভিযোগই ছিলো বেশি। কয়েকটি কেন্দ্রে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের কর্মীসমর্থকদের মধ্যে হাতাহাতি, মারামারি ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।

অনিয়মের অভিযোগ তুলে রাজশাহীর ভবানীগঞ্জ, বাগেরহাটের মোংলা, কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর ও পাবনার ঈশ্বরদীসহ আরও বেশ কয়েকটি কেন্দ্রে  বিএনপির মেয়র প্রার্থীরা ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন। ভোট বর্জন করেন মেহেরপুরের গাংনীর স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী।

গোলযোগ হয়েছে ফেনীর দাগনভূঞা পৌরসভার একটি কেন্দ্রে। সেখানে বোমা বিস্ফোরণ ও সহিংসতায় একজন গুলিবিদ্ধ ও চারজন আহত হয়েছেন। বাগেরহাটের মোংলায় দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে ১০ জন আহত হয়েছেন।

ঝিনাইদহের শৈলকুপায় সংঘর্ষে দুজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সেখানে এক মেয়র প্রার্থীর গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। সমপ্রতি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই আবদুল কাদের ধারাবাহিক অভিযোগ করলেও ভোট নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। আটগুণ বেশি ভোট পেয়ে তিনি জিতেছেনও। ৬০ পৌরসভায় মেয়র হতে লড়েছেন মোট ২২১ জন প্রার্থী।

ভোটে জিতেই প্রতিপক্ষের হামলায় কাউন্সিলর খুন : সিরাজগঞ্জে প্রতিপক্ষের সমর্থকদের হামলায় বিএনপি সমর্থিত বিজয়ী কাউন্সিলর খুন হয়েছেন। গতকাল শনিবার রাত ৮টার দিকে শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে তারিকুল ইসলাম (৪৫) নামের সদ্য বিজয়ী ওই কাউন্সিলরের মৃত্যু হয়।

তিনি শহরের নতুন ভাঙাবাড়ি মহল্লার আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে। পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের সাধারণ কাউন্সিলর পদে ডালিম প্রতীকে তিনি ৮৫ ভোটে জয়লাভ করেন। সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বাহাউদ্দিন ফারুকী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

গাইবান্ধায় পুলিশ-র‌্যাব বিজিবির সঙ্গে সংঘর্ষ : গাইবান্ধা সদর উপজেলার পৌর নির্বাচনে ৯ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব কোমরনই কেন্দ্রে ব্যালট পেপারসহ নির্বাচনি সরঞ্জামাদি আটকে দিয়েছে এলাকাবাসী।

পরে পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবির সঙ্গে তারা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে রাবার বুলেট নিক্ষেপ করা হয়। এ সময় একটি সরকারি গাড়িতে আগুন ও তিনটি গাড়িতে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। গতকাল শনিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে সংঘর্ষ শুরু হয়। রাত ৯টা পর্যন্ত সংঘর্ষ চলে। সংঘর্ষের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন গাইবান্ধা পুলিশ সুপার (এসপি) তৌহিদুল ইসলাম।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, ভোট গণনা শেষে কেন্দ্রে ফলাফল ঘোষণা না করে গাইবান্ধা নির্বাচন অফিসে ব্যালট পেপার নিয়ে যেতে চায় প্রশাসন। পরে অনেক অনুরোধ করা হলেও তারা কেন্দ্রে ফল ঘোষণা করতে চায়নি। এরই একপর্যায়ে ব্যালট পেপার নিয়ে যেতে চাইলে এলাকাবাসী প্রতিরোধ গড়ে তুললে সংঘর্ষ বেঁধে যায়।

আ.লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে রক্তে লাল লালখানবাজার : চট্টগ্রাম নগরীর লালখানবাজার টাইগারপাসে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়রপ্রার্থী রেজাউল করিমের নির্বাচনি প্রচারণায় আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত ১৫ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আহতদের ৭ জনকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকি ৩ জন প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েই বাসায় ফিরে গেছেন।

