Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪,

আসবে আজ চসিক পিতা

জানুয়ারি ২৬, ২০২১, ০৬:৫০ পিএম


আসবে আজ চসিক পিতা
  • উন্নয়নের স্বার্থে আমাকে ভোট দেবে : রেজাউল
  • সুষ্ঠু ভোট নিয়ে শঙ্কা কাজ করছে- দাবি শাহাদাতের
  • ৭৩৫ ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ৪৩৯টি অত্যধিক ঝুঁকিপূর্ণ, শঙ্কার নাম ৩২ বিদ্রোহী প্রার্থী
  • মেয়র প্রার্থী সাতজন, কাউন্সিলর ১৭৩ জন, সংরক্ষিত ১৪ ওয়ার্ডে ৫৭ জন নারী
  • দুই ওয়ার্ডে কাউন্সিলর নির্বাচন হবে না, প্রথমবারের মতো ভোট ইভিএমে

অপেক্ষার পালা শেষ! আজই হচ্ছে ভোট। ১৯ লাখ ৩৮ হাজার ৭০৬ ভোটারের টিপে আজ আসবে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের পিতা। স্বস্তি-শঙ্কা দুটোই রয়েছে। সুষ্ঠু ভোট নিশ্চিত ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশের পাশাপাশি রাস্তায় রয়েছে বিজিবি। এবারের নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী হয়েছেন সাতজন। প্রধান দুই মেয়র প্রার্থী আওয়ামী লীগের এম রেজাউল করিম চৌধুরী ও বিএনপির ডা. শাহাদাত হোসেন নিজেদের জয়ের ব্যাপারে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। এ ছাড়া ২২৫ কাউন্সিলর প্রার্থীর সবাই জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। এর মাঝে দুই দলে ৩২ জন বিদ্রোহী প্রার্থীও রয়েছেন। মেয়র প্রার্থীদের চেয়ে কাউন্সিলর প্রার্থীরা বেশি সক্রিয় ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে আনতে। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সহিংসতার আশঙ্কা করা হচ্ছে বিভিন্ন মহল থেকে। বিশেষ করে কাউন্সিলর পদ নিয়ে অনেকগুলো ওয়ার্ডেই সংঘাতের আশঙ্কা রয়েছে। ভোটের প্রচারণায় এরই মধ্যে প্রাণ গেছে দুজনের। সর্বশেষ খোদ নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদারও জানালেন, চট্টগ্রাম সিটির ভোটে সহিংসতার আশঙ্কার কথা। ইতোমধ্যে নির্বাচনের দিন নগরীতে চলাচলের সময় সবাইকে জাতীয় পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখতে বলেছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর। সিএমপি কমিশনার বলেন, ‘আমরা জানিয়ে দিতে চাই, যাদের কাছে জাতীয় পরিচয়পত্র থাকবে তাদের জন্য উৎসবমুখর হবে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন (চসিক), কিন্তু যাদের কাছে থাকবে না তাদের জন্য মানে বহিরাগতদের জন্য দ্বার বন্ধ। আজ ইপিজেডের সব কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।

সংঘাত হতে পারে এমন ইঙ্গিতের পর ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি। চট্টগ্রাম নগরীর গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে অবস্থান নিয়ে সংস্থাটি নির্বাচনি সহিংসতায় আহতদের চিকিৎসা দেবে। বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির তত্ত্বাবধানে রেড ক্রিসেন্ট চট্টগ্রাম সিটি ইউনিট এই কর্মসূচি চালাচ্ছে। দুটি মাইক্রোবাস ও একটি অ্যাম্বুলেন্স সম্ভাব্য নির্বাচনি সংঘাতে আহতদের চিকিৎসা ও আনা-নেয়ার কাজ করবে। সবকটি গাড়িই প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়ার সরঞ্জামে সাজানো। প্রতিটি গাড়িতে থাকছেন পাঁচজন করে স্বেচ্ছাসেবক। তারা তিনটি দলে ভাগ হয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়ার কাজ করবেন। বেশির ভাগ আসনে আওয়ামী লীগের একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় গোলযোগের শঙ্কা রয়েছে। নগরীতে নির্বাচনি সহিংসতায় খুন হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষে। সর্বশেষ গত রোববার দিবাগত রাতে ফিরিঙ্গিবাজার ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী সালাহ উদ্দিনের বাসায় গুলিবর্ষণের ঘটনাও ঘটেছে। পাঠানটুলি ওয়ার্ডে একজনের মারা যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। প্রায় সব ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় কাউন্সিলর ভোটে সংঘর্ষ হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। এ জন্য আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশের পাশাপাশি বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।

