Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪,

সরকারি কলেজে শিক্ষক সংকট নিরসনে বিশেষ বিসিএসের উদ্যোগ

জানুয়ারি ১৬, ২০২১, ০৭:২০ পিএম


সরকারি কলেজে শিক্ষক সংকট নিরসনে বিশেষ বিসিএসের উদ্যোগ

সরকারি কলেজে শিক্ষক সংকট বহুদিনের। এ সংকট দূরীকরণে সরকার শিক্ষা ক্যাডারে ‘বিশেষ বিসিএস’ পথেই হাঁটছে। বিভিন্ন সরকারি কলেজে তিন হাজার ৫৮৫টি পদ শূন্য রয়েছে। এ পদ দ্রুত পূরণের জন্য ‘বিশেষ বিসিএস’ নেয়ার প্রস্তাব দিতে যাচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে সরকারি শূন্য পদ পূরণের অংশ হিসেবে এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

গত ৪ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মহাপরিচালক-২ (অতিরিক্ত সচিব) আজিজুর রহমানের নেতৃত্বে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের শূন্য পদ পূরণের জন্য একটি বৈঠক হয়। বৈঠকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বিভিন্ন দপ্তরের শূন্য পদের তালিকা ও নিয়োগের অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা হয়।

বৈঠকে জানানো হয়, সরকারি কলেজে প্রভাষক (শিক্ষা ক্যাডার) পদ আছে কিন্তু শিক্ষক নেই এ সংখ্যা তিন হাজার ৫৮৫টি। এ শূন্য পদ পূরণের জন্য বিশেষ বিসিএস নেয়া যায় কি-না তা যাচাই-বাছাই করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়।

এরপর ৬ জানুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরকে (মাউশি) এ সংক্রান্ত তথ্য যাচাই-বাছাই করে আগামী ২৫ জানুয়ারি মধ্যে একটি প্রস্তাব তৈরি জন্য বলা হয়।

মাউশি তথ্য যাচাই-বাছাই করে দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রস্তাব শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পাঠাবে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। এরপর শিক্ষা মন্ত্রণালয় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিবের নেতৃত্বে বৈঠকে তা চূড়ান্ত করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।

এ ব্যাপারে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন ও কলেজ) শাহেদুল খবির চৌধুরী বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের চিঠি পেয়েছি। শূন্য পদগুলোর জন্য বিশেষ বিসিএস নেয়া যায় কি-না তা যাচাই-বাছাই চলছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে মন্ত্রণালয়কে জানিয়ে দেবো।’

এদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, সরকারি কলেজে শিক্ষক নিয়োগের জন্য প্রতি সাধারণ বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হলেও তা পদের তুলনায় পর্যাপ্ত নয়। এতে সারা দেশে সরকারি কলেজগুলো শিক্ষক সংকট দিন দিন তীব্র হচ্ছে।

এর আগে সরকারি কলেজগুলোর শূন্য পদ পূরণের জন্য ১৪, ১৬ এবং ২৬তম এ তিনটি বিশেষ বিসিএসের মাধ্যমে প্রায় তিন হাজার শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়। ওই বিসিএসে প্রিলিমিনারি এবং মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ দেয়া হয়।

যে কারণে বিশেষ বিসিএস : মাউশির সরকারি কলেজ শাখার তথ্যমতে, ৩৮, ৪০ এবং ৪১তম এই তিনটি বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারের মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগের জন্য মোট দুই হাজার ৭৪০টি পদের চাহিদা দেয়া হয় পিএসসি কাছে।

এর মধ্যে ৩৮তম বিসিএসে ৯৫৫, ৪০তম বিসিএসে ৮৭০ এবং ৪১তম বিসিএসে ৯১৫ পদের বিপরীতে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে পিএসসি। ৩৮তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষা শেষ হয়েছে। যোগ্য প্রার্থীদের চূড়ান্তভাবে নিয়োগের জন্য পুলিশ ভেরিফেকশন চলছে। খুব শিগগিরই এ বিসিএসে নিয়োগের চূড়ান্ত প্রজ্ঞাপন জারি হবে। অন্যদিকে ৪০ বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা শেষ হয়েছে, চলতি মাসের শেষে ফল প্রকাশ করার কথা রয়েছে।

আর ৪১ বিসিএসে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা হবে ২৬ ফেব্রুয়ারি। এ তিনটি বিসিএসে মধ্যে মুজিববর্ষ এবং স্বাধীনতা সুবর্ণজয়ন্তীর বছরে সর্বোচ্চ ৩৮ বিসিএসের নিয়োগ দেয়া সম্ভব হবে। অন্য দুটি দুটি বিসিএসের প্রক্রিয়া শেষ করতে আরও দেড় বছর লেগে যাবে। এ অবস্থায় শূন্য পদ পূরণ করতে হলে বিশেষ বিসিএসে নেয়া ছাড়া সম্ভব না।