গতকাল শনিবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে টাইগারপাস বটতল এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। লালখানবাজার এলাকায় আওয়ামী লীগের মেয়রপ্রার্থী রেজাউল করিমের গণসংযোগ ছিল বিকাল সাড়ে ৫টায়।

তবে নেতারা সেখানে পৌঁছার আগে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দিদারুল আলম মাসুমের নেতৃত্বে একটি মিছিল লালখান বাজার থেকে টাইগারপাস এলাকায় পৌঁছতেই সংঘর্ষের শুরু হয়। সংঘর্ষের জন্য দিদারুল আলম মাসুম ও কাউন্সিলর প্রার্থী আবুল হাসনাত মো. বেলাল একে অপরকে পাল্টাপাল্টি দোষারোপ করছেন।

কাউন্সিলর প্রার্থী আবুল হাসনাত মো. বেলাল বলেন, দিদারুল আলম মাসুম কাউন্সিলর পদে দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ার পর থেকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করছে। মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিমের প্রচারণা উপলক্ষে আমাদের কর্মীরা জমায়েত হলে মাসুমের অনুসারীরা আমাদের ওপর হামলা করে। এতে আমাদের কর্মী মোজাম্মেল হোসেন সোহাগ, মাহমুদ ও শাহীন আহত হন। তাদের চমেক হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বাসায় ফেরত আনা হয়েছে।

এদিকে সংঘর্ষের জন্য কাউন্সিলর প্রার্থী আবুল হাসনাত মো. বেলালকে দায়ী করে মাসুম বলেন, আমরা মিছিল নিয়ে লালখানবাজার থেকে টাইগার পাস পৌঁছাতেই অতর্কিত হামলা চালায় বেলালের সমর্থকরা। হামলায় আমাদের সাথে রেজাউল করিমের নৌকার সমর্থনে মিছিল করা ৭ জন গুরুতর আহত হয়েছে।

এর মধ্যে ২ জন নারীও রয়েছে। বেলাল আমাকে নির্বাচন থেকে সরাতে চায়। এমনকি হত্যাও করতে চায়। খুলশী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আফতাব হোসেন বলেন, বেলাল আর মাসুম গ্রুপের মধ্যে ঝামেলার খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

পৌরসভা নির্বাচনে জিতলেন যারা : স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দ্বিতীয় দফায় ৬০টি পৌরসভায় ২৮টি পৌরসভায় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ হয়েছে। বাকি পৌরসভাগুলো ব্যালটের মাধ্যমে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

এর মধ্যে মেয়র পদে জিতেছেন যারা- নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বসুরহাট পৌরসভায় আবদুল কাদের মির্জা (আ.লীগ মনোনীত) ১০ হাজার ৭৩৮ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। ঝিনাইদহের শৈলকুপা পৌরসভা নির্বাচনে কাজী আশরাফুল আজম (আ.লীগ প্রার্থী) ১০ হাজার ৮৮৭ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন।

খাগড়াছড়ি পৌরসভা নির্বাচনে নির্মলেন্দু চৌধুরী (আ.লীগ মনোনীত) ৯ হাজার ৩২ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। বাগেরহাটের মোংলা পোর্ট পৌরসভায় মেয়র পদে শেখ আব্দুর রহমান (আ.লীগ মনোনীত) ১২ হাজার ১২৫ ভোট বিজয়ী হয়েছেন। রাজশাহীর বাঘা আড়ানী পৌরসভায় মুক্তার আলী (বিদ্রোহী প্রার্থী) ৫ হাজার ২০৯ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন।

নেত্রকোনার কেন্দুয়া পৌর নির্বাচনে আসাদুল হক ভূইয়া (আ.লীগ মনোনীত) ৯১৭৬ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। পাবনার ফরিদুপর পৌরসভায় খ ম কামরুজ্জামান মাজেদ (আ.লীগ মনোনীত) বেসরকারিভাবে ৫ হাজার ২৬ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। নরসিংদীর মনোহরদী পৌরসভায় মোহাম্মদ আমিনুর রশিদ সুজন (আ.লীগ মনোনীত) ৮ হাজার ৮৮২ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন।

