Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪,

অদম্য অগ্রযাত্রায় বসুন্ধরা গ্রুপ

ফেব্রুয়ারি ১, ২০২১, ০৮:২০ এএম


অদম্য অগ্রযাত্রায় বসুন্ধরা গ্রুপ
  • কর্পোরেট সেলসে শীর্ষে বসুন্ধরা সিমেন্ট
  • ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরা সার্ভিস ইন্ডাস্ট্রিতে লিডার
  • সংকটেও উৎপাদন সক্ষমতায় বসুন্ধরা পেপারস মিলস
  • জনপ্রিয়তার শীর্ষে ইস্ট-ওয়েস্ট মিডিয়া 
  • গ্যাস সরবরাহের শীর্ষে বসুন্ধরার এলপি গ্যাস
  • বাজারে সর্বোচ্চ অবস্থানে বসুন্ধরা ফুড

প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই বেসরকারি খাতে দেশ ও মানুষের কল্যাণকামী বৃহত্তম শিল্প গ্রুপ বসুন্ধরার প্রতিটি উদ্যোগের সাথেই জুড়ে আছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন।কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও দেশের চলমান উন্নয়ন-অগ্রযাত্রার সম্মুখভাগে থেকেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসা বসুন্ধরা গ্রুপ আজ দেশের মানুষের কল্যাণ ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাচ্ছে অদম্য গতিতে।

মুনাফায় বিশ্বাসী নয়, বরং দেশ ও মানুষের সেবাকে প্রাধান্য দিয়েই এগিয়ে চলা বসুন্ধরা গ্রুপের সার্বিক সফলতার আংশিক তুলে ধরেছেন নুর মোহাম্মদ মিঠু

কর্পোরেট সেলসে শীর্ষে বসুন্ধরা সিমেন্ট
দেশের সিমেন্ট সেক্টরে কখনো শীর্ষে কখনো দ্বিতীয় অবস্থানে থাকছে বসুন্ধরা সিমেন্ট। তবে সিমেন্টের বাজারে অন্যসব কোম্পানির তুলনায় কর্পোরেট সেলসে সবচেয়ে এগিয়ে আছে বসুন্ধরা সিমেন্ট। কর্পোরেট সেলসে বাংলাদেশের যেসব মেগা প্রকল্প রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম মেট্রোরেল। মেট্রোরেলে শতভাগ এক্সক্লুসিভলি বসুন্ধরা সিমেন্টের ব্যবহার হচ্ছে বলে আমার সংবাদকে জানিয়েছেন বসুন্ধরা গ্রুপের সিমেন্ট সেক্টরের দায়িত্বে থাকা শীর্ষ কর্মকর্তারা। 

তারা জানান, মেঘা প্রকল্পের আরেকটি এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। এখানেও পুরোপুরি ব্যবহার হচ্ছে বসুন্ধরা সিমেন্ট, যেখানে অন্য কোনো ব্র্যান্ডের ব্যবহার হচ্ছে না। এমন অসংখ্য এক্সক্লুসিভ প্রকল্প রয়েছে যেগুলোতে কর্পোরেট সেলসে দেশের অন্যসব কোম্পানির তুলনায় একমাত্র বসুন্ধরাই এগিয়ে। মার্কেট শেয়ারের ক্ষেত্রেও বসুন্ধরা গ্রুপের শেয়ার ১২-১৩ শতাংশ। যেখানে ফ্রেশ, সেভেন রিংস ও ক্রাউন সিমেন্টসহ অন্যান্যদের অবস্থান ৭ থেকে ৮ শতাংশ।  

সংশ্লিষ্টরা জানান, বাজারে বসুন্ধরা গ্রুপের দুই ব্র্যান্ডের সিমেন্ট রয়েছে। একটি বসুন্ধরা সিমেন্ট অপরটি কিং ব্র্যান্ড সিমেন্ট। ইন্ডাস্ট্রির নাম মেঘনা সিমেন্ট মিলস লিমিটেড ও কিং ব্র্যান্ড সিমেন্ট। মেঘনা সিমেন্ট মিলস লিমিটেডের ফ্যাক্টরি খুলনার মংলায় অবস্থিত। আর এটিই বাংলাদেশের প্রাইভেট সেক্টরের প্রথম ইন্ডাস্ট্রি। 

