Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪,

ভৈরবে মৌচাষে লাভবান খামারিরা

জামাল আহমেদ, ভৈরব (কিশোরগঞ্জ)

জানুয়ারি ১৯, ২০২১, ০৯:০৫ পিএম


ভৈরবে মৌচাষে লাভবান খামারিরা

ভৈরবে সরিষা ক্ষেতে মৌচাষে লাভবান হচ্ছেন খামারিরা। এখানকার আহরিত মধু স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হচ্ছে। তাছাড়া মৌচাষিদের কাছ থেকে মৌচাষের প্রশিক্ষণ নিতে স্থানীয়রা প্রতিদিন খামারে আসছেন। বাংলাদেশ মৌচাষ গবেষণা ও প্রশিক্ষণকেন্দ্রের প্রশিক্ষক ও নির্বাহী পরিচালক জানান, আরডিসি থেকে এ পর্যন্ত সারা দেশে সাত হাজার লোক মৌচাষে প্রশিক্ষণ নিয়ে পাঁচ হাজার মৌচাষি সারা দেশে সরিষা ক্ষেতে বক্সের মাধ্যমে মধু সংগ্রহ করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন।

ভৈরবের মাঠে-প্রান্তরে এখন হলুদের সমারোহ। চারদিকে সর্ষে ফুলের মৌ মৌ গন্ধে মন জুড়ে যায়। প্রতিবছরের মতো এবারো দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে মৌচাষিরা মৌ-বক্স নিয়ে মধু সংগ্রহে ব্যস্ত। সরিষা ক্ষেতে মৌ-বক্সের মাধ্যমে প্রতিদিন মধু আহরণ করছেন চাষিরা। তাদের আহরিত মধু বিভিন্ন এলাকার লোকজন কিনে নিচ্ছেন। শুধু তাই নয়, এলাকার অনেকেই মৌচাষ করতে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন মৌচাষিদের কাছ থেকে। প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকার লোকজন মৌচাষে আগ্রহ প্রকাশ করছেন।

মৌচাষ একটি লাভজনক খাত। যেকোনো বেকার যুবক মৌচাষ করে কর্মসংস্থানের পাশাপাশি আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারবে। তাছাড়া মৌচাষ করে ফুল থেকে খাঁটি মধুর চাহিদা থাকায় এর দাম বেশি হওয়ায় প্রতিবছর ভৈরবে মৌচাষ বাড়ছে। এ বছর ভৈরবের কালিকাপ্রসাদ ও আগানগরসহ বেশ কয়েকটি সরিষা ক্ষেতে ১০ জন মৌচাষি ২৫০টি বক্সের মাধ্যমে মধু আহরণ করছেন। প্রতিমাসে গড়ে একেকটি খামার থেকে তিন-চার মণ মধু সংগ্রহ করছে। তাছাড়া স্থানীয় কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় এ মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সরিষার বাম্পার ফলন হয়েছে। বাজারে এর দরও ভালো হওয়ায় কৃষকরা লাভবান হবে বলে আশা করছেন।

তবে সরিষা ক্ষেতে মৌচাষের ফলে ফসলে পোকা-মাকড় ও রোগবালাই কম হয় এবং সরিষায় পরাগায়ণের ফলে ফলন ভালো হয়। চলতি মৌসুমে এ অঞ্চলে দুই হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। আগামীতে এর চাষ আরও বৃদ্ধি পাবে বলে কৃষি অফিস আশা করছে।

কালিকাপ্রসাদ ইউনিয়নের সরিষা চাষি শাহিন মিয়া, ইদ্রিছ মিয়া, আক্কেল আলীসহ অনেকেই জানান, স্থানীয় কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় এ মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সরিষার বাম্পার ফলন হয়েছে। বাজারে এর দরও ভালো হওয়ায় কৃষকরা লাভবান হবে বলে আশা করছেন। তবে সরিষা ক্ষেতে মৌচাষের ফলে ফসলে পোকা-মাকড় ও রোগবালাই কম হয় এবং সরিষায় পরাগায়ণের ফলে ফলন ভালো হয়েছে।

কালিকা প্রসাদ ও আগানগর ইউনিয়নের মৌমাছি খামারে মৌচাষ করে মধু আহরণ দেখতে ও প্রশিক্ষণ নিতে আসা বেকার যুবক আলমগীর হোসেন ও ফয়সাল মিয়াসহ কয়েকজন তরুণ জানান, তাদের গ্রামে দূর-দূরান্ত থেকে অনেকেই মৌচাষ দেখতে আসেন এবং মধু কিনে নেন। আমরাও মৌচাষ দেখতে ও শিখতে এসেছি। কারণ এটি একটি লাভজনক পেশা। এটি করে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া যায়।

এ বিষয়ে ভৈরব উপজেলা কৃষি অফিসের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা চন্দন কুমার সূত্রধর জানান, কৃষি অফিসের সহযোগিতা ও পরামর্শে এবং আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চলতি মৌসুমে ভৈরবে বারি ১৪ ও ১৫ জাতের সরিষা আবাদ হয়েছে। অল্পখরচে অধিক ফলন ও বাজারে ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকরা সরিষা আবাদে ঝুঁকছে। তাছাড়া সরিষা ক্ষেতে মৌচাষের কারণে সরিষায় পরাগায়ণ ঘটেছে। যার ফলে কোনো প্রকার পোকামাকড় বা রোগবালাই না থাকায় সরিষার ফলন ভালো হয়েছে। আগামীতে এর আবাদ আরও বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করছেন।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ও প্রশিক্ষণকেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক নুরুল ইসলাম জানান, এ পর্যন্ত সারা দেশে সাত হাজার লোক মৌচাষে প্রশিক্ষণ নিয়ে পাঁচ হাজার মৌচাষি সরিষা ক্ষেতে বক্সের মাধ্যমে মধু সংগ্রহ করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। সরিষা থেকে খাঁটি মধু সংগ্রহ করে সারা দেশে সরবরাহ করা হচ্ছে। তাছাড়া মৌচাষে খামারিদের কারিগরি ও যন্ত্রপাতিসহ সব ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত আছে এবং যারা প্রশিক্ষণ নিতে ইচ্ছুক তারা যদি মৌচাষ গবেষণা ও প্রশিক্ষণকেন্দ্রে যোগাযোগ করে তাহলে তাদের প্রশিক্ষণসহ সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন। এছাড়া ভৈরব সরিষার ভাণ্ডার বলে এখানে চলতি মৌসুমে ৮-১০টি খামারি বক্সের মাধ্যমে মৌচাষ করে লাভবান হচ্ছেন। বর্তমানে এটি একটি লাভজনক কুটির শিল্পে পরিণত হচ্ছে।

আমারসংবাদ/জেআই