নাটোরের নলডাঙ্গা পৌরসভায় মনিরুজ্জামান মনির (আ.লীগ মনোনীত) ৩ হাজার ৬৩০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ পৌরসভায় অ্যাডভোকেট লতিফুর রহমান রতন (আ.লীগ মনোনীত) ৯ হাজার ৪৫৩ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন।

বান্দরবানের লামা পৌরসভায় মো. জহিরুল ইসলাম (আ.লীগ মনোনীত) ৯ হাজার ৪০৫ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। ফরিদপুরের বোয়ালমারী পৌরসভায় সাংবাদিক সেলিম রেজা লিপন (আ.লীগ মনোনীত) ৯ হাজার ২৩৯ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন।

পাবনার সাঁথিয়া পৌরসভায় মাহবুবুল আলম বাচ্চু (আ.লীগ মনোনীত) ১৬ হাজার ৩৮৬ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। মৌলভীবাজার কমলগঞ্জ পৌরসভায় জুয়েল আহমদ (আ.লীগ মনোনীত) ৫ হাজার ২৫৭ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন।

মৌলভীবাজার কুলাউড়া পৌরসভায় শিপার উদ্দিন (আ.লীগ মনোনীত) ৪ হাজার ৮৩৮ ভোট পেয়ে বেসরকা?রিভা?বে নির্বা?চিত হয়েছেন। পাবনার ঈশ্বরদী পৌরসভায় ইসাহক আলী মালিথা (আ.লীগ মনোনীত) ২৮ হাজার ৫৯২ ভোট পেয়ে নির্বা?চিত হয়েছেন।

দিনাজপুরের বিরামপুর পৌরসভায় সাবেক পৌর চেয়ারম্যান আক্কাস আলী (আ. লীগ)  ১৫ হাজার ৩৮৩ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন।  

শরীয়তপুর পৌরসভা অ্যাডভোকেট পারভেজ রহমান জন (আ. লীগ) ২৩ হাজার ২৪৩ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন।

হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ পৌরসভায় ছাবির আহমেদ চৌধুরী (বিএনপি) ৫ হাজার ৭৪৯ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। হবিগঞ্জের মাধবপুর পৌরসভায় হাবিবুর রহমান মানিক (বিএনপি) ৫ হাজার ৩১ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন।

ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা পৌরসভায় বিল্লাল হোসেন সরকার (আ.লীগ) ১৭ হাজার ৩২০ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া পৌরসভায় গোলাম কিবরিয়া (আ. লীগ) ৫ হাজার ৬৩৬ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন।

বগুড়ার শেরপুর পৌরসভায় জানে আলম খোকা (বিএনপি) ৮ হাজার ৭৬৯ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। বগুড়ার সান্তাহার পৌরসভায় তোফাজ্জল হোসেন ভুট্টো (বিএনপি) ৭ হাজার ৭৮৮ ভোট পেয়ে পুনঃনির্বাচিত হয়েছেন। বগুড়ার সারিয়াকান্দী পৌরসভার মতিউর রহমান মতি (আ.লীগ) ৬ হাজার ৫৭৪ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন।

গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভায় মো. আনিছুর রহমান (আ.লীগ) ২৩ হাজার ৪৮৬ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। সুনামগঞ্জ পৌরসভায় বর্তমান মেয়র নাদের বখত (আ.লীগ) ২১ হাজার ৬৬৯ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন।

 সুনামগঞ্জের ছাতক পৌরসভার বর্তমান মেয়র আবুল কালাম চৌধুরী (আ. লীগ) ১২ হাজার ৮২৫ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর পৌরসভায় সাবেক মেয়র আক্তারুজ্জামান (স্বতন্ত্র) ৮ হাজার ৩৭৮ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন।