এদিকে ঢাকার মদনগঞ্জে রয়েছে বসুন্ধরা ইন্ডাস্ট্রিয়াল কমপ্লেক্স লিমিটেড। যেখানে উৎপাদিত হয় বসুন্ধরা সিমেন্ট। মংলাতে মেঘনা সিমেন্টের কিং ব্র্যান্ড এবং বসুন্ধরা ইন্ডাস্ট্রিয়াল কমপ্লেক্সও রয়েছে। সেখানেও বসুন্ধরা সিমেন্টের উৎপাদন হচ্ছে।   

রপ্তানির বিষয়ে জানতে চাইলে আমার সংবাদকে বসুন্ধরার শীর্ষ কর্মকর্তারা বলেন, রপ্তানি হচ্ছে। করোনার কারণে মোটামুটি বন্ধ থাকলেও এখন আবার রপ্তানি শুরু হচ্ছে। বসুন্ধরা সিমেন্ট ভারতের আগরতলায় ফ্লাইওভার নির্মাণেও ব্যবহার হচ্ছে। দেশের ছয়টি বর্ডার দিয়ে ভারতে যাচ্ছে বসুন্ধরার প্রোডাক্ট— এমনটাই জানান তারা।  

ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরা সার্ভিস ইন্ডাস্ট্রিতে লিডার
বৃহত্তম ব্যক্তিগত, সামাজিক ও আন্তর্জাতিক মানের অনুষ্ঠানাদির জন্য ২০১৪ সালে বিশাল কর্মযজ্ঞে যাত্রা শুরুর মাধ্যমে সেবা খাতে নবসূচনা করে সর্বাধুনিক সুবিধাসম্বলিত ‘ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরা’। নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ্যে বিয়ের অনুষ্ঠান, কনফারেন্স, এজিএম, কর্পোরেট সেমিনার, ফ্যাশন এক্সপো, ট্রেড ফেয়ার, এক্সিভিশনসহ নানা অনুষ্ঠান স্বাভাবিকভাবে সম্পন্নের মাধ্যমে ইতোমধ্যেই ‘ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরা’ সেবা খাতকে দিয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ। 

সার্ভিস ইন্ডাস্ট্রিতে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে অন্যতম ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরার বর্তমান অবস্থান লিডিং পর্যায়ে বলে আমার সংবাদকে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির শীর্ষ কর্মকর্তারা। সংশ্লিষ্টরা বলেন, সার্ভিস ইন্ডাস্ট্রিতে লিডার আইসিসিবি। 

আইসিসিবির চারটি বড় হল রয়েছে, প্রতিটি হলের আয়তন দেড় লাখ স্কয়ার ফুট। এর মধ্যে ফেয়ার-এক্সপো জোন রয়েছে। ঢাকার কেন্দ্রে এটাই একমাত্র কনভেনিয়ান। প্রচুর জনসমাগমের জন্য উপযুক্ত, সুপরিসর, উচ্চতাও বেশি। আইসিসিবির রয়েছে আড়াই হাজার কার পার্কিং সুবিধা। নিরাপত্তায় নিয়োজিত রয়েছেন ১৫০ জন নিরাপত্তাকর্মী।

 প্রতিষ্ঠাকাল থেকে আইসিসিবি এখনো পর্যন্ত নির্বিঘ্নেই সব অনুষ্ঠান সম্পন্ন করে যাচ্ছে। বেশির ভাগ বিয়ের অনুষ্ঠানও হচ্ছে এখানে— আমার সংবাদকে এমনটাই জানিয়েছেন আইসিসিবি সংশ্লিষ্টরা। 

