Amar Sangbad
ঢাকা বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪,

বিদ্যুতে কোনো ঘাটতি নেই

জানুয়ারি ২৬, ২০২১, ০৭:০০ পিএম


বিদ্যুতে কোনো ঘাটতি নেই

বিদ্যুৎ বিতরণে দেশের বৃহত্তম কোম্পানি ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি)। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বিদ্যুৎ বিতরণে সফল ডিপিডিসি নিরলস কাজ করে যাচ্ছে দেশের সমৃদ্ধি ও  গ্রাহক সন্তুষ্টি অর্জনে। ইতোমধ্যে গ্রাহকসেবা নিশ্চিতেও সক্ষমতার জানান দেয় সংস্থাটি। বর্তমানে ঢাকায় বিদ্যুতের কোনো ঘাটতি নেই বরং চাহিদা অনুযায়ী রয়েছে পর্যাপ্ত সরবরাহও। এদিকে কমিয়ে আনা হচ্ছে সিস্টেম লসের হার, স্থাপন করা হচ্ছে প্রি-পেইড মিটার/স্মার্ট মিটারও। সিস্টেম লস কমিয়ে আনতে কারখানাসহ গ্রাহকদের অটোমেটিক মিটার রিডিং সিস্টেমের আওতায় নিয়ে আসছে ডিপিডিসি। ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ানের সঙ্গে কথা হলে আমার সংবাদকে এমনটাই জানান তিনি। বিদ্যুৎ বিতরণ এবং বিদ্যুতের ঘাটতি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আমার সংবাদকে তিনি বলেন, ডিপিডিসিতে আমাদের এখন আর বিদ্যুতের কোনো ঘাটতি নেই। চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে। যদিও মাঝখানে বিদ্যুৎ লাইনসহ অন্যান্য কিছু সমস্যা ছিলো, সেগুলো এখন আর নেই। মোটকথা ডিপিডিসিতে বিদ্যুতের কোনো ঘাটতি নেই। সাবসেশনেও আমরা এখন স্বয়ংসম্পূর্ণ, লাইনগুলোতেও স্বয়ংসম্পূর্ণ। তবে পুরনো লাইনগুলোতে অনেক সময় একটু সমস্যা হয়, সেগুলোকে রেনুভাইজ করার জন্য আমরা অনেক প্রকল্পই ইতোমধ্যে হাতে নিয়েছি। যেমন- ওভারহেড কন্ডাক্টরগুলোকে আমরা আন্ডারগ্রাউন্ডে নিয়ে আসছি। লাইনগুলোকে ফেব্রিকেট করছি। ফলে আরও রিলাইয়েবল ইলেক্ট্রিসিটি আমরা পাবো, সে লক্ষ্যেই আমরা এখন কাজ করছি।

২০২১ সালের মধ্যেই ডিপিডিসি এলাকার সকল গ্রাহককে প্রি-পেইড মিটারের আওতায় আনার কথা রয়েছে- তা সম্ভব কি-না এমন প্রশ্নে ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ান বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে এটা সম্ভব হবে না। করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে এক্ষেত্রে কিছুটা পিছিয়ে গেছে ডিপিডিসি। শুধু তাই নয়, কোভিড-১৯ এর প্রভাবে অনেক কিছুতেই একটা প্রভাব পড়েছে। তবে ইতোমধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশ প্রি-পেইড মিটার স্থাপন করা হয়েছে, বাকি ৬০ শতাংশ আমরা আগামী ২০২৩ সালের মধ্যে স্থাপন করতে পারবো। তিনি বলেন, শুধু প্রি-পেইড মিটারই নয়, আমরা স্মার্ট প্রি-পেইড মিটারও স্থাপন করছি। যার ফলে মিটার স্থাপনের ক্ষেত্রে আমাদের ২০২২ তো লাগবেই এমনকী ২০২৩ সালও লাগতে পারে।   

সিস্টেম লস কীভাবে কমিয়ে আনা যায় এবং বর্তমানে সিস্টেম লসের হার কত- এমন প্রশ্নে ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, বর্তমানে আমাদের সিস্টেম লসের হার ৭.৬২ শতাংশ। তবে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের মাধ্যমে আমরা সিস্টেম লসের হার কমিয়ে আনতে পারবো। এছাড়া বড় বড় ইন্ডাস্ট্রিগুলো ও গ্রাহকদের আমরা এএমআর করছি, অটোমেটিক মিটার রিডিং সিস্টেমের আওতায় নিয়ে আসছি। আশা করছি এতে আমাদের সিস্টেম লস অনেকটাই কমে আসবে। ২০২৩ সালের দিকে হয়তো আমরা ৪ থেকে ৫ এর মধ্যে চলে আসবো এবং এটা সম্ভব বলে জানান তিনি।

