Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

পদ্মা সেতু নির্মাণ হওয়ায় আবাসনশিল্পে নতুন ভাবনা

জাহাঙ্গীর কবির

জানুয়ারি ২০, ২০২১, ০৯:০৫ পিএম


পদ্মা সেতু নির্মাণ হওয়ায় আবাসনশিল্পে নতুন ভাবনা

আবাসন মানুষের একটি মৌলিক চাহিদা। এ চাহিদা পূরণে বিশেষ করে শহরে বসবাসকারী লোকের জন্য আমাদের দেশের আবাসন নির্মাণ প্রতিষ্ঠানগুলো অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। বেশ ক’বছর ধরে তারা বিভিন্ন ডিজাইনে ফ্ল্যাট বা অ্যাপার্টমেন্ট ভবন তৈরি করে ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করে আবাসন সমস্যার সমাধান করে আসছে। তবে এ কথা  সত্য যে, ডেভেলপার কোম্পানিগুলো কেবল রাজধানী ঢাকা শহরকেই প্রাধান্য দিয়ে থাকে। ফ্ল্যাট কিংবা অ্যাপার্টমেন্ট এ শহরের কেন্দ্রস্থলে বা এর আশপাশেই নির্মাণ হচ্ছে। অন্যান্য জেলা শহরে তেমন বেচা বিক্রি হবে না বলে সেখানে এ জাতীয় প্রকল্প নিয়ে এগিয়ে যেতে তেমন দেখা যায় না।

অবশ্য যুক্তিতে বলা যায়, মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত আয়ের লোকদের জেলা শহরেও ফ্ল্যাট ক্রয়ের তেমন সামর্থ্য থাকে না। মানুষ চাকরি কিংবা ব্যবসার ক্ষেত্রে রাজধানী শহরকেই প্রধানত বেছে নেয় বিধায় তাদের বাসস্থানও ঢাকাতেই হয়ে থাকে। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, রাজধানী শহর লোকাধিক্যে ঘনবসতি হওয়ায় যানজটে জনজীবনে যে অসহনীয় অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে তা সহজে নিরসন হওয়ার নয়। অনেকেই বলে থাকেন, ঢাকা শহর যেনো বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ছে। শহরের অন্যান্য এলাকা বাদ দিলেও গুলশান, বনানী, বারিধারা, ধানমন্ডি, উত্তরার অভিজাত এলাকাও এখন আর মুক্ত আলো-বাতাস, নির্মল পরিবেশসহ স্বাচ্ছন্দ্যময় থাকছে না। ধুলিময় অগোছালো অপরিচ্ছন্ন পরিবেশকে অসহ্য মনে করে অনেকেই ঢাকাতে বসবাস করতে অনিচ্ছা প্রকাশ করছে।

তবে এ শহরে উচ্চ হারে বাড়িভাড়া এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার অভাবে এ শহরকে ছাড়তে চাইলেও কর্মস্থল এবং সন্তানের লেখাপড়ার কথা বিবেচনা করে বিরত থাকে। আবাসনশিল্পে আমাদের দেশে অনেক প্রতিষ্ঠান প্লটভিত্তিক বহুতল অ্যাপার্টমেন্ট ভবন নির্মাণের পাশাপাশি বেশ জায়গাজুড়ে টাউনশিপ অ্যাপার্টমেন্ট ভবনও নির্মাণ করছেন, যেখানে একই পরিসরে অনেক লোকের বাস এবং সে অনুপাতে গাড়ির সংখ্যাও অনেক কিন্তু একবারও ভেবে দেখেছেন কি রাজধানী ঢাকা শহর এত লোকের বসবাসের উপযোগী কি-না? জমি বা প্লট পেলেই দালান উঠবে অথচ প্রশস্ত রাস্তা বা মুক্ত পরিবেশের কথা না ভেবে ব্যাঙের ছাতার মতো বাড়িঘর, অ্যাপার্টমেন্ট তৈরি হওয়ায় পরিবেশ কোণঠাসা হয়ে পড়ার ফলে ফ্ল্যাট ক্রয়ের আগে এসব নানাবিধ সমস্যা পর্যালোচনা করে অনেক ক্রেতা ফ্ল্যাট ক্রয়ে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। নিজের কষ্টার্জিত অর্থ ব্যয় করতে আরও একবার চিন্তা করেন। এটাই একমাত্র সমস্যা নয়, আরও বহুবিধ সমস্যা রয়েছে এ খাতে। বলা হয়ে থাকে প্রায় লক্ষাধিক নির্মাণাধীন ফ্ল্যাট অবিক্রয়কৃত অবস্থায় পড়ে আছে। প্রশ্ন হচ্ছে কেন? ক্রেতার চাহিদা ও ক্রয়ের ইচ্ছার দিকে লক্ষ্য রেখেই তো ফ্ল্যাট নির্মাণ করা যুক্তিযুক্ত। নির্মাণ ব্যয়ে পুঁজি আটকে গেলে ব্যবসার গতি যেমনি বাধাগ্রস্ত হয় তেমনি নির্ধারিত সময়ে ক্রেতাকে ফ্ল্যাট বুঝিয়ে দিতে না পারলে সুনামেরও হানি হয়, ফলে ব্যবসায় ধস নামে আপনা থেকেই।

