Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪,

প্রতীক্ষার টিকা প্রয়োগ আজ

মাহমুদুল হাসান

জানুয়ারি ২৬, ২০২১, ০৬:৪০ পিএম


প্রতীক্ষার টিকা প্রয়োগ আজ
  • টিকাদান কর্মসূচি উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী
  • প্রথম টিকা নেবেন নার্স রুনু বেরুনিকা কস্তা
  • সাত ফেব্রুয়ারি সারা দেশে হবে টিকা প্রয়োগ
  • টিকাদানে মাঠে আছে সাত হাজার ৩৪৪টি দল
  • টকা প্রদানের সবকিছু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুযায়ী করা হচ্ছে- জাহিদ মালেক, মন্ত্রী, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়
  • অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা যুক্তরাজ্যে প্রয়োগ হচ্ছে- অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার খুরশীদ আলম, মহাপচািলক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর
  • টিকার প্রতিটি লটের নমুনা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষা করা হয়েছে- মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান, মহাপরিচালক, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর

স্বপ্ন নয় সত্যি! করোনার প্রতিষেধক এখন প্রয়োগের পথে। ৭০ লাখ ডোজ টিকা এখন মজুদ। এসব টিকা প্রয়োগে আপত্তি নেই ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের। প্রতিষ্ঠানটি গতকাল ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে আসা প্রথম চালানের অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ৫০ লাখ কোভিশিল্ড টিকার নমুনা পরীক্ষা শেষে প্রয়োগের অনুমতি দিয়েছে। এখন শুধু অপেক্ষার পালা, সবকিছু ঠিক থাকলে আজ বুধবার বিকেলে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে করোনার প্রথম টিকা প্রয়োগ করা হবে। ভার্চুয়ালি এর কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে যে, দেশে করোনার প্রথম টিকা নেবেন হাসপাতালটির ডায়ালাইসিস বিভাগের ইনচার্জ ও সিনিয়র স্টাফ নার্স রুনু বেরুনিকা কস্তা। এ সময় স্বাস্থ্যকর্মী, সাংবাদিক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যসহ পাঁচজনের টিকাদান কর্মসূচি প্রধানমন্ত্রী অনলাইনে যুক্ত থেকে দেখবেন। তারপর টিকা নেয়ার কথা রয়েছে ফিমেল মেডিসিন ইউনিটের ইনচার্জ ও সিনিয়র স্টাফ নার্স মুন্নি খাতুন এবং একই বিভাগের নার্স রিনা সরকারের। চিকিৎসকদের তালিকায় আছেন কুর্মিটোলা হাসপাতালের কনসালটেন্ট ডা. লুৎফর কবির মবিন ও ডা. শাহরিয়ার আলমসহ ২৫ জনের। এদিনই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টিকা প্রাপ্তির নিবন্ধন অ্যাপ সুরক্ষা প্লাটফর্মটি উন্মুক্ত করবেন।

এরপরের দিন অর্থাৎ বৃহস্পতিবার রাজধানীর বাকি চার হাসপাতালে টিকাদান শুরু হবে। পরীক্ষামূলকভাবে ৪০০ থেকে ৫০০ স্বাস্থ্যকর্মী, সাংবাদিক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যসহ বেশ কয়েকটি পেশার লোকদের প্রথমে টিকা প্রয়োগ করা হবে। এসব কাজ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুসারে করা হবে। টিকাদান কেন্দ্রে গ্রহীতাদের জন্য পর্যাপ্ত বসার স্থান রাখা হয়েছে। নারী ও পুরুষদের দুটি ভিন্ন ভিন্ন রুমে টিকা দেয়া হবে। টিকা দেয়ার পর অভিজ্ঞ চিকিৎসক ও নার্সদের তত্ত্বাবধানে পর্যবেক্ষণ শেষে তাদের ছাড়পত্র দেয়া হবে। কেউ অসুস্থবোধ করলে তার প্রয়োজন অনুপাতে চিকিৎসা প্রদান করা হবে। এসব কাজ নির্বিঘ্নে করতে টিকাদানকেন্দ্রে পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলাবাহিনী মোতায়েন করা হবে। প্রথমে টিকা প্রয়োগকৃতদের এক সপ্তাহ নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। এরপর সব ঠিক থাকলে আগামী সাত ফেব্রুয়ারি সারা দেশে একযোগে টিকা প্রয়োগ করা হবে। সে হিসেবে সেরাম ইনস্টিটিউটের এদেশীয় এজেন্ট বেক্সিমকোকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তারা টঙ্গী ওয়্যারহাউজ থেকে নিজস্ব পরিবহনে দেশের প্রতিটি জেলায় টিকা পৌঁছে দেবে। সারা দেশে ৪২ হাজার স্বাস্থ্যকর্মীকে টিকাদানের লক্ষ্যে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। দ্রুত টিকাদান কর্মসূচি সম্পন্নের লক্ষ্যে সাত হাজার ৩৪৪টি দল গঠন করা হয়েছে। প্রতিদলে ছয়জন সদস্য থাকবে। তাদের মধ্যে দুজন সরাসরি টিকা প্রয়োগ করবেন। বাকি চারজন স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করবেন। কোভিশিল্ড টিকা প্রয়োগের লক্ষ্যে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল প্রস্তুত করা হয়েছে। গতকাল বিকেলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এসব হাসপাতালের সর্বশেষ প্রস্তুতি পরিদর্শন করেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে, প্রথমদিন শুধু কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে টিকা প্রয়োগ করা হবে। সেদিন চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যসহ ২৫ জনকে টিকা দেয়া হতে পারে। এরপর বৃহস্পতিবার ব্যাপক হারে পাঁচ হাসপাতালে প্রায় ৫০০ জনকে টিকা দেয়া হবে। তাদের প্রতিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ শেষে গণহারে টিকা প্রয়োগের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকায় তেমন কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হবে না। এদিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আগামীকাল বৃহস্পতিবার ঢামেক হাসপাতালে ১০০ জনকে করোনার টিকা দেয়া হবে। তারমধ্যে ২০ জন চিকিৎসক, ২০ জন নার্সসহ আনসার, তৃতীয় এবং চতুর্থ শ্রেণির আরও ৬০ জনকে টিকা দেয়া হবে।