সংশ্লিষ্টরা জানান, সরকারি ফেয়ারগুলো বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে হলেও বিভিন্ন বড় এক্সপো-ফেয়ার কনফারেন্স, কনভেনশন, ব্রিটিশ কাউন্সিলের এক্সাম সেন্টারও আইসিসিবি। চেয়ার-টেবিলও সরবরাহ করা হয় এখান থেকেই। সব মিলিয়ে আইসিসিবি হচ্ছে ‘মাল্টিপল টাইপ অব পাবলিক গেদারিং’। 

যেখানে অন্যরা সেবার মান এবং সাপোর্ট সিস্টেম এখনো সঠিকভাবে ডেভেলপই করতে পারেনি, সেখানে কোনো সমস্যা হলেই পাবলিক কষ্ট পাবে, এমন তাড়নায় আইসিসিবি সবসময়ই একটি সেকেন্ড লাইনআপেরও ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করে রাখে। 

আইসিসিবি সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে আরও জানা যায়, শীতের সময় প্রতি মাসে গড়ে ১৫০টি অনুষ্ঠান হয়। চলমান করোনা পরিস্থিতির মধ্যে এ বছরও কম নয়। ২০-২৫টি করে প্রোগ্রাম হচ্ছে। তবে চলতি মাস থেকে বাড়বে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। চলতি ডিসেম্বরের মধ্যে ফের আগের অবস্থানে যাবে। 

এদিকে সৌন্দর্য বর্ধনের লক্ষ্যেও ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরার সামনেই খাল খননের কাজও চলমান রয়েছে। 

খাল খননের পর সৌন্দর্যে নতুন মাত্রা পাবে— যোগাযোগের জন্য সুপরিসর আইসিসিবি, এমনটাই বলছেন সংশ্লিষ্টরা। 

আইসিসিবির দায়িত্বে থাকা শীর্ষ কর্মকর্তারা বলছেন, আইসিসিবির মতো অনস্টপ সার্ভিস আর কোথাও নেই। দেশ করোনামুক্ত হলে আয় ২০-২৫ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে এমনটা প্রত্যাশা। 

এ ছাড়াও ২০১৬ সালে আইসিসিবিতে যুক্ত হয় ক্যাটারিং সার্ভিস। যা ঢাকাতে বড় আকারে কাজ করার জন্য ক্যাপাবল। ঢাকার বাইরেও সার্ভিস দেবে আইসিসিবির ক্যাটারিং। ক্যাটারিংয়ে ২০-৩০-৫০ হাজার লোকের জন্য ক্যাপাবল আইসিসিবি।

সংকটেও উৎপাদন সক্ষমতায় বসুন্ধরা পেপারস মিলস
বসুন্ধরার পেপার সেক্টরই নয়, গোটা বাংলাদেশের পেপার সেক্টরই করোনাকালে বড় ধরনের আঘাত পেয়েছে। করোনার শুরু থেকেই এখনো পেপার মিলগুলো বেশ কিছু অস্থিতিশীল পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে পার করে আসছে। 

এছাড়া বসুন্ধরা গ্রুপের শুধু পেপারই নয়— টিস্যুও আছে, আছে শিশুদের জন্য ডায়াপার ও স্যানিটারি ন্যাপকিনসহ অসংখ্য প্রোডাক্ট; আমার সংবাদকে এমনটাই জানিয়েছেন বসুন্ধরা গ্রুপের পেপার সেক্টরের শীর্ষ কর্মকর্তারা।

তারা জানান, করোনার প্রভাবে স্কুল-কলেজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় লেখার খাতাসহ এ জাতীয় পেপারগুলোর চাহিদা ছিলো খুবই কম। বিশেষ করে নয়াবাজারকেন্দ্রিক বাজারগুলোতে দেখলে দেখা যাবে, খুবই খারাপ অবস্থা। বিক্রি আগের মতো নেই। অনেক কমে গেছে। 

এখন আবার নতুন উপসর্গ যুক্ত হয়েছে। যেসব দেশ থেকে পাল্প আসে সেসব দেশে থেকে বড় বড় উডসও আসে, বনভূমি থেকে গাছপালা কেটে রি-ফরেস্টিং করে এগুলোর ব্যবহার করা হয়। 

