Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

নৌকা ডোবাতে মরিয়া এমপিরা!

রফিকুল ইসলাম

ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২১, ০৮:৩০ পিএম


নৌকা ডোবাতে মরিয়া এমপিরা!
  • তারা বিদ্রোহী প্রার্থী ও সমর্থকদের মদত দিচ্ছেন। ফলে আ.লীগের বিরোধী এখন আওয়ামী লীগ। দলীয় এমপিদের এমন কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ স্থানীয় আ.লীগের নেতাকর্মীরা

আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে পঞ্চম ধাপের পৌরসভা নির্বাচন। এ দিন ৩১টি পৌরসভায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। একইদিন চারটি উপজেলায় হবে উপনির্বাচন। অনুষ্ঠেয় ওই নির্বাচনকে সামনে রেখে সরগরম স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতি। দলটির সভানেত্রী ও শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের কঠোর নির্দেশনা উপক্ষা করে নৌকা মনোনীত প্রার্থীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন স্থানীয় সাংসদরা। তারা বিদ্রোহী প্রার্থী ও সমর্থকদের মদত দিচ্ছেন। ফলে আওয়ামী লীগের বিরোধী এখন আওয়ামী লীগ। দলীয় এমপিদের এমন কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। যদিও দলের শীর্ষপর্যায়ের নেতারা বলছেন, নৌকাবিরোধী কোনো এমপি-মন্ত্রী পার পাবে না। জানা যায়, আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলা পরিষদের উপনির্বাচন। অনুষ্ঠেয় ওই নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন এএফএম তারেক। অথচ তিনি সাত বছর আগে অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী ছিলেন। তিনি কুমিল্লা-৪ (দেবীদ্বার) আসনের আওয়ামী লীগের এমপি রাজী মোহাম্মদ ফখরুলের চাচা ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এএফএম ফখরুল ইসলাম মুন্সীর ছোট ভাই। ২০১৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত দেবীদ্বার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে এএফএম তারেক দোয়াত-কলম প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে পরাজিত হন। এখানে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ। দল মনোনীত প্রার্থী বাদ রেখে চাচাকে বিজয়ী করতে কাজ করছেন রাজী মোহাম্মদ ফখরুল। এজন্য ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন তিনি। স্থানীয় যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগকে প্রভাবিত করছেন বিএনপির পক্ষে কাজ করতে। যারা এমপির ভয়ভীতি উপেক্ষা করে নৌকার পক্ষে কাজ করছেন তাদের ঘর-বাড়িছাড়া করার হুমকি দিচ্ছেন বলেও শোনা যায়। স্থানীয় সূত্র জানায়, ২০১৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি দেবীদ্বার উপজেলা পরিষদ নির্বাচন হয়। ওই নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ওই বছরের ২৭ জানুয়ারি দলীয় সমর্থন পেয়েছিলেন দেবীদ্বার উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম সফিকুল আলম। পরদিন কুমিল্লার একটি রেস্তোরাঁয় এএফএম তারেককে পাল্টা দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেন এএফএম ফখরুল ইসলাম মুন্সী। নির্বাচনে তারেক দোয়াত-কলম প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে পরাজিত হন। আওয়ামী লীগের প্রার্থী আনারস প্রতীকের একেএম সফিকুল আলমও পরাজিত হন। সেই তারেক এবার বিএনপির প্রার্থী হয়েছেন। তাকে বিজয়ী করতে দলীয় নিদের্শনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে সব ধরনের প্রভাব খাটাচ্ছেন এমপি রাজী মোহাম্মদ ফখরুল। ইতোমধ্যে কয়েকশ নেতাকর্মীকে কক্সাবাজার প্রমোদ ভ্রমণে পাঠিয়েছেন। যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগ, ছাত্রলীগকে প্রভাবিত করে এবং ভয়ভীতি দেখিয়ে দলের প্রার্থীর বিপক্ষে কাজ করাচ্ছেন। ইতোমধ্যে কয়েক দফায় ঢাকায় বৈঠক করছেন। সাংসদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ থাকলেও প্রকাশ্যে কথা বলতে নারাজ দলের স্থানীয় নেতাকর্মীরা।

