Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪,

স্বচ্ছতার পঞ্চযাত্রায় ইসি

বিশেষ প্রতিবেদক

ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২১, ০৭:৪০ পিএম


স্বচ্ছতার পঞ্চযাত্রায় ইসি
  • অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের অঙ্গীকার পূরণ
  • ভোট নিয়ে বড় ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার নজির নেই
  • বিগত চার বছরে ভোটারদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত
  • বিচ্ছিন্ন অভিযোগগুলো রাজনৈতিক সংস্কৃতির উদাহরণ

অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ স্বচ্ছতায় চার বছর পার করে পঞ্চযাত্রা শুরু করলো নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ২০১৭ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি শপথ নিয়ে শান্তিপূর্ণ ভোটের নজির স্থাপন করেন একজন কে এম নূরুল হুদা। তার দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে দেশের গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনগুলো অনুষ্ঠিত হয়। শুরুতে নানা বিতর্ক থাকলেও তার প্রচেষ্টায় ধীরে ধীরে ভোটে ফিরে আসে উৎসাহ-উদ্দীপনা। জনগণের আস্থার পূর্ণতা নিয়ে আসেন তিনি। এখন সব নির্বাচনই হচ্ছে ব্যাপক উৎসবমুখর পরিবেশে। নেই আর ভোটে রক্তাক্ত পরিবেশ, সংঘর্ষও নেই। শান্তিপূর্ণতার নয়া নজির ভোটের মাঠে। চলমান কমিশনের অধীনে নিরপেক্ষতার উদাহরণে ভোট হয় একাদশ সংসদ নির্বাচন। এখন স্থানীয় সরকার পৌরসভা নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বাড়ছে রেকর্ড সংখ্যক। দলবেঁধে পরিবার নিয়ে ভোট দিতে আসার দৃশ্যও দেখা যাচ্ছে। হাসপাতালে ভর্তি রোগী স্ট্রেচারে এসেও দ্বিতীয় ধাপে ভোট দিয়েছেন। তারুণ্য ভোটার নিরাপত্তার মাধ্যমে ভোট দিতে পেরে খুশি হচ্ছেন। বিশেষ করে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনেই (ইভিএম) এসেছে বড় সফলতা। বেড়েছে গ্রহণযোগ্যতা। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটিতে এসেছে আস্থা, বলা হচ্ছে— আস্থা অর্জনে শতভাগ সফলভাবে চলমান কমিশন চার বছর পার করেছে।

ভোটের মাধ্যমে বাংলাদেশের গণতন্ত্র এখন কাছ থেকেই দেখা যায়। ভোটারদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষায় নির্দিষ্ট সময়ে ভোট শেষ হয়। আগারগাঁওয়ে বিশাল নির্বাচন কমিশন ভবন এখন সব ভোটারের খুবই নিকটে হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেক দূরের ভবনের গল্প এখন সেকেন্ডে এসে গেছে। চাকচিক্যময় উৎসব বেড়েছে। এখন ভোটগ্রহণ নিয়ে বড় ধরনের কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটছে না। বিচ্ছিন্নভাবে কিছু কেন্দ্র গোলযোগের ঘটনা ঘটলেও সেটিকে দেখা হচ্ছে স্বাভাবিক হিসেবেই। দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে কষ্টের যুগের অবসান ঘটছে। স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত ১২টি নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছে বাংলাদেশে। এর মধ্যে চলমান কমিশনেরই বেশি অর্জন বলে সর্বমহল থেকে বলা হচ্ছে। সব নির্বাচনকে আস্থা অর্জনে শতভাগ সফল বলে দাবি করছে নির্বাচন কমিশন। একজন কে এম নূরুল হুদা। দেশের ১২তম প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি)। ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ সালে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ  পান। ১৯৭৩ ব্যাচের সরকারি কর্মকর্তা।  ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় এবং সংসদ সচিবালয় যুগ্ম সচিব ও অতিরিক্ত সচিবের দায়িত্ব পালন করার অভিজ্ঞতা রয়েছে তার। প্রশাসনের কর্মকর্তা হিসেবে বেশ কয়েকবার নির্বাচনি দায়িত্বও পালন করেন তিনি। এ ছাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার, জেলা প্রশাসক, জাতীয় পর্যায়ের বিভিন্ন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক, বাংলাদেশ মিউনিসিপাল ডেভেলপমেন্ট ফান্ডের (বিএমডিএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক, নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির চেয়ারম্যানসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে দীর্ঘদিন ওএসডি থাকার পর ২০০৬ সালে সচিব  হিসেবে অবসরে যান তিনি।