গুলি সংঘর্ষ বর্জন ও সহিংসতা : ফেনীর দাগনভূঁঞা পৌরসভা নির্বাচনে বোমা বিস্ফোরণ ও সহিংসতায় একজন গুলিবিদ্ধ ও চারজন আহত হয়েছেন। গতকাল শনিবার সকালে ভোটগ্রহণের সময় এ ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনায় শাহীন (২০) নামে গুলিবিদ্ধ এক যুবককে ফেনী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। জানা গেছে, পৌরসভার ৮ নং ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের দলীয় কাউন্সিলর প্রার্থী সালাউদ্দিন রুবেলের ছয়জন এজেন্টকে গনিপুর কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া হয়।

এসময় বিদ্রোহী প্রার্থী জিয়াউল হকের সমর্থকরা সহিংসতার ঘটনা ঘটায়। তারা একটি ককটেল বিস্ফোরণ করে ভোটারদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় এবং গুলিবর্ষণ করে। হামলায় শাহীন নামে একজন গুলিবিদ্ধ ও চারজন আহত হয়েছেন বলে কাউন্সিলর প্রার্থী রুবেল জানান।

দাগনভূঁঞা থানার ওসি ইমতিয়াজ আহমেদ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

এছাড়া ফেনীর ভোটকেন্দ্রের গোপন বুথে বুথে বসে ছিলেন নৌকার এজেন্ট। যিনিই ভোট দিতে বুথে ঢুকছেন তাকেই তাদের পছন্দের প্রতীকে ভোট দিতে বাধ্য করেছেন। বুথে থাকা ব্যক্তিদের ভাষ্য, ভোট দিতে ‘সহযোগিতা’ করতেই তারা এই গোপন ব্যালট কক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।

ফেনীর দাগনভূঞা পৌরসভার রামানন্দপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের একটি কক্ষে এমনটাই দেখা গেছে। ভোটার আবদুল কাদের জানান, ডালিম মার্কায় ভোট দিতে চাইলে ভেতরে থাকা এজেন্টের লোকটি তাকে সহযোগিতার কথা বলে উটপাখি মার্কায় ভোট দিয়ে দেন।

পাবনার ঈশ্বরদীতে ‘ঘাড়ধাক্কা’ খাওয়ার পর ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপির প্রার্থী রফিকুল ইসলাম। বেলা দেড়টার দিকে পৌরসভার পূর্ব টেংরি এলাকায় নিজ বাড়ি থেকে তিনি এই ঘোষণা দেন। এসময় তিনি প্রতিটি কেন্দ্র থেকে তার এজেন্টদের বের করে দেয়া ও ভোট কারচুপির অভিযোগ করেন।

বাগেরহাটের মোংলা পোর্ট পৌরসভার নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী মো. জুলফিকার আলী ভোট বর্জন করেন। এখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শেখ আবদুর রহমান। বিএনপির প্রার্থী সকাল সাড়ে ১০টায় মোংলা পৌরসভার মাদ্রাসা রোডের বাড়িতে সাংবাদিকদের বলেন, ভোটারদের ভয়ভীতি দিয়ে আওয়ামী লীগ কেন্দ্র দখল করেছে। এজেন্ট থাকতে দেয়নি, ভোটারদের ভয় দেখিয়ে ভোট দিতে বাধ্য করা হচ্ছে।

কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন বিএনপির প্রার্থী নুরুল মিল্লাত। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন। প্রায় প্রতিটি কেন্দ্র থেকে এজেন্টদের বের করে দেয়া, মারধর ও তার সঙ্গে অসদাচরণের অভিযোগ করেন তিনি।

ভোট দিতে বাধা, পোলিং এজেন্টদের কেন্দ্রে ঢুকতে না দেয়ার অভিযোগে রাজশাহীর বাগমারার ভবানীগঞ্জ পৌরসভায় বিএনপির দলীয় প্রার্থী আবদুর রাজ্জাক ভোট বর্জন করেন। বেলা সোয়া ১১টার দিকে তিনি গণমাধ্যমকে এ কথা জানান। তিনি এই নির্বাচনকে তামাশার নির্বাচন বলেও মন্তব্য করেন।