সেসব দেশের করোনার প্রভাবের কারণে লং-ফাইবারের গাছপালা কাটা বন্ধ আছে। যে কারণে সারা বিশ্বেই পাল্পের ব্যাপক ক্রাইসিস। আর পাল্প না পাওয়ায় প্রোডাকশনে অনেকটাই ইমপ্যাক্টেড হতে হয়েছে বসুন্ধরা পেপার মিলসকে। 

সংশ্লিষ্টরা বলেন, করোনাকালীন মানুষের স্বাস্থ্য সচেতনতায় দেশে টিস্যুর মার্কেটে বসুন্ধরা গ্রুপ ভালো করেছে। ২০১৯-২০ সালে বিক্রির ক্ষেত্রে ইমপ্যাক্টেড হলেও টিস্যুর ক্ষেত্রে অতটা সিরিয়ালি ইমপ্যাক্টেড হয়নি বসুন্ধরা গ্রুপ। 

কিন্তু হাইজেনিক প্রোডাক্ট যেমন— শিশুদের ডায়াপার, স্যানিটারি ন্যাপকিন— এগুলো মোটামুটি মানুষের নিত্যদিনের চাহিদার মধ্যে চলে আসায় করোনার আঘাত প্রবলভাবে পড়েনি।

বসুন্ধরা গ্রুপের পেপার সেক্টরের দায়িত্ব থাকা শীর্ষ কর্মকর্তারা আমার সংবাদকে জানিয়েছেন, বর্তমানে যেভাবে টার্গেট করে এগিয়ে যাচ্ছে বসুন্ধরা গ্রুপ, করোনাকালেও চেষ্টা চলছিল সারা দেশব্যাপী, সে হিসেবে সারা দেশে বসুন্ধরার ডিস্ট্রিবিউটরদের মাধ্যমে প্রোডাক্ট সঠিকভাবে ডিস্ট্রিবিউট করতে পেরেছে বসুন্ধরা গ্রুপ। লকডাউনের শুরু থেকে জুন পর্যন্ত কিছুটা ঝামেলা হলেও সেটা অন্য সবারও ছিলো বলে জানিয়েছেন তারা।

তারা বলছেন, কোথাও বের হতে পারিনি, প্রোডাক্ট দিতে পারিনি। কিন্তু মোটামুটি পরিস্থিতি যখন স্বাভাবিক হওয়া শুরু করলো যেমন আগস্টে শুরু থেকেই স্বাভাবিকতা এখনো বজায় রেখেই এগিয়ে যাচ্ছে বসুন্ধরা গ্রুপ। 

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, করোনা মোকাবিলার জন্য ফেস মাস্ক যখন বাজারে দেয়া শুরু করলো বসুন্ধরা গ্রুপ তার প্রথম দিকে প্রোডাক্টটা অনেক চললেও একটা বড় প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হতে হয়েছে বসুন্ধরা গ্রুপকে। প্রথমদিকে মার্কেটে বসুন্ধরা ফেস মাস্ক ভালোই চলছিল এবং এক্ষেত্রে ফার্মা কোম্পানিতে সরবরাহ করার জন্যও বসুন্ধরা গ্রুপ ওষুধ প্রশাসন থেকে এনওসি পায়— যেটা বসুন্ধরা গ্রুপের জন্য বড় অর্জন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। 

এছাড়া করোনাকালজুড়ে কাঁচামালের সংকটে আমদানি বন্ধ ছিলো। সেসময়ও বসুন্ধরা গ্রুপ আমদানি জঠিলতা কাভারআপ করতে সক্ষম হয়। পরবর্তীতে যখন আমদানি প্রক্রিয়া স্বাভবিক হয় তখন থেকেই ফের অনেকটাই স্বাভাবিকভাবে প্রোডাক্ট তৈরি এবং বাজারে দেয়া শুরু করে বসুন্ধরা গ্রুপ। এরই মধ্যে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় A-4 সাইজের পেপার মার্কেট।  

তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, টিস্যুর বাজার এখন পর্যন্ত মোটামুটি স্থিতিশীল রয়েছে। পাশাপাশি হাইজেনিক মার্কেটেও বসুন্ধরা গ্রুপ কাভারআপ করার চেষ্টা করছে বলে জানা গেছে। মার্চ-এপ্রিল, মে-জুনে যে ক্ষতি হয়েছিল ওই ক্ষতিগুলোও পুষিয়ে নেয়ার জন্য প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। 

কিন্তু লেখার কাগজ, ছাপার কাগজ ছাড়াও সর্বপ্রকার কাগজের মার্কেটই এখন নিম্নমুখী। মাঝখানে স্কুল-কলেজসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে সরকারের নির্দেশে যে অ্যাসাইনমেন্টগুলো হচ্ছিল সেগুলোতে A-4  এর মার্কেটে মোটামুটি ওঠার ব্যবস্থা হচ্ছিল। যদিও এখন পর্যন্ত স্বাভাবিকভাবে মার্কেটে ফিরে আসার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি। বিশেষ করে পাল্প পেপারের মার্কেট বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। যেগুলো বড় ছাপাখানা সেগুলোতেও ছাপার প্রক্রিয়া বন্ধ রয়েছে বেশির ভাগ জায়গাতেই। 

এখন আবার পাল্পের দাম বেড়ে যাচ্ছে, পাল্পের স্বল্পতাও বেড়ে যাচ্ছে। তাই ন্যাচারালি বেড়ে যাচ্ছে পাল্পের দাম, পাল্প পাওয়াই যাচ্ছে না। এসব সংকটই গোটা ইন্ডাস্ট্রিকে ক্ষতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে বলে মনে করছেন বসুন্ধরা পেপার সেক্টরের শীর্ষ কর্মকর্তারা। 

পেপার জগতে বসুন্ধরা অন্যদের চেয়ে কতটা এগিয়ে এমন প্রশ্নে গ্রুপটির শীর্ষ কর্মকর্তারা বলেন, আমাদের সাপ্লাই চেইন ব্যবস্থা অনেক আগে থেকেই প্রস্তুত ছিলো। করোনার শুরু থেকেই আমরা সাপ্লাই চেইনের কৌশলগত জায়গাগুলোতে খুব সক্রিয় ছিলাম। ওই জায়গাগুলোতে অন্য আর দশটা কোম্পানির মতো শুরুর দিকে কাঁচামালের স্বল্পতার ধাক্কায় পড়তে হয়নি। 

এ কারণে বসুন্ধরা গ্রুপ এ সংকট কাভারআপ করতে সক্ষম হয়েছে। লোকাল বাজার হিসেবেও অনেকটাই কাভার করতে সক্ষম হয়েছে বসুন্ধরা। সুতরাং কাঁচামালের সরবরাহ এবং বাজার সরবরাহ ব্যবস্থা ঠিক রাখতে সক্ষম হয়েছে বসুন্ধরা গ্রুপ। 

আর অন্য কোম্পানিগুলো করোনার সময়ে এবং করোনার আগে থেকেই ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে পড়ায় তাদের অনেকের নামই এখন শোনা যাচ্ছে না। পরিস্থিতিও এখন পর্যন্ত স্বাভাবিক নয়। এরই মধ্যে সার্বিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে বসুন্ধরা গ্রুপ এবং গ্রোথও রয়েছে এ গ্রুপের। 

বসুন্ধরা পেপার সেক্টরের শীর্ষ কর্মকর্তারা জানান, করোনার শুরু থেকেই সমন্বয়ের মাধ্যমে সবকিছু গুছাতে পেরেছিল বসুন্ধরা গ্রুপ। অল্পের ভেতর দিয়েও উৎপাদন প্রক্রিয়া সচল রাখতে সক্ষম হয় বসুন্ধরা গ্রুপ। যে কারণে দেশের বাজার এবং রপ্তানির ক্ষেত্রেও স্বাভাবিকতা বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে বসুন্ধরা। 

