Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪,

লন্ডন থেকে ধৈর্যের বার্তা

ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২১, ০৭:৫০ পিএম


লন্ডন থেকে ধৈর্যের বার্তা
  • খালেদা জিয়ার প্রভাব সময়ে ক্ষমতা চাচ্ছে না বিএনপির বড় অংশ
  • খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলন কিংবা সরকার পতনের আন্দোলন এখনই নয়
  • বৃহৎ আন্দোলন করে তৃতীয় পক্ষকে সুযোগ দেয়ার পক্ষে নেই লন্ডন নেতা
  • টিকে থাকার লড়াই, ভবিষ্যতে দলের নেতৃত্ব কাঠামো তৈরির মিশন চলছে
  • ভবিষ্যতে বাংলাদেশে বিজনেস পলিসির জন্য একটি দেশের চাহিদাকে গুরুত্ব

বিএনপি এখন নির্বাচনমুখী রাজনৈতিক দল। সাময়িক ইস্যুতে ঘরোয়াভাবে প্রতিবাদ করে দলের অবস্থান জানান দিচ্ছে। কিন্তু সাজাপ্রাপ্ত দলীয়প্রধান খালেদা জিয়ার ইস্যুতে নীরবতা। সুস্থ অবস্থায় হেঁটে আদালতে যাওয়া খালেদা জিয়া সরকারের অঙ্কিত ছকে সাময়িক জামিনে হুইল চেয়ারে করে বের হোন। এতে তার অর্জিত সম্মান নষ্ট হয়ে গেছে। ভবিষ্যৎ রাজনীতি আজীবনের জন্য রুদ্ধ হয়ে গেছে বলেও মনে করা হচ্ছে। সম্প্রতি বিএনপি রাজনীতির মাঠে সরব হয়েছে। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের বীর উত্তম খেতাব বাতিলের দাবিতে তারা রাজনীতির মাঠ গরম করতে চাইছে। নতুন নির্বাচনের দাবিতে বিভাগীয় সমাবেশ থেকেও ইস্যুভিত্তিক দাবি তোলা হচ্ছে। জনগণকে মাঠে নামার আহ্বান জানানো হচ্ছে। ইস্যুভিত্তিক আন্দোলনে তৃণমূলকে মাঠে নামালেও খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলন কিংবা সরকার পতনের আন্দোলন খুব সহজেই বিএনপি করবে না। কারণ খালেদা জিয়ার প্রভাব সময়ে ক্ষমতা চাচ্ছে না দলটির বড় অংশ। ভবিষ্যৎ ক্ষমতার চিন্তায় খালেদা জিয়াকে চির মাইনাসের প্রক্রিয়া চলছে। এছাড়া এখন সরকার পতনের আন্দোলন গড়লে ভবিষ্যতে ক্ষমতার প্রধান কে হবে এটি এখনো নির্ধারণ করা হয়নি। সরকার পতনের আন্দোলন করে তৃতীয় পক্ষকে সুযোগ দেয়ার পক্ষে নেই লন্ডন নেতা। তাই আপাতত ধৈর্য ধরা ও টিকে থাকার লড়াই। ভবিষ্যতে দলের নেতৃত্ব কাঠামো তৈরিতে নেতা তৈরির মিশন চলছে।

জানা গেছে, আগামী ২৫ মার্চ বেগম জিয়ার দ্বিতীয় মেয়াদে বাড়ানো জামিন শেষ হয়ে যাচ্ছে। তার জামিন আবার বাড়ানো হবে কি না, নাকি আবার জেলে যেতে হবে— এ নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে সংশয়। খালেদা ইস্যুতে কী হচ্ছে দলে জানেন না কেউ। লন্ডন বার্তার ওপরই নির্ভর করছে সব। দলটির নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছেন, সম্প্রতি তৃণমূলের চাপ বাড়ায় লন্ডন থেকে ধৈর্য ধরার বার্তা পাঠানো হয়েছে। তৃণমূলকে সন্তুষ্ট রাখার কর্মসূচি দেয়া হয়েছে। দলটির এক হাইকমান্ড নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আমার সংবাদকে বলেন, আগামীদিনের নেতৃত্বের জন্য বাংলাদেশের সম্ভাবনার দুটি দিক রয়েছে। প্রথমত. জিয়াউর রহমানের গড়া দল বিএনপি । দ্বিতীয়ত. তার পুত্র তারেক রহমান। এ নিয়ে দীর্ঘ সময় এ সম্ভাবনাকে ধ্বংস করতে দলের কিছু নেতাকে নিয়ে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলো বৃহৎ একটি অংশ। ইতোমধ্যে সেই ষড়যন্ত্রকারীদের চিহ্নিত করেছেন তারেক রহমান। তাই অনেক নেতাই এখন সাবধান হয়ে গেছেন। আন্দোলন, নতুন নেতৃত্ব ও গঠনতন্ত্র প্রসঙ্গ নিয়ে লন্ডন থেকে যে সিদ্ধান্ত আসছে সিনিয়র নেতারাও তা মেনে নিচ্ছেন। লন্ডন প্রেসক্রিপশনেই চলছে বিএনপি। খালেদাপন্থিদের ভাষ্য, সংস্কারবাদী-বামপন্থি নেতারা বিএনপিতে কৌশলে তাদের বীজ বপন করছেন। এতে বিএনপি চলে যাচ্ছে জনগণের বাইরে, দলের মূল চরিত্র থেকে দূরে। আর খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানপন্থি এমন একটি গোষ্ঠীও তৈরি হয়েছে। জিয়া পরিবারের বাইরে নেতারা কিছু করতে চাইলেও সম্ভব হচ্ছে না।