আবদুর রাজ্জাক বলেন, সকালে তিনি তার ছেলে ও ভাতিজাকে নিয়ে চানপাড়া শহীদ সেকেন্দার মেমোরিয়াল আদর্শ উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিতে যান। এসময় আওয়ামী লীগের লোকজন তাকে কেন্দ্র থেকে চলে যেতে বলেন। তিনি নিজের ভোটটি দেয়ার সুযোগ দিতে বলেন। কিন্তু তাকে কেন্দ্রেই যেতে দেয়া হয়নি। এসময় তার সমর্থকদের লাঞ্ছিত করা হয়। পরে তিনি চলে আসেন।

গাজীপুরের শ্রীপুরে স্বতন্ত্র মেয়রপ্রার্থী শাহ আলমকে আটক করে থানায় নেয়া হয়। গাজীপুরের কালিয়াকৈর সার্কেলের এএসপি আল মামুন এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

নওগাঁর পত্নীতলার নজিপুর পৌরসভা নির্বাচনে ইভিএমে ভোটারদের নৌকা প্রতীকে ভোট দিতে বাধ্য করা হয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ৭ নম্বর ওয়ার্ডের নজিপুর সরকারি কলেজ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের নজিপুর সিদ্দিকীয়া ফাজিল মাদ্রাসার ভোটাররা অভিযোগ করেন, ইভিএমে আঙুলের ছাপ দিয়ে যন্ত্রটি খোলার পর আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সমর্থকরা নৌকা প্রতীকে ভোট দিতে বাধ্য করেন।

ঝিনাইদহের শৈলকুপার একটি কেন্দ্রে দুই মেয়র পদপ্রার্থী সমর্থকদের মধ্যে মারামারি ও অন্য একটি কেন্দ্রে মেয়র পদপ্রার্থীর গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। দুপুরে ঝাউদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী মেয়র পদপ্রার্থী তৈয়বুর রহমান খান কেন্দ্রের বাইরে গাড়ি রেখে ভেতরে যান। এসময় পেছন থেকে কয়েকজন তার গাড়ি ভাঙচুর করে চলে যান। পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা এসে পরিস্থিতি শান্ত করেন।

সিরাজগঞ্জ সদর, বেলকুচি, রায়গঞ্জ, উল্লাপাড়া ও কাজিপুর পৌরসভায় ভোটের পরিবেশ বাইরে সুষুম থাকলেও ভেতরের পরিবেশ পুরোপুরি উল্টো ছিলো। সিরাজগঞ্জ সদর পৌরসভার অধিকাংশ কেন্দ্রে বিএনপির কোনো এজেন্ট ছিলো না। নৌকা প্রতীকের এজেন্টরা ভোটারদের মেয়র পদের ব্যালটে পেপারে প্রকাশ্যে সিল মারতে বাধ্য করছে। রায়গঞ্জ পৌরসভায় একই চিত্র।

সকাল ১১টায় রায়গঞ্জের পূর্ব লক্ষ্মীকোলা কেন্দ্রের ৫ নম্বর বুথে গিয়ে দেখা যায় শুধু কাউন্সিলর প্রার্থীদের ব্যালট রয়েছে। মেয়র প্রার্থীর কোনো ব্যালট নেই। রায়গঞ্জ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও ধানগড়া উপজেলা সদর মহিলা ডিগ্রি কলেজে গিয়ে দেখা যায়, ভোটারদের আগে নৌকা প্রতীকে সিল মেরে পরে বুথে গিয়ে কাউন্সিলদের ব্যালটে সিল মারতে ভোটারদের বাধ্য করা হচ্ছে।

