Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪,

ইমেজ সংকটই বিমা খাতে অন্তরায়

নিজস্ব প্রতিবেদক

জানুয়ারি ২৪, ২০২১, ০৬:৪০ পিএম


ইমেজ সংকটই বিমা খাতে অন্তরায়
  • সব মানুষকে বিমার আওতায় আনা দরকার- আইডিআরএ চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসাইন।

বিমা খাতের ব্যাপক সম্ভাবনা থাকলেও ইমেজ সংকটের কারণে দেশে বিমাশিল্প উন্নয়ন করতে পারছে না। এ কারণে বিমাশিল্পের স্বার্থে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষকে (আইডিআরএ) কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। কারণ বিমা কোম্পানিগুলো সঠিক সময়ে ও ঠিকমত গ্রাহককে বিমা দাবি পরিশোধ করে না। তাই বিমার ওপর সাধারণ মানুষ আস্থা রাখতে পারছেন না। গতকাল ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) কার্যালয়ে বিমা খাতের চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা নিয়ে আয়োজিত এক সেমিনারে বিশেষজ্ঞরা এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আইডিআরএ চেয়ারম্যান ড. এম মোশাররফ হোসেন বলেন, বিমা খাত নিয়ে হতাশার দিক থাকলেও এই খাত ভেতরে ভেতরে অনেক ভালো কাজ করে যাচ্ছে। তাই সব শ্রেণিপেশার মানুষকে বিমার আওতায় নিয়ে আসা দরকার। সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মিজানুর রহমান। কি-নোট উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আবদুল্লাহ আল মাহমুদ এবং প্রগতি লাইফ ইন্সুরেন্সের এমডি মো. জালালুল আজিম। আলোচক ছিলেন বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. সাইদুর রহমান, প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর মো. কাজিম উদ্দিন ও বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স একাডেমির চিফ ফ্যাকাল্টি মেম্বার এস এম ইব্রাহিম হোসাইন।

বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) চেয়ারম্যান ড. মো. মোশাররফ হোসাইন বলেছেন, বিমা খাতকে একটা বিশ্বাসযোগ্য স্থানে দাঁড় করাতে চাই। যেনো বিমা খাতের ওপর মানুষের আস্থা তৈরি হয়। কারণ বিমা খাত সবসময় মানুষের কল্যাণের কথা ভাবে। মানুষ যেনো ভালো থাকে এটাই বিমা খাতের চাওয়া। দেশের সব মানুষ বিমার আওতাভুক্ত হলে এই খাত যেমন এগিয়ে যাবে তেমনি মানুষও এর দ্বারা উপকৃত হবে। ড. মো. মোশাররফ হোসাইন আরও বলেন, বাংলাদেশ একটি টেকসই অর্থনৈতিক অবস্থার দিকে যাচ্ছে। কিন্তু আমরা বিমা খাত নিয়ে তার সমান্তরালে হাঁটতে পারিনি। তবে আমরা যোগ্যতার সাথে এগিয়ে গেলে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারবো।

প্রফেসর ড. মিজানুর রহমান দেশের সকল পেশার সকল মানুষকে বিমার আওতায় আনতে বিমা খাতকে আস্থা অর্জন করতে হবে বলে জানান। এই খাতে সমস্যা যেমন আছে তেমন সম্ভাবনাও আছে। যোগ্য মানুষদের নিয়ে আসতে পারলে এই খাত এগিয়ে যাবে। বিমা খাতে এমন একটা জায়গা সৃষ্টি করতে হবে যেনো মেধাবীরা এই অঙ্গনে ক্যারিয়ার গড়তে আগ্রহী হয়। তবে বিমা খাত নিয়ে মানুষের মধ্যে অনাস্থা এবং ভুল ধারণা রয়েছে যা দূর করতে বিমা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের গুরুত্বের সাথে কাজ করতে হবে।

প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. জালালুল আজিম বলেন, বিমা কোম্পানিগুলো গ্রাহকদের সঠিক সময়ে এবং ঠিকমত দাবির টাকা পরিশোধ করে না। এ কারণে এই খাতে ইমেজ সংকট সৃষ্টি হয়েছে। এই ইমেজ সংকট দূর করতে আইডিআরএকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। উন্নত দেশে বিমা বাধ্যতামূলক। বিমা ছাড়া ছেলেমেয়ে স্কুলে ভর্তি করা যায় না। হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়া যায় না। কিন্তু আমাদের এখানে বিমার প্রয়োজন হয় না। বিমা খাতের উন্নয়নে আমাদের সামনে ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। এজন্য এ খাতের ইমেজ সংকট দূর করতে হবে।

ঢাবির ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বলেন, বৈশ্বিক বিমা শিল্পের তুলনায় বাংলাদেশের বিমাশিল্প খুবই নগণ্য। এখানে মাথাপিছু বিমা ব্যয় মাত্র ৯ ডলার। জিডিপির অনুপাতে বিমা প্রিমিয়ামের পরিমাণ প্রায় দশমিক ৫ শতাংশ। অথচ আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে জিডিপির তুলনায় বিমা প্রিমিয়াম প্রায় ৪ শতাংশ। এছাড়া শ্রীলঙ্কায় ১.২৫ শতাংশ, ভিয়েতনামে ২.২৫ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ায় ২ শতাংশ এবং ফিলিপিনে ১ দশমিক ৭২ শতাংশ। তিনি বলেন, বিমা খাতের বড় সমস্যা আস্থার সংকট। এই আস্থার সংকট দূর করতে দ্রুততার সঙ্গে সঠিক নিয়মে গ্রাহকদের বিমা দাবি পরিশোধ করতে হবে। সেই সঙ্গে ব্যাংক-ইন্স্যুরেন্স (ব্যাংক ও বিমা কোম্পানির অংশীদারিত্বের মাধ্যমে বিমা পণ্য বিক্রি) চালু করতে হবে।