এবার সিটি নির্বাচনে প্রথমবারের মতো সবকটি ভোটকেন্দ্রে ইভিএম মেশিনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এ জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে প্রায় সাড়ে ১১ হাজার ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম)। গতকাল মঙ্গলবার দুপুর থেকে নির্বাচনি কর্মকর্তারা ইভিএম মেশিন ও ভোটগ্রহণ সামগ্রী নিয়ে ভোটকেন্দ্রে পৌঁছে যান। চসিক নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান বলেন, ‘শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য মাঠে থাকবে বিজিবি, র্যাব, পুলিশ, আনসার বাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনী। থাকবে সাদা পোশাকধারী গোয়েন্দা সংস্থাও’। তিনি বলেন, ‘সন্ত্রাসী, অস্ত্রধারী ও বহিরাগত লোকজনকে নগরী ছেড়ে চলে যাওয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ভোটকেন্দ্রে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিনষ্ট করার চেষ্টা করলে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।’ নির্ভয়ে ভোট দেয়ার জন্য ভোটারদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।

ভোটগ্রহণে ৭৩৫ ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ৪৩৯টি ভোটকেন্দ্রকে অত্যধিক (ঝুঁকিপূর্ণ) কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ৩০৬ ভোটকেন্দ্র সাধারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে নজর বেশি থাকবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে সাধারণ ভোটকেন্দ্রে ১৬ জন ও গুরুত্বপূর্ণ ভোটকেন্দ্রে ১৮ জন করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য নিয়োজিত থাকবেন। এ ছাড়াও বিজিবি ২৫ প্লাটুন, র্যাবের ৪১টি টিম, স্ট্রাইকিং ফোর্স থাকবে ১৪০টি, মোবাইল টিম থাকবে ৪১০টি। সব মিলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় মাঠে থাকবে ১৪ হাজার ৩৭০ জন সদস্য। মাঠে থাকবেন ৬৯ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ২০ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট। প্রতি ওয়ার্ডে একজন করে, বিজিবি প্লাটুন প্রতি একজন, র্যাব সিপিসির সঙ্গে তিনজন করে ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে থাকবেন। গত ৮ জানুয়ারি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণা শুরু হয়। গত সোমবার রাত ১২টা থেকে নির্বাচনি এলাকায় সব ধরনের প্রচার-প্রচারণা ও সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সোমবার শেষ মুহূর্তে প্রচার-প্রচারণায় মুখরিত ছিলো নগরী। মিছিলের নগরীতে পরিণত হয়েছিল চিরচেনা বন্দরনগরী।

প্রার্থী : নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সাত প্রার্থী। এর মধ্যে রয়েছেন প্রধান দুই দলের হেভিওয়েট প্রার্থী আওয়ামী লীগের এম রেজাউল করিম চৌধুরী ও বিএনপির ডা. শাহাদাত হোসেন। এ ছাড়াও রয়েছেন ইসলামী ফ্রন্টের প্রার্থী মাওলানা এম এ মতিন (মোমবাতি), ন্যাশনাল পিপলস পার্টির আবুল মনজুর (আম), ইসলামিক ফ্রন্টের মুহাম্মদ ওয়াহেদ মুরাদ (চেয়ার), ইসলামী আন্দোলনের মো. জান্নাতুল ইসলাম (হাতপাখা) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী খোকন চৌধুরী (হাতি)। ১৪ সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে প্রার্থী রয়েছেন ৫৭ জন। সাধারণ ৪১ ওয়ার্ডের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ৩৯ ওয়ার্ডে। ১৮ নং ওয়ার্ডে হারুনুর রশিদ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন। আর ৩১ নং আলকরণ ওয়ার্ডে এক কাউন্সিলর প্রার্থীর মৃত্যুতে নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। তবে ওই ওয়ার্ডে মেয়র ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ৩৯ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে লড়ছেন ১৬৮ জন প্রার্থী।