সকাল ৯টায় সিরাজগঞ্জ পৌরসভার রেলওয়ে কলোনি উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে দেখা যায় একই চিত্র। ভোটারদের কাছ থেকে জোরপূর্বক নৌকা প্রতীকে প্রকাশ্যে সিল মেরে নেয়া হচ্ছে। ভোটাররা প্রতিবাদ করলেও সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রের প্রিসাইডিং ও সহকারী প্রিসাইডিং অফিসাররা নিশ্চুপ থাকছেন।

প্রায় অর্ধলাখ ভোট পেয়ে দিনাজপুরের বিএনপি প্রার্থীর হ্যাটট্রিক : টানা তৃতীয়বারের মতো দিনাজপুর পৌরসভার মেয়র নির্বাচনে জয় লাভ করে হ্যাটট্রিক করেছেন বিএনপি মনোনীত ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম। ৪৪ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. রাশেদ পারভেজ নৌকা প্রতীকে পেয়েছেন ২৪ হাজার ২২৬ ভোট।

গতকাল শনিবার ভোটগ্রহণ শেষে জেলা শিশু একাডেমি মিলনায়তন থেকে জেলা নির্বাচন ও জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. শাহিনুর ইসলাম প্রামাণিক বিএনপির প্রার্থী সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলমকে বেসরকারিভাবে বিজয়ী ঘোষণা করেছেন।

অন্য প্রার্থীর মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে আহমেদ শফি রুবেল পেয়েছেন ৩ হাজার ৪৫৮ ভোট, হাতপাখা প্রতীকে হাবিবুর রহমান রানা পেয়েছেন ৫৭৩ ভোট এবং কাস্তে প্রতীকের বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির জেলা সভাপতি মেহেরুল ইসলাম পেয়েছেন ৪৭২ ভোট। সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম ২০১১ সালে প্রথম মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন। এবারে নির্বাচিত হওয়ার পর টানা তৃতীয়বারের মতো জয়লাভ করলেন তিনি।

হবিগঞ্জের ২ পৌরসভায় বিএনপির জয়, নৌকার জামানত বাজেয়াপ্ত : হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ ও মাধবপুর পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত দুই প্রার্থী বেসরকারিভাবে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন।

রাতে দুই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে কন্ট্রোল রুম থেকে ফলাফল ঘোষণা করা হয়। ফলাফলে মেয়র পদে মাধবপুর পৌরসভায় বিএনপির মনোনীত প্রার্থী হাবিবুর রহমান মানিক ও নবীগঞ্জ পৌরসভায় ছাবির আহমেদ চৌধুরীকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়।

ফলাফল পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, নবীগঞ্জ পৌরসভায় ধানের শীষ প্রতীকে ছাবির আহমেদ চৌধুরী পেয়েছেন ৫ হাজার ৭৪৯ ভোট। এ পৌরসভায় আওয়ামী লীগ মনোনীত গোলাম রসুল চৌধুরী রাহেল নৌকা প্রতীকে ৫ হাজার ৪৮৫ ও জগ প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী মাহবুব আলম সুমন পেয়েছেন ২ হাজার ৬১৯ ভোট।

এ পৌরসভায় ভোটার সংখ্যা ১৮ হাজার ৮৭৭। এ থেকে কাস্ট হয়েছে ১৩ হাজার ৮৫৩টি। যা মোট ভোটের ৭৪.৬৭ শতাংশ।

অন্যদিকে মাধবপুর পৌরসভায় বিএনপির মনোনীত হাবিবুর রহমান মানিক ধানের শীষে পেয়েছেন ৫ হাজার ৩১ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী পংকজ সাহা। নারিকেল গাছ প্রতীকে তিনি পেলেন ৪ হাজার ১৮৫ ভোট।

তবে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী পেয়েছেন মাত্র ৬০৮ ভোট। আওয়ামী লীগের আরেক বিদ্রোহী বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহ মুসলিম জগ প্রতীকে পেয়েছেন ৩ হাজার ৮৫ ভোট।