এছাড়া যথেষ্ট পরিমাণ অর্ডার সেসময় পাচ্ছিলও, কিন্তু যে দেশগুলোতে বসুন্ধরা গ্রুপ রপ্তানি করে থাকে; সেসব দেশ করোনা মোকাবিলায় সক্রিয় কিংবা প্রস্তুত ছিলো না। লক্ষ্য করা গেছে, ফেস মাস্কের সরবরাহ বাংলাদেশে পর্যাপ্ত থাকলেও বিশ্বের অনেক দেশেই সংকট ছিলো। এমতাবস্থায় প্রায় দেশেই জঠিলতা সৃষ্টি হয়েছিল। 

এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ভাগ্যবান যে, বসুন্ধরা গ্রুপ এ প্রোডাক্টগুলো বাজারে যথেষ্ট পরিমাণে সরবরাহ করতে পেরেছে। এ বিবেচনায় বসুন্ধরা গ্রুপ রপ্তানি অর্ডার যেমন পাচ্ছিল, তেমনি রপ্তানিও করছিল। তবে এটা ঠিক, কতটা সময় এভাবে স্বাভাবিকতা বজায় রাখতে পারবে বসুন্ধরা গ্রুপ তা এখনো বলা মুশকিল। 

এখন পর্যন্ত ২০২০ সালে যে ক্ষতি হয়েছে তাও একেবারেই কম নয়। তবে বসুন্ধরা গ্রুপ চেষ্টা করছে কৌশল খাটিয়ে কিভাবে বাজার ধরে রাখা যায় এবং বসুন্ধরা গ্রুপের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য— লেখার কাগজ, ছাপার কাগজ ছাড়াও আরও যত ধরনের কাগজ হয়; সবরকমের কাগজের ক্ষেত্রেই সে ধরনের সক্ষমতা রয়েছে। সেই সক্ষমতা কাজে লাগিয়েই মোটামুটি ভিন্নতর উপায়ে বাজার ধরে রাখার চেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছে বসুন্ধরা গ্রুপ।  

জনপ্রিয়তার শীর্ষে ইস্ট-ওয়েস্ট মিডিয়া 
দেশের জঙ্গিবাদ মোকাবিলা ও সরকারের নানামুখী উন্নয়ন, সংকট ও সম্ভাবনার খবর দেশ ও বিদেশের আপামর মানুষের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে দেশের সবচেয়ে বড় মিডিয়া গ্রুপ ইস্ট-ওয়েস্ট মিডিয়ার ‘কালের কণ্ঠ’, ‘বাংলাদেশ প্রতিদিন’, ইংরেজি দৈনিক ‘ডেইলি সান’, ‘বাংলানিউজটোয়েন্টিফোরডটকম’। এছাড়াও রয়েছে নতুন সাড়া জাগানো টেলিভিশন চ্যানেল ‘নিউজ২৪’ ও রেডিও ক্যাপিটাল ‘এফএম ৯৪.৮’-সহ ক্রীড়াভিত্তিক চ্যানেল ‘টি-স্পোর্টস’। 

২০২০ সালের শেষ দিকে পরীক্ষামূলক সমপ্রচারে সাফল্যের পর একই বছরের নভেম্বরে বাংলাদেশ ও নেপালের মধ্যকার প্রীতিম্যাচ সমপ্রচারের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে চ্যানেলটি। ইতোমধ্যেই ইস্ট-ওয়েস্ট মিডিয়াভুক্ত প্রত্যেকটি গণমাধ্যম পৃথকভাবে দেশ-বিদেশের সর্বমহলে অর্জন করেছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা।

গ্যাস সরবরাহের শীর্ষে বসুন্ধরার এলপি গ্যাস
এলপিজি বাংলাদেশে প্রথম বেসরকারি কোম্পানি বসুন্ধরা। ২০ বছর ধরে দেশব্যাপী সার্ভিস দিচ্ছে বসুন্ধরা এলপিজি গ্যাস। সারা দেশে লক্ষাধিকেরও বেশি এলপিজির গ্রাহক রয়েছে বসুন্ধরার। 

