Amar Sangbad
ঢাকা বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪,

টিকা নিতে সব মহলে আগ্রহ

মাহমুদুল হাসান

ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২১, ০৭:৫০ পিএম


টিকা নিতে সব মহলে আগ্রহ
  • করোনার টিকাদান কার্যক্রমে সর্বত্র এখন দেশের সুনাম বৃদ্ধি পাচ্ছে -জাহিদ মালেক, মন্ত্রী, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়
  • সুরক্ষা অ্যাপ করোনা টিকার নিবন্ধন সিস্টেমকে সহজ করবে -জুনাইদ আহমেদ পলক, প্রতিমন্ত্রী, তথ্য ও প্রযুক্তি বিভাগ
  • মাসের শেষে টিকাদান কার্যক্রম আরেকটা মাইলফলকে পৌঁছাবে -মো. আবদুল মান্নান, সচিব, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ

করোনা ভাইরাস নির্মূলে সরকার গণটিকায় জোর দিচ্ছে। শুরুতে টিকা বিষয়ে বিভ্রান্তি থাকলেও মানুষ এখন অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিশিল্ড টিকা আগ্রহের সঙ্গে নিচ্ছে। গত ৭ ফেব্রুয়ারি শুরু হওয়া গণটিকাদান কার্যক্রম ইতোমধ্যে ১১দিন অতিক্রম করেছে। এ পর্যন্ত (গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত) সারা দেশে ২৮ লাখ ৫৯ হাজার ৩৭১ জন আগ্রহী মানুষ টিকার জন্য নিবন্ধন করেছে। শুক্রবার ছুটির দিনে টিকাদান কেন্দ্রের কার্যক্রম বন্ধ থাকে। ৯ দিনে রাজধানীসহ সারা দেশের এক হাজারেরও বেশি টিকাদান কেন্দ্রে প্রায় সাড়ে ১৮ লাখের বেশি মানুষ টিকা গ্রহণ করেছে। শহুরে ও সচেতন মানুষ টিকায় ব্যাপক আগ্রহ দেখালেও প্রান্তিক ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর এখনো তেমন আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। আনুপাতিক হারে নিবন্ধনে তারা এখনো পিছিয়ে রয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরও বিষয়টি স্বীকার করেছে। তাদের টিকাদান কার্মসূচিতে যুক্ত করতে জনসচেতনতা ও প্রচার-প্রচারণায় জোর দিতে পরামর্শ দিচ্ছেন জনস্বাস্থ্যবিদরা।

এদিকে নির্বিঘ্নে টিকাদান কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য ৫০ হাজারেরও বেশি চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মী করছে। ফলে সারা দেশে বিশৃঙ্খলা ও ভোগান্তি এড়িয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে টিকাদান চলছে। স্বাস্থ্যকর্মীদের টিকাদান সম্পর্ককৃত কাজ সহজ করতে ইতোমধ্যে সরকার সুরক্ষা কোভিড টিকাদান ব্যবস্থাপনা বিষয়ক একটি অ্যাপ চালু করেছে সরকার। যার ফলে সহজেই সারা দেশের স্বাস্থ্যকর্মীরা করোনার টিকাদান বিষয়ক তথ্যাটি অল্প সময়ে জাতীয় সার্ভারে যুক্ত করার সুযোগ পাবেন। সেই সাথে টিকায় যুক্ত হবে পেপারলেস ওয়ার্ক বা প্রযুক্তিনির্ভর টিকাদান কর্মসূচি পরিচালনার এক ভিন্ন মাত্রা। দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় কোমলমতি শিশুদের শিক্ষাজীবনে ফিরিয়ে আনা বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে সরকার। তাই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দ্রুত খুলে দেয়ার লক্ষ্যে দেশের সকল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষককে কোভিড-১৯ টিকা নেয়ার জন্য দ্রুত নিবন্ধন করার নির্দেশ দিয়েছে। গত বৃহস্পতিবার প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর এই সংক্রান্ত আদেশ জারি করেছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন্স অ্যান্ড কন্ট্রোল রুমের তথ্যমতে, দেশে গত ৭ ফেব্রুয়ারি জাতীয়ভাবে করোনার টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়। প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৮টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত এই কার্যক্রম চলছে। গতকাল বুধবার রাজধানীসহ সারা দেশের এক হাজার ছয়টি হাসপাতালে আরও দুই লাখ ৬১ হাজার ৯৪৫ জন নর-নারী টিকা গ্রহণ করেছেন। তাদের মধ্যে পুরুষ এক লাখ ৬৪ হাজার ৯৩৬ জন আর নারী ৯৭ হাজার ৯ জন। একদিনে শুধু ঢাকা মহানগরীতে টিকা নিয়েছেন ৩২ হাজার ৪১২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ২১ হাজার ১৩১ জন আর নারী ১১ হাজার ২৮১ জন। বৃহস্পতিবার টিকাগ্রহীতাদের মধ্যে ২৭ জনের শরীরে মৃদু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। এ পর্যন্ত সারা দেশে টিকা নেয়া ১৮ লাখ ৪৮ হাজার ৩১৩ জনের মধ্যে নারীর দ্বিগুণ পুরুষ। সংখ্যার হিসাবে ১২ লাখ ৩৩ হাজার ৬৫৫ জন পুরুষ এবং ছয় লাখ ১৪ হাজার ৬৫৮ জন নারী। এ ছাড়াও মোট টিকাগ্রহীতার মধ্যে ঢাকা বিভাগের আছেন ৭৩ হাজার ৫১৪ জন, ময়মনসিংহ বিভাগের ১১ হাজার ৯০১ জন, চট্টগ্রাম বিভাগের ৫৪ হাজার ৭৮৮ জন, রাজশাহী বিভাগের ৩২ হাজার ২২৪ জন, রংপুর বিভাগের ২৫ হাজার ৫৭৯ জন, খুলনা বিভাগের ৩৪ হাজার ১৯৫ জন, বরিশাল বিভাগের ১৪ হাজার ৪৪৪ জন আর সিলেট বিভাগের ১৫ হাজার ৩০০ জন। ঢাকা মহানগরীতে এখন পর্যন্ত টিকা নিয়েছেন দুই লাখ ৪৫ হাজার ৮২৮ জন। এর মধ্যে পুরুষ এক লাখ ৬৪ হাজার ৯৬০ জন আর নারী ৮০ হাজার ৮৬৮ জন। এ পর্যন্ত টিকা গ্রহীতাদের মধ্যে ৫৩৭ জনের শরীরে মৃদু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া লক্ষ করা গেলেও এখন তারা সবাই সুস্থ। সারা দেশের টিকাদান কর্মসূচিতে ৫০ হাজার স্বাস্থ্যকর্মী কাজ করছেন বলেও জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমআইএস বিভাগের অধ্যাপক ডা. মিজানুর রহমান বলেন, ‘মানুষও স্বেচ্ছায় এসে নিবন্ধন করছে। তবে, নিম্নশ্রেণি থেকে ওরকম সাড়া এখনো পাচ্ছি না। একটা টিকাকেন্দ্রে টিকা প্রয়োগের ক্যাপাবিলিটি যতটুকু, সেখান থেকে ঠিক ততজনকেই এসএমএস দেয়া হচ্ছে। যে বলছে এসএমএস পাচ্ছে না, সে এটার বাইরে আছে। সে হয়তো আজ না পেলে কাল পাবে, নয়তো পরশু পাবে। এটা কোনো সমস্যা না। টিকা নেয়ার সময় হলে পর্যায়ক্রমে সবাই এসএমএস পাবে।’