পদ্মা সেতু নির্মাণের ফলে সেতুর ওপারে দক্ষিণাঞ্চলে আবাসন শিল্পসহ অন্যান্য শিল্প স্থাপনেও নতুন চিন্তা-চেতনা হতে পারে। বিত্তবানদের চাহিদার পাশাপাশি মধ্যবিত্ত বা নিম্নবিত্তের বাসস্থান পূরণে নতুন উদ্ভাবিত প্রকল্প নিয়ে উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসতে হবে। ঢাকা শহরের বাইরেও চাহিদা অনুযায়ী শ্রেণিভিত্তিক আবাসিক জোন তৈরি করে আবাসন সমস্যার সমাধান হতে পারে। প্রয়োজনে কর্মস্থলযুক্ত প্রকল্পসহ আবাসস্থলের সুবিধাদির কথা মাথায় রেখে শিল্প স্থানান্তরের উদ্যোগ নিতে হবে। রাজধানী শহরের বাইরেও যে আবাসনশিল্প গড়ে উঠতে পারে তা এখন থেকে মাইন্ড সেট হওয়া দরকার। মুক্ত আলো বাতাস সবুজে ঘেরা পরিবেশ সমন্বয়ে ভিলা কিংবা ভিলেজ কটেজ তৈরিসহ আধুনিক মানসম্পন্ন আবাসস্থল তৈরি করলে সেখানে কেবল দেশি বিত্তবানরাই নয়, বিদেশিরাও ভিলা ক্রয় করে এলিট জোনে বসবাস করতে আগ্রহী হবে।

আমাদের দেশের অনেক বিত্তবান বিদেশে অর্থাৎ মালয়শিয়াসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ফ্ল্যাট ক্রয় করে থাকেন কিন্তু আমাদের সুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যামলা নদীমাত্রিক এই সুন্দর দেশে পদ্মা সেতু নির্মাণের ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থায় এক মাইলফলক পরিবর্তন আসার সুবাদে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে সমতল ভূমিতে নিজ উদ্যোগসহ দেশি-বিদেশি জয়েন ভেঞ্চারে আধুনিক বসবাসের লক্ষ্যে আবাসন প্রকল্পের পরিকল্পনা এখন থেকেই হওয়া উচিত। কেবল রাজধানী শহরকেন্দ্রিক সীমাবদ্ধ না থেকে ঢাকার বাইরেও নানামুখী শিল্পকে সম্প্রসারিত করার পরিকল্পনা থাকা দরকার। কয়েক বছর আগে থেকে ব্যক্তি উদ্যোগে কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান যেমন- জেড এইচ সিকদার গ্রুপ পদ্মার ওপারে শরীয়তপুর জেলায় ভেদেরগঞ্জ উপজেলার অন্তর্গত মধুপুরে হেলিকপ্টার ট্রেনিং স্কুল তৈরি ও ল্যান্ডিং ফ্যাসিলিটির জন্য বিমানবন্দর তৈরি করছেন। বিমানবন্দরটি চালু হলে এ অঞ্চলে যোগাযোগ ও অর্থনীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন আসবে বলে আশা করা যায়।

প্রস্তাবিত বিমান বন্দরের তিন হাজার ৩০০ ফুট লম্বা রানওয়ে এবং দুই পাশে লেক থাকছে। সিকদার ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, কমার্শিয়াল চাইনিজ রেস্টুরেন্টসহ বিভিন্ন অবকাঠামো তৈরি হচ্ছে। চালুর অপেক্ষায় মনোয়ারা সিকদার মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হসপিটালসহ বিস্তারিত ইতোপূর্বে দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। দেশের স্বনামধন্য নির্মাণ প্রতিষ্ঠান, শিল্পপতি ও ব্যবসায়ী সবাই মিলে আধুনিক মাস্টার প্ল্যানে বৃহত্তর খোলামেলা পরিসরে পরিবেশবান্ধব শিল্পশৈলিতে নতুন উদ্যোগে আবাসন শিল্পসহ অন্যান্য শিল্প স্থাপন,  ব্যবসাস্থল, পর্যটন রিলাক্স জোন এমনকি সিটি তৈরি করে বিশ্বের চোখে বাংলাদেশ হতে পারে উন্নত জাতি, উন্নত দেশ।

লেখক: কলামিস্ট

আমারসংবাদ/জেআই