বর্তমানে যার মার্কেট শেয়ার ২৫ শতাংশের মতো। এখাতে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার সবচেয়ে বড় গ্রাহক, সিলিন্ডার প্রোডাকশন ক্যাপাসিটিও বছরে প্রায় ২.৫ মিলিয়ন, অর্থাৎ ২৫ লাখেরও বেশি। এলপিজির দায়িত্বে থাকা বসুন্ধরা গ্রুপের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা হলে আমার সংবাদকে তারা জানান, বসুন্ধরার দুটি নিজস্ব ইন্টারন্যাশনাল ভেসেল রয়েছে।

 নিজস্ব ইনল্যান্ড ভেসেলও রয়েছে আটটি। এ ছাড়াও এলপিজি খাতে বসুন্ধরা গ্রুপের ৫০টি রোড ট্যাঙ্কার, চারটি ক্লায়েন্ট, ঢাকায় বৃহৎ কারখানা ও বর্তমানে মার্কেটে প্রায় ৬০ লক্ষাধিক সিলিন্ডার রয়েছে। এলপিজির বাজারে বসুন্ধরা গ্রুপ প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করে ওমেরা, যমুনা, বেক্সিমকো ও মেট্রোমেক্স কোম্পানিকে।  

সংশ্লিষ্ট শীর্ষ কর্মকর্তারা জানান, করোনাকালে বসুন্ধরার এলপিজি খাতে খুব বেশি প্রভাব না পড়লেও কিছুটা প্রভাব তো রয়েছেই। সে সময় ২০-২৫ শতাংশ সেলস ড্রপও হয়েছিল, যা রিকভার করার চেষ্টা চলছে। 

হোটেল-রেস্টুরেন্টগুলো বন্ধ থাকায় তখন কিছুটা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছিল সংশ্লিষ্টদের। তবে এখন আবার ধীরে ধীরে পুনরায় আগের অবস্থানে ফিরে আসছে বলেও জানান সংশ্লিষ্টরা। এলপিজি ছাড়া অটো-গ্যাসও রয়েছে বসুন্ধরা গ্রুপের।   

বাজারে সর্বোচ্চ অবস্থানে বসুন্ধরা ফুড
বসুন্ধরা গ্রুপের ফুড অ্যান্ড বেভারেজের মাদার প্রোডাক্ট আটা-ময়দা-সুজি। ভোজ্যতেলসহ সম্প্রতি কিছু স্ন্যাকস আইটেমও বের হয়েছে। যেমন— নুডুলস, চিপস এবং পাস্তাও ফুড অ্যান্ড বেভারেজের অধীন। 

বলতে গেলে, বসুন্ধরা গ্রুপের ফুড সেক্টরে আটা, ময়দা আবার মাল্টিফুডে বসুন্ধরার মাদার প্রোডাক্ট ভোজ্যতেল। বসুন্ধরা গ্রুপের কর্মকর্তারা বলেন, বসুন্ধরাই বাংলাদেশের মধ্যে সবচেয়ে বড় ফ্লাওয়ার মিল। সাউথ-ইস্ট এশিয়াতে একক ফ্লাওয়ার মিলের মধ্যে বাংলাদেশে বসুন্ধরাই হচ্ছে একমাত্র বড় ফ্লাওয়ার মিল। 

সে ক্ষেত্রে বসুন্ধরার প্রতিদিনকার উৎপাদন ক্যাপাসিটি দুই হাজার ১৫০ মেট্রিক টন। আবার দুই হাজার ১৫০ মেট্রিক টনের পুরোটাই কনজাম্পশন হয়ে যাচ্ছে। এর মানে বসুন্ধরার শতভাগ ক্যাপাসিটিই ইউটিলাইজড এবং খুব শীঘ্রই আরেকটি ফ্যাক্টরি চালু করতে যাচ্ছে বসুন্ধরা গ্রুপ। যা আগামী এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহের দিকে উদ্বোধন করা হতে পারে বলছেন সংশ্লিষ্টরা। 