দায়িত্ব পাওয়ার পরই তার অধীনে হয় একাদশ সংসদ নির্বাচন। সে নির্বাচনের ভোটের ফলাফলও ছিলো চমকে দেয়ার মতো। ভোটের সকালটা ছিলো উৎসবমুখর। গণমাধ্যমে তা প্রকাশ পেয়েছে। ভোটকেন্দ্রগুলো ছিলো নিরাপত্তার চাঁদরে ঢাকা। ভোটারদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিতে সব ধরনের ব্যবস্থা ছিলো। কোনো ভোটার শঙ্কার মধ্যে পড়তে হয়নি। নির্বাচন এবং ফলাফল প্রত্যাখান নিয়ে কিছু ঘটনা ঘটলেও তা দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির উদাহরণ হিসেবেই দেখা হয়। এর সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।

ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটেও আসে বড় সফলতা।  হয়নি প্রশ্নবিদ্ধ। বিচ্ছিন্ন দু-একটি ঘটনা ছাড়া সফলভাবে নির্বাচন শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে। নির্বাচন অবাধ ও শান্তিপূর্ণ করার জন্য প্রধান রাজনৈতিক দল এবং নির্বাচন কমিশনের মধ্যে একটা যে সমঝোতা দরকার সেটি কার্যতভাবেই হয়েছে। প্রত্যেকটি ভোটের আগেই সারা দেশে সব ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দেয় নির্বাচন কমিশন। আর সেটি যথাযথভাবেই পালন হয়। কিন্তু অনেক নির্বাচনি এলাকা থেকে বিএনপি এবং তাদের জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বেশ কিছু প্রার্থী ভোটের আগের রাতেই ভোটকেন্দ্র নিয়ে সংবাদমাধ্যমের কাছে নানা অভিযোগ তুলে ধরার চেষ্টা করেন, যা রাজনৈতিক সংস্কৃতি বলেই কমিশনের ভাষ্য।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা বলেন, ‘সারা বিশ্ব একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সফল হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।  এখন ইভিএমে আস্থায় আছি। আমরা সুফল পেয়েছি তাই ধরে রেখেছি। সব নির্বাচনে সফলতা ছিলো বলেই ব্যবহার করছি। ভোটারদের অধিকার, পছন্দের প্রার্থীদের ভোট দেয়ার ব্যবস্থা নিশ্চিত করেছি। একাদশ সংসদ নির্বাচন অনেক চ্যালেঞ্জ ছিলো।

যে নির্বাচনটা শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, বিশ্বের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ ছিলো। আপনারা দেখেছেন নির্বাচন সম্পন্ন হওয়ার পরপরই বিশ্বের বিভিন্ন জায়গা থেকে, বিভিন্ন কমিউনিটি থেকে কমেন্ট করেছে। তারা অভিমত ব্যক্ত করেছে।

তারা এই নির্বাচনকে সফল হিসেবে উল্লেখ করেছেন। কেউ প্রত্যাখ্যান করেননি। সেই রাশিয়া থেকে শুরু করে বলগা নদীর পাড় দিয়ে প্রশান্ত মহাসাগরের আমেরিকা-ইউরোপ সর্বত্র এই নির্বাচনের বার্তা পৌঁছে দিয়েছি। সেখান থেকে আমরা শীতের হাওয়ায় ইথারে-ইথারে খবর পেয়েছি। সুষ্ঠু ভোটের মাধ্যমে সবার আস্থা অর্জনে শতভাগ সফল হয়েছি।’

আমারসংবাদ/জেআই