স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আবদুল মান্নান বলেন, ‘আমাদের টিকাদান কর্মীরা বিশ্বের সবচেয়ে দক্ষ। মাত্র দুই মিনিটে টিকা দিতে পারেন। সারা দেশে প্রায় এক হাজার ১০টি হাসপাতালে ৫০ হাজারের মতো কর্মী কাজ করছেন। আমরা মনিটরিং করে তাদের মনোবল বৃদ্ধি করে যাচ্ছি। স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রণোদনা দেয়া ও প্রচারের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে টাকা পাওয়া গেছে। এ মাসের শেষে করোনার ভ্যাকসিন প্রয়োগ কার্যক্রমে আরেকটা মাইলফলকে পৌঁছাবে বাংলাদেশ, বিশ্বে নজির হবে।’

আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, ‘সুরক্ষা টিকা ব্যবস্থাপনা অ্যাপটির মাধ্যমে নিবন্ধনের তথ্য সরাসরি তথ্যভাণ্ডারে যুক্ত হবে। এটা তথ্য সংগ্রহ যারা করছে, তাদের কাজ সহজ করার জন্য এ অ্যাপস। এই অ্যাপ চালু হওয়ায় কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে সেন্ট্রাল ডেটাবেইজে সংরক্ষিত ভ্যাকসিন গ্রহীতার তথ্য যাচাই ও আপলোড হয়ে যাবে।’ তিনি বলেন, ‘এই অ্যাপ করোনা ভ্যাকসিনের নিবন্ধন সিস্টেমকে সহজ করবে। এর মাধ্যমে ভ্যাকসিনগ্রহীতা কেন্দ্রে এসে তাৎক্ষণিকভাবে ডিজিটাল ভ্যাকসিন কার্ডের কিউআর কোড স্ক্যান এবং জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে তথ্য যাচাই করতে পারবেন। এ তথ্য সরাসরি সুরক্ষা সার্ভারে আপডেট হবে।’

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘ভ্যাকসিন প্রদান কার্যক্রমে দেশের সুনাম এখন সর্বত্র। দেশের টিকাদান কেন্দ্রে কার্যক্রম অত্যন্ত সুশৃঙ্খলভাবে চলমান রয়েছে। এই ভ্যাকসিন প্রমাণ করেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্ব কতখানি দূরদর্শীসম্পন্ন। এই ভ্যাকসিন নিয়ে যারা বেশি বেশি সমালোচনা করেছে এখন তারাই আগেভাগে নিচ্ছে। এটিই সরকারের সফলতা, কষ্টের স্বীকৃতি। সুরক্ষা অ্যাপ উদ্বোধনের ফলে চলমান ভ্যাকসিন কার্যক্রম আরো একধাপ এগিয়ে গেলো। দেশে ভ্যাকসিন প্রদানের শুরুতে বিভিন্ন জোনভিত্তিক ভাগ করতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে অনেকখানি সহায়তা করেছে। এখন সুরক্ষা অ্যাপ প্রস্তুত করে সেই সহায়তার হাত আরও প্রসারিত হলো।’

আমারসংবাদ/জেআই