বুজলে ভোট দেয়ন সহজ : ফেনীর দাগনভূঞা পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ড আলাইয়ারপুরের বাসিন্দা কৃষক মো. ছিদ্দিক। বয়স ৭০ বছর। বলছিলেন দেশ স্বাধীনের পর থেকেই অনেক বার ভোট দিয়েছি- এবারের মতো এত সোজাভাবে ভোট দিতে পারিনি আগে। কেন্দ্রে ঢুকলে মেশিনে ছবি উঠে। তারপর পছন্দের প্রার্থীরে আঙ্গুল দিই টিবি টিবি ভোট দেয়ন যায়। আন্ডা ভোট দি জমিনিত্তে রোইদে বই রইছি।

আলোচিত কাদেরের ভাইয়ের বিশাল জয় : নোয়াখালীর বসুরহাট পৌরসভায় আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ভাই আবদুল কাদের মির্জার কাছে পাত্তাই পেলেন না বিএনপি ও স্বতন্ত্র হিসেবে লড়াই করা জামায়াতের প্রার্থী। প্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্রার্থী মিলিয়ে যত ভোট পেয়েছেন, কাদের মির্জা একাই পেয়েছেন তার কয়েক গুণ ভোট। গতকাল শনিবার সকাল আটটা থেকে বিকাল চারটা পর্যন্ত সব দলের কাছে গ্রহণযোগ্য ভোট শেষে যখন ফলাফল আসতে শুরু করে, তখন দেখা যায় নৌকা প্রতীকে ভোট পড়েছে বিপুল পরিমাণে। ধানের শীষ আর জামায়াত নেতার মোবাইল ফোনে ভোট পড়েছে অনেক কম।

প্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্রার্থীর সম্মিলিত ভোটের পেয়ে নৌকায় ভোট পড়েছে প্রায় সাড়ে তিনগুণ। ৯টি কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে ভোট পড়েছে ১০ হাজার ৭৩৮টি। বিএনপির ধানের শীষে ভোট পড়েছে এক হাজার ৭৭৮।

জামায়াত এক হাজার ৪৫১টি। কাদের মির্জা বলেন, প্রমাণ হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার ভাই ওবায়দুল কাদের সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে পারেন। তাকে ভোট দেয়ায় কৃতজ্ঞতা জানিয়ে সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে কাদের মির্জা বলন, তিনি যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তার পূর্ণ বাস্তবায়ন করবো।

একটি কেন্দ্র ছাড়া আর কোথাও ধানের শীষের এজেন্ট দেখিনি : দ্বিতীয় ধাপে দেশের ৬০টি পৌরসভায় ভোট চলাকালে সাভারের তিনটি কেন্দ্র পরিদর্শন করে একে ‘অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন’ বলা যায় না বলে অভিমত দিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার।

তিনি বলেন, ‘পৌরসভার নির্বাচনে ক্রমাগত সহিংসতা বেড়ে চলেছে। সহিংসতা ও নির্বাচন একসঙ্গে চলতে পারে না। নির্বাচন প্রক্রিয়ার পরিবর্তন না হলে এই সহিংসতা বন্ধ করা সম্ভব নয়। এ বিষয়ে সকলের ঐক্যমত আবশ্যক। যে কোনো নির্বাচনের চেয়ে মানুষের জীবন অনেক বেশি মূল্যবান।’

গতকাল শনিবার সাভার সরকারি কলেজ প্রাঙ্গণে নির্বাচন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মাহবুব তালুকদার বলেন, ‘একটি মাত্র কেন্দ্র ছাড়া কোথাও ধানের শীষ প্রতীকের কোনো এজেন্ট আমি দেখতে পাইনি। একটি দলের ছাড়া আর কারও পোস্টারও আমি দেখিনি।’

তিনি বলেন, ‘আমি আশা করেছিলাম নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে এবং সেটি হলে নির্বাচনের কমিশনের জন্য স্বস্তির বিষয় হতো।’

