Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪,

ভোটে ফিরেছে উৎসাহ-উদ্দীপনা

নিজস্ব প্রতিবেদক

জানুয়ারি ২০, ২০২১, ০৭:৩৫ পিএম


ভোটে ফিরেছে উৎসাহ-উদ্দীপনা
  • দিন দিন বাড়ছে রেকর্ড সংখ্যক ভোটার উপস্থিতি
  • দলবেঁধে পরিবার নিয়ে সবাই ভোট দিতে যাচ্ছেন
  • নির্বাচন কমিশনে জনগণের আস্থা বেড়েছে

ভোটে ফিরেছে উৎসাহ-উদ্দীপনা। অতীতের আস্থা নির্বাচন কমিশনে। এখন সব নির্বাচনই হচ্ছে ব্যাপক উৎসবমুখর পরিবেশে। কমিশনের ওপর জনগণের আস্থাও অতীতের চেয়ে অনেক ভালো —বলছেন সচেতন মহল। স্থানীয় সরকার পৌরসভা নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বাড়ছে রেকর্ড সংখ্যক। এখন দলবেঁধে পরিবার নিয়ে সবাই ভোট দিতে যাচ্ছেন। হাসপাতালে ভর্তি রোগী স্ট্রেচারে এসেও দ্বিতীয় ধাপে ভোট দিয়েছেন। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটিতে এসেছে আস্থা। বিশেষ করে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনেই (ইভিএম) এসেছে বড় সফলতা। বেড়েছে গ্রহণযোগ্যতা। ভোটের মাধ্যমে বাংলাদেশের গণতন্ত্র এখন কাছ থেকেই দেখা যায়। রক্ত নেই, সংঘর্ষ নেই। ভোটারদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষায় নির্দিষ্ট সময়ে ভোট শেষ হয়।

স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত ১২টি নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছে বাংলাদেশে, এর মধ্যে চলমান কমিশনেরই বেশি অর্জন বলে সর্বমহল থেকে বলা হচ্ছে। তা সম্ভব হচ্ছে একজন কে এম নূরুল হুদায়। যিনি দেশের ১২তম প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি)।

জানা গেছে, প্রথম ধাপের তফসিলের ২৪টি পৌরসভায় গত ২৮ ডিসেম্বর ইভিএমে ভোট হয়েছে; এরপর ১৬ জানুয়ারি ভোট হয়েছে দ্বিতীয় ধাপের ৬১ পৌরসভায়। তৃতীয় ধাপে ৬৪টি পৌরসভায় ৩০ জানুয়ারি এবং চতুর্ধ ধাপে ৫৮ পৌরসভায় ১৪ ফেব্রুয়ারি ভোট হবে। পৌরসভার মধ্যে পঞ্চম ধাপে ৩১টি পৌরসভায় ভোট হবে ২৮ ফেব্রুয়ারি এটিও ঘোষণায় এসেছে।

গত সোমবার নির্বাচন কমিশন সভায় এ সময়সূচি চূড়ান্ত হওয়ার পর ইসির জ্যেষ্ঠ সচিব মো. আলমগীর পৌরসভার ভোটের তফসিল ঘোষণা করেন। দেশে পৌরসভা রয়েছে মোট ৩২৯টি। করোনা ভাইরাস মহামারির মধ্যে এবার চার ধাপে এসব পৌরসভায় নির্বাচন করছে কমিশন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত বছর ফেব্রুয়ারির শুরুতে স্থানীয় সরকারের প্রতিষ্ঠান ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে (ডিএসসিসি) দুই সিটিতে ভোট হয়। ঢাকা উত্তরে ভোট পড়ে ২৫.৩ শতাংশ। আর দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে ৩০ শতাংশের মতো। পরে ওই বছরের ১৭ অক্টোবর ঢাকা-৫ আসনের উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ আসনে মোট ভোটার চার লাখ ৭১ হাজার ৭১ জন। ভোট দিয়েছেন ৪৯ হাজার ১৪১ জন। ভোট পড়েছে ১০ দশমিক ৪৩ শতাংশ। অন্যদিকে ঢাকা-১০ আসনের উপনির্বাচনে ভোট হয় ২১ মার্চ করোনা প্রকোপের সময়। করোনার সময় ভোট করায় ইসিকে ওই সময় অনেক সমালোচনা শুনতে হয়। এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন জয়ী হন। আসনে মোট ভোট সংখ্যা তিন লাখ ২১ হাজার ২৭৫। ভোট পড়েছে মাত্র ৫ দশমিক ২৮ শতাংশ।গত ২৮ ডিসেম্বর প্রথম ধাপের ২৪ পৌরসভার মধ্যে সরকারি দলের প্রার্থীরা ৬৪ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ ভোট পেয়ে ১৮টিতে জয় পেয়েছিলেন। অপরদিকে বিএনপির প্রার্থীরা পেয়েছিলেন ১৩ দশমিক ৩৯ শতাংশ ভোট এবং মেয়র পদে দুটিতে জয় পেয়েছিলেন। এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থীরা তিনটিতে জয়লাভ করেন। দ্বিতীয় ধাপের পৌরসভা নির্বাচনে মোট ৬১ দশমিক ৯ শতাংশ ভোট পড়েছে। এর মধ্যে মেয়র পদে মোট ভোটের ৬০ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ পেয়ে ৪৬টিতে জয় পেয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। বিএনপির মেয়রপ্রার্থীরা পেয়েছেন ১৭ দশমিক ৯১ শতাংশ ভোট। 