এ প্রসঙ্গে দলীয় প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ আমার সংবাদকে বলেন, স্থানীয় এমপি নৌকা ডোবাতে ধানের শীষের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছে। স্থানীয় নেতাকর্মীদের বিভিন্ন ভয়ভীতি ও প্রলোভন দিয়ে আমার পক্ষে কাজ করা থেকে বিরত রেখেছেন। নৌকার এমপি হয়ে কীভাবে নৌকার বিরোধিতা করেন? ভোটের দিন এমপি প্রভাব না খাটালে মানুষ ভোটকেন্দ্রে আসতে পারলে আমি বিজয়ী হবো।

ওইসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে এ প্রতিবেদক রাজী মোহাম্মদ ফখরুলের ব্যক্তিগত ফোনে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেনি।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক বলেন, এমপি হোক বা মন্ত্রী হোক কিংবা স্থানীয় প্রভাবশালী কেউ হোক— নৌকার বিরোধিতা করে কেউ পার পাবে না। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কঠোর অবস্থানে রয়েছেন। অভিযোগের সত্যতা পেলেই ব্যবস্থা নেয়া হবে।

মাদারীপুর সদর পৌরসভায় এমপি শাজাহান খানের ভাই মনোনয়ন না পাওয়ায় তিনি নৌকার বিপক্ষে কাজ করছেন বলে জানা গেছে। ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলা নির্বাচনেও নৌকার প্রার্থী শাহিদুল ইসলাম শহিদের পক্ষে স্থানীয় এমপি মনজুর হোসেন বুলবুলের ভূমিকাও প্রশ্নবিদ্ধ। তিনি এ পর্যন্ত দলীয় নেতাকর্মীদের কোনো নির্দেশনা দেননি। হবিগঞ্জ পৌরসভায় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন আতাউর রহমান সেলিম। এখানে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন মিজানুর রহমান মিজান। স্থানীয়দের অভিযোগ— জেলা থেকে নির্বাচিত একজন সংসদ সদস্য যিনি মন্ত্রিসভায়ও রয়েছেন, ওই বিদ্রোহীকে মদত দিচ্ছেন। যশোরের কেশবপুর পৌরসভায় নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন রফিকুল ইসলাম। স্থানীয় এমপি শাহীন চাকলাদারের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। এখন পর্যন্ত দলীয় প্রার্থীর পক্ষে তার অনুসারীদের মাঠে দেখা যায়নি।

সূত্র জানায়, প্রথম চার ধাপের নির্বাচনের মতোই পঞ্চম ধাপের পৌর নির্বাচনে বেশকিছু স্থানে দলীয় বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছে আওয়ামী লীগের। এসব বিদ্রোহী থাকার পিছনে মূল কারণ, অভ্যন্তরীণ কোন্দলন, দ্বন্দ্ব, বলয়ভিত্তিক রাজনীতি, ভাই-লীগ, এমপি-লীগ এবং স্থানীয় এমপি ও শীর্ষ পদধারীদের রাজনৈতিক ক্ষমতা ধরে রাখার অপকৌশল। কোনো কোনো সাংসদ সরাসরি বিদ্রোহীদের মদত দিচ্ছেন। বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিজয় নিশ্চিত করতে স্থানীয় প্রশাসনের সজযোগিতা নিচ্ছেন তারা। ফলে হয়রানির শিকার হচ্ছেন নৌকা প্রতীকের সমর্থকরা। অথচ  বিদ্রোহী ও তাদের মদতদাতাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে আওয়ামী লীগ। নৌকাবিরোধীদের তালিকা তৈরি করছেন তারা। করা হচ্ছে বহিষ্কার। তবুও বিদ্রোহী ও তাদের মদতদাতাদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না দল। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আফম বাহাউদ্দীন নাছিম বলেন, এমপি-মন্ত্রী কিংবা বড় যেকোনো প্রভাবশালী নেতাই হোক না কেন, ব্যক্তিস্বার্থ রক্ষা বা ক্ষমতার প্রভাব ধরে রাখতে যারা নৌকার বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী দিচ্ছেন, বিদ্রোহীদের ইন্ধন দিচ্ছেন, ভোটের মাঠে নৌকার বিরোধিতা করছেন, তাদের কোনোভাবেই ছাড় দেয়া হবে না। বিদ্রোহীদের ইন্ধনদাতাদের বিষয়ে বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্তরা খোঁজখবর রাখছেন। দলের প্রার্থীর বিরোধিতা করার জন্য এদের শাস্তির মুখোমুখি করা হবে।

আমারসংবাদ/জেআই