নির্ভরযোগ্য একটি অংশের ভাষ্য, কোনো ইস্যুতে নেতাকর্মীদের মধ্যে যদি একবার আন্দোলনের চাঙ্গাভাব তৈরি হয়ে যায় তাহলে তাদের নিয়ন্ত্রণও করা যাবে না। মাঝপথ থেকে অন্য কেউ ফায়দা হাসিল করে নিতে পারে। এ অবিশ্বাসই বিএনপিকে বড়ভাবে বাধা দিচ্ছে।

দলটির বিশ্বস্ত একটি সূত্রের দাবি— পাশের একটি দেশ, ভবিষ্যতে বাংলাদেশে বিজনেস পলিসির জন্য বিএনপিতে বাম রাজনীতির আদর্শ তৈরি করতে জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ওই সূত্রটির মতে, বিএনপি আরও দীর্ঘ সময় ক্ষমতার বাইরে থাকবে। আবার দীর্ঘ সময় বিএনপি বাংলাদেশের নেতৃত্বও দিতে পারে। ভবিষ্যৎ সেই ছকের আলোকেই কয়েকজন নেতাকে হাতে রেখে আশ্বাসের বাণী দিয়ে বিএনপি থেকে জাতীয়তাবাদী চরিত্র মাস্টার প্ল্যানে দূরের প্রক্রিয়া চলছে। আন্তর্জাতিক ওই মহলটি খালেদা জিয়া আটক থাকাকালীন কোনোভাবেই চায়নি তার মুক্তির জন্য দেশে আন্দোলন-সংগ্রাম হোক। অগ্নিসন্ত্রাস, জ্বালাও-পোড়াও, হরতাল-অবরোধে কোনো সহিংস পরিস্থিতি তৈরি হোক। সবসময় মহলটি খালেদা জিয়ার মুক্তিতে বিএনপিকে আশ্বাস দিয়ে রেখেছিল, সান্ত্বনা দিয়ে রেখেছিল।

অন্যদিকে বিএনপির জাতীয়তাবাদী আদর্শের অংশের ভাষ্য, খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে এবার শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে যাওয়া মানে এই সরকারকে বৈধতা দেয়া। কিন্তু নির্বাচনে যাওয়ার ব্যাপারে অনড় ছিলেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ড. কামালদের বিএনপির সংসারে এনে করা হয় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। নির্বাচন ও খালেদার মুক্তি ইস্যু নিয়ে যখন সরকারকে দমিয়ে দেয়ার সুযোগ এসেছিল, ঠিক তখন শুরু হয় ড. কামালকে নিয়ে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ। নির্বাচনের আগ মুহূর্তে বিএনপির সমাবেশে সুলতান মনসুর এক হাতে ধানের শীষ আর গায়ে মুজিব কোট পরে জয় বাংলা স্লোগান দিচ্ছেন, ড. কামাল বঙ্গবন্ধুর গুণগান করছেন, কাদের সিদ্দিকী নির্দেশ দেন যাতে নির্বাচন পর্যন্ত বিএনপির নেতাকর্মীরা মহাসচিবকে মানে! আর যদি না মানে তাহলে বিএনপির কপালে আরও দুর্গতি আছে। ঠিক সেই মুহূর্তে যখন একাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রচারণা চলছে অথচ বিএনপির প্রার্থীরা মাঠে নামতে পারছেন না, দেশব্যাপী প্রার্থীদের ওপর হামলা চলছে, রক্তাক্ত হচ্ছেন গয়েশ্বররা, তখন মহাসচিব বারবার ছুটে যাচ্ছেন কারাগারে! বন্দি খালেদা জিয়াকে বোঝাতে। এমন পরিস্থিতিতে বিএনপি নির্বাচনে গেলে আন্তর্জাতিক সহানুভূতি পাবে, সেনাবাহিনী মাঠে নামলে পরিস্থিতি ভিন্ন রকম হয়ে যাবে, জনগণ ভোটকেন্দ্রে ছুটে যাবে। ভোটবিপ্লব হলে বিএনপি ক্ষমতায় আসবে। সবশেষ অন্যদের পরামর্শ টেকেনি। দিনশেষে ফখরুল খালেদা জিয়াকে ম্যানেজ করতে সক্ষম হয়েছেন নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য।