বাকি ২২ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ ভোট পেয়েছেন জাতীয় পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। ইসি আশা করছে, আগামী ৩০ জানুয়ারি তৃতীয় ধাপে ও ১৪ ফেব্রুয়ারি চতুর্থধাপে আরও ভোটার উপস্থিতি বাড়বে।

ভোটের আস্থার বিষয়ে ইসির জ্যেষ্ঠ সচিব মো. আলমগীর জানান, ভোটের প্রতি মানুষের আস্থা এখন বেড়েছে। ‘ভোটার উপস্থিতি এখন বেড়েছে। এতে বোঝা যায় ভোটের প্রতি মানুষের আস্থা বেড়েছে এবং সম্পূর্ণ আস্থা আছে। ইভিএমে ভোট দিলে ভোট আরও সুন্দর হয়, এ জন্য দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দিয়েছে।’ তিনি বলেন, ভোটে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ম্যাজিস্ট্রেট মোতায়েন করা হয়। তবে সব জায়গায় কিছু লোক থাকে, যারা ভালো জিনিসকে ভালো দেখতে চায় না। যখন দেখে ভালো হয়ে যাচ্ছে, তাদের ভালো লাগে না। এজন্য যেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী থাকে না, সেখানে উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করে। এটা খণ্ডচিত্র মাত্র, এগুলো সার্বিক পরিস্থিতি না। সার্বিক পরিস্থিতি অত্যন্ত ভালো, অত্যন্ত সুন্দর। উদাহরণ হলো- প্রচুর মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে নির্বাচনে ভোট দেন।

কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘পৌরসভা নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বাড়ছে। নির্বাচনের প্রতি জনগণের আগ্রহ বাড়ার কারণেই এটা হয়েছে।’ নির্বাচন কমিশনের (ইসি) যুগ্ম সচিব ফরহাদ আহমদ খান বলেন, ‘সুষ্ঠু পরিবেশে নির্বাচনের জন্য কমিশনের পক্ষ থেকে সবকিছু করা হচ্ছে। পৌরসভা ভোট ভদ্রলোকদের ভোট।’

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সফল হিসেবে আখ্যায়িত করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা বলেন, ‘একাদশ সংসদ নির্বাচন অনেক চ্যালেঞ্জ ছিলো। যে নির্বাচনটা শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, বিশ্বের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ ছিলো। আপনারা দেখেছেন নির্বাচন সম্পন্ন হওয়ার পরপরই বিশ্বের বিভিন্ন জায়গা থেকে, বিভিন্ন কমিউনিটি থেকে কমেন্ট করেছে। তারা অভিমত ব্যক্ত করেছে। তারা এই নির্বাচনকে সফল হিসেবে উল্লেখ করেছে। কেউ প্রত্যাখ্যান করেনি। সেই রাশিয়া থেকে শুরু করে বলগা নদীর পাড় দিয়ে প্রশান্ত মহাসাগরের আমেরিকা, ইউরোপ সর্বত্র এই নির্বাচনের বার্তা পৌঁছে দিয়েছি। সেখান থেকে আমরা শীতের হাওয়ায় ইথারে-ইথারে খবর পেয়েছি। সুষ্ঠু ভোটের মাধ্যমে সবার আস্থা অর্জনে শতভাগ সফল হয়েছি। আমরা দাবি করি, নির্বাচনে আমরা সফল ও সার্থক হয়েছি। ওই নির্বাচনের পর দেশের নির্বাচনগুলোতে ইভিএম ব্যবহার হয়। যা আমি আগেও বলেছি ইভিএমে আপত্তির কোনো কারণ নেই। ইভিএমই একমাত্র উপায় যেখানে যার ভোট সে দেবে। ইভিএমে কোনো জাল ভোট দেয়ার সুযোগ নেই। অন্য কেন্দ্রের কেউ এসে ভোট দিতে পারবে না। একবার ভোট দিলে কেউ আর ভোট দিতে পারবে না। আমরা সেটি প্রমাণ করতে পেরেছি। স্থানীয় সরকার পৌরসভা নির্বাচনেও সেটি প্রমাণ হয়েছে। বয়স্ক ভোটাররাও বলছেন ইভিএমে ভোট দেয়া সহজ।’

আমারসংবাদ/জেআই