Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪,

পণ্যের মানে আপসহীন বিএসটিআই

নিজস্ব প্রতিবেদক

ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২১, ০৭:৪০ পিএম


পণ্যের মানে আপসহীন বিএসটিআই
  • ১৯৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এ প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম চারটি দায়িত্বের ওপর ভিত্তি করে চললেও পরিবেশ পরিস্থিতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে আরও অনেক কার্যক্রমও চালিয়ে যাচ্ছে নিরলসভাবে। ১৮১টি পণ্য নিয়েই কাজ করছে বিএসটিআই

দেশে উৎপাদিত পণ্যের পাশাপাশি আমদানিকৃত পণ্যেরও গুনগত মান সংরক্ষণে আপসহীন দেশের একমাত্র মান নির্ধারণী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ স্ট্যান্ডাডর্স অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউট (বিএসটিআই)। ভোক্তাদের জন্য মানসম্মত পণ্য নিশ্চিত করাই যার প্রধান লক্ষ্য। ১৯৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এ প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম চারটি দায়িত্বের ওপর ভিত্তি করে চললেও পরিবেশ পরিস্থিতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে আরও অনেক কার্যক্রমও চালিয়ে যাচ্ছে নিরলসভাবে। ১৮১টি পণ্য নিয়েই কাজ করছে বিএসটিআই। যার মধ্যে কৃষি ও খাদ্যে রয়েছে ৭৬টি, রসায়নে ৪৬টি, প্রকৌশলে ১৯টি, টেক্সটাইলে ১২টি এবং ইলেক্ট্রিক্যালে ২৮টি। আর খাদ্যপণ্যসহ ৫৫টি আমদানি করা পণ্যের জন্যও শুল্ক প্রত্যয়নের আগে সনদ প্রদান করছে বিএসটিআই, যা গ্রহণেও রয়েছে বাধ্যবাধকতা। বিভিন্ন পণ্যের আন্তর্জাতিক সিস্টেম অনুসরণে বাংলাদেশের মান অনুযায়ী পরীক্ষাও করাতে হয় ল্যাবরেটরিতে। এরপরই সনদ প্রদান করছে বিএসটিআই। বিএসটিআইয়ের রয়েছে সাতটি উইং। তার মধ্যে প্রশাসন, সার্টিফিকেশন মার্কস, মান উইং, রসায়ন পরীক্ষণ, মেট্রোলজি ও ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম সার্টিফিকেশন উইং। গুণগত মান সনদ ছাড়া যেকোনো পণ্য বাজারজাত করা বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। যার জন্য রয়েছে দণ্ডের বিধানও। স্ব স্ব ক্ষেত্রে বিএসটিআইয়ের প্রতিটি উইংই সফলতার সঙ্গে পালন করে যাচ্ছে অর্পিত দায়িত্ব। দায়িত্ব পালনের সফলতায় বিএসটিআই ইতোমধ্যে ভোক্তাদের কাছে আস্থার প্রতীকেও রূপ নিয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এদিকে শুধু ঢাকা শহরেই নয়, দেশের বিভিন্ন জেলাতেও বিএসটিআইয়ের কার্যক্রম সমপ্রসারণের জন্য ল্যাবরেটরি স্থাপনের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। একই সঙ্গে থাকবে অফিসও। ১৯৭৪ সালে আইএসও সদস্যপদ লাভ করার পর থেকেই আপসহীনভাবে আন্তর্জাতিক গুণগত মান নিশ্চিতেও কাজ করে যাচ্ছে বিএসটিআই। এছাড়া দেশের বাইরেও ব্যবসা-বাণিজ্য সমপ্রসারণের লক্ষ্যে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বিভিন্ন চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকও করছে বিএসটিআই।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভোক্তামুখী বিএসটিআই ভোক্তাদের জন্যই নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। পণ্যের গুনগত মানের বিষয়ে কোনো ধরনের আপস নেই বিএসটিআইতে। যে কারণে প্রতিনিয়তই পরিচালনা করা হচ্ছে অভিযানও। যে অভিযানে সহযোগিতা করছে র্যাব ও পুলিশবাহিনী। বিএসটিআই সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সিএম উইং চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস অর্থাৎ জুলাই মাসসহ গত দুই অর্থবছরে মোবাইল কোর্ট ও সার্ভিলেন্স সংক্রান্ত অভিযান পরিচালনা করে যথাক্রমে ৩৪৬, ৪২৪ ও ১৯টি। অভিযানে মামলা দায়ের (মোবাইল কোর্ট) করা হয় ৩৯৫, ৩৭০ ও ১৯টি। মামলার নিষ্পত্তি করা হয় ৩৯৫, ৩৬৯ ও ১৯টি। সার্ভিলেন্স টিম পরিচালনার সংখ্যা ১৭০১, ১২৫৪ ও ১৯টি। সার্ভিলেন্স টিমের মামলা দায়েরের (সার্ভিলেন্স টিম) সংখ্যা ৮০৬, ২৮৮ ও দুটি। মামলা নিষ্পত্তির (সার্ভিলেন্স টিম) সংখ্যা ১১০, ৮১টি। মোট জরিমানা আদায়ের পরিমাণ মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ৪১২.৫৯৬, ২৯৪.২৯৫ ও ২৩.৩৫ আর সার্ভিলেন্স টিমের মাধ্যমে ১৬.৫৮, ৪০.৫১০৪ টাকা। জরিমানাকৃত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৩৯৮, ৩৭৪ ও সাতটি। অভিযানে প্রতিষ্ঠান সিলগালা করা হয় ২০, ২৫ ও তিনটি। বিভিন্ন মেয়াদে জেলও প্রদান করা হয় ৩১, ২১ ও ছয়জনকে। এছাড়াও চলতি অর্থবছরের প্রথম মাসে প্রায় এক কোটি টাকার নকল কসমেটিকস জব্দপূর্বক ধ্বংসও করে মানের বিষয়ে আপসহীন প্রতিষ্ঠান বিএসটিআই। 

