Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪,

হাত বাড়ালেই ডাচ-বাংলার সেবা

জাহাঙ্গীর আলম

জানুয়ারি ১৯, ২০২১, ০৬:৫০ পিএম


হাত বাড়ালেই ডাচ-বাংলার সেবা
  • আবুল কাশেম মো. শিরিন ২০০২ সালে ডাচ-বাংলা ব্যাংকে যোগদান করেন এবং ২০১৬ সালে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পেয়ে চ্যালেঞ্জ নিয়েই এগিয়ে নিচ্ছেন ডাচ-বাংলা ব্যাংককে। 

টাকা তুলতে বা জমা করতে এক সময় গ্রাহকদের দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হলেও ডাচ-বাংলা ব্যাংক সেই পথ শহরের মতো গ্রামেও কমিয়ে দিয়েছে। কারণ শহরের যেকোনো পাড়ার এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মতো গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে রকেটের মাধ্যমে মুহূর্তে গ্রাহকরা পাচ্ছেন এর ব্যাংক সেবা। ১৯৯৬ সালে যাত্রা শুরু করা যৌথ বিনিয়োগের এ ব্যাংক উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারে প্রায় মানুষের কাছে সম্পৃক্ত হয়ে গেছে। সামিল হয়েছে সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার মিশনে। এতে প্রতিনিয়ত বাড়ছে গ্রাহক। তিন কোটি ৪০ লাখে পৌঁছে গেছে। উদ্ভাবনী প্রযুক্তির মাধ্যমে দুই যুগের ব্যবধানে বর্তমানে সারা দেশে ২০৮টি শাখার মাধ্যমে সব সেবার সাথে চার হাজার ৮৩৪টি এটিএমের মাধ্যমেও হাত বাড়ালে পাওয়া যাচ্ছে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের সেবা। পরিচালনা পর্ষদের সহযোগিতায় প্রায় দেড় যুগের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কাশেম মো. শিরিনের নেতৃত্বে প্রযুক্তিনির্ভর ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে এগিয়ে যাচ্ছে ডাচ-বাংলা ব্যাংক। বিনিয়োগ থেকে শুরু ডিপোজিট ও রাজস্ব আয়ে ক্রমান্বয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশে প্রযুক্তি ব্যবহার করে ব্যাংকিংসেবার পথিকৃৎ ডাচ-বাংলা ব্যাংক। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা তা জানান।

ব্যাংকসংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বাংলাদেশ স্বাধীনতার পর কয়েকটি ব্যাংক কার্যক্রম শুরু করলেও প্রযুক্তিকে ভর করে ডাচ-বাংলা ব্যাংক লিমিটেড (ডিবিবিএল) বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডের যৌথ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত করা হয়। চেয়ারম্যান হিসেবে এর দায়িত্ব নিয়ে এম. সাহাবুদ্দিন আহমদ (বাংলাদেশ) ডাচ ফিনান্সিং সংস্থার সাথে যৌথ উদ্যোগে ১৯৯৬ সালের ৩ জুন প্রতিষ্ঠা করেন এ ব্যাংক। এটি ব্যাংক কোম্পানি আইন ১৯৯১ এবং কোম্পানি আইন ১৯৯৪ দ্বারা পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি হিসাবে নিবন্ধিত হয়। সব প্রক্রিয়া শেষে ডিবিবিএল পরের বছরই ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে ২০০৪ সালে নিবন্ধিত হয়। আবুল কাশেম মো. শিরিন বেসিক ব্যাংকের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার ও আইটি বিভাগের প্রধানের অভিজ্ঞতা নিয়ে ডাচ-বাংলা ব্যাংকে যোগ দেন। তিনি এ ব্যাংকে ছয় বছর এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট, সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং ইনফরমেশন টেকনোলজি ডিভিশনের প্রধান হিসেবে ছয় বছর দায়িত্ব পালন করেন। এভাবে সময়ের পরিবর্তনের সাথে নিজেকেও অভিজ্ঞ করায় ব্যাংকে সামনের দিকে এগিয়ে গেছেন তিনি।

ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে যোগদানের আগে তিনি এ ব্যাংকে প্রায় আট বছর উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে কাজ করেছেন। আবুল কাশেম মো. শিরিন ২০১৬ সালের নভেম্বরে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করে চ্যালেঞ্জ নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছেন বলে ব্যাংকটির কর্মকর্তারা জানান।