এ প্রসঙ্গে কর্মকর্তারা বলেন, ইতোমধ্যে ৩৯ বিসিএসের মাধ্যমে চার হাজার ৭৯২জনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ৪২ বিসিএসে আরও সহকারী সার্জন নিয়োগ দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে। শিক্ষা ক্যাডারসহ অন্যান্য প্রফেশনাল ক্যাডারে নিয়োগ দেয়া মন্ত্রণালয় যদি শূন্য পদ পূরণের জন্য বিশেষ বিসিএসের প্রস্তাব দিলে আমরা তাতে সাড়া দেবো।

জানা গেছে, বিশেষ বিসিএস পরীক্ষা আয়োজন করতে হলে বিধিমালা সংশোধনসহ যাচাই-বাছাই কার্যক্রম করতে ছয় মাস প্রয়াজন হয়। কিন্তু এখনো শিক্ষক নিয়োগের জন্য বিশেষ বিসিএস আয়োজনে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে পিএসসিতে কোনো চাহিদা আসেনি। তবে বিভিন্ন ক্যাডারে নিয়োগের জন্য চাহিদা পাঠানো হচ্ছে। সেখানে শিক্ষা ক্যাডারের চাহিদাও আছে। তারপরও যদি বিশেষ বিসিএস নেয়ার প্রয়োজন শিক্ষা ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় মনে করে তবে আমরা নিতে প্রস্তুত।  

বিশেষ বিসিএসে কিছু সমস্যা : বিশেষ বিসিএসের মাধ্যমে কর্মকর্তা নিয়োগের জন্য সাধারণ বিসিএস বিধিমালা সংশোধন করতে হয়। কারণ সাধারণ বিসিএসে তিনটি ধাপ প্রিলিমিনারি, লিখিত এবং মৌখিক পরীক্ষা হয়।

কিন্তু বিশেষ বিসিএস লিখিত পরীক্ষা হয় না। এ বিসিএস প্রিলিমিনারি পর সরাসরি মৌখিক পরীক্ষা হয়। এসব বিশেষকে সবাই ঠাট্টা করে কোটা বিসিএসে হিসেবে ডাকে। সর্বশেষ ৪৩তম বিসিএসের সার্কুলার হয়েছে।

এর মধ্যে ৯টি বিসিএস বিশেষ হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা সন্তান, পুলিশ ও শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তা এসব বিসিএসের মাধ্যমে নিয়োগ পেয়েছে। এছাড়া বিশেষ বিসিএসের মাধ্যমে একই ক্যাডারের বেশি সংখ্যাক কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হয়।

পরবর্তীতে এসব কর্মকর্তাদের পদোন্নতি জটিলতা তৈরি হয়। কারণ ব্যাচভিত্তিক পদোন্নতি বেশি কর্মকর্তা হওয়ায় তাদের পদোন্নতিতে বৈষম্য তৈরি হয়। শিক্ষা ক্যাডারে সবচেয়ে বড় ব্যাচ ১৪তম। এ বিসিএসের মাধ্যমে এক হাজার চার শতাধিক কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হয়।

১৯৯৩ সালে নিয়োগ পাওয়া এ ব্যাচের কর্মকর্তারা সর্বশেষ ২০১৮ সালে অধ্যাপক হয়েছেন।  সহকারী, সহযোগী এবং অধ্যাপক পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে তাদের দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়। সর্বশেষ অধ্যাপক পদোন্নতির সময় শুরু হয় ২০১৪ সালে। শেষ হয় ২০১৮ সালে। যোগ্য হওয়ার পরও শুধু বেশি প্রার্থী হওয়ায় পদোন্নতিতে জটিলতা তৈরি হয়।

ওপরদিকে করোনার মধ্যে হাসপাতালে চিকিৎসক সংকট দেখা দেয়ায় তা পূরণের জন্য উদ্যোগী হয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। সে জন্য বিশেষ বিসিএসের মাধ্যমে শূন্য পদ পূরণের জন্য ৩৯তম বিসিএসে (বিশেষ) আয়োজন করে পিএসসি।

২০০ নম্বরের এমসিকিউ এবং ১০০ নম্বরের মৌখিক পরীক্ষা মাধ্যমে দ্রুত সময়ে পাঁচ হাজারের মতো চিকিৎসক নিয়োগ দেয়া হয়। এবার ৪২তম  বিশেষ বিসিএসের মাধ্যমে দুই হাজার সহকারী সার্জন নিয়োগ দেয়া হবে। আগামী ১৬ মার্চ এ বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা হবে।

আমারসংবাদ/এআই