Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪,

চাল আমদানির ফলে বাজার স্থিতিশীল

নিজস্ব প্রতিবেদক

জানুয়ারি ২৬, ২০২১, ০৮:৪৫ পিএম


চাল আমদানির ফলে বাজার স্থিতিশীল
  • পেঁয়াজে স্বয়ংসম্পূর্ণতায় রোডম্যাপ প্রণয়ন
  • সরকারিভাবে আলু মজুতের সুপারিশ

    -কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক

চাল আমদানির ফলে চালের বাজার স্থিতিশীল অবস্থায় এসেছে বলে মন্তব্য করেছেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, এ বছর চাল, পেঁয়াজ ও আলু- এই তিনটির দাম বেশি ছিলো। সরকার দাম কমানো ও বাজার স্থিতিশীল রাখতে অনেকগুলো পদক্ষেপ গ্রহণ করে। চালের দাম কমাতে আমদানি শুল্ক কমিয়ে ২৫ ভাগে নামিয়ে আনা হয়েছে। ফলে চালের বাজার স্থিতিশীল অবস্থায় এসেছে। কৃষিমন্ত্রী গতকাল রাজধানীর বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি) মিলনায়তনে ‘বাংলাদেশ চাল, আলু ও পেঁয়াজের মূল্য বৃদ্ধির কারণ উদঘাটনে গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন বিষয়ক জাতীয় কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল কর্তৃক আয়োজিত এ কর্মশালায় বাংলাদেশ চাল, আলু ও পেঁয়াজের প্রাপ্যতা ও দামের অস্থিরতা একটি আন্তঃপ্রাতিষ্ঠানিক গবেষণা প্রতিবেদন-২০২০ উপস্থাপন করা হয়।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি কৃষি সচিব মো. মেসবাহুল ইসলাম বক্তব্য রাখেন। বিএআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ারের সভাপতিত্বে ইউজিভির উপাচার্য ও স্টাডি টিমের কোঅরডিনেটর অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম, বিএআরসির সদস্য পরিচালক ড. মোশাররফ উদ্দিন মোল্লা প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

কৃষিমন্ত্রী আরও বলেন, লাগাতর বন্যার কারণে আউশ ও আমনে চালের উৎপাদন কম হয়েছে। অন্যদিকে, সরকারিভাবে ধান চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়া ও সরকারি খাদ্যগুদামে পর্যাপ্ত মজুত না থাকায় মিলমালিক ও পাইকাররা সুযোগ নিয়েছে। বাজারের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। এটি ভবিষ্যতে যাতে না হয় সেজন্য আগামী বোরো মৌসুমে ধান চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা পূরণে সব ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। চাল কিনে সরকারি মজুত বাড়ানো হবে যাতে বাজার সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকে। উৎপাদন বাড়াতে না পারলে কোনো পণ্যেরই বাজার স্থিতিশীল থাকবে না উল্লেখ করে মন্ত্রী আরও বলেন, চাল, আলু ও পেঁয়াজের উৎপাদন আরও বাড়াতে কার্যক্রম চলছে। চালের উৎপাদন বাড়াতে ব্রি-৮৭ ও বিনা -১৬ জাতের ধান চাষে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। আর পেঁয়াজে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে রোডম্যাপ প্রণয়ন করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, কৃষি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মোতাবেক বিএআরসির বাস্তবায়নে ও কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশন (কেজিএফ) অর্থায়নে চাল, আলু ও পেঁয়াজ ইত্যাদির দাম বৃদ্ধির কারণ উদঘাটনের জন্য তিনটি স্টাডি টিমের মাধ্যমে জরিপ পরিচালনা করা হয়। ধান/চাল বিষয়ক গবেষণার ক্ষেত্রে নওগাঁ, শেরপুর, কুমিল্লা ও ঢাকা জেলা, আলুর ক্ষেত্রে মুন্সিগঞ্জ, বগুড়া, রংপুর ও ঢাকা জেলা এবং পেঁয়াজের ক্ষেত্রে ফরিদপুর, নাটোর, পাবনা ও ঢাকা জেলায় জরিপ পরিচালনা করা হয়।

