Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪,

বসে আছে নতুন বিনিয়োগকারীরা

এম এ আহাদ শাহীন

ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২১, ০৭:৩০ পিএম


বসে আছে নতুন বিনিয়োগকারীরা

সূচকের উত্থানপতন

  • নতুন কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দর বাড়লে হয়তো বাজার আবার চাঙ্গা হবে

           ড. আবু আহমেদ, অর্থনীতিবিদ

  • আমাদের ধারণা আগামী সপ্তাহ থেকেই হয়তো বাজার ভালো হবে

          মো. শাকিল রিজভী, পরিচালক ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ

 

চলতি বছরের প্রথম মাসে পুঁজিবাজারে যে রমরমা অবস্থা দেখা দিয়েছিল দ্বিতীয় মাসের শেষের দিকে তা উবে গেছে। এমন মন্দা বাজারে দাম কমে যায় ভালো শেয়ারেরও। আরও কমতে পারে, এই আশঙ্কায় হাত গুটিয়ে বসে আছেন নতুন বিনিয়োগকারীরা।

দুই দিনের সাপ্তাহিক আর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের ছুটির কারণে তিন দিন বন্ধ থাকার পর সপ্তাহের প্রথম ও দ্বিতীয় কার্যদিবস গত সোম ও মঙ্গলবার শুরুতেই সূচক কিছু বাড়লেও পর থেকেই কমেছে। গতকাল অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিটের দরপতন হয়েছে। জানা গেছে, ডিএসইর প্রধান সূচক আগের কার্যদিবসের চেয়ে ডিএসইএক্স ৬৭ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ৩১৭ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। যা গত আট কার্যদিবস পর সর্বনিম্ন অবস্থানে নেমেছে। ডিএসইর অন্য সূচকগুলোর মধ্যে শরিয়াহ সূচক ১৫ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ২০৬ পয়েন্টে এবং ডিএসই-৩০ সূচক ৩৯ পয়েন্ট কমে ২ হাজার ১৭ পয়েন্টে অবস্থান করছে। ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৯১ কোটি ৮১ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে ডিএসইতে লেনদেন হয়েছিল ৪৬৭ কোটি টাকা। ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩৩৯ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বেড়েছে ৬৬টির, কমেছে ১৫৬টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১১৭টি শেয়ার দর। অপরদিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১৭৩ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ৩৯১ পয়েন্টে, সিএসই ৫০ সূচক ২০ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ১৭২ পয়েন্টে এবং সিএসসিএক্স সূচক ১০৫ পয়েন্ট কমে ৯ হাজার ২৮৩ পয়েন্টে অবস্থান করছে। সিএসইতে লেনদেন হওয়া ১৯৫ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বেড়েছে ৪৬টির, কমেছে ৯৭টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৫২টির শেয়ার দর। সিএসইতে লেনদেন হয়েছে ২৬ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। দিন শেষে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ডিএসইর প্রধান সূচক কমেছে ৯০ পয়েন্ট। লেনদেন হয়েছে ৪৬৭ কোটি টাকা। এর আগে করোনা সংক্রমণে বন্ধ করে দেয়া বাজার খোলার পর গত ২৭ জুলাই লেনদেন হয়েছিল ৪৪৪ কোটি টাকা।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, ৪০০ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে এটি বর্তমান বাজারের পরিপ্রেক্ষিতে খুবই কম। ব্যাংকগুলোকে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য সরকারের পক্ষ থেকেও বলা হয়েছে। তারা কতটুকু বিনিয়োগ করেছে সেটি নিয়েও প্রশ্ন আছে। জানতে চাইলে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ আমার সংবাদকে বলেন, সূচকের উত্থানপতনে এখন বিনিয়োগকারীরা অনেকটাই আতঙ্কিত। এটা থেকে তাদের বের করে আনতে হবে। এ জন্য নতুন বিনিয়োগ পরিকল্পনা করা উচিত। তিনি বলেন, ব্যাংকের শেয়ার যে দামে আছে তাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ লভ্যাংশ-সংক্রান্ত নির্দেশনায় ভালো রিটার্ন পাওয়া সম্ভব। কিন্তু তারপরও কেন আগ্রহী নন বিনিয়োগকারীরা তা আমারও বোধগম্য নয়।

