Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪,

করোনায়ও ব্যাহত হয়নি কাজ

মাহমুদুল হাসান

জানুয়ারি ১৯, ২০২১, ০৮:২০ পিএম


করোনায়ও ব্যাহত হয়নি কাজ
  • করোনায়ও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক থেকে মাঠকর্মী পর্যন্ত প্রত্যেকে অর্পিত দায়িত্ব পালন করেছেন।

প্রায় এক বছর আগে করোনার উদ্ভব ঘটে। বাংলাদেশ শুরু থেকেই অদৃশ্য এই ভাইরাস মোকাবিলার প্রস্তুতি গ্রহণ করে। ২০২০ সালের শুরু থেকে করোনা ভাইরাস গোটা বিশ্বকে লণ্ডভণ্ড করে দেয়। বাংলাদেশও করোনার প্রকোপ এড়াতে পারেনি। যদিও শুরু থেকে বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে করোনার প্রকোপ তুলনামূলকভাবে কম ছিলো। তবুও জনবহুল দেশে সীমিত সম্পদ নিয়ে নয়া ভাইরাস মোকাবিলা দুরূহ ব্যাপার ছিলো। গেলো বছরের মার্চের শুরুতে বাংলাদেশে যখন প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় তখন চারদিকে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। নয়া ভাইরাসকে মরণঘাতী ভাইরাস হিসেবে সম্বোধন করা হয়। ভয়ে আতঙ্কে মানুষ গৃহবন্দি হয়ে পড়ে। প্রায় ৬৬ দিনের লকডাউনে চলে যায় বাংলাদেশ। কিন্তু খাদ্যের প্রয়োজন ও স্বাস্থ্যসেবার প্রয়োজনীয়তা ফুরায় না। ফলে জরুরি সেবা চালু রাখতে হয়। প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা, পরিবার পরিকল্পনা গ্রহণ, বাল্যবিয়ে রোধ, গর্ভধারণ ও নিরাপদ সন্তান জন্মদানসহ পরিবার পরিকল্পনার নানা বিষয়ের সেবা ঘরে ঘরে পৌঁছে দেয়া বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দেয়। কিন্তু পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের ৫২ হাজারের বেশি কর্মী সরকারকে নিরাশ করেনি।

জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক থেকে মাঠকর্মী পর্যন্ত প্রত্যেকে অর্পিত দায়িত্ব পালন করেছেন। প্রতিনিয়ত বাড়ি বাড়ি গিয়ে মানুষের চাহিদার আলোকে প্রাথমিক ও প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা সংক্রান্ত পরামর্শ প্রদান এবং জন্মনিয়ন্ত্রণ বিষয়ক নানা উপকরণ পৌঁছে দিয়েছেন।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, করোনা ভাইরাস সংকটকালে দেশের প্রায় ১৮ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক ও হাসপাতালে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মাঠপর্যায়ে ৫২ হাজার কর্মী নিরলসভাবে কাজ করেছেন। এখনো তারা প্রতিটি স্তরে কাজ করে যাচ্ছেন। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেকের নির্দেশনায় এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ সচিব মো. আলী নূরের সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধায়নে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর তাদের মাঠকর্মীদের বাড়ি বাড়ি পাঠিয়ে গর্ভবতী মা ও কিশোরীদের পরিবার পরিকল্পনার সেবা প্রদান করেছে। ফলে স্বাভাবিক সময়ের মতোই প্রাতিষ্ঠানিক সন্তান জন্মদান অব্যাহত রয়েছে।

এছাড়াও বাড়িতে সন্তান জন্ম নিলেও সেখানে দক্ষ স্বাস্থ্যসেবা কর্মীর মাধ্যমে বাচ্চা প্রসবের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এসব বিষয়ে মনিটরিং করা হচ্ছে সার্বক্ষণিকভাবে। মাঠপর্যায়ে কর্মরত কর্মীদের ভার্চুয়ালি প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। সামগ্রিকভাবে এসব কাজ চলমান রয়েছে। ফলে মহামারিকালে প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা কিংবা পরিবার পরিকল্পনাবিষয়ক কর্মকাণ্ডে কোনো প্রভাব পড়েনি। এসব কাজ ত্বরান্বিত করতে প্রচার-প্রচারণা অব্যাহত রয়েছে। ফলে মানুষের মধ্যে সচেতনতাবোধ তৈরি হচ্ছে। অপূর্ণ চাহিদা মোকাবিলায়ও নিরলসভাবে কাজ করছে কর্মীবাহিনী।

মন্ত্রণালয় আরও জানায়, গেলো বছরের ৬ থেকে ৮ ডিসেম্বর তিন দিনব্যাপী নারী ও কিশোরীদের নিরাপদ প্রজনন স্বাস্থসেবা নিশ্চিত করার প্রত্যয়ে পরিবার কল্যাণ সেবা ও প্রচার সপ্তাহ পালিত হয়। এতে স্লোগান নির্ধারণ করা হয় করোনাকালে অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ রোধ করি, স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরিবার পরিকল্পনা সেবা গ্রহণ করি। সম্প্রতি এক বৈঠকে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সাহান আরা বানু বলেন, সারা দেশে বর্তমানে ৯০৩টি কৈশোরবান্ধব কেন্দ্র আছে। এসব কেন্দ্র থেকে তরুণদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যসেবা দেয়া হচ্ছে। পুরো দেশে এমন কেন্দ্রের মাধ্যমে কিশোর-কিশোরীদের জন্য সেবা কার্যক্রম চালাতে সরকারের পরিকল্পনা আছে। কিন্তু উদ্যোগের পাশাপাশি সচেতনতাও জরুরি। তরুণদের মধ্যে স্বাস্থ্যসেবা-সংক্রান্ত সচেতনতা বাড়াতে এবং করোনাকালে এই সেবা পৌঁছে দিতে ১৬৭৬৭ কল সেন্টার চালু করা হয়েছে। টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে এই সেবা দেয়া হচ্ছে।

২০২৩ সালের মধ্যে প্রতি উপজেলায় দুটি কেন্দ্র স্থাপন করার লক্ষ্যে সরকার কাজ করছে। শিল্প এলাকায় তরুণ-তরুণীদের জন্য স্যাটেলাইট ক্লিনিকের কার্যক্রম চলছে। এমনকি প্রত্যন্ত অঞ্চলের স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম স্বেচ্ছাসেবীদের মাধ্যমে পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। এদিকে করোনাকালে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের গোটা কর্মীবাহিনীর ভূয়সী প্রশংসা করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘করোনা ক্রান্তিকালে দেশের প্রায় ১৮ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক ও হাসপাতালে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মাঠপর্যায়ে ৫২ হাজার কর্মী নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। তাদের প্রত্যেককে সাধুবাদ জানাই। সেই সাথে মানুষের সেবায় প্রত্যেককে আরও নিবেদিত হয়ে কাজ করে যাওয়ার আহ্বান জানাই।’

আমারসংবাদ/জেআই