ভোটকেন্দ্র ও ভোটার : নগরীর ৪১ ওয়ার্ডে ৭৩৫টি ভোটকেন্দ্র রয়েছে। ভোটকক্ষ হচ্ছে চার হাজার ৮৮৬টি। প্রতি ভোটকক্ষে ইভিএম মেশিনে ভোটগ্রহণ করা হবে। এবার ১৯ লাখ ৩৮ হাজার ৭০৬ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৯ লাখ ৯২ হাজার ৩৩ জন এবং মহিলা ভোটার ৯ লাখ ৪৬ হাজার ৬৭৩ জন। গত বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি চসিক নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। সেই অনুযায়ী ২৯ মার্চ ভোটগ্রহণের কথা ছিলো। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে ২১ মার্চ নির্বাচন স্থগিত করা হয়। ৫ আগস্ট চসিক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন ও ৪১ জন সাধারণ ওয়ার্ড এবং ১৪ জন সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলরদের মেয়াদ শেষ হয়। প্রশাসক হিসেবে খোরশেদ আলম সুজনকে নিয়োগ দেয় সরকার।

ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা : ভোটগ্রহণে দায়িত্বে থাকবেন ১৬ হাজার ১৬৩ জন কর্মকর্তা। সকলকে ইভিএম বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে প্রিসাইডিং ও সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার পাঁচ হাজার ৯০২ জন এবং পোলিং অফিসার ১০ হাজার ২৬৮ জন।

ইভিএম : চসিক নির্বাচনে এবার প্রথমবারের মতো ইভিএম মেশিনে ভোটগ্রহণ করা হবে। ভোটের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে ১১ হাজার ৫৭২ ইভিএম। চার হাজার ৮৮৯টি ভোটকক্ষের জন্য থাকবে একটি করে ইভিএম মেশিন। এ ছাড়াও দুটি কক্ষের জন্য একটি করে ইভিএম মেশিন অতিরিক্ত রাখা হবে। আর ঝুঁকি এড়ানোর জন্যও বিশেষ ব্যাকআপ রাখা হয়েছে।

ভোটদান পদ্ধতি : সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার ইভিএমের কন্ট্রোল প্যানেলের মাধ্যমে ভোটারকে ইলেকট্রনিক ব্যালট ইস্যু করবেন। ভোটার নম্বর অথবা জাতীয় পরিচয়পত্র বা স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্রের মাধ্যমে ভোটার শনাক্ত করা হবে। তারপর আঙ্গুলের ছাপের মাধ্যমে ভোটার শনাক্ত করার পর ভোটারের ছবিসহ পরিচয় পর্দায় ভেসে উঠবে। এরপর গোপন কক্ষে একজন ভোটার মেয়র, সংরক্ষিত ও সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলরসহ তিনটি পদে ভোট দিতে পারবেন। ব্যালট ইউনিটে প্রার্থীর নাম ও প্রতীকের ডান পার্শ্বে সাদা বোতামে চাপ দিয়ে ভোট  দেবেন। পরে সবুজ বোতাম চেপে ভোট নিশ্চিত করবেন। আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরীর  বলেন, ‘নির্বাচনি প্রচারণা শেষ হয়েছে, এখন ভোটের জন্য অপেক্ষা। নগরবাসী চট্টগ্রামের উন্নয়নের স্বার্থে আমাকে নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবেন।’

অপরদিকে বিএনপির মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘আমরা হামলা ও পুলিশের গ্রেপ্তার আতঙ্ক মাথায় নিয়ে প্রচারণা শেষ করলাম। পুলিশের অতি উৎসাহী কর্মকাণ্ড এবং সন্ত্রাসী বাহিনীর কারণে উৎকণ্ঠার মধ্যে নির্বাচনি প্রচারণা চালাতে হয়েছে। প্রতিনিয়ত গ্রেপ্তার আতঙ্ক বিরাজ করছে। ইতোমধ্যে আমাদের শখানেক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এখন সুষ্ঠু ভোট নিয়েই আমাদের শঙ্কা কাজ করছে। তবে নগরবাসী ভোট দেয়ার জন্য উন্মুখ হয়ে আছে। মানুষ ভোট দিতে চায়। ভোটকেন্দ্রে আসতে চায়। কিন্তু তাদেরকে নির্বাচনের দিন কেন্দ্রে যেতে দেয়া হবে কি-না তা নিয়ে আমরা সন্দিহান। একই সাথে আমাদের নির্বাচনি এজেন্টরা দায়িত্ব পালন করতে পারবেন কি-না তা নিয়েও আতঙ্ক কাজ করছে। এই আতঙ্ক নিয়েই নির্বাচন করতে হচ্ছে। আমরা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। শঙ্কামুক্ত নির্বাচন চাই। আমাদের নির্বাচনি এজেন্টরা যাতে ভয়হীন এবং গ্রেপ্তার আতঙ্ক ছাপিয়ে কাজ করতে পারে সেই আশ্বাস চাই।’

আমারসংবাদ/জেআই