এছাড়া মেট্রোলজি উইংও একই সময়ে মোবাইল কোর্ট ও সার্ভিলেন্স সংক্রান্ত কার্যক্রমের অংশ হিসেবে পেট্রোল পাম্পের ডিসপেনসিং ইউনিট ভেরিফিকেশন করে। যেখানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার সংখ্যা যথাক্রমে ২৪৮, ৩৬৩ ও ১০টি। অভিযানে মামলা দায়েরের সংখ্যা ৫২০, ৬৬৩ ও ৩২টি। মামলা নিষ্পত্তির সংখ্যা ৫২০, ৬৬৩, ও ৩২। জরিমানা আদায় করা হয় ৩০.৯০৮, ৮২.৪০৮ (দুই জনের ১০ দিন করে কারাদণ্ড) ও ৩.১৮৫ টাকা। পরিচালিত স্কোয়াড বা বিশেষ অভিযানের সংখ্যা ৫৬৩, ৫৭৩ ও ১৬টি। মামলা দায়েরের সংখ্যা ৮৩০, ৬২৮ ও চারটি। মামলা নিষ্পত্তির সংখ্যা ৬ ও ৪৭টি। জরিমানা আদায় করা হয়েছে ০.৪৩, ৯.২৮৫ (একজনের ছয় মাসের কারাদণ্ড)। জরিমানাকৃত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৫২০, ৬৬৩ ও ৩২টি। এরই মধ্য দিয়ে বিএসটিআই জরিমানার অর্থও যথাক্রমে ৬৬৩.৫৮০৭৬৫, ৬২৩.৫৬৪২৭৫ ও ৪২.৭৪৯৮৮৫০ জমা করে সমৃদ্ধ করছে সরকারের রাজস্ব ভাণ্ডার। ভ্যাট আদায় করা হয়েছে যথাক্রমে ৯২.১৩১৪৯, ৮৩.৩১০৪৫ ও ৬.৩৭৫৯৫ টাকা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র আরও জানায়, বিগত তিন অর্থবছরে ‘বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন আইন-২০১৮’  এবং ‘ওজন ও পরিমাণ মানদণ্ড আইন-২০১৮’ জারি করেছে বিএসটিআই। বিএসটিআইয়ের ন্যাশনাল মেট্রোলজি ল্যাবরেটরির (এনএমএল) ছয়টি ল্যাবরেটরি এবং ৩৫টি পণ্যের সর্বমোট ৪১১টি টেস্ট প্যারামিটার বাংলাদেশ অ্যাক্রিডিটেশন বোর্ড থেকে অ্যাক্রিডিটেশন অর্জন করেছে। বিএসটিআইয়ের প্রোডাক্ট সার্টিফিকেশন সিস্টেমের আওতাভুক্ত ১৪টি পণ্যও ভারতের এনএবিসিবি থেকে অ্যাক্রিডিটেশন অর্জন করেছে। এছাড়াও রংপুর ও ময়মনসিংহ দুটি বিভাগীয় সদরসহ তিনটি জেলায় (ফরিদপুর, কুমিল্লা ও কক্সবাজার) বিএসটিআইয়ের অফিস-কাম ল্যাবরেটরি স্থাপন করা হয়েছে। মোড়কজাতকৃত পণ্যের নিট ওজনের পাশে ‘বি’ লগো (মার্ক) ব্যবহারের প্রচলন করা হয়েছে। বিএসটিআইয়ের পরীক্ষণ ল্যাবে নন-ডেস্ট্রাক্টিভ পদ্ধতিতে স্বর্ণের বিশুদ্ধতা নির্ণয় করার পরীক্ষণ সুবিধাও সংযোজন করা হয়েছে বিগত তিন বছরে।