খুলনা সিটি কর্পোরেশনের নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, ৬ সিটি কর্পোরেশনের প্রার্থীদের নিয়ে তারেক রহমানের নির্দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে সমাবেশ শুরু করেছি আমরা। মাফিয়া সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। তাই শেখ হাসিনার অধীনে আর কোনো নির্বাচনে যাওয়ার প্রয়োজন নেই।

তারেক জিয়ার বার্তা নিয়ে জানতে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আমার সংবাদকে বলেছেন, স্বৈরাচারের কবল থেকে দেশ উদ্ধারে তারেক রহমান কাজ করে যাচ্ছেন। বেগম খালেদা জিয়া দেশকে স্বৈরাচারমুক্ত করতে যেমনিভাবে রাজপথে নেমেছিলেন, একইভাবে দেশনায়ক তারেক রহমানও স্বৈরাচারের কবল থেকে দেশ ও জাতিকে উদ্ধার করতে কাজ করে যাচ্ছেন। সুদূর লন্ডনে বসেও প্রখর ধীশক্তি ও অত্যন্ত দক্ষতার সাথে দলকে গোছানোর কাজে দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। তার সুযোগ্য নেতৃত্বে বিএনপির নেতাকর্মীরা বর্তমানে সুসংঘবদ্ধ।

বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য, নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের সদস্য সচিব নিপুন রায় আমার সংবাদকে বলেছেন, জাতীয় স্বার্থ রক্ষার্থে আমাদের সবাইকে নিজ নিজ স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে এক ছাতার নিচে থাকার জন্য ঐক্যবদ্ধ হতে নির্দেশনা দিয়েছেন। যেকোনো জাতীয় দুর্যোগে এবং বৃহৎ উদ্দেশ্য পালনের জন্য সবার পছন্দকে বিসর্জন দিতে হয়, সেটাই তিনি তুলে ধরেছেন। তিনি আমাদের সামনে উপস্থাপন করেছেন বিএনপি বাংলাদেশের বৃহৎ রাজনৈতিক দল। সেই বৃহৎ দলের এখন বৃহৎ প্ল্যাটফর্ম প্রয়োজন। সেজন্য এ মুহূর্তে বিভেদ ভুলতে না পারলে আমাদের মূল উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আরও একটা জিনিস স্পষ্টভাবে বলেছেন, আন্দোলন ছাড়া বেগম খালেদা জিয়া মুক্ত হবেন না, এ জন্য নির্দিষ্ট কর্মসূচি প্রয়োজন। সে কর্মসূচির ওপর গুরুত্বারোপ করে আমাদের সুসংগঠিত থাকার কথা বলেছেন।

চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এবং জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের আহ্বায়ক শামসুজ্জামান দুদু আমার সংবাদকে বলেছেন, দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা তারেক রহমান তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে সবসময় যোগাযোগ অব্যাহত রাখছেন এবং সম্প্রতি আমাদের নিয়ে বসেছেন। তিনি আমাদের একটা জিনিস বলেছেন, যেকোনো কাজ ঐক্যবদ্ধভাবে করার কোনো বিকল্প নেই। দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে হলে আমাদের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে হবে। সেটি কীভাবে নিতে হবে তা তিনি আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন এবং একটা প্ল্যাটফর্ম প্রয়োজন সে প্লাটফর্মে আমাদের সবাইকে আসতে হবে। তিনি আমাদের একটা প্ল্যাটফর্মের গুরুত্ব দিয়েছেন এবং সেই আলোকে কাজ করতে বলেছেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘দেশে আইনের শাসন না থাকায় অপশাসন চলছে। সরকার সারা দেশের মানুষকে জিম্মি করে একদলীয় বাকশালী শাসন কায়েম করেছে।’ আল-জাজিরার প্রতিবেদনের মধ্য দিয়ে দেশে-বিদেশে সরকারের মুখোশ উন্মোচিত হয়েছে। সরকার মুখ লুকোনোর জায়গা পাচ্ছে না।

আমারসংবাদ/জেআই