বিএআরসি কর্তৃক উপস্থাপিত গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা যায়, চালের মূল্য বৃদ্ধির পেছনে মূল কারণ হলো— প্রায় সকল কৃষকই ধান কর্তনের প্রথম মাসের মধ্যে বাজারজাতযোগ্য উদ্বৃত্ত বিক্রি করে দেন, গত বোরো মৌসুমে ধান বিক্রির ধরণটি পরিবর্তিত হয়েছে। এ মৌসুমে কৃষকরা তাদের ধান মজুদ থেকে ধীরে ধীরে বিক্রি করেছেন। ব্যবসায়ী ও মিল মালিকরা করোনা পরিস্থিতিতে খাদ্য ঘাটতির আশঙ্কা করেছিলেন এবং মজুদ ধরে রেখেছিলেন। আলুর মূল্য বৃদ্ধির পেছনে ভবিষ্যতে মূল্য বৃদ্ধির আশায় কৃষক ও ব্যবসায়ী পর্যায়ে আলুর মজুত এবং হিমাগার থেকে আলুর কম সরবরাহ। হিমাগারে মজুতকৃত আলুর রশিদ পুনঃপুন হস্তান্তর। পার্শ্ববর্তী কয়েকটি দেশে আলু রপ্তানি। মৌসুমি ব্যবসায়ী কর্তৃক আলুর বিপুল মজুত এবং কৃত্রিম সংকট তৈরি। বর্ষা মৌসুমের ব্যাপ্তি দীর্ঘতর হওয়ায় সবজির উৎপাদন হ্রাস এবং আলুর চাহিদা বৃদ্ধি। হিমাগারে আলুর সংরক্ষণের পরিমাণ কম। টিসিবি কর্তৃক আলুর বিতরণ অপ্রতুল প্রভৃতি কারণ রয়েছে। পেঁয়াজের মূল্য বৃদ্ধির পেছনে দেশীয় অসাধু বাণিজ্য সিন্ডিকেট দ্বারা বাজারে কারসাজি এবং ভারতীয় রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা অথবা অতিমাত্রায় ভারতের উপর পেঁয়াজে আমদানির জন্য নির্ভরতা অন্যতম কারণ।

গবেষণায় চাল, আলু ও পেঁয়াজ ইত্যাদির দাম বৃদ্ধির উত্তরণের সুপারিশ করা হয়। ধান/চাল সংগ্রহ পদ্ধতির আধুনিকায়ন করা, কৃষকের নিকট থেকে সরাসরিভাবে ধান সংগ্রহ করা এবং মিলারদের মাধ্যমে তা চালে পরিণত করা। চিকন ও মোটা দানার চালের জন্য সরকারের পৃথক ন্যূনতম সহায়তা মূল্য (এমএসপি) ঘোষণা করা। ন্যূনতম ২৫ লাখ টন চাল সংগ্রহ করা এবং মোট উৎপাদনের প্রায় ১০ শতাংশ সংগ্রহ করার সক্ষমতা অর্জন করা যাতে করে সরকার বাজারে কার্যকরভাবে হস্তক্ষেপ করতে পারে।

আলুর ক্ষেত্রে সুপারিশ হলো— হিমাগারে আলুর সংরক্ষণ ও আবমুক্তকরণ সরকার কর্তৃক নিয়ন্ত্রণ ও নজরদারির মধ্যে রাখা। আলুর বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টিকারীদের শনাক্তকরণ এবং তাদের বিরুদ্বে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা। সরকার কর্তৃক আলুর উৎপাদন, চাহিদা, সরবরাহ ও মূল্য সংক্রান্ত তথ্য সঠিকভাবে উপস্থাপন করা এবং তা হালনাগাদ রাখা। সরকারিভাবে আলুর মজুত গড়ে তোলার জন্য সুপারিশ করা হয়।

আমারসংবাদ/জেআই