তবে প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি, প্রণীত বাংলাদেশ মানকে আঞ্চলিক-আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উন্নীতকরণসহ ভোক্তা সাধারণের স্বার্থ-সংরক্ষণে শতভাগ বিশুদ্ধ পণ্যসামগ্রী প্রাপ্তি নিশ্চিত ও বিদ্যমান নিম্ন বেতনস্কেলে মেধাবীদের ধরে রাখা এবং জনসাধারণের কাছে শতভাগ নিরাপদ পানি ও স্বাস্থ্যসম্মত ভোগ্যপণ্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করার চ্যালেঞ্জ নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছে বিএসটিআই। চ্যালেঞ্জের বিপরীতেও এ সংস্থার পণ্যের সার্টিফিকেশন কার্যক্রমের অটোমেশন চালুকরণ, গুরুত্বপূর্ণ ও বাধ্যতামূলক পণ্যের উৎপাদক-আমদানিকারকের তথ্য-সংবলিত ডাটাবেজ প্রস্তুতকরণ, নিবন্ধিত মোড়কজাত পণ্যসামগ্রীর ডাটাবেজ প্রস্তুতকরণ, বিএসটিআইয়ের কারিগরি তিনটি পদ যথা— পরিদর্শক, পরীক্ষক ও ফিল্ড অফিসার নবম গ্রেডে উন্নীতকরণের পরিকল্পনাও গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।

এদিকে চলতি অর্থবছরেই পণ্যের সার্টিফিকেশন কার্যক্রমের অটোমেশন, হটলাইন সার্ভিস চালু, কিউ ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম চালু, দেশের বাইরে অবস্থিত বিভিন্ন পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে সার্টিফিকেশন কার্যক্রম চালু, নিবন্ধিত মোড়কজাত পণ্যসামগ্রীর ডাটাবেজ প্রস্তুত, গুরুত্বপূর্ণ ও বাধ্যতামূলক ভোগ্যপণ্যের উৎপাদনের তথ্য-সংবলিত ডাটাবেজ প্রস্তুত, বিএসটিআইয়ের চট্টগ্রাম ও খুলনা বিভাগীয় অফিসের ল্যাবরেটরিগুলোকে অ্যাক্রিডিটেশনের আওতায় আনয়নের টাগের্ট নিয়েই সার্বিক কার্যক্রম বাস্তবায়নে এগিয়ে চলছে বিএসটিআই।

আমারসংবাদ/জেআই