Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪,

এপ্রিলে শুরু হচ্ছে ইউপি ভোট

রফিকুল ইসলাম

ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২১, ০৭:২৫ পিএম


এপ্রিলে শুরু হচ্ছে ইউপি ভোট
  • আ.লীগের ভাবনায় নির্বাচনি কর্মকৌশল
  • স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য প্রার্থীকে প্রাধান্য দেবে
  • সাংসদের কাছে ধরনা দিচ্ছেন প্রার্থীরা
  • পদ হারাতে নারাজ বর্তমান চেয়ারম্যানরা
  • বিতর্কিত চেয়ারম্যানরা পাবেন না নৌকা প্রতীক
  • দ্রুত প্রার্থী বাছাই শুরু করবে আওয়ামী লীগ
  • পৌর ভোটের জয়ের ধারা চায় ইউপিতে

আগামী ১১ এপ্রিল প্রথম ধাপের ভোট গ্রহণের মধ্যদিয়ে সারা দেশে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হচ্ছে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। প্রথম ধাপে দেশের ৩২৩ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদের এ নির্বাচনকে সামনে রেখে কর্মকৌশল নিয়ে ভাবছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। বিতর্কমুক্ত এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্পন্ন করতে সরকারি দল হিসেবে রূপরেখা নিয়ে ভাবছেন দলটির সিনিয়র নেতারা। তৃণমূলে দলের শৃঙ্খলা ধরে রেখে স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য নেতাকে চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়ন দিতে চায় আওয়ামী লীগ। ইতোমধ্যে এ লক্ষ্য নিয়ে ক্ষমতাসীন দলটির  বিভাগীয় দায়িত্ব ও সিনিয়র নেতারা কাজ শুরু করেছেন বলে দলটির একাধিক সূত্র আমার সংবাদকে নিশ্চিত করেছে। সূত্রটি বলছে, পৌরসভা নির্বাচনের মতোই ইউপি নির্বাচনেরও হার্ডলাইনে থাকবে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড। কোনোভাবেই নব্য আওয়ামী লীগার এবং বিতর্কিতরা দলীয় মনোনয়ন পাবে না। একই সঙ্গে দলের কেউ বিদ্রোহী হলে বা সমর্থন দিলে নেয়া হবে কঠোর ব্যবস্থা।

তথ্য মতে, টানা একযুগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ। ক্ষমতার এ দীর্ঘ সময়ে ভোট ও মাঠের রাজনীতিতে সফল ক্ষমতাসীন দলটি। একদিকে বিএনপি-জামায়াতসহ বিরোধী দলগুলোকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করে সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্র প্রতিহত করেছে কঠোর হাতে, অন্যদিকে জাতীয় কিংবা স্থানীয় সরকার নির্বাচনে নৌকার নিরষ্কুশ বিজয় নিশ্চিত করছে। বিগত দিনের ভোটের মাঠের সেই সফলতার ধারাবাহিকতা চলমান পৌরসভা নির্বাচনে অব্যাহত রয়েছে। প্রথম চার ধাপের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীদের কাছে ভোটের মাঠে পাত্তাই পাচ্ছে না বিএনপি-জামায়াতসহ সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর প্রার্থী ও সমর্থকরা। তবে প্রতিটি পৌরসভায় নৌকার জয়ে বিপত্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী। অনেক স্থানে বিদ্রোহীদের কারণে দলীয় শৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে। তবে ভোটের ফলাফলে অতিকাংশ পৌরসভা জয় পেয়েছে নৌকার প্রার্থী। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে বিদ্রোহীরা। ভোটের মাঠে বিদ্রোহীদের নিয়ে বিপাকে পড়ছেন কেন্দ্র ও তৃণমূল নেতাকর্মীরা। অনেক স্থানে নিজ দলের নেতাকর্মীদের মাঝে অভ্যন্তরীণ কোন্দল, দ্বন্দ্ব, হামলা-মামলায় জর্জরিত হয়ে পড়ে। আর এই সকল বিদ্রোহী প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের সরাসরি মদদ দিয়েছেন ক্ষমতাসীন দলটির স্থানীয় এমপি-মন্ত্রী, জেলা-উপজেলা পর্যায়ের দায়িত্বশীল নেতারা। বিষয়টি নিয়ে দায়িত্বশীল নেতারা কঠোর অবস্থানে থাকলেও শেষ মুহূর্তেও তারা পিছপা হননি। যদিও অভিযুক্ত এমপি-মন্ত্রী ও প্রভাবশালী নেতাদের সাংগঠনিক শাস্তির মুখোমুখি করতে তালিকা তৈরি করেছেন তারা। তৃণমূলে অভিযোগের ভিত্তিতে তৈরিকৃত ওই তালিকা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে তুলে দেবেন তারা।