এদিকে ডিপিডিসির সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বিগত তিন বছরে আমদানিপর্যায়ে সিস্টেম লস ৯.১৮ শতাংশ থেকে ৭.২৯ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। একই সময়ে সংস্থাটি নির্মাণ করেছে ৭০৯ কিলোমিটার বিতরণ লাইন। উপ-কেন্দ্রের সক্ষমতা ১৩২/৩৩ কেভি ও ১৩২/১১ কেভি লেভেলে ২১৪৮ এমভি থেকে ২৭১৮ এমভিতে উন্নীত হয়েছে এবং ৩৩/১২ কেভি লেভেলে ২৪৯২ এমভিএ থেকে ৩১৫০ এমভিএতে উন্নীত হয়েছে। ২.৪৭ লাখ নতুন সংযোগ প্রদান এবং বিগত তিন বছরে প্রায় তিন লাখ ৫২ হাজার ৩০২টি প্রি-পেইড মিটার স্থাপন করে সংস্থাটি। সকল উপকেন্দ্রসহ ৩৩ কেভি লাইন ও ১১ কেভি লাইনে জিআইএস ম্যাপিং সম্পন্নের পাশাপাশি গ্রাহকসেবার মান অধিকতর বৃদ্ধিকল্পেও স্থাপন করেছে কল সেন্টার। গ্রাহকদের জন্য বাস্তবায়ন করা হয়েছে এএমআই (অথোমেটেড মিটারিং ইনফ্রাস্ট্রাকচার)।

তবে অপরিকল্পিত নগরায়নের ফলে ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যুৎ বিতরণ আর মহামারি আকারে কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাবে গ্রাহকপর্যায়ে সেবা প্রদানে বিঘ্ন ঘটলেও থেমে নেই ডিপিডিসি। চাইনিজ জিটুজি লোনের আওতায় এক্সপানশন অ্যান্ড স্ট্রেংদেনিং অব পাওয়ার সিস্টেম নেটওয়ার্ক বাস্তবায়ন ও ডিপিডিসি এলাকার সকল গ্রাহককে প্রি-পেইড/স্মার্ট মিটারের আওতায় আনা, নতুন বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র নির্মাণ, পুরাতন উপকেন্দ্রসমূহ মেরামতের মাধ্যমে সক্ষমতা বৃদ্ধি, উদ্ভাবনী প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে গ্রাহক সন্তুষ্টি আরও বৃদ্ধি করা এবং চাইনিজ জিটুজি লোনের আওতায় গৃহীত প্রকল্প বাস্তবায়নের পর ঋণের কিস্তি পরিশোধের চ্যালেঞ্জ নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছে ডিপিডিসি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গ্রাহকের ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণ, গ্রাহক সেবার মান বৃদ্ধি, নির্ভরযোগ্য ও মানসম্মত বিদ্যুৎ বিতরণের লক্ষ্যে সরকার ও দাতা সংস্থার অর্থায়নে এবং ডিপিডিসির নিজস্ব অর্থায়নে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে ডিপিডিসি। প্রকল্পসমূহের মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হলো- ডিপিডিসির আওতাধীন উপকেন্দ্রসমূহে স্মার্ট গ্রিড সিস্টেম ব্যবহার প্রবর্তন, ডিপিডিসির আওতাধীন এলাকার আট লাখ ৫০ হাজার স্মার্ট প্রি-পেমেন্ট মিটার স্থাপন, ডিপিডিসির আওতায় ঢাকার কারওয়ান বাজারে ভূগর্ভস্থ উপকেন্দ্র নির্মাণ, বিভিন্ন ভোল্টেজ ক্যাপাসিটির ব্যাংক স্থাপনের মাধ্যমে পাওয়ার ফ্যাক্টরের মান উন্নতকরণ, ডিপিডিসির আওতাধীন এলাকায় বর্তমান ওভারহেড বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থাকে আন্ডারগ্রাউন্ডে রূপান্তরের পরিকল্পনাও রয়েছে ডিপিডিসির।

আমারসংবাদ/জেআই