সেটা আরও দুই হাজার মেট্রিক টন উৎপাদন ক্যাপাসিটিসম্পন্ন। এরই মধ্যে দিয়ে এপ্রিল থেকে বসুন্ধরা গ্রুপের উৎপাদন সক্ষমতা বেড়ে দাঁড়াবে চার হাজার ১৫০ মেট্রিক টনে। এটা প্রতিদিনকার উৎপাদন ক্যাপাসিটি। সংশ্লিষ্ট শীর্ষ কর্মকর্তারা বলেন, যেহেতু বসুন্ধরা গ্রুপ শতভাগ ক্যাপাসিটি ইউটিলাইজড এবং লার্জেস্ট ফ্লাওয়ার মিল হিসেবেও শতভাগ ক্যাপাসিটি ইউটিলাইজড করতে সক্ষম হয়েছে, সে ক্ষেত্রে বসুন্ধরা গ্রুপই এ মুহূর্তে হাইয়েস্ট সেলার ইন বাংলাদেশ। রিটেইলেও বসুন্ধরার ক্যাপাসিটি আপাতত ৪৫০ মেট্রিক টন। পুরো ৪৫০ মেট্রিক টনই প্রতিদিন লিকুইড করতে সক্ষম বসুন্ধরা গ্রুপ।  

ভোজ্যতেলের বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা বলেন, সয়াবিন, পাম এবং সুপার তেলে বসুন্ধরা গ্রুপের দুই হাজার মেট্রিক টন রিফাইনিং ক্যাপাসিটি রয়েছে। দুই হাজার মেট্রিক টনই চলছে এ গ্রুপের। 

তার মধ্যে এক হাজার মেট্রিক টন সুপার অয়েল যেটা চলমান সেটার রিফাইনিং ক্যাপাসিটি এবং সয়াবিন তেলের প্রতিদিনকার রিফাইনিং ক্যাপাসিটিও এক হাজার মেট্রিক টন। সার্বিক চিত্র এবং মার্কেট এনালাইসিস রিপোর্ট অুনযায়ী— ভোজ্যতেলে বসুন্ধরা গ্রুপের সর্বশেষ অবস্থান কেউ কেউ বলছেন তৃতীয়, আবার বসুন্ধরা গ্রুপের শীর্ষ কর্মকর্তারা বলছেন, ‘উই আর সেকেন্ড ইন দ্য পজিশন’। তারা আশাও করছেন, চলতি মাস থেকেই ক্যাপাসিটি আরও বাড়বে। 

এছাড়া করোনাকালীন চার থেকে পাঁচ মাস যে পরিমাণ চাহিদা ছিলো, সে চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ কোনো কোম্পানিই করতে পারেনি। শুধু বসুন্ধরাই নয়।  ফুড আইটেমের মধ্যে যেমন— আটা-ময়দার ক্ষেত্রেও বর্তমান বাজারে মেজর কম্পিটিটর হিসেবে সিটি গ্রুপকেই দেখছে বসুন্ধরা গ্রুপ। ৩৫ বছরের বেশি সময় ধরে এ সেক্টরে ব্যবসা করে আসা সিটি গ্রুপকেও সর্বশেষ দুই বছরে ছাড়িয়ে গেছে বসুন্ধরা গ্রুপ। 

যদিও সিটি গ্রুপই ফুড আইটেমের আটা-ময়দার ক্ষেত্রে বসুন্ধরার মেজর প্রতিদ্বন্দ্বী। আর ক্যাপাসিটির দিকে তাকালে দেখা যায়— ফ্রেশ অর্থাৎ মেঘনা গ্রুপ। তারপর ক্যাপাসিটির দিকে থেকে তৃতীয় পজিশনে রয়েছে আকিজ ফ্লাওয়ার মিল। তবে বসুন্ধরাই হচ্ছে সবচেয়ে হাইয়েস্ট ক্যাপাসিটির ফ্লাওয়ার মিল। 

ফুড সেক্টরের শীর্ষ কর্মকর্তারা জানান, বসুন্ধরার ভোজ্যতেল মূলত বাজারে আসে ২০১৮ সালে। আর রিটেইলে আসে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। দুই বছরও হয়নি।  বসুন্ধরাই একমাত্র কোম্পানি যারা এত অল্প সময়ে সংকটকালীন সময়েও প্রোপারলি ইউটিলাইজড করতে সক্ষম হয়েছে।

আমারসংবাদ/এআই