লেনদেন কমার কারণ কী হতে পারে, এমন প্রশ্নে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, নতুন কিছু কোম্পানিতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের অনেক অর্থ আটকে গেছে। রবির দর আরও কমেছে। নতুন কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দর কিছুটা বাড়লে হয়তো বাজার আবার চাঙ্গা হবে। ব্যাংক খাতের ৩০ ব্যাংকের মধ্যে শেয়ারের দর বেড়েছে ?মাত্র দুটির। কমেছে ১১টির। বাকি ১৭টি ব্যাংকের শেয়ারের দর অপরিবর্তিত রয়েছে।

বিমা খাতের লেনদেনে ছিলো একই চিত্র। ৪৯টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে মাত্র তিনটির। কমেছে চারটির। বাকি ৪২টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে। প্রকৌশল খাতের ৪২টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে দুটির। কমেছে ১৮টির। অপরিবর্তিত ২২টির। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের ২১টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে মাত্র একটির, অপরিবর্তিত পাঁচটির। বাকি ১৫টির দর কমেছে।

পুঁজিবাজারে প্রায় সাড়ে ৩০০ কোম্পানির ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড তালিকাভুক্ত থাকলেও তার থেকে বাছাই করে ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠন করা হয়েছে ব্ল চিপ সূচক। সেখানে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে আর্থিক অবস্থা সবচেয়ে ভালো, ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনার অন্যদের জন্য উদাহরণ সেসব কোম্পানি তালিকাভুক্ত। ভালো লভ্যাংশসহ এসব কোম্পানির স্থিতিশীল বিনিয়োগ ক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

এই কোম্পানিগুলো নিয়ে গঠিত এমন ব্ল চিপ ৩০টি কোম্পানির মধ্যে মাত্র একটি কোম্পানির শেয়ারের দর বেড়েছে। অপরিবর্তিত রয়েছে তিনটির। বাকি ২৬টির দর কমেছে। লেনদেনে এগিয়ে থাকলেও বেক্সিমকো লিমিটেডের শেয়ারের দর কমেছে ৩ দশমিক ১৮ শতাংশ। ব্র্যাক ব্যাংকের ২ দশমিক ২২ শতাংশ, বিএসআরএম লিমিটেডের ১ দশমিক ৪০ শতাংশ, বেক্সিমকো ফার্মার ৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ দর কমেছে।

দর পতনের দিক দিয়ে শীর্ষে ছিলো প্রাইম ফিন্যান্স ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ড, যার দর কমেছে ৬ দশমিক ৫০ শতাংশ। নতুন শেয়ার মীর আকতার হোসাইন লিমিটেডের শেয়ার দর কমেছে ৬ দশমিক ৩৬ শতাংশ। রবির শেয়ার দরও কমেছে ৬ দশমিক ৩৬ শতাংশ। দাম কমে হয়েছে ৩৬ টাকা ৮০ পয়সা।

সবচেয়ে বেশি দর পতনের তালিকায় আরও ছিলো জুট স্পিনার্স, সন্ধানী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, পদ্মা লাইফ ইন্স্যুরেন্স, তাওফিকা ফুড অ্যান্ড অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ (লাভেলো আইসক্রিম) ইত্যাদি।

শেয়ার দর কমলেও লেনদেনের শীর্ষ স্থান ধরে রেখেছিল বেক্সিমকো লিমিটেড। কোম্পানিটির এক কোটি ১৭ লাখ ৭৫ হাজার শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১০৫ কোটি টাকায়। রবির ৯৫ লাখ শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৩৫ কোটি ৪৬ লাখ টাকায়। ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর দুই লাখ ৫০ হাজার শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৩২ কোটি টাকায়। লংকাবাংলা ফিন্যান্সের মোট ৭১ লাখ ৬৭ হাজার শেয়ার লেনদেন হয়েছে ২৫ কোটি টাকায়।

এ বিষয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালক মো. শাকিল রিজভী আমার সংবাদকে বলেন, এখন বাজার খারাপ হওয়ার কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ নেই। তবে এখন একটি কোম্পানির আইপিও আবেদন চলছে। এতে কিছু বিনিয়োগকারী টাকা তুলে নিয়ে আইপিও আবেদন করছেন। বাজারে নেতিবাচক প্রবণতার জন্য এটি একটি কারণ হতে পারে। তারপরও ব্যাংকের সুদহার এখন বেশ কম। এটা পুঁজিবাজারের জন্য ভালো সংবাদ। আমাদের ধারণা, আগামী সপ্তাহ থেকেই হয়তো বাজার ভালো হবে।

আমারসংবাদ/জেআই