সুনামগঞ্জ জুবিলি হাই স্কুল ও সিলেট এমসি কলেজ থেকে এসএসসি ও এইচএসসি করার পর বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন শিরিন। পরে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় এবং এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি, ব্যাংকক থেকে শিক্ষা লাভ করেন। তার প্রকৌশলী শিক্ষার আলোকে কর্মক্ষেত্রেও এগিয়ে যাচ্ছেন একর পর এক নতুনত্ব দেখিয়ে। এই ব্যাংকের প্রায় দেড় যুগের অভিজ্ঞতা এবং এমডি হিসেবে পাঁচ বছর সুনামের সাথে ডাচ-বাংলা ব্যাংককে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছন বলে কর্মকর্তারা জানান। তারা আরও বলেন, পরিচালনা পর্ষদের সহযোগিতায় এমডির যোগ্য নেতৃত্বে প্রযুক্তিকে ভর করে এ ব্যাংক নতুন উচ্চতায় পৌঁছে যাচ্ছে।

বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও করোনা ভাইরাস অর্থনীতিকে থমকে দেয়। ব্যাংকিং খাতেও তার প্রভাব পড়ে। এ জন্য বিদায়ী বছরে প্রায় ব্যাংক লাভের মুখ দেখেনি। ভরা করোনার মধ্যেই ২৫ জুলাই অনলাইনে ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কাশেম মো. শিরিন সম্মুখ সারির সহযোদ্ধা হয়ে এক সম্মেলনে ২০২০ সালের প্রথম ছয় মাসের কার্যক্রম পর্যালোচনা করে ব্যবসার লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কৌশল নির্ধারণ করে ২০২০ সালের ব্যাংকের ব্যবসার লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরেন। যেসব শাখা ব্যবস্থাপক ২০২০ সালের প্রথম ছয় মাসের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারেননি, তারা ২০২০ সালের পরবর্তী ছয় মাসের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি ২০২০ সালে সর্ববৃহৎ অনলাইন ব্যাংকিং, ফাস্ট ট্র্যাক, এটিএম, মোবাইল ব্যাংকিং, এজেন্ট ব্যাংকিং, পিওএস টার্মিনাল এবং নেক্সাস পে নেটওয়ার্ক কাজে লাগিয়ে ব্যাংকের ব্যবসা বাড়াতে অধিক মনোযোগী হওয়ার জন্য শাখা ব্যবস্থাপকদের প্রতি আহ্বান জানান। শাখা ব্যবস্থাপকদের গ্রাহকসেবার মানোন্নয়নের জন্যও নির্দেশনা দেন। তা আমলে নিয়ে শাখা ব্যবস্থাপকরা ২০২০ সালের বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। তাইতো প্রায় ব্যাংক ভালো করতে না পারলেও ডাচ-বাংলা ব্যাংক এগিয়ে যাচ্ছে আগের ধারায়। তবে আগের বছরের মতো বিদায়ী বছরে লাভের মুখ দেখা সম্ভব নয়। কারণ বিনিয়োগ কম হয়েছে। তবে প্রণোদনা প্যাকেজ, প্রবাসী আয়, রকেটে লেনদেন এবং এজেন্ট ব্যাংকিং, ইন্টারনেট ব্যাংকিয়ে এগিয়ে নিয়েছে ডাচ-বাংলা ব্যাংককে। 

এটিএম ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ে রেকর্ড

ডাচ-বাংলা ব্যাংক ২০০৪ সালে প্রথম এটিএমসেবা চালু করলেও এ সেবার মাধ্যমে সব শ্রেণির কাছে ব্যাংকিংসেবা পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। তাই গ্রামের তথা প্রান্তিক মানুষের কাছে ব্যাংকিংসেবা পৌঁছে দিতে বিকল্প পথে নামে ডাচ-বাংলা ব্যাংক। তারই অংশ হিসেবে ২০১১ সালে প্রথম মোবাইল ব্যাংকিংসেবা চালু করে ডাচ-বাংলা। যা ২০১৬ সালে নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় রকেট। সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ভিশনে যুক্ত হয়ে ডাচ-বাংলাই প্রথম ব্যাংক, যাদের হাত ধরে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস বা এমএফএসসেবা চালু করে। বর্তমানে দেশের মোবাইল ব্যাংকিংসেবার প্রায় চার ভাগের এক ভাগ রকেটের। রকেট শুধু টাকা জমা ও উত্তোলনের মধ্যে আটকে নেই। বড় কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর পণ্য বিক্রির টাকা সংগ্রহ হয় রকেটের মাধ্যমে, আবার অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠানের বেতন-ভাতাও দেয়া হয়। সরকারি ভাতা, বৃত্তির টাকা, পরিষেবা বিল পরিশোধ সুবিধা তো রয়েছেই। রকেটের টাকা তোলা যায় ডাচ-বাংলা ব্যাংকের সব জায়গায়। রেকর্ড পরিমাণ লেনদেন হচ্ছে। আর প্রথমে আগ্রহ কম থাকলেও বর্তমানে ৪ হাজার ৭৬৩টি এটিএমের রেকর্ড করা সম্ভব হয়েছে। যা দেশের সর্ব বৃহৎ এটিএম নেটওয়ার্ক রয়েছে।  

এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে রেকর্ড

ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ায় অংশ নিয়ে ডাচ-বাংলা ব্যাংকও এগিয়ে যাচ্ছে। যারা ফরমাল ব্যাংকে আসতে পারেন না তাদের সেবা দিতে মোবাইল ব্যাংকিং চালু করেছে ২০১৩ সালে। এজেন্ট ব্যাংকিং হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক অনুমোদিত একটি ব্যাংকিংব্যবস্থা। যেখানে প্রতিটি লেনদেন বায়োমেট্রিক মেশিন ব্যবহার করে গ্রাহকের আঙ্গুলের ছাপ সনাক্তকরণের মাধ্যমে পরিচালনা করা হয়। শাখাবিহীন এর ব্যাংকিংব্যবস্থার মাধ্যমে স্বল্প খরচে দক্ষতার সঙ্গে আর্থিকসেবা পৌঁছে যাচ্ছে ব্যাংকিং সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর কাছে। মোবাইল প্রযুক্তি সরঞ্জাম অর্থাৎ মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ব্যাংকিং ও আর্থিকসেবা (টাকা জমাদান, উত্তোলন, পণ্য বা সেবা ক্রয়ের মূল্য পরিশোধ, বিভিন্ন ধরনের বিল পরিশোধ, বেতন/ভাতা বিতরণ, বিদেশি আয়, সরকারি বেতন ও ভাতাদি মুহূর্তেই পৌঁছে যাচ্ছে মোবাইল ব্যাংকিং তথ্য রকেটের মাধ্যমে। করোনা ভাইরাসে জনগণ আক্রান্ত হলে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে সেন্ট্রাল কুইক রেসপন্স টিম গঠনসহ তৈরি পোশাকশিল্পকর্মীদের বেতন দেয়ারও ব্যবস্থা করা হয়েছে।

দেশ-বিদেশে স্বীকৃতি

ডাচ-বাংলা ব্যাংক সমপ্রতি যুক্তরাজ্যভিত্তিক তথ্য-প্রযুক্তি নিরাপত্তা সুরক্ষা মূল্যায়নকারী প্রতিষ্ঠান, এনসিসি গ্রুপ থেকে পেমেন্ট কার্ড ইন্ডাস্ট্রির ডেটা সিকিউরিটি স্ট্যান্ডার্ড (পিসিআই ডিএসএস) সনদ অর্জন করেছে। তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহারে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের রয়েছে ১০ হাজারেরও বেশি অ্যান্ডপয়েন্ট, সকল শাখা, এটিএম ও ফাস্ট ট্র্যাক, পিওএস, কল সেন্টার, পেমেন্ট গেটওয়ে, ই-কমার্স, কোর ব্যাংকিং সিস্টেম, পেমেন্ট সুইচিং, ডেবিট-ক্রেডিট কার্ড এবং পিন ইস্যু সিস্টেম। এ ধরনের বিশাল নেটওয়ার্কের জন্য পেমেন্ট কার্ড ইন্ডাস্ট্রির ডেটা সিকিউরিটি স্ট্যান্ডার্ড (পিসিআই ডিএসএস)-এর সম্মতি পাওয়া দুঃসাধ্য কাজ। এ অর্জনের গ্রাহকদের আরও নিরাপদ এবং গ্রহণযোগ্য ব্যাংকিংসেবা নিশ্চিত করবে। এভাবে বিভিন্ন ব্যাংকিংসেবার মাধ্যমে বাংলাদেশে ব্যাংকিং সেক্টরে শীর্ষ পর্যায়ে স্থান করে নিয়েছে ডাচ-বাংলা ব্যাংক। কর্মকর্তারা বলছেন, সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে যুক্ত হয়ে এগিয়ে যাচ্ছে ডাচ-বাংলা ব্যাংক। এজন্য সব জায়গায় সুনাম অর্জন করতে সক্ষম হচ্ছে।

আমারসংবাদ/জেআই