ইসি মাহবুব বলেন, ‘সরকার ও বিরোধীদল সকলের যদি পোলিং এজেন্ট ও পোস্টার দেখতাম তাহলে আমি আশাবাদী হতাম। ভোটারের উপস্থিতি আমার কাছে আশাবাঞ্জক নয়। যদি দেখতাম নির্বাচনে ভোট বেশি দেয়া হচ্ছে— তাহলে খুব খুশি হতাম।’

দেশে বিভিন্ন কেন্দ্রে অপ্রীতিকর ঘটনার তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনি সহিংসতা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। সহিংসতা আমাকে খুব কষ্ট দেয়।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন ঢাকায় সাংবাদিকদের বলেন, ‘তারা গায়ের জোরে ভোটকেন্দ্র দখল করেছে। জাতীয় নির্বাচনের মতো পৌরসভা নির্বাচনেও তারা একই ধরনের কাজ করছে।’

৮০- ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ভোট পড়েছে, শান্তিপূর্ণ ভোট :  ৬০ পৌরসভায় শান্তিপূর্ণ ভোট সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর।

তিনি বলেন, সকাল থেকেই ভোটাররা লাইন দিয়ে সুশৃঙ্খলভাবে ভোট দিয়েছেন। এই নির্বাচনে ৭০ থেকে ৭৫ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে আশা করছি। তবে সম্পূর্ণ ফল আসার পর সঠিক জানা যাবে।

গতকাল শনিবার ভোটগ্রহণ শেষে রাতে ঢাকায় নির্বাচন ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ইসি সচিব। মো. আলমগীর বলেন, দ্বিতীয় ধাপের এ নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়েছে। দুই-একটি জায়গায় একেবারে নগণ্য পর্যায়ে বলা চলে কিছু স্থানে দুষ্কৃতিকারীরা ভোটে বিঘ্ন ঘটাতে চেয়েছিল।

তবে নির্বাচনে দায়িত্বপ্রাপ্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এগুলোকে সম্পূর্ণরূপে কন্ট্রোলে নিয়েছে এবং তারা নির্বাচনে পরিবেশ নষ্ট করার সুযোগ দেননি। কিছু দুষ্কৃতিকারীরা ভোট এলেই এমনটি করে, তারা সুযোগসন্ধানী।

তিনি বলেন, ৬০টি পৌরসভা নির্বাচনে বোয়ালমারী পৌরসভার একটি কেন্দ্রে ১২টার পর কিছু দুষ্কৃতিকারী হঠাৎ করে কেন্দ্রে ঢুকে ব্যালট পেপার ছিনতাই করার চেষ্টা করেছে। বাক্স ভেঙে ফেলেছে, যেহেতু বাক্সটা ভেঙে ফেলেছে, ব্যালট পেপার নিতে না পারলেও প্রিসাইডিং অফিসার ওই কেন্দ্রে ভোট স্থগিত করেছেন। আরেকটা, কিশোরগঞ্জে তারা বাক্স ছিনতাই করে নিয়ে যাচ্ছিল, প্রিসাইডিং অফিসার সেটিও বন্ধ ঘোষণা করেছেন।

এ ছাড়া ৬০টি পৌরসভার যতগুলো কেন্দ্র আছে সব জায়গায় ভোট সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে হয়েছে। পৌরসভা ভোটের দ্বিতীয় ধাপে কত শতাংশ ভোট পড়েছে সেই ধারণা দিয়ে ইসি সচিব বলেন, কোনো কেন্দ্রে ৮০ শতাংশ, কোনো কেন্দ্রে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ভোট পড়েছে।

তিনি বলেন, এবারের পৌর নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে দেশে ৬০টি পৌরসভার মধ্যে ২৯টিতে ইভিএম এবং ৩১টিতে ব্যালটের মাধ্যমে ভোট হয়েছে। তবে ইভিএমে ভোট বেশি পড়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

আমারসংবাদ/এআই