আ.লীগের দায়িত্বশীল সূত্রে জানা যায়, পৌরসভার অভিজ্ঞতা নিয়ে আসন্ন ইউনিয়র পরিষদ নির্বাচনে তৃণমূলে সৃষ্ট ভাই লীগ, এমপি লীগ, অভ্যন্তরীণ কোন্দল, দ্বন্দ্ব ও বয়লভিত্তিক রাজনীতি নিরসন এবং বিদ্রোহী প্রার্থীদের মদতদাতাদের কোনোভাবেই ছাড় দেবে না আওয়ামী লীগ। স্থানীয় সরকারের এই নির্বাচন প্রভাবশালী নেতা ও এমপি-মন্ত্রীদের প্রভাবমুক্ত করতে চান তারা। বিশেষ করে তৃণমূল আওয়ামী লীগকে আরও শক্তিশালী করতে ত্যাগী, পরিশ্রমী, মেধাবী, যোগ্য, স্বচ্ছ ও দলের জন্য নিবেদিত প্রার্থীকে মনোনয়ন দেবে দলটি। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রথম ধাপের তারিখ ঘোষণা হওয়ার পর এ লক্ষ্যে কাজ শুরু করেছেন দলটির নীতি নির্ধারকরা। তবে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার সবুজ সংকেতের অপেক্ষায় রয়েছেন তারা।

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক আমার সংবাদকে বলেন, ‘এমপি-মন্ত্রী কিংবা বড় যেকোনো প্রভাবশালী নেতাই হোক না কেন, ব্যক্তিস্বার্থ রক্ষা বা ক্ষমতার প্রভাব ধরে রাখতে যারা নৌকার বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী দিচ্ছেন, বিদ্রোহীদের ইন্ধন দিচ্ছেন, ভোটের মাঠে নৌকার বিরোধিতা করছেন, তাদের কোনোভাবেই ছাড় দেয়া হবে না। তাদের সকলকে শাস্তির মুখোমুখি করা হবে।’ 

আ.লীগ সূত্রে, বর্তমান পরিস্থিতিতে যেকোনো নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ে কঠোর অবস্থানে রয়েছে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বিতর্কমুক্ত ও যোগ্য প্রার্থীকে নৌকার মনোনয়ন দিচ্ছেন। চলমান পৌরসভার মতো আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও এমন ধারাবাহিকায় ধরে রাখবেন তিনি। দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ে আওয়ামী লীগ কঠোর অবস্থানে থাকায় কপাল পুড়বে নানামুখী অপকর্মের সাথে যুক্ত ও বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িত চেয়ারম্যানরা। বিশেষ করে বৈশ্বিক মহামারি করোনার সংঙ্কটের মধ্যে যারা লুটপাট, চুরি,  অসহায় দরিদ্র, শ্রমজীবী, দুস্থ ও নিম্নবিত্ত পরিবারের মানুষের অর্থ হরণ করেছেন তারা আর কোনোভাবেই নৌকা প্রতীক পাবেন না । খুব শীঘ্রই দলের কার্যনির্বাহী ও স্থানীয় সরকার বোর্ডের সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ওই বৈঠকে বিভাগীয় রিপোর্ট এবং বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্ট পর্যালোচনা করে ইউপি নির্বাচনের রূপরেখা নির্ধারণ করা হবে।

তৃণমূল সূত্রে জানা যায়, প্রথম ধাপের ৩২৩ ইউনিয়ন পরিষদের তারিখ ঘোষণার পরপরই সম্ভাব্য প্রার্থী দলীয় মনোনয়ন পেতে জোর তদবির শুরু করেছেন। দিন-রাত ছুটছেন দলীয় সিনিয়র নেতা ও স্থানীয় সাংসদের দ্বারে দ্বারে। স্থানীয় সংসদ সদস্যের বাসা-অফিসে এখন অনেকটা নির্বাচনি অফিসে রূপ নিয়েছে। স্থানীয় সংসদ সদস্যের মর্জিতেই নির্ভর করছে ওই ইউপি নির্বাচনের টিকিট। মনোনয়ন দৌড়ে পিছিয়ে নেই বিতর্কিত চেয়ারম্যানরাও। তারাও মনোনয়নের জন্য দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের কাছে ধরনা দিচ্ছেন।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম আমার সংবাদকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সবসময় ত্যাগী, পরিশ্রমী, মেধাবী ও মাঠের আন্দোলন সংগ্রামে সক্রিয় নেতাকর্মীদের মনোনয়ন দেয়। এটি নতুন কিছু নয়, তৃণমূলের  যার গ্রহণযোগ্যতা বেশি, যিনি জনগণের ভোটে জয়লাভ করতে পারবেন, তাকে মনোনয়ন দেয়া হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘বিতর্কিত ও নৌকার বিরুদ্ধে যারাই কাজ করেছেন, তাদের কোনোভাবেই মনোনয়ন দেয়া হবে না।’  

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক আমার সংবাদকে বলেন, ‘নির্বাচনে নৌকার বিজয় নিশ্চিত করতে যে সকল কর্মকৌশল হাতে নেয়া দরকার, যথাসময়ে আওয়ামী লীগ সকল কর্মকৌশল হাতে নেয়। এর ধারাবাহিকতায় ঘোষিত তারিখে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের জন্য আওয়ামী লীগ প্রস্তুতি শুরু করেছে।’

আমারসংবাদ/জেআই