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘টিকার প্রতিটি লটের নমুনা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষা করা হয়েছে। এই টিকা দিয়েই শুরু হবে করোনা ভাইরাসের টিকাদান।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার খুরশীদ আলম বলেন, ‘সেরাম ইনস্টিটিউটের কোভিশিল্ড অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি। যুক্তরাজ্যের সর্বোচ্চ সংস্থা এই টিকা ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে। সেদেশে প্রয়োগ করা হচ্ছে। ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদণ্ড অনুযায়ী বিশ্বমানের টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। গত ১৬ জানুয়ারি থেকে ভারতে এই টিকার প্রয়োগ হচ্ছে। ভারতের সেই সব কাগজও পরীক্ষা করা হয়েছে।’

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘বুধবার বিকাল সাড়ে ৩টায় কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনের দিন স্বাস্থ্যকর্মী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সাংবাদিকদের মধ্য থেকে ২৫ জনকে টিকা দেয়া হবে। আর আগামী সাত ফেব্রুয়ারি এক যোগে সারা দেশে টিকাদান কর্মসূচি শুরু হবে। এ লক্ষ্যে দেশব্যাপী ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। তিনিই এ সময় দিয়েছেন। বুধবার কুর্মিটোলায় পাঁচজনকে দিয়ে টিকা কার্যক্রমের শুরু হবে। ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, সাংবাদিক, পুলিশ ও সেনা সদস্যদের মধ্যে যারা টিকা পাবেন তাদের পাঁচজনের টিকা দেয়া দেখবেন প্রধানমন্ত্রী। পরে মোট ২৫ জনকে টিকা দেয়া হবে। উদ্বোধনের পর নিবন্ধনের জন্য সুরক্ষা প্লাটফর্ম খুলে দেয়া হবে। যারা নিবন্ধন করতে পারবেন না, তারা ভ্যাকসিন কেন্দ্র বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়েও নিবন্ধন করতে পারবেন। সেই ব্যবস্থা আমরা রেখেছি।’ তিনি বলেন, ‘টিকা প্রদানের সবকিছু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুযায়ী করা হচ্ছে। তাদের নির্দেশনায় বলা আছে, প্রথমে স্বাস্থ্যসেবায় যুক্তদের টিকা দিতে হবে। আমরা গাইডলাইন মেনে কাজ করছি। সঠিক সময়ে ভিআইপিসহ অন্যরা টিকা পাবেন। করোনা প্রতিরোধে বিশ্বে যত টিকা তৈরি হয়েছে তার মধ্যে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা সবচেয়ে বেশি নিরাপদ। দেশকে ভাইরাস মুক্ত করতে হলে টিকা প্রয়োগ করতে হবে। করোনার টিকা কোনো রাজনীতির বিষয় নয়, মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্যই এই টিকা নিয়ে আসা। এ নিয়ে যারা বিরূপ প্রচার চালায় তারা কোনোভাবেই দেশের মঙ্গল চায় না।’

আমারসংবাদ/জেআই